Zilhajj 1433   ||   November 2012

খোশখবর : আলহামদুলিল্লাহ, ফযলুল বারী’র তৃতীয় খন্ড প্রকাশিত হয়েছে

আলহামদুলিল্লাহ। দীর্ঘদিন পর শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রাহ. কর্তৃক সংকলিত শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাববীর আহমদ উসমানী রাহ.-এর তাকরীরে বুখারী ফযলুল বারীর তৃতীয় খন্ড প্রকাশিত হয়েছে। ‘‘ফযলুল বারীর’’ প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৯৩ হিজরী মোতাবেক ১৯৭৩ ঈসায়ীতে এবং দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৯৫ হিজরী মোতাবেক ১৯৭৫ ঈসায়ীতে। এখন সুদীর্ঘ আটত্রিশ বছর পর আল্লাহর ফযলে তৃতীয় খন্ড প্রকাশিত হল।

সংকলন ছাপার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

১৩৬২ হিজরীতে শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রাহ. শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাববীর আহমদ উসমানী রাহ.-এর কাছে বুখারী শরীফ পড়ার জন্য ভারতের সূরাত জেলার ডাভেল এলাকায় অবস্থিত জামিআ ইসলামিয়া ডাভেল মাদরাসায় গমন করেন। বছরের শুরু থেকেই তিনি হযরতের দরসে বুখারীর তাকরীর অত্যন্ত গুরুত্ব, নিষ্ঠা ধৈর্য্যের সাথে লিখতে থাকেন এবং বছরের শেষ পর্যন্ত কাজ আঞ্জাম দিয়ে যান।

শুরুর দিকে একদিন লিখিত তাকরীরের কিছু অংশ তিনি হযরতের খেদমতে পেশ করেন। হযরত তখন একটা বালিশে হেলান দেওয়া ছিলেন। তাকরীর দেখে এতটা আনন্দিত হন যে, হেলান ছেড়ে সোজা হয়ে বসে যান এবং তাঁর খাদেমকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘মৌলবী ইয়াহইয়া! দেখ, মৌলবী আজিজুল হক তো কাজের কাজ করেছে। আমার তাকরীরগুলো হুবহু লিখে নিয়ে এসেছে।

থেকে বোঝা যায়, তিনি তাকরীর সংকলনে কতটা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। হযরত মাওলানা মুফতী তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম খন্ডের তাকরীযে লিখেছেন, অনেক মানুষই হযরত শায়খুল ইসলাম রাহ.-এর দরসে বুখারীর তাকরীর লিপিবদ্ধ করেছেন। কিন্তু শায়খুল হাদীস বর্তমান বাংলাদেশের শায়খুল কুল হযরত আল্লামা আজিজুল হক ছাহেব ডাভেলে তাঁর দরসে বুখারীর তাকরীরগুলো যতটা গুরুত্ব যত্নের সাথে লিপিবদ্ধ করেছেন তাকরীরসমূহের অন্য সংকলনগুলোতে এর কোনো নজির পাওয়া যায় না।

বিখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ আল্লামা আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ. মুকাদ্দিমাতু ফাতহিল মুলহিমের ভূমিকায় (যা তাঁর সম্পাদনায় ‘‘মাবাদিউ ইলমিল হাদীস উসূলিহী’’ নামে প্রকাশিত হয়েছে।) ফযলুল বারী সম্পর্কে লিখেছেন-

وقد جمع غير واحد من تلامذته العباقرة أماليه في درس صحيح البخاري بلغة أردو، وأجمع وأحسن تلك المجاميع فضل الباري شرح صحيح البخاري ضبطه تلميذه الفاضل الألمعي الشيخ العلامة المحدث المفسر مولانا عزيز الحق الداكوي البنغلاديشي شيخ الحديث اليوم بالجامعة الرحمانية بدكا ومؤسسها ورئيسها ... وكان الشيخ صحح ما كتبه الشيخ عزيز الحق.

