পরিণতি: ভেতরের ক্ষয় ক্ষমতার জোরে ঠেকানো যায় না
শক্তি ও ক্ষমতার যত প্রাবল্যই থাকুক বারবার দেখা যায়, মানুষের ভেতরের অনুভূতির জোর তার চেয়েও বড় প্রভাবক হয়ে উপস্থিত হয়। এ কারণেই শক্তির জোরে যে দেশের সৈন্যবাহিনীর দাপট এখন দুনিয়াজুড়ে তাদের মনের এক ভয়াবহ চিত্র সংবাদমাধ্যম সামনে নিয়ে এসেছে। ১৯ নভেম্বরের ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকার শেষ পাতায় ছাপা হওয়া খবরটির শিরোনাম হয়েছে-‘মার্কিন বাহিনীতে আত্মহত্যা বাড়ছে।’
খবরটিতে বলা হয়েছে, গত ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মার্কিন সেনা বাহিনীর উপ-প্রধান জেনারেল পিটার চিয়ারেলি বলেন, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ফিল্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত ১৪০ জন সক্রিয় সৈনিক এবং আর্মি রিজার্ভ ও ন্যাশনাল গার্ডের আরও ৭১ জনসহ মোট ২১১ জন আত্মহত্যা করেছে।’ তার ভাষায় সার্বিক অবস্থা ভয়াবহ। গত বছরও নাকি ১৯৭ জন সৈনিক আত্মহত্যা করেছিল। এদের মাঝে এমন বহু সৈনিকও নাকি রয়েছে যাদেরকে এখনও যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়নি।
মার্কিন জেনারেল পিটার এক রকম হতাশা ব্যক্ত করেই বলেছেন, আত্মহত্যাকারী মার্কিন সৈনিকদের মাঝে অনেক তরুণ বয়সীও রয়েছে। অনেকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অনেককে ড্রাগ নিতেও দেখা গেছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে-হতাশা থেকেই যে আত্মহত্যার এ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা অনেকে মনে করলেও সামরিক বাহিনী এর কোনো ব্যাখ্যা দাড় করাতে পারেনি। মার্কিন সৈনিকরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সৈনিকদের চেয়ে বেতন ও সুযোগ সুবিধা বেশি ভোগ করে। জীবনকে ‘উপভোগ’ করার বিস্তর সুযোগ তাদের সামনে অবারিত। তারপরও তাদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে কেন তার কোনো সদুত্তর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সৈনিকদের এ আত্মহত্যার প্রবণতা দূর করতে মার্কিন সামরিক কর্তৃপক্ষ বিশেষ মেন্টাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছে।
সমরাস্ত্র ও ক্ষমতার জোরে অনেক কিছুই হয়ত করা যায়, কিন্তু ‘মানুষ’ হিসাবে আল্লাহ তাআলার দেওয়া বিবেক ও হৃদয়কে একদম ভোঁতা ও নির্বিকার করে ফেলা সম্ভব হয় না। এটা নীরবে তার কাজ করতে থাকে। যখন সে আহত হয় তখন সে দংশন করে। মৃতপ্রায় বিবেকও আহত হলে দংশন করে। দুর্বল বিবেকের দংশনেও যে সুস্থ-সবল পরাক্রমশালী মানুষ টলে যেতে পারে এরই একটি নমুনা এ সংবাদটিতে আমরা পাচ্ছি। হত্যা, ধর্ষণ আর নানামাত্রিক আগ্রাসনে যে বাহিনীর সদস্যরা একরকম অপ্রতিরোধ্য তাদের নিজেদের ভেতরের অব্যাহত ক্ষয় ও মানবিক ঘুন পোকার কামড় থামানোর কোনো দাওয়াই পাচ্ছে না এখন তারা। নিজেরাই মৃত্যু ও ধ্বংসের হাতে নিজেদের ঠেলে দিচ্ছে। এটি অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। যা ঘটা ছিল স্বাভাবিক তাই ঘটেছে। শত্রুহীন, গুলিহীন, বোমাহীন এ মৃত্যু নীতি ও মানবিক বোধের পরীক্ষিত মারণাস্ত্রের হাতে ঘটছে। অস্ত্র ও ক্ষমতার জোর দিয়ে দুর্বল প্রতিপক্ষকে নির্মমভাবে দমন করা যায়, নিজের ক্ষয় ও সর্বনাশ ঠেকানো যায় না। আগ্রাসী শক্তির কর্ণধাররা এ সত্যটি বুঝতে পারলে অন্যদের হোক না হোক, তাদের নিজেদের অন্তত মঙ্গল হবে। নিজের হাতে নিজের সর্বনাশ করা থেকে তারা বাঁচবে।