Muharram 1431   ||   January 2010

দাওয়াত, তালীম ও সেবার অঙ্গনে ...

Mawlana Sharif Muhammad

পথ ছিল মোটামুটি দীর্ঘ। ঢাকা থেকে মাইক্রোবাসযোগে যেতে হবে নীলফামারী। একটি সেমিনারে অংশগ্রহণের প্রোগ্রাম। সকাল আটটার পর রওয়ানা হয়ে পথের জট-জটিলতা পার হয়ে দুপুরের শুরু ভাগে পৌঁছে যাই বগুড়ায়। দিনটি ছিল শুক্রবার। জুমার নামায পড়তে হবে-এ রকম নিয়্যত। সবার নিজস্ব আয়োজনে মাইক্রোর সুবিধা থাকায় আগেভাগেই না থেমে আমরা চলতে লাগলাম। প্রথম গন্তব্য রংপুর। জুমার সময় যদি পথেই হয়ে যায় তাহলে পথেই নেমে পড়বো। ঢাকা থেকে গেলে রংপুরের মুখ বলা যায় পীরগঞ্জকে। সেই পীরগঞ্জের একটি বাজারের ওপর দিয়ে যখন মাইক্রো ছুটে চলছিল তখনই দেখা গেল বড় রস্তার পাশে সুন্দর টিপটপ একটি মসজিদ। ঘড়ির কাটাও বলছিল, সামনের চিন্তা না করে নামাযের জন্য এখানেই নেমে পড়া উচিত। আরোহী ছিলাম পাঁচজন। সবাই নেমে পড়লাম। ওযু-ইস্তেঞ্জা সেরে যখন মসজিদে ঢুকলাম তখন ইকামত শুরু হয়ে গেছে। এরপর নামাযে ইমাম সাহেবের তেলাওয়াত শুরু হলে শংকিত হয়ে পড়লাম। শংকা ও সংশয় চেপে বসতে চাইল মনে, নামায কি ছেড়ে দিতে হবে? সব মুসল্লীর নামাযসহ আমাদের নামাযের অবস্থাও কি ‘কাহিল’ হয়ে যাবে? দুরু দুরু বুকে পুরো নামায শেষ হল। এ সফর-কাফেলায় ছিলেন ঢাকার একজন মুহাদ্দিস, লেখক। নামাযের পর কথা বলে জানলাম, তার হৃৎপিণ্ডের লাফালাফিও বেড়ে গিয়েছিল নামাযের মধ্যে।

মুসাফির হওয়ার সুবিধা থাকায় জামাতের পর দেরি না করে আবার মাইক্রোতে চেপে বসলাম সবাই। রংপুরে গিয়ে খানা খাবো এবং বিশ্রামের জন্য হোটেলে উঠবো। মাইক্রোতে উঠার আগমুহূর্তে অভ্যাসবশত পান কিনলাম, খেলাম ও নিয়ে নিলাম। এই পান কিনতে গিয়েই চট করে কয়েকটি বিষয় একসঙ্গে আমার খেয়াল হল। যে মসজিদটিতে আমরা জুমার নামায পড়েছি সেটি ওযু-ইস্তেঞ্জার পরিসরসহ একটি মাঝারি নির্মাণশৈলীর সুন্দর নিদর্শন। মসজিদটির অবস্থান একটি বাজারের পাশে। কিন্তু জনসমাগমের অবস্থানগত বিচারে সে মসজিদে জুমার জামাতে সমাগত মুসল্লীর সংখ্যাকে পর্যাপ্ত বলা যায় না। বারান্দার দু তিনটি কাতারের সব ক’টি পূর্ণ হয়নি। এ দেশের যে কোনো শহর-নগর কিংবা বাজার এলাকায় এ রকম চিত্র সাধারণত দেখা যায় না। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, নামাযের আগে ততটা লক্ষ্য না করলেও নামাযের পর পর বাজারের কোনায় একটি দোকান থেকে পান কিনতে গিয়ে দেখলাম, বাজারের বহু দোকানঘর তখনও খোলা। অর্থাৎ জুমার নামাযের সময় অধিকাংশ বিক্রেতা দোকান বন্ধ করে মসজিদে আসার জন্য প্রস্তুত হননি এবং বাজার জুড়ে ইতস্ত বিক্ষিপ্ত মানুষের পদচারণা ও মোটামুটি ভিড় দেখে বুঝা গেল, কেবল বিক্রেতা নয়, বাজারে আসা ক্রেতা, পাইকার ও ফড়িয়াদেরও বড় অংশটি মসজিদমুখো হননি। অতএব অন্যান্য দিনের নামাযের বিষয়টিও এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে। তৃতীয় বিষয়টি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, এত সুন্দর একটি মসজিদে জুমার নামাযে যিনি ইমামতি করেন তার তেলাওয়াতের অবস্থা মারাত্মক সংকটাপন্ন। অবশ্য নামায শেষে ঘুরে দাঁড়িয়ে কিছু ঘোষণা দেওয়ার সময় তাকে দেখে তার অবয়ব ও বেশভূষায় চোখে বিঁধবার মতো কিছুই পাওয়া যায়নি।

