ইভটিজিং-সমাধানে ইসলামের নির্দেশনা
ইভটিজিং একটি সামাজিক ব্যাধি ও জাতীয় কলঙ্ক। আমাদের সমাজে এখন তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সকলেই নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এর প্রতিকার নিয়ে ভাবছেন। আইন হচ্ছে, শাস্তি হচ্ছে, মিছিল-মানববন্ধন হচ্ছে। পত্রিকাগুলোতে কলাম, ফিচার লেখা হচ্ছে, টিভি প্রতিবেদন হচ্ছে। সকলেই চান জাতিকে এই কলঙ্ক থেকে মুক্ত করতে।
আগেই বলেছি, সকলে নিজ নিজ দৃষ্টি থেকে এর প্রতিকারের কথা ভাবছেন। কেউ একটি মত পেশ করছেন, অন্যজন তা খন্ডন করে আরেকটি পথ বাতলাচ্ছেন। এসকল মতামতের সাথে আমি আমার কোনো মত যোগ করতে চাই না। কারণ মানুষ দুর্বল, তার চিন্তা-ভাবনা পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা প্রভাবিত। ফলে তার চিন্তা-ভাবনাও দুর্বল ও অসম্পূর্ণ। তাই স্রষ্টার দেয়া সমাধান তুলে ধরাই আমার এ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য। তিনিই তো সৃষ্টি করেছেন নারী ও পুরুষ। তাদেরকে দিয়েছেন ভালো ও মন্দ স্বভাব। সুতরাং তাঁর নিকট থেকেই নির্দেশনা নিতে হবে; ভালো স্বভাবকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় এবং মন্দ স্বভাব থেকে কীভাবে বেঁচে থাকা যায়। আর তার কাছ থেকেই জানা দরকার কোন্ রোগের নিরাময় কিসে। কীভাবে আমরা বাঁচতে পারব ইভটিজিং এবং এ জাতীয় সামাজিক অবক্ষয় থেকে।
ইসলাম নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে
ইসলাম নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং এ জাতীয় সমস্যার সমাধানে আল্লাহ তাআলা নারী পুরুষ উভয়কে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, যা মেনে চললে আমরা ইভটিজিং এবং সামাজিক আরো অনেক সমস্যা থেকে বাঁচতে পারব ইনশাআল্লাহ্। এ সকল নির্দেশনার মূলকথা হলো, আল্লাহ পুরুষকে তার দৃষ্টি অবনত রাখতে বলেছেন এবং এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, যা তার অন্তরে অন্যায়ের উদ্রেক ঘটায়। পুরুষ যদি তার দৃষ্টি অবনত রাখে তাহলে ইভটিজিংয়ের আবেদনই সৃষ্টি হয় না। তেমনি নারীকেও বলেছেন তার দৃষ্টি অবনত রাখতে, যাতে তার মনেও পুরুষকে দেখে কোনো কুমন্ত্রণা না আসে এবং নারীকে আরও বলেছেন, সে যেন তার সৌন্দর্য্য ও সাজসজ্জা পর-পুরুষের সামনে প্রকাশ না করে। নারী পুরুষ উভয়েই যদি স্রষ্টার এই নির্দেশনা মেনে চলে তাহলেই পুরুষ বাঁচবে এ অন্যায় থেকে এবং পুরুষের মা-বোন নারী বাঁচবে জুলুম থেকে।
নারীর অবস্থানস্থল ও কর্মস্থল
এরপর প্রথম কথা হল, নারীর অবস্থানস্থল ও কর্মস্থল ঘর। এখানে বসেই নারী একটি সৎ ও যোগ্য জাতি নির্মাণের দায়িত্ব পালন করে। এখানেই সে বেশি নিরাপদ। সুতরাং এ কথা ভাবার কোনো অবকাশ নেই যে, যে নারী ঘরে বসে এ মহান দায়িত্ব পালন করছে,সে জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছে না। সুতরাং ঘরের বাইরের উন্নয়নেও তাকে অংশগ্রহণ করতে হবে। জাতির উন্নয়নের দুই ক্ষেত্র : ঘর ও বাহির। এ দুইয়ের একটি ক্ষেত্র যখন খালি ও গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে তখন অপর ক্ষেত্রে শত চেষ্টা করেও উন্নতি লাভ সম্ভব হবে না। মানবোন্নয়নই নারীর প্রধান কাজ; কোম্পানির পণ্য উৎপাদন নয়।
প্রয়োজনে যদি নারীকে ঘর থেকে বের হতে হয়
আর প্রয়োজনে যদি তাকে ঘর থেকে বের হতে হয় তাহলে সে যেন জাহেলী যুগের নারীদের মত নিজেকে প্রদর্শন না করে। কারণ নারীর নিরাপত্তাহীনতার প্রথম কারণ হল নিজেকে অশালীনভাবে মানুষের সামনে পেশ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
و قرن في بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الأولى، و أقمن الصلاة و آتين الزكاة و أطعن الله و رسوله، إنما يريد الله ليذهب عنكم الرجس أهل البيت و يطهركم تطهيرا. و اذكرن ما يتلى في بيوتكن من آيات الله و الحكمة، إن الله كان لطيفا خبيرا.
আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান কর। আর প্রাকজাহেলী যুগের মত নিজেদের প্রদর্শন করো না। তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত থাক। হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান। আর তোমাদের ঘরে আল্লাহর আয়াত ও যে জ্ঞানের কথা আলোচনা হয় তা স্মরণ রাখ। আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী ও সব বিষয়ে অবহিত।-সূরা আহযাব : ৩৩-৩৪
নারী হল ‘আওরাত’
হাদীসে বেগানা নারীকে বলা হয়েছে ‘আওরত’ যার অর্থ এমন বস্ত্ত, যা লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা উচিৎ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
المرأة عورة فإذا خرجت استشرفها الشيطان
নারী হল ‘আওরত’। (অর্থাৎ যার লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা উচিৎ।) নারী যখন ঘর থেকে বের হয় (নিজেকে মানুষের সামনে প্রকাশ করে) তখন শয়তান তার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৭৩
সাজ-সজ্জায় নেই মানা তবে...
নারী সাজবে নারীর মত করে। পৃথিবীর যত স্বর্ণ সব নারীর জন্য, পুরুষের জন্য তা হারাম। যত রেশমী বস্ত্র সব নারীর জন্য, পুরুষের জন্য তা নিষিদ্ধ। যত মণি-মুক্তা হিরা জহরত সব নারীর জন্য। সব দিয়ে নারী নিজেকে সাজাবে তবে...। তবে আল্লাহ্র সীমারেখা অতিক্রম করবে না।
ولا يبدين زينتهن إلا لبعولتهن أو آبائهن أو آباء بعولتهن أو أبنائهن أو أبناء بعولتهن أو إخوانهن أو بني إخوانهن أو بني أخواتهن أو نسائهن أو ما ملكت أيمانهن أو التابعين غير أولي الإربة من الرجال أو الطفل الذين لم يظهروا على عورات النساء.
নারীরা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অংগ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো সামনে তাদের সাজ-সজ্জা প্রকাশ না করে।-সূরা নূর : ৩১
ঘরের বাইরে নারীর পোষাক
প্রয়োজনের তাগিদে যদি নারীকে ঘর থেকে বের হতে হয় তাহলে সে কীভাবে বের হবে তাও আল্লাহ বলে দিয়েছেন, যা মানলে নারী ইভটিজিংয়ের শিকার হবে না।
يا أيها النبي قل لأزواجك و بناتك و نساء المؤمنين يدنين عليهن من جلابيبهن، ذلك أدنى أن يعرفن فلا يؤذين.
অর্থ: হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে এবং মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে এবং তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না।-সূরা আহযাব : ৫৯
আল্লামা তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম তার Nobel Quran -এ فلا يؤذين এর তরজমা করেছেন Hence not teased তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। স্রষ্টার চেয়ে কে আর ভালো বলতে পারবেন যে, তার সৃষ্টির রোগ কী ও তার প্রতিকার কীসে?