অনেক ছাত্রই শায়খুল ইসলাম রাহ.-এর দরসে বুখারীর তাকরীর উর্দূ ভাষায় সংকলন করেছেন। সংকলনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ সুন্দর হলো, ‘‘ফযলুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী’’ যা তাঁরই স্নেহভাজন ছাত্র মুহাদ্দিস, মুফাসসির মাওলানা আজিজুল হক ঢাকুবী, বাংলাদেশী সংকলন করেছেন। যিনি বর্তমানে জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়া ঢাকার শায়খুল হাদীস, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। ... আর শায়খ আজিজুল হকের সংকলনটি শায়খ উসমানী রাহ. নিজেই সম্পাদনা করেছেন।

শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা সালীমুল্লাহ খান সাহেব দামাত বারাকাতুহুম বলেছেন, মাওলানা আজিজুল হক সাহেবকে আল্লাহ তাআলা উত্তম বিনিময় দান করুন। তিনি অত্যন্ত পরিশ্রম করে হযরতের দরসে বুখারীর এই তাকরীরগুলো সংকলন করেছেন এবং হক কথা হল তিনি এর হক আদায় করেছেন।

মোটকথা, তিনি অত্যন্ত সুচারুরূপে পুরো বুখারী শরীফের তাকরীর লেখার কাজ সম্পন্ন করেছেন। বছর শেষে হযরত শায়খুল ইসলাম রাহ. দেওবন্দে তাঁর বাড়িতে এসে যান। তাঁর সাথে শায়খুল হাদীস রাহ.কেও নিয়ে আসেন। হযরতের খেদমতে তিনি আরো প্রায় এক বছর অবস্থান করেন। এখানে তিনি হযরতের তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু করেন। একদিকে তিনি পরিষ্কার করে লেখার কাজ করতেন অন্যদিকে হযরত উসমানী রাহ. তা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নযরে ছানী করে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করতেন। এরপর নযরে ছানী করা অংশ পুনরায় পরিষ্কার করে লেখা হত।

এভাবে পরিষ্কার করে লেখার প্রথম ধাপটি শেষ হয়। কিন্তু নযরে ছানীর কাজ হয় মাত্র

كتاب : المناسك : باب متى يصلى الفجر

পর্যন্ত। এরপর হযরত উসমানী রাহ.-এর অসুস্থতা, পাকিস্তান আন্দোলনে অংশগ্রহণ অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে বাকি অংশের নযরে ছানী আর হয়নি। সুতরাং অংশের তাবয়ীযে ছানীও করা হয়নি।

এদিকে পরিষ্কার করে লেখার প্রথম ধাপ শেষ করার কিছুদিন পর হযরত শায়খুল হাদীস রাহ. দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার সময় পান্ডুলিপির বড় অংশ অর্থাৎ দ্বিতীয় সম্পাদনার পূর্ণ অংশ প্রথম সম্পাদনার বাকি অংশ, যা দ্বিতীয় সম্পাদনার অপেক্ষায় ছিল তা হযরত উসমানী রাহ.-এর কাছেই থেকে যায়।  পরিষ্কার করে লেখার যে অংশটুকুর দ্বিতীয় সম্পাদনা হয়েছিল তা তিনি সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। ( বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য কিতাবের ভূমিকায় দেখুন)

এর দু বছর পরই ১৩৬৬ হিজরী মোতাবেক ১৯৪৭ ঈসায়ীতে দেশভাগ হলে হযরত উসমানী রাহ. পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তাকরীরটি ছাপার কথা ভাবেন। কিন্তু ইচ্ছা পূরণ হওয়ার আগেই ১৩৬৯ হিজরীতে তাঁর ইন্তেকাল হয়ে যায়।

হযরতের ইন্তেকালের পর এই পান্ডুলিপি চলে আসে তাঁর ভাই ফযলে হক উসমানীর কাছে। তাঁর কাছ থেকে মাওলানা কাযী আবদুর রহমান রাহ. মালী মুয়াওয়াযা পেশ করে এই মূল্যবান পান্ডুলিপি সংগ্রহ করেন।