ঘটনাটি এই দু’ হাজার নয়ের মার্চ-এপ্রিলের। ওই সফরে এবং পরবর্তীতে আরো খোঁজখবর নিয়ে যতটুকু জানা গেছে, দু’ তিনটি জেলা বাদ দিলে গোটা উত্তরবঙ্গের অবস্থাই এখন এ রকম যে, এ দেশের মুসলিম জনসাধারণের মাঝে নামায-রোযার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার যে চিত্রটি দশ-পনের বছর আগেও দেখা যেত সেটি এখন সেখানে দ্রুত ধুসর হয়ে যাচ্ছে। বহু জায়গায় ইমামতি করার পর্যায় ও অবস্থানে থাকা লোকদের তেলাওয়াত পর্যন্ত সহীহ নেই। এ বিষয়ে ভাবনা হয়তো অনেকেরই রয়েছে, কিন্তু কার্যকর উদ্যোগেরও যে শূন্যতা রয়েছে তা তো বলার প্রয়োজন নেই। দুই . একই বিষয়ের অথচ ভিন্ন অঞ্চলের আরো ছোট্ট দু’টি অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে চাই। চার থেকে পাঁচ বছর আগের ঘটনা। নিছক ঘুরে ফিরে দেখা ও বেড়ানোর জন্যই গিয়েছিলাম নেত্রকোণার সুসং দুর্গাপুরের গারো পাহাড়ের একদম পাদদেশে। দুর্গাপুর শহর হয়ে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে গেলাম বিজয়পুরে। বিজয়পুর মোড়, সাদামাটির (সিরামিকের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত) পাহাড়, গারোদের গুচ্ছগ্রাম, বিডিআর ক্যাম্প এবং টিলাটক্কর ও ফসলের ক্ষেতের ফাঁকে ফাঁকে নির্জনে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ি-ঘরের পাশে হেঁটে হেঁটে দিন কাটালাম। বিডিআর ক্যাম্পের ভেতরে তাদের নিজস্ব মসজিদে জোহর এবং ফিরে আসার সময় বিজয়পুর মোড়ের মসজিদে আসরের নামায পড়লাম। ওই অঞ্চলে গারোদের অবস্থানই প্রবল। তবুও মুসলিম অধিবাসীর সংখ্যা সেখানে কম নয়। গারোদের একান- নিজস্ব পরিমণ্ডলগুলোতে ‘খানাপিনা’ ও চালচলনে তাদের জীবনাচার ও সংস্কৃতির প্রাধান্য থাকাই হয়তো স্বাভাবিক। সেখানে সেটাই হয়। ধর্মীয় ক্ষেত্রে অবশ্য তাদের বড় অংশই এখন খৃষ্টান মিশনারীদের দ্বারা প্রভাবিত। সে অঞ্চলে দু’শ বছরেরও প্রাচীন ও সক্রিয় গির্জা রয়েছে বেশ কয়েকটি। খৃষ্টান মিশনারী কাজের সঙ্গে গভীর সংস্পর্শ রয়েছে-এমন দু একটি বিশেষায়িত এনজিওর কাজ সেখানে চোখে পড়ার মতো। ফিরে আসার সময় কর্মসূত্রে সেখানেই বসবাস করেন এমন এক আত্মীয়কে সে অঞ্চলের মুসলমানদের জীবনাচার নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে যা জানতে পারলাম তা হচ্ছে, সেখানে মুসলিম যে ক’টি পরিবার বাস করে তাদের সীমিত একটি অংশ সাধারণ পর্যায়ের ‘ধর্মকর্ম’ নিয়ে চলেন কিছুটা অমুসলিম দেশে প্রবাসী মুসলিমদের মতো করে নিরীহ ও নির্বিরোধ কায়দায়। আর তাদের বড় একটি অংশই পারিবারিক সূত্র ও জন্ম-মৃত্যুর আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া মুসলিম পরিচিতির তেমন কোনো চিত্র বহন করেন না। গারো উপজাতি অধ্যুষিত সীমান- অঞ্চলের শিথিল সমাজ কাঠামোর ‘সুবিধা’ তারা ‘খানাপিনা’, জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিধাহীনভাবে ভোগ করে থাকে এবং এই ভোগাচারের পর্যায়গুলোতে আশপাশের সমতলের বখে যাওয়া বহু মুসলিম তরুণও অংশ নিয়ে থাকে। সেখানে তাদের ওপর প্রভাব বিস-ারী সার্বক্ষণিক কোনো দাওয়াতী ও তালীমী তৎপরতার ব্যবস'ার কথা জানতে পারিনি।