এ আয়াতে ইভটিজিংয়ের সমাধানে নারীর প্রতি একটি মৌলিক নির্দেশনা এসেছে। আর তা হল-নারী যেন বাইরে বের হলে তার জিলবাব দ্বারা চেহারা ও শরীর আবৃত করে, পর্দার সাথে বের হয়, অশালীনভাবে বের না হয়। নতুবা ‘রুগ্ন’ পুরুষ তার প্রতি প্রলুব্ধ হবে ও কুদৃষ্টি দিবে। তাফসীরে কুরতুবীতে (১৪/২৪৩) জিলবাবের অর্থ করা হয়েছে, এমন বড় চাদর, যা দ্বারা মুখমন্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়।
লজ্জা ও শালীনতা
লজ্জা নারীর স্বভাবজাত বিষয়। আমরা দেখি মেয়ে শিশু স্বভাবতই লজ্জাশীলা হয়। কিন্তু পরিবেশ এই স্বভাবকে অসুস্থ করে তোলে। যেমন হাদীসে এসেছে ‘‘প্রতিটি শিশুই ইসলাম গ্রহণের স্বভাবজাত যোগ্যতা নিয়ে জন্ম নেয়, কিন্তু মাতা পিতা তাকে ইহুদী বা নাসারা বানায়’’।
আর লজ্জা ও শালীনতাবোধ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শালীনতার চূড়ান্ত শরয়ী রূপ হল পর্দা। পর্দার মধ্যে বড় ওড়না বা বোরকা, সেগুলো আকর্ষণীয় না হওয়া, কথার আওয়াজ কোমল ও আকর্ষণীয় না হওয়া, কথার বিষয়বস্ত্ত ও বাক্য শালীন হওয়া, চলার ভঙ্গি ও অঙ্গভঙ্গি মার্জিত হওয়া, বাইরে বের হলে সুগন্ধি ব্যবহার না করা, আকর্ষণ ও প্রদর্শন থেকে বিরত থাকা, পবিত্র মানসিকতা, আল্লাহর ভয় ইত্যাদি অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত। আর সবগুলো বিষয় পালন করার জন্য শুধু একটি বিষয় প্রয়োজন। তা হল তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়।
এ বিষয়টিই পর্দার আনুষাঙ্গিক সব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে যার পর্দার শুরু আল্লাহভীতি থেকে তার আপনাআপনিই বাকিগুলো এসে যায়। আর যার পর্দার শুরু হয় পোশাক থেকে তার মাঝে আল্লাহভীতি আসা পর্যন্ত বাকি সবগুলো বোঝা মনে হয়। আর আল্লাহভীতি আসার জন্য সবচেয়ে সহায়ক হল সঠিক তারবিয়াত বা তত্ত্বাবধান ও সুন্দর পরিবেশ এবং সহীহ ইল্ম তথা পর্দা ও ইসলাম সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা।
কারো মাঝে যখন লজ্জাবোধ থাকে না তখন সে সবকিছুই করতে পারে। একটি হাদীসে এসেছে,
إذا لم تستحي فاصنع ما شئت
‘‘যখন তোমার থেকে লজ্জা বিদায় নেয় তখন যা ইচ্ছা তাই কর’’।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬১২০; সুনানে আবু দাউ, হাদীস : ৪৭৬৪
সন্তান হারিয়েছি, লজ্জা হারাইনি ...
উম্মে খাল্লাদ নামের এক মহিলা সাহাবী তার সদ্য শাহাদাতবরণকারী
সন্তান সম্পর্কে জানার জন্য রসূলের দরবারে এলেন। তার চেহারা নেকাবে ঢাকা ছিল। এক সাহাবী তাকে বললেন, তুমি তোমার শাহাদাতবরণকারী সন্তান সম্পর্কে জানতে এসেছ, (আর এমন শোকের মূহূর্তেও) তোমার চেহারা নেকাবে ঢাকা! তখন সাহাবিয়্যা উত্তরে বললেন, ‘‘সন্তান হারিয়েছি, লজ্জা হারাইনি’’।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪৮৮
চেহারা নেকাবে ঢাকা
উপরে সন্তানহারা এক নারীর নেকাবের কথা এসেছে। এছাড়া হজ্বের সফরে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা.-এর ঘটনা স্মরণ করুন। ইহরামের কারণে তাঁরা চেহারা খোলা রাখতেন, কিন্তু যখন পুরুষরা নিকট দিয়ে অতিক্রম করত তখন মুখমন্ডল আবৃত করে ফেলতেন। পুরুষরা চলে যাওয়ার পর নেকাব তুলে ফেলতেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৭৫৭
জাহান্নামের আগুন অনেক বেশি উত্তপ্ত
হযরত সাফিয়্যা বিনতে শাইবা বলেন, ‘‘আমরা আয়েশা রা.-এর কাছে বসা ছিলাম। কুরাইশ গোত্রের নারী এবং তাদের গুণাবলির প্রসঙ্গ আলোচনায় এল। তখন হযরত আয়েশা রা. বললেন, কুরাইশ বংশের নারীদের বিশেষত্ব অবশ্যই আছে, তবে আমি আনসারী নারীদের চেয়ে কিতাবুল্লাহ্র প্রতি অধিক বিশ্বাসী ও আস্থাশীল আর কাউকে দেখিনি। যখন সূরা নূরের এই আয়াত অবতীর্ণ হল-
وليضربن بخمرهن على جيوبهن
‘এবং তারা যেন তাদের বক্ষদেশে ওড়না জড়িয়ে রাখে’ তখন তাঁদের পুরুষগণ নিজ-নিজ ঘর বাড়িতে তাদের স্ত্রী, কন্যা ও বোনদের গিয়ে এই আয়াত শোনালেন আর অমনি তারা বড় বড় চাদর দিয়ে নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে আবৃত করে ফেলল। এটা ছিল আল্লাহ্র কিতাবের প্রতি তাদের নিষ্কম্প বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ।
কিতাবুল্লাহ্র প্রতি আনসারী সাহাবিয়াগণের এই একনিষ্ঠ আনুগত্যের বর্ণনা দেওয়ার পর ড. মুহাম্মাদ আলী আলহাশেমী বলেন, এবার আমি দামেস্ক ইউনিভার্সিটির একজন মুসলিম পর্দানশীন তরুণীর কথা বলব, যার অন্তরের অবিচল আনুগত্যও সেই মহান আনসারী সাহাবিয়াগণের সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ। তাকে একজন অতিথি সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিল, ‘‘এই প্রচন্ড গ্রীষ্মের গরমে আপনি কীভাবে বোরকাবৃত থাকেন? আপনার কি গরম লাগে না? তরুণীটি এর উত্তরে কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করলেন-
