Zilqad 1434   ||   September 2013

দুষ্টুমি ও অন্যান্য

মুহম্মাদ ফজলুল বারী

প্রতিটি শিশু কিছুনা কিছু দুষ্টুমি করে। চঞ্চল ছোট্ট শিশু বা কিশোর অথচ দুষ্টুমি করে না এটা বিরল। তাই বলে বলছিনা যে, প্রতিটি শিশুরই দুষ্টুমি করা বাধ্যতামূলক বা তোমাকেও দুষ্টুমি করতে হবে। বরং বলতে চাচ্ছি যে, শিশুরা একটু দুষ্টুমি করেই থাকে। তবে হ্যাঁ মনে রাখতে হবে আমার দুষ্টুমি যেন আল্লাহকে অসন্তুষ্ট না করে। মানুষের কষ্টের কারণ না হয়।

দুষ্টুমি ও মিথ্যা

দুষ্টুমি একটু আধটু করব, কিন্তু দুষ্টুমি করে হলেও কখনো মিথ্যা বলব না। কারণ মিথ্যা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে। বিপদ ডেকে আনে। বন্ধুদের সাথে খেলতে গেলে হারজিত হয়। কিন্তু আমি হেরে যাচ্ছি বলে কখনো মিথ্যা বলব না। কারণ মিথ্যা বলে যদি আমি বন্ধুদের মাঝে জিতেও গেলাম নিজের কাছে কিন্তু হেরে গেলাম। আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী হলাম, নিজের কাছে মিথ্যাবাদী হলাম। আমার দলে যে বন্ধুরা বুঝল তাদের কাছেও মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হলাম। কাল তাদের সাথে খেলতে গিয়ে সত্য বললেও তারা বিশ্বাস করতে চাইবে না; বলবে, সেদিন তো তুমি মিথ্যা বলেছিলে। হতে পারে আমার মিথ্যার কারণে বন্ধুদের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ হবে। তখন আমারই খারাপ লাগবে; কেন মিথ্যা বলতে গেলাম।

দুষ্টুমি ও নামের বিকৃতি

অনেক সময় দুষ্টুমি করে আমরা অন্যের মনে কষ্ট দিয়ে ফেলি। অথচ কাউকে কষ্ট দেয়া হারাম। কয়েক বন্ধু মিলে আমাদেরই কোন বন্ধুকে নিয়ে ঠাট্টা করি। নাম নিয়ে ব্যাঙ্গ করি বা একটু মোটা বলে তাকে বলি এই মটু বা লম্বা বলে এই লম্বু ইত্যাদি।

আল্লাহ কুরআন শরীফে এই বিষয়টি কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। (তরজমা) ... তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমান আনার পর মন্দ নাম অতি-নিকৃষ্ট। (সূরা হুজুরাত : ১১) কোন মুমিন এমনটি করতে পারে না। দুষ্টুমির বাহানায়ও না।

দুষ্টুমি ও চুরি

তোমাকে যদি কেউ চোর বলে তুমি ভীষণ চটে যাবে। যদি কেউ বলে চলো চুরি করি, তুমি বিনা বাক্যে না করে দিবে। কিন্তু দুষ্টুমি করে কয়েক সহপাঠী মিলে আরেক সহপাঠীর অগোচরে তার টিফিন খেয়ে ফেলেছ বা স্কুল থেকে ফেরার পথে বন্ধুরা মিলে কোন বাসা থেকে পেয়ারা ছিড়ে দিলে দৌড় - এগুলোকে চুরি না বলে কী বলবে? বলতো, তোমার টিফিন যদি এভাবে কেউ খেয়ে ফেলে আর তুমি টিফিন খেতে গিয়ে দেখ বাটি খালি তোমার কেমন লাগবে। তোমার গাছের পছন্দের পেয়ারাটা যদি কেউ চুরি করে তোমার কী দুঃখ হবে।

দুষ্টুমি ও ঠকানো

আমরা অনেক সময় দুষ্টুমি করে কাউকে ঠকাই। উদ্দেশ্য তাকে নিয়ে একটু মজা করা। খালি বাসন একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে তাকে দিই। সে ভাবে এতে খাবার কিছু আছে। খুলে দেখে ফাঁকা। তখন সে বোকা বনে যায়। তা দেখে অন্যরা হেসে দেয়, মজা করে।  এটি ঠিক নয়, এটি বর্জনীয়।

