কেউ আগে যান, কেউ পরে
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আখিরাতের জীবনের প্রস্ত্ততি গ্রহণের তাওফীক দান করুন। মুমিনের বড় চিন্তা এটাই হওয়া চাই যে, কীভাবে তার মৃত্যু সুন্দর হবে, কবরের জীবন শান্তিময় হবে এবং হাশর-নাশর ও আখিরাতের গোটা জীবন প্রশান্তিময় হবে।
ঐ জীবন সম্পকে প্রতিনিয়ত আমাদেরকে সজাগ করে চলেছে অনেক কিছু। যার একটি হচ্ছে আমাদের চারপাশে অনেকের মৃত্যু। মৃত্যুর পর যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে আমরা আমাদের প্রিয়জনকে কবরস্তানে রেখে আসি। নির্জন কবরে সে থাকে একা। এরপর আমরা ফিরে আসি আমাদের পরিবার-পরিজনের মাঝে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বাস্তবতাকেই অত্যন্ত গভীর শব্দে ইরশাদ করেছেন-
يتبع الميت ثلاث : أهله وماله وعمله، فيرجع اثنان ويبقى واحد، يرجع أهله وماله ويبقى عمله.
অর্থ : মৃতের পিছু পিছু তিনটি জিনিস (কবরস্তান পর্যন্ত) যায় : স্বজন, সম্পদ এবং আমল। এরপর স্বজন ও সম্পদ ফিরে আসে। আর আমল তার সাথে থেকে যায়। (সে আমল অনুযায়ী তার সাথে আচরণ করা হয়।)- মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১২০৮০; সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৫১৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৯৬০
সুতরাং কবর থেকে শুরু করে আখেরাতের সফরের সকল মঞ্জিলে যে জিনিস আমাদের সাথে থাকবে তাকে সুন্দর থেকে সুন্দরতর করাই আমাদের দ্বীন ও দুনিয়ার সকল কাজের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ ঈ., রবিবার মাদরাসা আরাবিয়া খেড়িহর চাদপুরের সাবেক তালিবে ইলম হাফেয আবদুল আওয়াল (জন্ম : ১৯৬৫ আনুমানিক) একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি নিজ গ্রামের (দিকচাইল, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর) বাইতুশ শরফ জামে মসজিদের সম্মানিত মুয়াযযিন জনাব আবদুল খালেক সাহেব (প্রায় ৭০), যিনি একসময় খেড়িহর মাদরাসার দস্তরখানের খাদিম ছিলেন, তার সেবা ও চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় দুজনই আখেরাতবাসী হন।
আল্লাহ তাআলা উভয়কে শাহাদতের মর্তবা দান করুন। তাদের পরিবার-পরিজনকে সবরে জামীল দান করুন এবং এতীম ও বিধবাদের উত্তম প্রতিপালনের ব্যবস্থা করুন। আমীন।
গত ১৪ সফর ১৪৩২ হিজরী, মোতাবেক ৯ জানুয়ারি ২০১২ ঈ., সোমবার জনাব আবদুল আওয়াল রাহ.-এর বড় ভাই মাওলানা তাফাজ্জল হুসাইন ছাহেবও (৬৮ আনুমানিক) ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ছিলেন মাওলানা সিরাজুল হক ইবনে আবদুল হক ইবনে আমীনুদ্দীন ইবনে দীদার ইবনে নেয়ামতুল্লাহ ইবনে মিয়া গাজী রাহ.-এর প্রথম স্ত্রীর জ্যৈষ্ঠ পুত্র।
আমাদের জানামতে তিনি অত্যন্ত ভদ্র ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। নূরানী তালীমুল কুরআনের একজন ভালো মুআল্লিম ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় তাবলিগী মেহনতে কয়েক বছর সময়ও দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা মরহুমকে পূর্ণ মাগফিরাত দান করুন। তার আত্মীয়-স্বজনকে সবরে জামীলের তাওফীক দান করুন এবং তার পরিবার-পরিজনের উত্তম ব্যবস্থা করুন। আমীন।
কয়েক মাস আগে জনাব মাওলানা হিফজুর রহমান ছাহেব (উস্তাদ, জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়া, সাত মসজিদ মাদরাসা) আমাকে একটি অতি দুঃখের সংবাদ দিয়েছিলেন। কিন্তু এতদিনেও তা পাঠকের সামনে পেশ করতে পারিনি। গত ৭ রজব ১৪৩২ হিজরী, মোতাবেক ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ বাংলা, ১০ জুন ২০১১ ঈ. জুমআবার দিবাগত রাত বারটায় খালুজান হযরত মাওলানা আলী আশরাফ ছাহেব ইন্তেকাল করেন। যিনি হযরত শায়খুল ইসলাম মাদানী রাহ. (১৩৭৭ হিজরী)-এর শাগরিদ ও খলিফা ছিলেন। মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার রঈস হযরত মাওলানা আহমদ শফী ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম ওয়া মাদ্দাল্লাহু যিল্লাহুম-এর সহপাঠী এবং নোয়াখালী ইসলামিয়ার রঈস মাওলানা গিয়াসুদ্দীন রাহ.-এর জামাতা ছিলেন। মাওলানা গিয়াসুদ্দীন রাহ. ছিলেন হযরত শায়খুল হিন্দের শাগরিদ ও হযরত মাদানী রাহ.-এর সাথী।
সন্তানাদি : তিন পুত্র ও তিন কন্যা।
ইন্তেকাল ও দাফন : পটুয়াখালি (যেখানে তিনি ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করছিলেন।)
মাওলানা হিফযুর রহমান মুদ্দা যিল্লুহুম যেমনিভাবে তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতার জীবনী নিয়ে কাজ করেছেন তেমনি হযরত মাওলানা আলী আশরাফ রাহ.-এর জীবন নিয়েও কোনো পুস্তিকা অবশ্যই প্রকাশ করবেন বলে আশা করি। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউসে স্থান দান করুন এবং তার পরিবার-পরিজনকে সবরে জামীলের তাওফীক দান করুন। আমীন।
আখিরাতের এসকল মুসাফিরের আলোচনা চলছিল। ইত্যবসরে হযরত মাওলানা ইয়াহইয়া জাহাঙ্গীর ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম আগমন করলেন। ভাইজানকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমার ভগ্নিপতির মৃত্যুর সংবাদ শুনেছেন হয়তো। আপনার ভাই আবদুল হামীদের নানা শ্বশুর?!
