Rabiul Auwal 1433   ||   February 2012

বাইতুল্লাহর ছায়ায়-২০

Mawlana Abu Taher Mesbah

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

সময় থেমে থাকে না, তন্দ্রার শান্তিদায়ক এক আচ্ছন্নতার মাঝে মধ্যরাত হয়ে গেলো। হঠাৎ মনে হলো, এ তাঁবু তো মুযদালিফায়, অথচ রাত্রিযাপনের সুন্নত হলো মিনায়। তো এককাজ করি, সুন্নত আদায়ের নিয়তে মিনার সীমানায় গিয়ে কিছু সময় যাপন করি।

তাঁবু থেকে বের হলাম। রাস্তার নিশানা ঠিক রেখে হাঁটতে লাগলাম। বেশ কিছু দূর গিয়ে মুযদালিফা শুরু দেখতে পেলাম। তারপর মিনার টিনশেড পেয়ে গেলাম; এখান থেকে সোজা চলে গেছে জামারা পর্যন্ত। টিনশেডের নীচে হাজার হাজার মানুষ বিছানা পেতে রাত কাটাচ্ছে। আল্লাহর এক বান্দা ইকরাম করে বসতে দিলেন, বসলাম, আর প্রার্থনা করলাম, হে আল্লাহ, এ সময়টুকু তুমি মিনায় রাত্রিযাপনের সুন্নতরূপে কবুল করো।

পবিত্র ভূমিতে এসে মানুষ এতো ভালো হয়ে যায় কেন?! এমন ভালো, মানুষ সবসময় থাকে না কেন?! আমিই বা অন্যকে নিয়ে ভাবছি কেন? আমি তো এখানে এসেও নেক-পাক হতে পারি না! ভিতরের আবর্জনা আমার এখনো তো ছাফ হলো না! এই যে আফ্রিকার কালো ভাই ইকরাম করে বসতে দিলো, ফল ও শীতল পানীয় দ্বারা আপ্যায়ন করলো কালো মানুষের চরিত্রের এই শুভ্রতাটুকু আমি কি এখানে এই পবিত্র ভূমিতে এসেও অর্জন করতে পেরেছি?!

বড় ঈর্ষা হলো কালো মানুষগুলোর প্রতি। মুহববতের নযরে তাকালাম; আশ্চর্য, এখন তো কালো মনে হয় না! ভিতরের শুভ্রতা যেন বাইরের কৃষ্ণতাকে ছাপিয়ে উঠেছে! হে আল্লাহ! তোমার বান্দাকে যারা এভাবে ইকরাম করেছে, ঈমানের বন্ধন ছাড়া যাদের সঙ্গে আর কোন পরিচয়-বন্ধন নেই, হে আল্লাহ তাদের তুমি উত্তম বিনিময় দান করো।

শেষ রাতে একা একা হেঁটে তাঁবুতে ফিরে এলাম। মিনার পথে এই নিঃসঙ্গতাটুকু খুব ভালো লাগলো। যথেষ্ট মানুষ ছিলো এবং কিছু কোলাহল ছিলো। বিদ্যুতের ঝলমল আলো ছিলো, তবু সমগ্র সত্তাকে বেষ্টন করে ছিলো অপার্থিব এক নৈশব্দ ও নির্জনতা, আর তাতে ছিলো  আশ্চর্য এক সিণগ্ধ প্রশান্তি। তাঁবু হারিয়ে ফেলা একটি অসহায় পরিবারকে কোন সাহায্য করতে পারিনি, এ কষ্টটা অবশ্য সঙ্গে করে বয়ে আনতে হয়েছে। আমাদের তাঁবুতে কেউ জাগেনি, ঘুমিয়ে আছে, কিন্তু মনে হলো না, ঘুমের ঘোরে তারা অচেতন! নিদ্রিত মুখের উদ্ভাস বলে দেয়, একটি চেতনা নিয়ে এরা ঘুমিয়েছে, একটি চেতনা নিয়ে জাগ্রত হওয়ার জন্য। এখানেই পার্থক্য ইবাদতের ঘুম এবং গাফলতের ঘুমের মধ্যে।

