Rajab 1434   ||   May 2013

দু র্নী তি : লজ্জাসেতুর ধাক্কা কবে শেষ হবে

Khasru Khan

পদ্মাসেতুর গল্প এখন যেন লজ্জাসেতুতে পরিণত হয়েছে। সেই লজ্জার স্রোতে  ডুবতে বসেছে গোটা জাতির মান-মর্যাদা ও ভাবমূর্তি। লাভালিনের রমেশ শাহের ডায়রির পাতায় লেখা ঘুষের হার আর ঘুষপ্রাপক ব্যক্তিদের তালিকা কানাডার আদালতে উঠেছে। সে পাতায় আবার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের অর্থ মঞ্জুরকারী কর্মকর্তার স্বাক্ষরও রয়েছে। তালিকায় দেশপ্রেমিক সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেনের ৪ শতাংশ ঘুষসহ আরো কজন দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীর নাম   রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ঘুষের হারও। মধ্য এপ্রিল থেকেই ঘুষের শতকরা হারসহ ওই দেশপ্রেমিক ভাগ্যবানদের তালিকা ঢাকার সংবাদপত্রে ছাপা হচ্ছে। গত ২১ এপ্রিলের দৈনিক প্রথম আলো জানিয়েছে, লাভালিন তাদের সম্ভাব্য আয় থেকে ঘুষ দিতে চেয়েছিল সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ। শতকরা ২ ভাগ ছিল এমন একজনের ভাগে, যার নাম তালিকায় থাকলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। পর্যবেক্ষকদের অনেকেই এতে সন্দেহ করছেন যে, ওই নামটি সরকারের উপর মহলের এতটাই ঘনিষ্ঠ বা ভেতরের যে, সেটি প্রকাশ করা ঝুঁকির ব্যাপার।

পদ্মাসেতু নির্মাণে দুর্নীতি কিংবা দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়ে প্রথমে বিশ্বব্যাংক আর্থায়ন বন্ধের হুমকি দিয়েছিল। তারা স্বচ্ছ একটি তদন্ত করতে বলেছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথমে অস্বীকার, পরে সাফাই এবং তারও পরে দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগী মন্ত্রীকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রকৃত দেশপ্রেমিক উপাধি দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও বিষোদগারও করা হয় কয়েকবার। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ঘুষ কেলেংকারিতে জড়িত মন্ত্রীকে নির্দোষ সনদ। পরবর্তী সময়ে দফায় দফায় দুদকের পক্ষ থেকে একে জিজ্ঞাসা, তাকে ধরা এবং গণমাধ্যমের কাছে ঘুষখোর সন্ধানের ব্যাপক মহড়াও দেওয়া হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের তদন্তদল ঢাকায় এসে দুদকের শাক দিয়ে মাছ ঢাকার নানা উদ্যোগ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে চলে যায়। এখন কানাডায় পদ্মাসেতুর লজ্জাজনক অধ্যায়ের মহড়া চলছে। পদ্মাসেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের এগিয়ে আসার সম্ভাবনাতো নেই-ই, তারা কানাডার লাভালিন কোম্পানিকেও ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। ঘুষ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ নিয়ে আমাদের কর্তারা আগে বহু তর্জন-গর্জন করলেও হাটে হাড়ি ভেঙ্গে যাওয়ায় এখন চুপসে আছেন। কিন্তু আমাদের করিতকর্মা দুদক চেয়ারম্যানের সবজান্তা ভাবসাব এখনও থামেনি। তিনি পদ্মাসেতু দুর্নীতি বিষয়ে তার অবস্থান নিয়ে এখনও ঢেকুর তুলে যাচ্ছেন। কানাডার আদালতে গোটা জাতির ইজ্জতের হাট বসলেও পদ্মাসেতুকে যারা লজ্জাসেতু বানিয়েছেন তারা এখনও বেশ বুক উঁচিয়েই কথা বলছেন। নাক-কান কাটা দেশপ্রেমিকদের কারণে এখন নিরীহ দেশবাসীরা বেশ লজ্জায় আছেন। এ লজ্জা কবে কাটবে-কেউ জানে না। ষ

 

advertisement