আবার কখনো কোনো সহপাঠিকে বললাম, তোমার আম্মু এসেছে। গিয়ে দেখল, তার আম্মু নয়; অন্য কারো। আম্মুর কথা মনে পড়ায় তার কষ্ট হয়। মন খারাপ হয়ে যায়। বাসায় যেতে মনে চায়। পড়ায় মন বসেনা। এ সব কিছুর জন্য তুমিই দায়ী, এগুলো তোমার ঠকানোর ফল।

দুষ্টুমি ও নামায

কোন শিশুকে যদি নামাযে দুষ্টুমি করতে দেখি তাহলে তাকে কাছে ডাকি। পিঠে হাত রেখে জিজ্ঞেস করি, নামাযে দাড়ানো অর্থ কার সামনে দাঁড়ানো? সে উত্তরে বলে, আল্লাহর সামনে। আবার প্রশ্ন করি, আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে কি দুষ্টুমি করা যায়? সে বলে, না। তারপর জিজ্ঞেস করি তোমার শিক্ষক যদি তাঁর সামনে দাড়িয়ে নামায পড়তে বলেন তখন কি তুমি দুষ্টুমি করবে? উত্তর, না। তাহলে আল্লাহর সামনে দাড়িয়ে কি দুষ্টুমি করা যায়? উত্তরে বলে, না!

তোমাকেও জিজ্ঞেস করছি হে বন্ধু! তুমিও নিশ্চয়ই একই উত্তর দিবে।  এবার তুমিই বলো, নামাযে আর দুষ্টুমি করবে কিনা? যদি বল, আমি দুষ্টুমি করি না। আমার পাশের জন। তাহলে তুমি এমন ছেলের পাশে  দাঁড়াবে না।

আরেকটি কথা, খেলা খুব জমে উঠেছে ওদিকে নামাজের আযান হয়ে গেছে। আরেকটু পর যাচ্ছি, আরেকটু....। অবশেষে জামাত ছুটে গেল। আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, মসজিদে গিয়েছিলে, নামাজ হয়েছে? জি..জ্ জি...। হয়ে গেল মিথ্যা কথা। এখন পড়লে তো বিপদে। নামাজ না পড়লে গোনাহ হবে, নামাজ পড়তে গেলে আম্মু দেখে ফেলবেন; বুঝে ফেলবেন যে তুমি মিথ্যা বলেছ। নামায তো আমাকে পড়তেই হবে সুতরাং আগে থেকেই সতর্ক হই, নামাযও যেন হয়, মিথ্যাও না বলতে হয়।

মোটকথা, নামাযে দুষ্টুমি করব না এবং যেখানেই থাকি যে অবস্থায়ই থাকি নামায ছাড়ব না।

দুষ্টুমি ও গোনাহের কাজ

বন্ধুরা বন্ধুরা মিলে যদি দুষ্টুমির ছলেও কোন গোনাহের কাজে লিপ্ত হয় তাহলে আমি সেখানে নেই। কৌশলে আমি তাদের থেকে সরে পড়ব।

গুরুজনও যদি গোনাহের আদেশ করেন তা মানতেও তো আমি বাধ্য নই। তবে...

তবে মনে রাখতে হবে গুরুজন, মাতা-পিতার সাথে কখনোই দুর্ব্যবহার করব না। তাঁরা যদি ভুল বোঝাবুঝির শিকার হন বা অন্যায় আদেশ করেন তাহলে আদবের সাথে আমি তাদের সামনে সঠিক বিষয়টি তুলে ধরব ও তার অন্যায় আদেশ পালন করতে নিজের অপারগতা প্রকাশ করব। তবুও বড়দের সাথে বিশেষত মাতা-পিতার সাথে দুর্ব্যাবহার করব না। আল্লাহ কুরআনে মাজিদে তা নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-(তরজমা) আমিতো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। মা সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করে এবং ... সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে। তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে পিড়াপিড়ী করেন আমার সাথে শিরিক করতে যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই তুমি তাদের কথা মানবে না। তাবে দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে থাকবে...। (সূরা লুকমান:১৪-১৫)

এখানে নমুনা হিসেবে কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করা হল। সারকথা হল, আমার দুষ্টুমি যেন আমাকে গোনাহের কাজে লিপ্ত না করে, অন্যকে কষ্ট না দেয়।

সবশেষে বড়দের প্রতি নিবেদন,

দুষ্টুমির কারণে ছোটদের দূরে ঠেলে দিবেন না। মসজিদ থেকে বের করে দিবেন না। মাথায় হাত বুলান। দুষ্টুমির প্রতিভাকে ভাল পথে এগিয়ে দিন। 

 

advertisement