Rabiul Auwal-Rabiul Akhir 1434   ||   February 2013

হাদীস শরীফে নারী : অন্ধকারে আলোর পরশ

আবু আদনান মুহাম্মাদ আবদুল মাজীদ

عن ابن عمر قال سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يحدث حديثا لو لم أسمعه إلا مرة أو مرتين حتى عد سبع مرات ولكني سمعته أكثر من ذلك سمعت رسول الله صلى الله عليه  وسلم يقولم كان الكفل من بني إسرائيل لا يتورع من ذنب عمله فأتته امرأة فأعطاها ستين دينارا على أن يطأها فلما قعد منها مقعد الرجل من امرأته ارعدت وبكت فقلا ما يبكيك أأكثرهتك قالت لا ولكنه عمل ما عملته قظ وما حملني عليه إلا الحاجة فقال تفعلين أنت هذا وما فعلته اذهبي فهي لك وقال لا والله لا أعصي الله بعدها أبدا فمات من ليلة فأصبح مكتوبا على بابه أن الله قد غفر للكفل.

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক দুইবার বা পাঁচ-সাতবার নয়; বরং এর চেয়েও বেশিবার আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, বনী ইসরাঈলে কিফ্ল নামে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিল। সে কোনোরূপ গুনাহের কাজ ছাড়ত না। একবার এক মহিলা (অভাবে পড়ে) তার কাছে এল, সে ব্যভিচারের শর্তে তাকে ষাট দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিতে রাজী হল। (নিরুপায় হয়ে মহিলাটিও রাজী হয়ে গেল) কিফ্ল যখন (নির্জনে) মহিলার সাথে তার শর্ত পূরণে উদ্যত হল তখন মহিলাটি (আল্লাহর ভয়ে) প্রকম্পিত হয়ে কেঁদে ফেলল। লোকটি বলল, কাঁদছ কেন? তোমাকে কি আমি জবরদস্তি করছি? মহিলা বলল, না, তবে গুনাহের কাজ আমি কখনো করিনি। আজ শুধু অভাবের তাড়নায় এতে বাধ্য হয়েছি। লোকটি বলল, অভাবের তাড়নায় পড়ে এসেছ, অথচ কখনও তা করনি? যাও, তোমাকে ছেড়ে দিলাম। দিনারগুলোও তোমারই। সে আরো বলল, আল্লাহর কসম, ভবিষ্যতে আমিও কখনও আল্লাহর নাফরমানী করব না। সে রাতেই কিফ্ল মারা গেল। সকালে দেখা গেল তার ঘরের দরজায় লেখা-

أن الله قد غفر للكفل

আল্লাহ তাআলা কিফ্লকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।-সুনানে তিরমিযী /৭৬

সুবহানাল্লাহ! মহিলার কী অপূর্ব খোদাভীতি! বস্ত্তত আল্লাহ-ভীতিতে যাদের হৃদয় পরিপূর্ণ থাকে এবং গোনাহ পরিহার করার ব্যাপারে যাদের বিবেক সদা জাগ্রত থাকে, তাদের হালত এমনি হয়ে থাকে। একারণেই হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, তাকওয়া হল অন্তরের বিষয়। অন্তরে খোদাভীতি থাকলে কর্মে তার প্রভাব পরিলক্ষিত হবেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উম্মতকে প্রসঙ্গে একটি দু শিখিয়েছেন-

اللهم اجعل سريرتي خيرا من علانيتي واجعل علانيتي صالحة.