قل نار جهنم أشد حرا
‘বলে দিন, জাহান্নামের আগুন এরচেয়ে অনেক বেশি উত্তপ্ত।’
নিঃসন্দেহে এমন পবিত্রাত্মা মুসলিম নারীর মাধ্যমেই মুসলিম ঘরসমূহ আবাদ হয়, নতুন প্রজন্ম গড়ে ওঠে পবিত্র বৈশিষ্ট্যাদি নিয়ে এবং এদের মাধ্যমেই মুসলিমসমাজে জন্ম নেয় সমাজসংস্কারক কর্মবীর সন্তানেরা।’’-শাখসিয়্যাতুল মারআতিল মুসলিমা ৫১-৫২
আসলে এ জাতীয় প্রশ্ন আসে আল্লাহর বিধানের প্রতি সমর্পণের অভাব থেকে। নইলে প্রচন্ড গরমে ভরদুপুরের রোদে গামবুট আর খাকি পোশাক পরা পুলিশ বা আর্মিকে তো কেউ জিজ্ঞেস করে না-এত মোটা পোশাক পরে আছেন, আপনার গরম লাগে না?
পোষাক যেন হয় শালীন
নারীর পোষাক যেন আটসাঁট ও উগ্র না হয় এবং ভাবভঙ্গি ও চালচলন যেন অশালীন না হয়-এ বিষয়ে হাদীসে সতর্ক করা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
... نساء كاسيات عاريات مميلات مائلات
কতক নারী আছে যারা পোষাক পরেও নগ্ন, যারা (পরপুরুষকে) আকর্ষণকারী ও (পরপুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট। যারা বুখতী উটের হেলানো কুঁজের মতো মাথা বিশিষ্ট। এরা জান্নাতের সুবাস পর্যন্ত পাবে না।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২১২৮; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৮৬৬৫
৩০/০৭/১২ তারিখে একটি পত্রিকার শিরোনাম দেখলাম ‘‘নারীদের ক্ষুদ্র পোশাক তরুণদের প্রলুব্ধ করে’’ সেখানে একজন সাবেক অভিনেতা ও বর্তমান রাজনীতিবিদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, তিনি নারীদেরকে ইভটিজিং থেকে নিরাপদ থাকতে পোশাক-আশাকে শালীনতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, ‘‘নারীদের উগ্র ও উত্তেজক পোশাক পরিধানও ইভটিজিং বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী ... তা কমবয়সী তরুণদের প্রলুব্ধ করে’’ বক্তার নাম বলার প্রয়োজন নেই, বড় বিষয় হল তিনি এমন ময়দানের মানুষ, যিনি পূর্ণ উপলব্ধির সাথে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে সক্ষম।
এ ছাড়া আরো কয়েকটি দৈনিকের শিরোনাম ছিল : ‘‘ইভটিজিং রোধ জরুরী, গণজাগরণ সৃষ্টি, ধর্মীয় সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের’’।
পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করব না
ইসলাম নারীদের পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
হযরত ইবনে আববাস রা. বলেন, যে সকল নারী পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে এবং যে সকল পুরুষ নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে লানত করেছেন।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৭৮৪
বেগানা নারী পুরুষ নির্জনে মিলিত হব না
এরপর নারী যখন প্রয়োজনে ঘর থেকে পর্দার সাথে বের হল এবং প্রয়োজনে পুরুষের সামনে গেল তখনও যেন নারী বা পুরুষ শয়তানের ধোকায় বিপদের সম্মুখীন না হয় সে জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لا يخلون رجل بامرأة إلا كان ثالثهما الشيطان
কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হলে নিঃসন্দেহে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান। (অর্থাৎ তখন শয়তান তাদের মনে কুমন্ত্রণা দেয়)।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৭১
আরেক বর্ণনায় এসেছে, মাহরাম পুরুষ ছাড়া যেন কোনো নারী কোনো পুরুষের সাথে নির্জনে মিলিত না হয়।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৪১
আলোচ্য হাদীস থেকে একথাও বোঝা যায় যে, নারীকে পুরুষ ডাক্তারের কক্ষে একা প্রবেশ করতে দেয়া ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রের কিছু দুর্ঘটনার খবর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় এসেছে।
সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে যাব না
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক চোখ যিনা করে। আর কোনো নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোনো মজলিসের পাশ দিয়ে যায় তাহলে সে এই ... এই ... অর্থাৎ সেও যিনাকারী (নযরের যিনার প্রতি বা যিনার প্রতি প্রলুব্ধকারী)।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৭৮৬
নারী যেন সজোরে পদক্ষেপ না ফেলে
و لا يضربن بأرجلهن ليعلم ما يخفين من زينتهن
নারীরা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে।-সূরা নূর : ৩১
নারী নুপুর পরতে পারে তবে তা হবে বাজনাবিহীন যেন সেই নুপুরের আওয়াজ শয়তানকে সাহায্য না করে। পরপুরুষকে প্রলুব্ধ না করে।
পরপুরুষের সাথে আকর্ষণীয় স্বরে কথা নয়
আল্লাহ নারীদের (উম্মাহাতুল
মুমিনীনকে) সম্বোধন করে বলেছেন-
يا نساء النبي لستن كأحد من النساء، إن اتقيتن فلا تخضعن بالقول، فيطمع الذي في قلبه مرض و قلن قولا معروفا.