এমনি এক রাতে আল্লাহর পেয়ারা হাবীব ও তাঁর ছাহাবাগণ এখানে ঘুমিয়েছেন। তাঁর চক্ষু হতো নিদ্রিত, হৃদয় হতো জাগ্রত। সময়ের ব্যবধান যত দীর্ঘ হোক, আল্লাহর হাবীবকে অনুসরণ করে যারা এখানে আসবে তাদের ঘুমের মধ্যেও থাকবে নববী নিদ্রার পবিত্রতার কিছু আভা, কিছু উদ্ভাস! আমার তো এমনই মনে হলো ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলোর প্রশান্ত মুখমন্ডলের দিকে তাকিয়ে। খুব ইচ্ছে হলো, আমিও সঙ্গ লাভ করি ঘুমন্ত মানুষগুলোর জাগ্রত হৃদয়ের। জায়গা না থাকার মধ্যেও জায়গা করে ইমাম ছাহেবের পাশে কাত হয়ে কোনরকম শোয়া গেলো এবং সঙ্গে সঙ্গে দুচোখের পাতায় নেমে এলো আশ্চর্য প্রশান্তির ঘুম।

ইমাম ছাহেব যখন জাগালেন, মনে হলো, দীর্ঘ সময় ঘুমিয়েছি। না আছে ক্লান্তি, না আছে অবসাদ। সজীব দেহ, সতেজ শরীর, আনন্দিত মন, প্রফুল্ল হৃদয়; এরই নাম কি ঘুমের বরকত!

বাস আসার কথা ছিলো ভোরের আলো সঙ্গে করে, এলো সূর্যকে মাথায় করে। এধরনের ক্ষেত্রে, যার দেখা কোন হাজী কখনো পান বলে শোনা যায় না, সেই মুআল্লিমকে স্মরণ করা হয় মধুর সম্ভাষণের মাধ্যমে। এখানেও অন্যথা হলো না। তবে ইমাম ছাহেব আমাদের কাফেলাকে বেশ সংযত রাখলেন। মর্মস্পর্শী ভাষায় সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিলেন, আমরা কোথায় এসেছি, কেন এসেছি এবং আমাদের করণীয় কী?

হজ্বের কাফেলায় এমন মানুষের ছোহবত খুবই জরুরি এবং উপকারী, যিনি নিজে সতর্ক থাকবেন এবং সবাইকে সতর্ক রাখবেন নফসানিয়াত ও শয়তানিয়াতের মকর-ফেরেব থেকে। এমন আমীর থাকা দরকার এবং দরকার মান্যতা ও আনুগত্য, যেন অন্ধকারের মধ্যেও কিছুটা আলোকিত হতে পারে আমাদের হজ্ব।

বাস রওয়ানা হলো আরাফার উদ্দেশ্যে। আহা, কী পবিত্র ধ্বনি, কী মধুর গুঞ্জন! লাববাইক আল্লাহুম্মা লাববাইক, লাববাইকা লা শারীকা লাকা লাববাইক, ....। যুগযুগের কত লক্ষ আশিকানের যবান থেকে উচ্চারিত লাববাইক ধ্বনির সঙ্গে মিলিত হলো আমাদের গোনাহগার মুখের লাববাইক ধ্বনি! এটাই আমাদের সান্ত্বনা, এতটুকুই আমাদের অবলম্বন। কবির ভাষায়-

বাগানের ফুল তো আমি নই/ নই সবুজ পাতা, ফুলের কাঁটা/ আমি ঝরা ফুলের পরশ পাওয়া মাটির ঢেলা/ সুবাসের তরে ফুলেরে ভালোবাসো যারা/ শোনো, আমি পেয়েছি ঝরে যাওয়া ফুলের ছোঁয়া।

একই দৃশ্য; পাহাড় ও মরুভূমি, মরুভূমি ও পাহাড়! দৃশ্য তেমন কিছু বদলায় না, কিন্তু দেখার স্বাদ যেন বদলাতে থাকে। ভাব ও অনুভবের তরঙ্গদোলা বিভিন্ন হতে থাকে। এসব দৃশ্য যে আমাকে নিয়ে যায় সাদৃশ্যের জগতে। এখান দিয়ে, এই পাহাড়ের কোলঘেঁষে , ঐ মরুভূমির উপর দিয়েই তো আরাফা অভিমুখে পথ চলেছিলো  সেই আলোকিত কাফেলা! সে আলোকরেখা অনুসরণ করেই তো  যুগে যুগে পথ চলেছে আরাফার জনতা, কাফেলার পর কাফেলা! এসকল পর্বতচূড়া তো পেয়েছে তাঁদের দৃষ্টির পরশ! এই মরুভূমির বালুকণা তো এখনো ধারণ করে তাঁদের পায়ের ছাপ!