মাসখানের আগে ঈদুল আযহা উপলক্ষে ময়মনসিংহ গেলাম। আমার বেড়ে উঠার এলাকার এক তরুণ আলেম বন্ধু জানালেন, ময়মনসিংহ শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডের নদীর পাড়ঘেঁষা নিম্নবিত্ত মানুষের জনপদগুলোতে এখন প্রায় প্রতি ঘরে নারীদের মাঝে ওই অঞ্চলের একটি খৃষ্টান মিশনারী ভবনের প্রভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন আর্থিক ও উপায়-উপকরণগত সুবিধা দিয়ে তাদেরকে বিভিন্নভাবে মোহগ্রস- করে ফেলা হয়েছে। সপ্তাহে একদিন সব বিবেচনাতেই অশিক্ষিত এই মুসলিম গৃহিনীদের ডেকে নিয়ে মিশনারী ভবনটিতে মজলিস করা হয়। পবিত্র কুরআন শরীফ আর ইঞ্জিল শরীফ (বাইবেল) থেকে তরজমা করে বিকৃত সরলীকরণ করে বুঝানো হয়-ব্যাপার একই, দুই ধর্মের আসল বিষয়গুলোতে কোনো ভিন্নতা নেই।’ আলেম বন্ধুটি কথাগুলো দূর থেকে শুনে আমাকে জানিয়েছেন ঘটনা এমন নয়। তার নিজের বসবাসও কাছাকাছি অঞ্চলে। মিশনরী কর্মীদের সঙ্গে উঠাবসা করা মুসলিম মহিলারা এ বিষয়গুলো অত্যন- নির্বিকার ও সবজান-ার ভঙ্গিতে ব্যক্ত করে থাকে তরুণ আলেমের স্ত্রীর সঙ্গে। বিভিন্ন আলাপচারিতার ফাঁকে তিনি তার স্ত্রীর কাছ থেকে শোনা সেই কথাগুলোই আমাকে বলেছেন। সেখানেও ওই মহিলাদের মাঝে কিংবা তাদের স্বামীদের মাঝে হকের পক্ষে সচল কোনো বোধ ও উপলব্ধি জাগানিয়া কাজ নেই বলেই জানা গেছে।