হে নবী-পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে পরপুরুষের সাথে কোমল স্বরে কথা বলো না। এতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে প্রলুব্ধ হবে। তোমরা ন্যায়সংগত কথা বল।-সূরা আহযাব : ৩২
পরস্পরের লেনদেন যদি পর্দার আড়াল থেকে হয় এবং কথা বলার প্রয়োজনে যদি আকর্ষণীয় ও কোমল স্বরে কথা না বলে তাহলে কারো মনেই অন্যায়ের ইচ্ছা জাগবে না। দেখুন শুধু পর্দার আড়াল থেকে লেনদেনই যথেষ্ট নয়, যে নারী মোবাইলে কথা বলছে তাকে তো পুরুষ দেখছে না কিন্তু এটুকু তো ফিৎনা থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ট নয়; বরং কোমল স্বরে কথা বলা থেকেও বিরত থাকা জরুরী। এ বিষয়টিই আল্লাহ নিষেধ করেছেন। কারণ নারীর কোমল স্বর স্বভাবতই পুরুষকে আকৃষ্ট করে। সুতরাং একথা ভাবার কোনো সুযোগ নেই যে, আমি তো পর্দার আড়াল থেকেই কথা বলছি, সুতরাং যা বলি যেভাবে বলি কোনো সমস্যা নেই।
মোটকথা নারী বা পুরুষ সকলকেই এমন সব কথা বা কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে, যা অন্যায়ের প্রতি প্রলুব্ধ করে। এবার যার মাঝে আল্লাহর ভয় আছে এবং যে নিরাপদ থাকতে চায় সে নিজেই বলতে পারবে, তার কোন্ কাজ থেকে বেঁচে থাকা উচিত এবং কোন্ কাজ কীভাবে করা উচিৎ।
আল্লাহর আদেশ শিরোধার্য
আল্লাহ সূরা আহযাবের পর্দা বিষয়ক আয়াতের পর বলছেন-
وما كان لمؤمن و لا مؤمنة إذا قضى الله و رسوله أمرا أن يكون لهم الخيرة من أمرهم،و من يعص الله و رسوله فقد ضل ضلالا مبينا.
আল্লাহ ও তার রাসূল কোনো বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন নর-নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার নেই। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করবে সে স্পষ্ট পথভ্রষ্ট।-সূরা আহযাব : ৩৬
সুতরাং আমাদের এ কথা মনে করার কোনো অবকাশ নেই যে, আমার ইচ্ছা হলে মানলাম ইচ্ছা না হলে মানলাম না। এ কথা ভালো করে বুঝতে হবে, ইসলামের সকল অপরিহার্য বিধানই মুমিনের জন্য বাধ্যতামূলক, ঐচ্ছিক নয়। এখানে আমার মন চাওয়া না চাওয়া, ভালো লাগা না লাগার কোনো স্থান নেই। যে মেনে নেবে সে দুনিয়া ও আখেরাতে নিরাপদ থাকবে আর যে মানবে না তার কর্মের ফল সে ভোগ করবে; দুনিয়াতে ও আখেরাতে।
পুরুষের প্রতি নির্দেশনা
আর ইভটিজিং ও এ জাতীয় অন্যায় থেকে বেঁচে থাকতে পুরুষকে মৌলিক নির্দেশনা দিয়েছেন যে, সে যেন তার দৃষ্টি অবনত রাখে। কারণ এখান থেকেই শুরু ইভটিজিংয়ের।
পুরুষ যেন দৃষ্টিকে সংযত করে
قل للمؤمنين يغضوا من أبصارهم و يحفظوا فروجهم ذلك أزكى لهم، إن الله خبير بما يصنعون.