আমরা বলে উঠলাম, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি বললেন, গত সোমবার (২৭ রবীউল আউয়াল ১৪৩৩ হিজরী, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ঈ.) ভোরে ফজরের সময় তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে।
আগের দিন সন্ধ্যায় মাগরিবের পর আওয়াবিন পড়েছেন, ইশার নামাযও জামাতের সাথে আদায় করেছেন। রাতে শারীরিক অবস্থা কিছুটা খারাপ হয়েছিল। কিন্তু ফজরের সময় নিজেই জাগ্রত হলেন এবং অযু করে জায়নামাযে বসলেন। ছাহেবযাদা মাওলানা ফখরুল ইসলাম (উস্তাদ, জামিআ শরইয়্যাহ মালিবাগ) বললেন, আপনার শারীরিক অবস্থা ভালো না, বসেই নামায পড়ুন। তিনি অসম্মতি জানালেন। এরপর দাঁড়ানোর ইচ্ছা করলে কষ্ট অনুভব করেন এবং শুয়ে পড়েন। তাঁর দৌহিত্র হিশাম ইবনে সা’দ উল্লাহ সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করতে থাকেন। যখন فبشره بمغفرة واجر كريم পর্যন্ত পৌঁছলেন তখনই তাঁর রূহ রওয়ানা হয়ে গেল। অযু অবস্থায় জায়নামাযে নামাযের নিয়তের সময় তাঁর মৃত্যু হল। আহা! কতই না সুন্দর মৃত্যু!!
যেন فبشره بمغفرة واجر كريم আয়াতের ডাকে সাড়া দিলেন।
সুসংবাদ পাওয়ার পর আর কেন দেরি?! ছুটে গেলেন কারীম মেজবানের আজরে কারীমের দিকে।
নির্ধারিত সময়ে আমাদেরকেও আল্লাহ তাআলা এমন সুন্দর মৃত্যু নসীব করুন। আমীন।
মাওলানা জানালেন, কুরআন তিলাওয়াতই ছিল মরহুমের বড় ব্যস্ততা। অত্যন্ত সাদাসিধা ও নেক মানুষ ছিলেন। বংশধরদের মধ্যে ২৪-২৫জন হাফেয-আলেম রেখে গেছেন। তার পূর্ণ নাম : (হযরত মাওলানা আলহাজ্ব) মুহাম্মাদ আবুল খায়র, দৌলতখানা, নারওয়ী, ব্রাহ্মণহাতা (মাওলানার উচ্চারণ অনুযায়ী : বিরাহমানহাতা), শহীদ বাড়িয়া।
কিছুদিন আগে শাওয়ালুল মুকাররম ১৪৩২ হিজরীতে তার বড় জামাতা মাওলানা আবুল বাশার ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম (শায়খুল হাদীস, জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া ঢাকা)-এর সঙ্গে তাঁর অন্য জামাতা মাওলানা সাদুল্লাহ রাহ.-এর বাড়িতে (শরাইল, শহীদ বাড়িয়া) আমার ছোট ভাই হাফেয মাওলানা আবদুল হামীদ (বর্তমানে জামিয়াতুল আযহার কায়রোতে দিরাসাতুল ইসলামিয়ায় মাস্টার্সে অধ্যয়নরত)-এর বিবাহ মজলিসে তাঁর সাথে সাক্ষাত হয়েছিল। বয়স আনুমানিক ৮৫ বছর হলেও হাস্যেজ্জ্বল ছিলেন। আশা করি, মরহুমের সন্তান ও জামাতাগণ তাঁর জীবনী সংকলন করবেন এবং পূর্ববর্তীদের সাথে পরবর্তীদের যোগসূত্র স্থাপনে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন।
এরও আগে গত ১৮ রবিউল আওয়াল ১৪৩৩ হিজরী, মোতাবেক ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ঈ শনিবার ফজরের আগে আমাদের তালিবে ইলম মাওলানা তাহমীদুল মাওলা (উস্তাদ, জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া ঢাকা)-এর শ্রদ্ধেয় পিতা জনাব সাইয়েদ আহমদ (চাঁন মিয়া)ও আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্যে চলে গেছেন। মরহুমও অনেক গুণের অধিকারী ছিলেন। ইনশাআল্লাহ আগামী আমরা কোনো সংখ্যায় আমরা মাওলানা তাহমীদুল মাওলার কলমে তাঁর জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব।
اللهم اغفر لحينا وميتنا وشاهدنا وغائبنا وذكرنا وأنثانا، اللهم من أحييته منا فأحيه على الإسلام، ومن توفيته منا فتوفاه على الإيمان. آمين.
আমরা পাঠকবৃন্দের কাছে সকল মরহুমের জন্য, তাঁদের পরিবার-পরিজনের জন্য এবং সকল মুমিন-মুমিনাত ও মুসলিম-মুসলিমাতের জন্য দুআর আবেদন করছি।