Rabiul Auwal-Rabiul Akhir 1434   ||   February 2013

ধৃ ষ্ট তা : পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে

Abu Tashrif

গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে বোরকা পরা ২০ জন মহিলা বন্দীকে ঢাকার আদালতে আনার সময় তাদের শরীর থেকে বোরকা খুলে নেওয়া হয়। আদালতভরা পুরুষের সামনে বোরকাছাড়া থাকতে তাদের বাধ্য করা হয়। এরপর হাজতখানায় কিছুক্ষণ রাখার পর তাদের পুনরায় গাজীপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ দীর্ঘ সময়কাল বোরকা পরায় অভ্যস্ত নারীরা হাজার হাজার পুরুষের সামনে সম্পূর্ণ অনিচ্ছায় ও অপারগ হয়ে বোরকাহীন চলাফেরা করতে বাধ্য হন।  বেদনাদায়ক এ ঘটনাটি ঘটে গত ৭ জানুয়ারি। ঢাকার একটি পত্রিকায় খবরটি ছাপা হয় ৮ জানুয়ারি।

জানা যায়, গত ১৭ ডিসেম্বর ঢাকার মগবাজার থেকে এই ২০ নারীকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারা সরকার বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের মহিলা শাখার নেত্রীকর্মী। ওই দলটির প্রতি আমাদের বিশেষ কোনো দুর্বলতা নেই। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অনেক অভিযোগ রয়েছে বলেও জানা গেছে, কিন্তু তারা কে কতটুকু মারত্মক অপরাধী কিংবা অপরাধশূন্য-এটা এখন আমাদের বিবেচনার বিষয় নয়। তারা যদি মারাত্মক অপরাধীও হন, আর তার সঙ্গে হন ইসলামের পর্দাবিধির অনুসারী হিসেবে বোরকায় অভ্যস্ত তাহলে আমরা বলতে বাধ্য, সীমাহীন ধৃষ্টতাপূর্ণ একটি ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কোনো বোরকাপরা মুসলিম নারীর (সে অপরাধী সাব্যস্ত হলেও) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্যোগে তার বোরকা খুলে নেওয়ার কোনো আইনগত ও নৈতিক বৈধতা নেই। এই মুসলিম প্রধান দেশে এটা চরম উস্কানিমূলক সীমালংঘনের দৃষ্টান্ত।

বোরকা পরায় অভ্যস্ত কোনো মুসলিম নারী তিনি যে দলই করুন, যে অভিযোগের শিকার বা অপরাধে দোষী সাব্যস্তই হন-তার বোরকা জোর করে খুলে নেওয়ার বিষয়টি কোনো মানবিক বিবেচনায় সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। একদিন যদি এমন সময় আসে যে, মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী কিংবা দীপুমনি কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রী কিংবা বোন বোরকা পরতে শুরু করেন শরীয়ানীতি অনুসরণের ভিত্তিতে (কৌশল হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য ছদ্মবেশ ধরে স্থানান্তরের জন্য নয়) এরপর তারা গ্রেফতার হন এবং কঠিন কঠোর শাস্তিরও মুখোমুখি হন তখনও আমরা বলতে বাধ্য হব যে, তাদের বোরকা খুলে নেওয়া যাবে না। কারণ এটা তাদের অবলম্বনকৃত শালীনতার ভূষণ। এটা শরীয়ানীতির প্রতি তাদের আত্মসমর্পণ ও বরণের উজ্জ্বল উদাহরণ। এটাকে অপমান করা বা খাটো করার কোনো অবকাশ নেই। এখানে দল-মত, অভিযোগ-অপরাধ কোনো অজুহাত হতে পারে না। বোরকার সঙ্গে শত্রুতা মানে দ্বীনের সঙ্গে শত্রুতা। বোরকা খুলে ফেলা মানে নারীর আবরণ খুলে ফেলা। কোনো নারীর প্রতি এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করার অধিকার কার রয়েছে? কার থাকতে পারে?