আপনি মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, এটা তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে ব্যাপারে সম্যক অবগত।-সূরা নূর : ৩০
সাথে সাথে নারীও যেন পুরুষকে দেখে আকৃষ্ট না হয় তাই নারীকেও বলেছেন-
و قل للمؤمنات يغضضن من أبصارهن و يحفظن فروجهن
এবং মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।-সূরা নূর : ৩০
পুরুষ যেন নারীর প্রতি দৃষ্টি না দেয় সে বিষয়ে হাদীসে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অর্থ : ... চোখের যিনা হল কুদৃষ্টি, আর যবানের যিনা হল খারাপ কথা বলা। নফস খারাপ কাজের আকাংখা করে ও কামনা করে, আর গুপ্তাঙ্গ তা বাস্তবায়িত করে বা তা থেকে বিরত থাকে।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২১৫২
অর্থাৎ সকল খারাপের সূচনা হয় দৃষ্টির অপব্যবহার থেকে। কেননা দৃষ্টিই হল অন্তরের জানালা। দৃষ্টি যদি স্বচ্ছ ও পবিত্র থাকে তাহলে অন্তরও পবিত্র থাকবে। নতুবা অন্তর কলুষিত হবে। আর অন্তর যদি কলুষিত হয় তাহলে দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুনাহের পথে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই তো দৃষ্টিকে বলা হয়েছে শয়তানের তীর।
হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে
পুরুষ তার দৃষ্টি সংযত রাখার পরও যদি হঠাৎ নারীর প্রতি দৃষ্টি পড়ে যায় তাহলে যেন দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, দ্বিতীয়বার দৃষ্টি না দেয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলীকে (রা.) বলেছেন-
يا علي لا تتبع النظرة النظرة فإن لك الأولى وليست لك الآخرة
অর্থাৎ হে আলী! প্রথমবার যদি (অনিচ্ছাকৃত) দৃষ্টি পড়ে যায় তাহলে দ্বিতীয়বার দৃষ্টি দিও না। কেননা প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছাকৃত হঠাৎ হয়ে গেছে) তোমাকে মাফ করা হবে, কিন্তু পুনরায় তাকালে তা মাফ করা হবে না।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২১৪৯; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৭৭৭
দৃষ্টির খেয়ানত
আর যদি প্রথমেই ইচ্ছাকৃত তাকায় বা দ্বিতীয়বার তাকায় তা হবে দৃষ্টির খেয়ানত। আর এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে বলেছেন-
يعلم خائنة الأعين و ما تخفي الصدور
(আল্লাহ তোমাদের) দৃষ্টির অপব্যবহার এবং অন্তর যা গোপন রাখে তা (ভালোভাবে) জানেন।-সূরা মুমিন : ১৯
মনের মাঝেও যেন কুচিন্তা লালন করা না হয় এ আয়াতে সে সম্পর্কেও সতর্ক করে বলা হয়েছে-তোমরা অন্তরে যে কুচিন্তা ও মন্দ পরিকল্পনা লালন কর তাও তোমাদের রব জানেন।
পর্দার আড়াল থেকে ...
এ জাতীয় অন্যায় ঘটে অন্তরের কলুষতা থেকে তাই আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের অন্তর পবিত্র রাখার পথও বাতলে দিয়েছেন। নিজেদের প্রয়োজনে নারী-পুরুষ কীভাবে আদান প্রদান করবে, কথা বলবে তাও বলে দিয়েছেন।
পুরুষদের বলেছেন-
و إذا سألتموهن متاعا فاسألوهن من وراء حجاب، ذلكم أطهر لقلوبكم و قلوبهن
যখন তোমরা তাদের কাছে কিছু চাইবে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের এবং তাদের জন্য অধিক পবিত্রতার উপায়।-সূরা আহযাব : ৫৩
অভিভাবক সচেতনতা
নারী যখন বাইরে বের হয় কিংবা পিতা বা স্বামী যখন তার কন্যা বা স্ত্রীকে নিয়ে বাইরে যান তখন কেন এমন পোষাকে নারীকে নিয়ে বের হন, যা বখাটেদের ইভটিজিংয়ের প্রতি উৎসাহিত করে?! কোনো পিতা বা স্বামী চায় না তার কন্যা বা স্ত্রীর প্রতি কেউ কুদৃষ্টি দিক অথচ তারা এমন পোশাকে তাদেরকে নিয়ে বের হন যা সুশীল পুরুষকেও অন্যায় দৃষ্টির প্রতি প্রলুব্ধ করে।
অন্যদিকে কোনো পুরুষই চায় না (এমনকি যে ছেলে কোনো মেয়েকে উত্যক্ত করে সে-ও না) যে, তার মা-বোনের প্রতি কেউ অন্যায় দৃষ্টি দিক, তাহলে সে কেন অন্য নারীর প্রতি কুদৃষ্টি দেয়?!