তিন. এতক্ষণের আলোচনায় উত্তরবঙ্গসহ কাছাকাছি অপর দুটি অঞ্চলের কথা উঠে এসেছে। এ ক্ষেত্রগুলোতে দাওয়াত ও তালীমের ব্যাপকতা না থাকা, সেবামূলক প্রোগ্রামের মাধ্যমে দাওয়াতী কাজের তৎপরতার অভাব এবং খৃষ্টান মিশনারী তৎপরতার চিত্র ফুটে উঠেছে। বলা যেতে পারে, এ ক’টি অঞ্চলের কথা এ ক্ষেত্রে উদাহরণের মতো উল্লেখ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ এদেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা, প্রান্তিক অঞ্চল, গহীন গ্রাম এবং শহর-নগরের পিছিয়ে থাকা বহু এলাকাই এমন রয়েছে যার সঙ্গে উপরের কোনো না কোনো চিত্রের মিল রয়েছে। কোথাও কোথাও পরিস্থিতি উপরের চিত্রগুলোর চেয়েও মারাত্মক। ঐতিহ্যবাহী মুসলিম প্রধান এ দেশটি আমাদেরই দেশ। এর অন্যসব ভালোমন্দ নিয়ে কথা বলা, কাজ করার নানা আয়োজন বিভিন্ন ফোরাম থেকে চালু আছে। স্বাস্থ্যগত স্যানিটেশন, বৃক্ষরোপন, মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য, আর্সেনিক, কীটনাশকের যথাযথ প্রয়োগ, জৈব সারের ব্যবহার, নিরক্ষরতা দূরিকরণ থেকে নিয়ে এসিড-এইডস কী নিয়ে কাজ নেই! কিন্তু এদেশের দ্বীনী অবস্থার ক্ষয় ও অগ্রগতি নিয়ে কাজে নিমগ্ন হওয়ার জন্য প্রশাসন, প্রধান রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক মহল, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা বিত্তবান ও উচ্চস্তরের ব্যবসায়ী শ্রেণীর কারো মাঝে তেমন কোনো উদ্যোগ-উদ্বেগ দেখা যায় না। এ দায়িত্ব তাই তাদেরই ওপর বর্তায় কিংবা তাদেরই নিতে হয় যারা দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত এবং দ্বীনী তালীমের প্রচার ও বিস্তারের সঙ্গে বিশ্বাস ও হৃদয়ের ডাকে জড়িত। এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয়টি হচ্ছে, এ আলোচনায় দেশের শিক্ষিত মহল বা নগর জীবনে ধর্মীয় বিষয়ে নতুন নতুন যেসব সংশয় ও ফেতনার সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল সেদিকটির পরিবর্তে কেবল উপেক্ষা ও মনোযোগের অভাবের শিকার কিংবা সাদাসিধা অল্প মেহনতে যাদেরকে দ্বীনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার পথ খোলা রয়েছে তাদের বিষয়েই উদ্যোগী ভাবনা ও কাজের ক্ষেত্র চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তা না হলে বলতেই হবে যে, দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় নিলে এর তাকাযার পরিধি অনেক অনেক স্ফীত। সুতরাং দাওয়াত ও তাবলীগ, ইসলাহে উম্মাহ এবং দ্বীনী তালীমের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত সৌভাগ্যবান ব্যক্তিবর্গ ও মহল প্রাধান্যের ভিত্তিতে আরো কিছু কর্মক্ষেত্র ও ময়দান নির্ধারিত করতে পারেন। মনোযোগ ও প্রাধান্যের এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে বহুবিধ উপকার দৃশ্যমান হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান।

চার. উত্তরবঙ্গে দ্বীনী দাওয়াত ও তালীমের চাহিদা এবং পরিস্থিতি নিয়ে উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিল মাদরাসাসহ বগুড়া, রংপুর ও দিনাজপুর এলাকার সক্রিয় ও সমাজঘনিষ্ঠ কয়েকজন বিশিষ্ট আলেমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের এমন বহু নিভৃত অঞ্চল রয়েছে যেখানে দাওয়াত ও তাবলীগের সফর বিরামহীনভাবে অব্যাহত থাকা দরকার। যোগাযোগ ও অবস্থান সুবিধা-অসুবিধার নিরিখে সমস্যাসঙ্কুল হলেও সেসব স্থানে দাওয়াতী কাজের চাহিদা তীব্র। কালেমায়ে তাওহীদ শেখানো আর নামাযের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক স্থাপনের আগ্রহ তৈরির জন্য সেসব স্থানে দাওয়াতী কাজ বিরামহীনভাবে না চালানো হলে বহু মানুষের ক্ষেত্রে মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়ে আবার মুসলিম গোরস্থানে দাফন হওয়া ছাড়া অন্য কোনো ইসলামী আমল বা আগ্রহের ঘটনা হয়তো ঘটবে না। প্রাথমিক দাওয়াতী মেহনতের পাশাপাশি উপেক্ষিত ও প্রান্তিক অঞ্চলের বহু জায়গায় দরকার জরুরি বুনিয়াদী দ্বীনী শিক্ষা ও কুরআন শরীফের সহীহ তেলাওয়াত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা। এ ব্যবস্থাপনাটিও আবার দু’ভাবে করা যায়। এক. নিভৃত গ্রাম থেকে নিয়ে অবহেলিত অঞ্চলগুলোতে ইমামতের দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিবর্গের মাঝে। দুই. আমভাবে জনসাধারণ পর্যায়ে মসজিদভিত্তিক বুনিয়াদী দ্বীনী বিষয় ও সহীহ কুরআন শরীফ শিক্ষাদানের কোর্স করা। এ বিষয়ে সহীহ কুরআনী তালীমের বিস্তার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো সক্রিয় হলে অধিকতর ফায়েদা হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন ওই অঞ্চলের কোনো কোনো আলেমেদ্বীন। তাদের মতে উপযুক্ত মুয়াল্লিমদের কাজে লাগানো এবং এ বিষয়ক সহস্র ক্ষেত্রে তাদেরকে নিয়মিত ও নিশ্চিন্ত খেদমতে নিয়োজিত করার ব্যবস্থাপনায় দাওয়াতী কাজে সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসা বিত্তবান দাঈ মুসলিম ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে এলে গৃহীত উদ্যোগ ও প্রোগ্রামকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত সচল রাখার উপায় তৈরি হতে পারে। তা না হলে তাৎক্ষণিকভাবে আন্তরিক দরদ নিয়ে শুরু করে দেওয়ার পরও বহু তালীমী প্রোগ্রাম মাঝপথে থমকে যায়। উত্তররঙ্গের দু’জন আলেমেদ্বীন সে অঞ্চলে দাওয়াতুল হকের কাজ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার ওপর জোর দেন। দাওয়াতুল হকের কাজ সেসব অঞ্চলে যারা অন্তর লাগানো মেহনত করে সমপ্রসারিত করার চেষ্টা করছেন তারাও সীমিত একটি আওতার বাইরে কাজটিকে ছড়িয়ে দেওয়ার পর্যায়ে যাননি। এর পেছনে সামর্থ ও সময়ের সীমাবদ্ধতা এবং নিজস্ব সূত্র ও ধারার আনুকূল্য রক্ষার বিষয়টিকেও কেউ কেউ বড় কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। তারপরও দাওয়াতুল হকের কাজ শুরু হলে এবং সব পর্যায়ের মুরব্বীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলে সেসব অঞ্চলের মুসলমানদের জীবনযাত্রার একটি উজ্জ্বল অবয়ব অল্প সময়ের মধ্যে সামনে চলে আসার সম্ভাবনা ব্যাপক।