এরপর তিনি ফযলুল বারী নামে তা ছাপার ব্যবস্থা করেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে দু খন্ড প্রকাশিতও হয়। কিন্তু তৃতীয় খন্ড প্রকাশের পূর্বে তাঁরও ইন্তেকাল হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে পড়ে বাকি খন্ডগুলোর প্রকাশনা।

এদিকে হযরত শায়খুল হাদীস রাহ.-এর দৌহিত্র মাওলানা সাঈদ আহমদ (শিক্ষক, উলূমুল হাদীস বিভাগ, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা) দারুল উলূম করাচিতে পড়াশোনার জন্য ১৪২২ হিজরীতে করাচি গমন করেন।

যাওয়ার / দিন আগে শায়খুল হাদীস রাহ. তাকে বলেন, তুই করাচি যাচ্ছিস, ওখানে গিয়ে আমারফযলুল বারীরখোঁজ নিবি। যাদের তত্ত্বাবধানে ছাপা হচ্ছিল তাদেরকে বলবি, ‘‘আপনারা বাকি খন্ডগুলোও ছেপে দিন। আর যদি আপনাদের কোনো অপারগতা থাকে তাহলে পান্ডুলিপি আমাদের দিয়ে দিন। আমরা ছাপানোর চিন্তা করব।’’

করাচি পৌঁছে অনেক দৌড়ঝাঁপ করার পর তিনি জানতে পারেন, এই পান্ডুলিপি কাযী আবদুর রহমান সাহেব রাহ.-এর স্ত্রীর কাছে সংরক্ষিত আছে। সুতরাং তাঁর সাথে যোগাযোগ করে তার কাঙ্খিত মালী মুআওয়াযা পেশ করে এই পান্ডুলিপি হস্তগত করেন এবং দেশে শায়খুল হাদীস রাহ.-এর কাছে পাঠিয়ে দেন। এখন দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তার তাহকীক তালীকসহ ফযলুল বারীর তৃতীয় খন্ড প্রকাশিত হল।

খন্ডের জন্য তাকরীয লিখেছেন হযরত শাইখুল হাদীস মাওলানা সালীমুল্লাহ খান ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম। এছাড়া শুরুতেই রয়েছে মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম-এর ‘‘কালিমাতুশ শুকর’’ শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

বর্তমান খন্ডের বৈশিষ্ট্য

. শুরুতে একটি মুকাদ্দিমা রয়েছে। যাতে কিতাবটির বিস্তারিত ইতিহাস, হযরত শায়খুল হাদীস রাহ.-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী, পান্ডুলিপির একাধিক পৃষ্ঠার ছবিসহ গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু বিষয় স্থান পেয়েছে।

. খন্ডের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এতে তাহকীকুত তুরাছ-এর নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। খন্ডে তা- ছাপার অক্ষরে আনার চেষ্টা করা হয়েছে, যা পান্ডুলিপিতে ছিল। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, পূর্বপ্রকাশিত দু খন্ডে এই নীতিমালার প্রতি পূর্ণ লক্ষ্য রাখা হয়নি। বরং মূল তাকরীরে কিছুটা পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা হয়েছে।

. তরজমার পাশাপাশি বুখারী শরীফের মূল পাঠও উল্লেখ করা হয়েছে এবং বিষয়ভিত্তিক শিরোনামও যুক্ত করা হয়েছে।

. হাদীস আছারের তাখরীজ করা হয়েছে। নুসূসুল উলামার উদ্ধৃতিও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে টীকা সংযোজন করা হয়েছে।

যেখানে কিতাবটি পাবেন

·                    রশিদিয়া লাইব্রেরী, চকবাজার, ঢাকা

·                    জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়া মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

·                    মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া (পল্লবী, মিরপুর) ঢাকা

 

 

 

 

advertisement