নারী আমার মা-বোন
নবীজীর অনুপম শিক্ষা-কৌশল
একবার আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এক যুবক এসে বলল, আল্লাহর রাসূল! আমাকে যিনার অনুমতি দিন। তখন উপস্থিত লোকেরা তাকে ধমকাতে শুর" করল এবং বলল, তুমি এ কী বলছ, চুপ কর।
তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বৎস কাছে এস। সে রাসূলের কাছে এসে বসল।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি চাও তোমার মায়ের সাথে কেউ যিনা করুক? সে বলল, আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি আমার জান কোরবান হোক, কখনোই আমি তা চাই না। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেউই তার মায়ের জন্য তা পছন্দ
করে না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, তুমি কি চাও তোমার মেয়ের সাথে কেউ যিনা করুক? সে বলল, আপনার প্রতি আমার জান কোরবান হোক, আল্লাহর রসূল, কখনোই না । তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেউই তার মেয়ের জন্য তা পছন্দ করে না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি চাও যে তোমার বোনের সাথে কেউ যিনা করুক? সে বলল, আপনার প্রতি আমার জান কোরবান হোক, আমি কখনোই তা বরদাশত করব না। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেউই তার বোনের জন্য তা পছন্দ করে না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি চাও, তোমার ফুফুর সাথে কেউ যিনা করুক? সে বলল, কিছুতেই আমি তা মেনে নিব না। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেউই তার ফূফুর জন্য তা পছন্দ করে না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি চাও, তোমার খালার সাথে কেউ যিনা করুক? সে বলল,আপনার প্রতি আমার জান কোরবান হোক, কখনোই না । তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেউই তার খালার জন্য তা পছন্দ করে না।
তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পিঠে হাত রেখে বললেন, হে আল্লাহ তুমি তাকে মাফ করে দাও। তার অন্তর পবিত্র রাখ। তার লজ্জাস্থানের হেফাজত কর।
সাহাবী বলেন, এরপর থেকে ঐ যুবক কোন দিন অন্যায়ের দিকে পা বাড়ায়নি।-মুসনাদে আহমাদ : ৫/২৫৬; (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী) মাজমাউয যাওয়াইদ : ১/১২৯
লক্ষ্য করুন কীভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকটিকে সংশোধন করলেন। প্রতিটি যুবক প্রতিটি মানুষের অন্তরে যদি এ বিষয়টি জাগরুক থাকে তাহলে কখনোই একজন নারী বিপদের সম্মুখীন হবে না।
প্রকৃত মুসলিম সে ...
প্রকৃত মুসলিম সে যার যবান ও হাত থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে।-সহীহ বুখারী, হাদীস :১০
আমার মুখের দ্বারা, আমার হাতের দ্বারা, এমনকি আমার নযরের দ্বারা আমার মুসলিম বোন কষ্ট পাবে তা হতে পারে না। আমি তো মুসলিম, কীভাবে আমার দ্বারা এমনটি হতে পারে?
ইসলামই তো নারীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে এবং তার মর্যাদার নিশ্চয়তা দিয়েছে । আমারও তো সে দায়িত্ব। তাহলে কীভাবে আমি ...?
সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়
মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ
ইভটিজিং রোধে মিডিয়ার দায় অনেক। প্রিন্ট মিডিয়া এক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকা রাখলেও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার ভূমিকা এক্ষেত্রে একেবারেই গৌণ; বরং তারা এ বিষয়টিকে আরো উস্কে দিচ্ছে। টিভি চ্যানেলের প্রতিটি অনুষ্ঠানই ইভটিজিং ও এ জাতীয় অন্যায়ের প্রতি উদ্বুদ্ধকারী। এসবের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে এফ.এম রেডিও চ্যানেলগুলো। এগুলোর স্রোতে আমাদের তরুণ-তরুণীরা যেন ভেসে চলেছে। সারাদিন গান, কানে কানে হেডফোন। তারপর রাত জেগে আড্ডা, ভূত এফ.এম, আরো কত কী। যে সমস্ত ঘরে এখনো টি.ভি নেই তারাও এফ.এম-এর কাল থাবা থেকে বাঁচতে পারছে না। সমাজ ও সরকারের হাতে এখনো সময় আছে এগুলোর লাগাম টেনে ধরার।
পোশাক-শিল্পের নিয়ন্ত্রণ
পোশাক শিল্পের কথা আর কী বলব। সব কিছুর একটা নিয়ম নীতি থাকে এবং সব বিষয়ের একটা নিয়ন্ত্রণ থাকতে হয়। কিন্তু পোশাক শিল্পে যেন কোনো নিয়ম নীতি নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই। জোরে হর্ণ বাজালে হয় শব্দদূষণ,গাড়ির বা কল-কারখানার কালো ধোঁয়ায় হয় পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ূ পরিবর্তন। কিন্তু অশালীন পোশাকের যেন কোনো দূষণ নেই, পরিবেশ ও সমাজের উপর যেন পোশাকের ভাল মন্দের কোনো প্রভাব নেই। যার যা খুশি উৎপাদন কর ও বাজারজাত কর, যা খুশি কেন ও পর। পাবলিক প্লেসে সিগারেট দুর্গন্ধ ছড়ায়, অন্যের ক্ষতি হয়, সুতরাং ‘‘ধূমপান নিষেধ’’। কিন্তু পাবলিক প্লেসে অশালীন পোশাক পরলে কোনো দুর্গন্ধও ছড়ায় না, কারো হৃদয় আক্রান্তও হয় না।
ইমাম ও শিক্ষকশ্রেণীর দায়
ইমাম-খতীব ও শিক্ষকদের সবাই শ্রদ্ধার চোখে দেখে এবং তাদের কথা মানার চেষ্টা করে। বিশেষ করে শিক্ষকগণ যদি ছোট থেকেই শিক্ষার্থীর মানসিকতা উন্নত করতে চেষ্টা করেন তাদের ভালো মন্দ, কল্যাণ অকল্যাণ বোঝাতে পারেন তা শিশুকে সুস্থ মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।
সুস্থ সমাজ ...
একটি সুন্দর সমাজ ব্যক্তিকে ভালো বা মন্দ বানাতে পারে। এজন্য পরিবার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব সমাজকে সুন্দর করা। উঠতি বয়সের একটি ছেলে বা মেয়ে চারিদিকে যা দেখে সেভাবেই নিজেকে গড়তে চায়। টি.ভি চ্যানেলে যা দেখে নিজের বাস্তব জীবনকেও সেভাবে ভাবে। তার তো আর এই বোধ নেই যে, আমি যা দেখছি তা নিছক অভিনয়। ফলে পিতা-মাতার আদেশ অবুঝ সন্তানের কাছে অরুচিকর মনে হয় এবং এর মধ্যেই যে তার কল্যাণ রয়েছে তা বুঝে আসে না। গলিত সমাজের নানামুখী প্রচারণার মধ্যে ইসলামী অনুশাসন তাদের কাছে বিরক্তিকর মনে হয়। কিন্তু এতেই যে রয়েছে তার সুস্থ-সুন্দর-শালীন জীবনের প্রতিশ্রুতি তা-ও তার বোধগম্য হয় না।
মোটকথা, নারী পুরুষের মানসিকতা, তাদের চিন্তা চেতনা, সংস্কৃতি, পোশাক, টি.ভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান সব হবে ইভটিজিং ও এ জাতীয় অন্যায়ের প্রতি উদ্বুদ্ধকারী। আর এসব কিছু আপন অবস্থায় বহাল রেখে শুধু আইন করে, শাস্তি দিয়ে, আর কলাম লিখে ও মানব বন্ধন করে সব ঠিক করে ফেলা যাবে এমনটি ভাবার কোনো অবকাশ নেই। রোগের বীজ কার্যকর রেখে নিরাময়ের আশা দূরাশা নয় কি? অবশ্যই দূরাশা। শেকড়ে বিষ রেখে আমরা বৃক্ষের ফল সুমিষ্ট পাব-এটা হতে পারে না।
বাস্তবতা বুঝতে হবে। জীবনযাপন ও অনুশীলনের মূল জায়গাটায় মনোযোগ না দিলে এর ফলাফল নিয়ে ভাবিত হওয়ায় কোনো সুফল নেই। এতে কেবল ভাবনা-দুশ্চিন্তার পরিমাণ বাড়তেই পারে, কমবে না।
সুতরাং আমরা যদি আমাদের সমাজকে ইভটিজিং ও এ জাতীয় অন্যায় থেকে রক্ষা করতে চাই তাহলে স্রষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে হবে। আসুন, আমরা চেষ্টা করি এবং শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সমাজের সকল অঙ্গনে আল্লাহর নির্দেশনা মেনে চলি। যারা বুঝি তারা অন্যদের বোঝাতে চেষ্টা করি।