উত্তরবঙ্গ ও গারোপাহাড় অধ্যুষিত সুসং দুর্গাপুর এবং ময়মনসিংহ শহরের নদীর পাড়ঘেঁষা মিশনারী তৎপরতার আওতাভুক্ত এলাকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ইমাম সাহেব বেশ কিছু বাস্তব প্রেক্ষাপট ও উদাহরণ তুলে ধরে প্রতিটি অবহেলিত জনপদে দাওয়াতী ও তালীমী কাজের পাশাপাশি সেবামূলক নানা পদক্ষেপ ও প্রোগ্রাম গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন। দ্বীনী গায়রত ও জযবা যাদের হৃদয়ে গ্রোথিত নয়, যারা পরিবারের ভেতর থেকেই দ্বীনী শিক্ষার আলো বা পরশ পাননি এবং কর্মজীবনে দ্বীনী কোনো পরিমণ্ডলের সঙ্গে যাদের কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি তাদের বড় অংশটিই এখন বিচিত্র কারণে দ্বীনদারিমুক্ত ও মিশনারী প্রভাবের বলয়ভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। তাদের মাঝে দাওয়াতী ও তালীমী কাজের পাশাপাশি নগদ অর্থঋণ, অর্থ সহায়তা, চিকিৎসা সহায়তা, গৃহ নির্মাণে ঋণ সহযোগিতা, প্রাথমিক শিক্ষা সহায়তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতা ও সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করলে স্থায়ী ও ব্যাপক সুফলের আশা করা যায়।

দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণ, বিস্তার ও দ্বীনী দাওয়াতের মেহনতের সঙ্গে সংযুক্তি নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দেওয়া অসীম সৌভাগ্য ও বরকতময় তাওফীকের বিষয়। যারা এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত, কুরবানী, ইখলাস ও মেহনত তাদের জীবন-বৈশিষ্ট্য। তাদের বিপুল শ্রমের স্রোতের মাঝে এ লেখায় বর্ণিত কিছু কিছু বিষয় ও চিত্র এবং ব্যক্ত কিছু মতামতের প্রতি বিবেচনা খড়কুটোর মতোও ভাসমান বা দৃশ্যমান হলে জোর আশা করায় অতিশয়তা নেই যে, ইনশাআল্লাহ দাওয়াতী, তালীমী ও সেবার বহুমুখি প্রচেষ্টায় উম্মাহর এই অংশের সব ক’টি স্তর, পর্যায় ও অঙ্গনেও পবিত্রতা ও উজ্জ্বলতায় দ্যুতিময় হয়ে উঠবে।

 

advertisement