Shawal 1434   ||   August 2013

স্বী কা র : তেঁতুলের আগে বিলবোর্ড

Abu Tashrif

ডিজিটাল বিলবোর্ডের কারণে অনেক সময় চালকের দৃষ্টিভ্রম হয়। বিভিন্ন পণ্যের বিলবোর্ডে সুন্দরী নারীদের ছবি দেয়া হচ্ছে। তারাও (গাড়িচালক) তো মানুষ। রাস্তা দিয়ে চলার সময় চালকদের সেদিকে নজর যাচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে।

উপরের কথাগুলো একটি বক্তব্যের অংশ। এটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। শিরোনাম ছিল: সুন্দরী নারীদের বিলবোর্ড দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। না পাঠক, এ বক্তব্যটি হেফাজতে ইসলামের কোনো নেতাকর্মী দেননি। দিয়েছেন বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রী। তাও কম দিন হয় নি। গত ২১ জুনের ঘটনা এটি। ওই দিনই বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় এবং তার পরের দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে মন্ত্রীর এ বক্তব্যটি ছাপা হয়েছে। ১২ জুন থেকে নিয়ে মাসের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। সুন্দরী নারীদের বিলবোর্ড নিয়ে মন্ত্রীর বক্তব্যের পক্ষে বিপক্ষে কোনো কথা দেখলাম না, কোনো গণমাধ্যমেই না। কাউকেই বলতে দেখলাম না, নারী বিজ্ঞাপনকর্মী কিংবা জটিল নাম সর্বস্ব নারী সংগঠনগুলোরও কেউ না। একটু অবাকই হলাম; একটু স্বস্তিও পেলাম।

অবাক হলাম এ জন্য যে, এ দেশে এখন নারী সমাজের পক্ষ সেজে হুংকার দিয়ে রাস্তায় লাফিয়ে পড়ার মতো নারী সংগঠন তো একটি দুটি নয়। কোনো বিবৃতি দিলেও দেখা যায় সেখানে সংগঠনের সংখ্যা হাফ সেঞ্চুরি পার হয়ে গেছে। তা হলে মন্ত্রীর এত বড় ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না কেনো ? সুন্দরী নারীদের ছবির দিকে চোখ যাওয়ার কারণে চালকরা দুর্ঘটনা ঘটায়। এতবড় পশ্চাৎপদ, অন্ধকারাচ্ছন্ন ও প্রগতিবিরোধী বক্তব্য দিয়েও মন্ত্রী মহোদয় পুরোপুরি পার পেয়ে গেলেন! নারীবাদী সংগঠনের নেত্রীরা কি সব পকনিকে চলে গিয়েছেন? আহা ! আমাদের সর্বকর্মে পারদর্শী প্রগতিশীল মিডিয়া-বন্ধুরা তো ছিলেন। তারাও তো একটা হৈ চৈ লাগাতে পারতেন। না, তারাও এগিয়ে আসেন নি। নারীর এতবড় অবমাননা তারা একদম নীরবেই সয়ে গেলেন। বিস্ময়েরই ব্যাপার! তবে স্বস্তি পেয়েছি এ জন্য যে, মন্ত্রীর বক্তব্যটা বাস্তব ছিল এবং সত্যও ছিল। নারী সম্পর্কিত সত্য একটা কথা এ সরকারের একজন মন্ত্রী বলেই ফেলেছেন। লোকলজ্জার ভয়ে তিনি আড়ষ্ট হননি। দলের নারীবাদী সহকর্মীদের তোয়াক্কা করেননি। অন্যরাও তাকে ঘাটাতে যায়নি। তার মানে হচ্ছে, সমাজে নারীর উন্মুক্ত প্রদর্শনীর ক্ষতিকর দিকগুলো এখন মানুষ মেনে নিচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে শুভ বুদ্ধির পরিচায়ক একটি ব্যাপার। এ জন্য স্বস্তিবোধ করা যেতেই পারে।

কিন্তু স্বস্তির এ ঘোরটা কেটে গেলো কয়েকদিন পরেই। জুলাই মাসের শুরুতেই একটি ভিডিও ফুটেজ ছেড়ে দেওয়া হলো ইন্টারনেটে। সেখানে হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব পর নারীর বিষয়ে প্রত্যেক পুরুষকে সংযত ও আত্মসংবরণে থাকার আহবান জানিয়েছেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছেন নারী তেঁতুলের মতো আকর্ষণীয়। নারীদের দেখলে পুরুষের মনের ভেতর প্রলুব্ধতা তৈরী হয়। তাই তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।