হে আল্লাহ! আমার ভিতরকে আমার বাইরের চেয়েও সুন্দর করে দাও, আর আমার বাহিরকেও ভাল করে দাও।

ঘটনা থেকে আরেকটি শিক্ষণীয় বিষয় হল গোপনে নির্জনে আল্লাহকে বেশি ভয় করতে হয়। কারণ সময়ে কৃত কোনো অপরাধ সাধারণত মানুষ জানার ভয় থাকে না বিধায় মানুষ নিঃসঙ্কোচে গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, যদি আল্লাহর ভয় অন্তরে না থাকে। বস্ত্তত সর্বোচ্চ গোপনীয়তার মাঝেও যাদের হৃদয় আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত থাকে তারাই খাঁটি মুত্তাকী।

তৃতীয়ত যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হল বিপদাপদ এবং চরম সংকট অভাব-অনটনের মুহূর্তে কষ্টের বাহানায় হারামে লিপ্ত হওয়া জায়েয নেই। বরং এর আসল প্রতিকার হল ধৈর্য নামায।

প্রখ্যাত হাদীস ব্যাখ্যাতা ইমাম নববী রাহ. লেখেন, সোহবত বা সান্নিধ্যের প্রভাব স্বভাবের উপর অত্যন্ত কার্যকরী হয়। তাই অসৎসঙ্গ বর্জন নেককারের সাহচর্য অবলম্বন করা খুবই জরুরী। হাদীস শরীফে তাকে সর্বোৎকৃষ্ট সঙ্গী বলা হয়েছে, যাকে দেখলে আল্লাহ তাআলার কথা স্মরণ হয় এবং যার কাজ-কর্ম পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বক্ষ্যমান হাদীসটিতে লক্ষ্য করুন একজন নেককার মহিলার খোদাভীতির প্রভাবে বিখ্যাত বদকারকিফ্লকেমন তাওবা ক্ষমার অধিকারী হলেন! সৌভাগ্য সাফল্যের কত উচ্চ শিখরে আরোহণ করলেন। সারা জীবন পাপের জগতে হাবুডুবু খেয়ে জীবনসায়াহ্নে তওবার মাধ্যমে পাপ-পঙ্কিলতার সব কালিমা থেকে পবিত্র হওয়ার বিরাট সৌভাগ্য লাভ করলেন এবং ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে প্রভুর সামনে হাজির হওয়ার মহা প্রাপ্তিতে চির ধন্য হলেন।

পর্যায়ে আমরা হাদীসে বর্ণিত আরেকটি ঘটনা স্মরণ করতে পারি, যাতে আমাদের কাছে তাকওয়ার স্বরূপ আরো ভালভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘পূর্বেকার যামানায় এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তি হতে এক খন্ড জমি ক্রয় করেছিল। জমি ক্রয় করে বুঝে নেওয়ার পর ক্রেতা জমিতে মাটির নীচে স্বর্ণ ভর্তি একটি কলসী পেল। তৎক্ষণাৎ ক্রেতা বিক্রেতাকে তা ফেরত নিতে অনুরোধ করে বললো, আমি তোমার থেকে শুধু জমি ক্রয় করেছি, স্বর্ণ ক্রয় করিনি। বিক্রেতা বলল, আমি জমি বিক্রয় করলেও তাতে বিদ্যমান সব কিছু এর অন্তর্ভুক্ত ছিল বিধায় সেগুলোতেও বিক্রির হুকুম সাব্যস্ত হয়ে গেছে। অতএব মাল আমার জন্য ফেরত নেওয়া বৈধ হবে না। অতঃপর তারা উভয়েই তৃতীয় এক ব্যক্তির দারস্থ হল এবং নিজেদের সমস্যার সমাধান চাইল। তিনি বললেন, তোমাদের কি ছেলে মেয়ে আছে? একজন বলল, আমার একটি ছেলে আছে। অপরজন বলল, আমার একটি মেয়ে আছে। মীমাংসাকারী বললো, তোমার মেয়েকে তোমার ছেলের সাথে বিবাহ দিয়ে দাও আর প্রাপ্ত স্বর্ণের মধ্যে কিছু তাদের বিবাহে ব্যয় কর এবং অবশিষ্ট অংশ তাদেরকে বণ্টন করে দাও। -সহীহ বুখারী /৪৯৪ কিতাবুল আম্বিয়া

আল্লাহ আমাদেরকে জাহেরী-বাতেনী সব ধরনের তাকওয়া দান করুন। আমীন। ইয়া রাববাল আলামীন।

 

 

advertisement