জোর করে বোরকা খুলে নেওয়ার ঘটনায় নীরব অনেক মানবাধিকার ও নারিবাদী সংগঠন ভেতর ভেতরে তাদের নীরবতার পক্ষে একটি যুক্তির চর্চা করে বলে শোনা যায়। তারা মনে করে, বোরকা তো অপ্রয়োজনীয় একটি বাড়তি পোশাক, এটিতো মূল পোশাক নয়। খুলে নিলেই এমন কী ক্ষতি! মূল পোশাক আর বাড়তি পোশাকের বিষয়টিতে নিজেদের চোখে সবাইকে দেখলে চলা যাবে না। তা হলে অনেক বড় মুশকিলের ব্যাপার ঘটবে। কেন ঘটবে-একটু শুনুন। এডভোকেট সুলতানা কামাল বোরকা পরেন না। এখন কল্পনা করি, কোনো কারণে পশ্চিমা কোনো দেশে তাকে গ্রেফতার করা হলো। এরপর তার অভ্যস্ততার পোশাক খুলে নিয়ে তাকে শর্টস ও গেঞ্জি পরিয়ে (পশ্চিমা সমাজে ব্যাপক প্রচলিত নারীদের পোশাক) কোর্ট ও কারাগারে আনা-নেওয়া করা হল। জনসমক্ষে ছোট্ট দু’টুকরা কাপড়ে তাকে ঘন্টার পর ঘন্টা থাকতে বাধ্য করা হল। মিডিয়ার লোকেরা তার ছবি তুলল। এতে কী তার কোনো রকম অস্বস্তি হবে না? তখন কী বলে তিনি প্রতিবাদ করবেন? বলবেন যে, আমার পোশাক খুলে নিয়ে আমাকে ‘প্রায় নগ্ন’ থাকতে বাধ্য করা হয়েছে? কোন্ যুক্তিতে এ কথা বলবেন? ওই দেশের পুলিশের লোক, কোর্ট, মিডিয়া ও সুশীলরা তো বলবে-না, ওনার গায়ে তো বাড়তি পোশাক ছিল। শাড়ী, শায়া, ব্লাউজের কী প্রয়াজন? দু’টুকরা কাপড়ই   তো আমাদের নারীদের প্রচলিত সুন্দর পোশাক।’ সুতরাং মানবাধিকারবাদী ও নারীবাদী কর্তাকর্ত্রীরা এ বিষয়ে নিজের চোখে অন্যের প্রয়োজন দেখার ভুল যুক্তি ও দ্বিচারিতা ছাড়ুন।

এ সরকারের আমলে প্রথম বছরেই পিরোজপুরের জিয়ানগরে মিথ্যা অভিযোগে কয়েকজন মাদরাসার ছাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আদলত চত্বরে তাদেরও বোরকা খুলে নেওয়া হয়েছিল। এখন আরও কয়েকজন নারীর বোরকা খুলে নেওয়া হল। এ আমলেই উচ্চ আদলতের একটি বহু বিতর্কিত ও নিন্দিত বেঞ্চ থেকে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না-বলে সুয়োমুটো রুল জারি করা হয়েছে।

এর পরপরই ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্কুলে ছাত্রীদের বোরকার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনাও ঘটেছে। বোরকা, টুপি, দাড়ি যেন বর্তমানে এদেশে একশ্রেণীর মানুষরূপী শয়তানের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে । এসব শালীন, সুন্দর প্রতীক দেখলেই তাদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়।

মুষ্টিমেয় শেকড়ছাড়া এ শ্রেণীর লোকদের আমরা একটি কথা মনে করিয়ে দিতে পারি যে, অশ্লীলতা ও অনৈতিকতার দিক থেকে এ দেশ এখনও ফ্রান্স, ইটালি কিংবা লন্ডন হয়ে যায়নি। বার বার বোরকায় হাত দিয়ে এখানে কেউ স্বচ্ছন্দ সময় পার করতে পারবেন না। বোরকা দেখে গায়ে জ্বালা ধরলে লাখ লাখ মসজিদ আর কোটি কোটি বোরকাপরা নারীর এ দেশ ছেড়ে  তারা অন্য  কোনো দেশে পাড়ি দেওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করতে পারেন। এতে তাদের গতরের জ্বালা মিটতেও পারে। ষ

 

advertisement