ব্যস্ আর যায় কোথায়! ওই ফুটেজের বক্তব্য প্রমাণিত কি না যাচাই করা হলো না। ওটা কারো কারসাজি কিনা খোঁজ নেওয়া হলো না। প্রথমেই উগ্রপন্থী নারীবাদী নারীদের ২৭ কিংবা ৭২ টি সংগঠন বিবৃতি দিয়ে বসলো। প্রভাবশালী টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় দিনের পর দিন অশ্রাব্য বিষোদগার চলতে থাকল। যেন এক ভয়ংকর নারীবিদ্বেষী হঠাৎ আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। যেন দুনিয়ার সব নারীর দেহ ও সৌন্দর্যের সব মাধুর্য ও কমনীয়তা মুহূর্তেই উধাও হয়ে গেছে। নারীরা যেন সব ইট, পাথর, বৃক্ষের মতই আকর্ষণহীন উপাদানে পরিণত হয়েছে। সংসদের অধিবেশন গরম করে তুলল সরকার দলীয় মহিলা সদস্যরা। রাম-বাম গলাবাজ রাজনীতিকরা আল্লামা আহমদ শফীর গ্রেফতার, বিচার ও শাস্তি দাবি করে নর্তন-কুর্দন শুরু করে দিলো। রমজান মাসের মধ্যেই সিনেমা-টিভির ঘর-সংসার ভাঙ্গা কোনো কোনো অভিনেত্রী রাস্তায় দাঁড়িয়ে আল্লামা আহমদ শফী সাহেবকে তওবা করার হুমকি দিল। খেলারাম খেলে যা-র মতো অশ্লীল ও আদিম উপন্যাসের লেখক অপর ১৭ জন খলনায়কের সঙ্গে মিশে নারীকে কেন তেঁতুল বলা হলো- তার প্রতিকার চেয়ে বিবৃতি দিয়ে লোক হাসালো। আর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আল্লামা আহমদ শফী সাহেবের নাম উচ্চারণ করে প্রশ্ন করলেন, তিনি কি মায়ের গর্ভে জন্ম নেন নি ? প্রধানমন্ত্রীর এক বান্ধবী জাতীয় সংসদে বললেন, মায়ের গর্ভে নয়- পশুর গর্ভে তার জন্ম হয়েছে। দেশের মানুষ হতভম্ব হয়ে গেল এসব কান্ড দেখে।

এক কাতারে নেমে এসেছে সব। উগ্র নারীবাদী সংগঠনের ঘরভাঙ্গা নারী নেত্রী, সিনেমা-টিভির নর্তকী-অভিনেত্রী আর ফরমালিনযুক্ত মিডিয়ার খেলোয়াড়রা সব একসঙ্গে হু হু বাতাস দিল। অপরদিকে বাম-রাম রাজনীতিক, অসৎ-মদ্যপ চরিত্রহীন সুশীলরাও ঝাঁপিয়ে পড়ল। জাহাঙ্গীরনগরে ধর্ষণের সেঞ্চুরি, ইডেন কলেজের নারী কর্মীদের নিয়ে মন্ত্রী-এমপিদের ভোগ-ফুর্তি আর দেশে-বিদেশে অহরহ নারী সহকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার কৃতিত্বে উজ্জ্বল ক্ষমতাধররা হঠাৎ তেঁতুল নিয়ে যেন মাতোয়ারাই হয়ে গেল। যেন এক তেঁতুল দিয়েই তারা তাদের নারী নিগ্রহ, নারী নির্যাতনের সব দাস্তান মানুষকে ভুলিয়ে দিতে চাইলে। চাইলে তেঁতুলের নামে নিজেদের সব হত্যা, লুট ও বর্বরতার কালো অধ্যায় আড়াল করতে। কিন্তু তাতো হবার নয়।

 

মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সুন্দরী নারীদের বিলবোর্ডের কথায় স্পষ্ট হয়ে গেছে, বাস্তবতা ঢেকে রাখা যায় না। তাই একযাত্রার দুইফলও মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। সরকারের সব মহলের দলবেঁধে তেঁতুল চটকানোর বিষয়টি দেশের মানুষের একদমই ভালো লাগেনি। ষ

 

advertisement