আমাদের হজ্বের সফর এগিয়ে চলেছে পরম পরিণতির দিকে, আরাফার পবিত্র মিলনভূমির অভিমুখে, জাবালে রহমতের উদ্দেশ্যে। লাববাইক, আল্লাহুম্মা লাববাইক, লা শারীকা লাকা লাববাইক... (হাযির, হে পরওয়ারদিগার, তোমার ডাকে বান্দা হাযির। তোমার কোন শরীক নেই; বান্দা হাযির। ...)

আলহামদু লিল্লাহ, শুরু হয়ে গেলো আরাফার সীমানা। এই যে সবুজের গায়ে সাদা লেখা-

بداية عرفات  (আরাফার প্রারম্ভ)বাসের গতি কখনো দ্রুত, কখনো ধীর, কখনো বা স্থির। ঐ যে মসজিদে নামিরার সুউচ্চ মিনার! আহা, কী সুন্দর! জানি, এ মিনার তখন ছিলো না, ছিলো না এই শানদার ইমারত। ‘নামিরা’ তো ছিলো এবং ছিলো নূরের

ফোয়ারা! এখনো আছে তাদের কাছে যাদের অন্তর্দৃষ্টি আছে। আমাদের না আছে দৃষ্টি, না অন্তর্দৃষ্টি, তবে অন্তরে বিশ্বাস আছে। আমরা দেখি না, বুঝি না, তবে বিশ্বাস করি, এই মসজিদের গায়ে আছে সেই মসজিদের ছায়া; এখনো আছে সেই নূরের

ফোয়ারা। যদি বিশ্বাস করো, শুধু বিশ্বাস করো তাহলে বিশ্বাসের শক্তিতে তুমিও পেতে পারো সেই নূরের কিছু আভা, সামান্য প্রভা। তাতেই ধন্য হবে তুমি, ধন্য হবে তোমার আরাফার হাযিরি।

ঐ যে, ঐ যে জাবালে রহমত! কেমন সাদা-শুভ্র! না, ভুল বোঝো না! এটা সাদা পাথরের পাহাড় নয়। শুধু আজকের জন্য তার এ শুভ্র বর্ণ। গোড়া থেকে চূড়া, পাহাড়ের সর্বাঙ্গে ধরনা দিয়ে পড়ে আছে আল্লাহর আশিক বান্দারা। দুপুর থেকে সন্ধ্যা এখানে অনেক অশ্রু ঝরবে, আহাযারি-রোনাযারির শোরগোল ওঠবে। সেই শোরগোলে আসমানের ফিরেশতারা বিচলিত হবে। চোখের নোনা পানি এখানে আজ রহমতের দরিয়ায় জোয়ার আনবে।

তুমি যেতে পারোনি জাবালে রহমতে? শামিল হতে পারোনি রোনাযারির ঐ জামাতে? সান্তবনা গ্রহণ করো; ওখানে যারা কাঁদে তাদের অশ্রু শুধু নিজেদের জন্য নয়, তোমারও জন্য! তুমি শুধু প্রার্থনা করো, ‘হে আল্লাহ! জাবালে রহমতে, আরাফার মরুভূমিতে বর্ষিত প্রতিটি অশ্রুবিন্দু তুমি গ্রহণ করো, তাদের জন্য এবং আমাদের জন্য।’

জাবালে রহমত! সুবহানাল্লাহ! আমার কী মনে হলো জানো! আরাফার ময়দানে এ পাহাড় যিনি পয়দা করেছেন এবং রহমতের পাহাড় নাম দিয়েছেন, নামের আড়ালে আসলে তিনি রহমতে আলমের উম্মতকে আশ্বাস দান করেছেন যে, কিয়ামত পর্যন্ত এখানে এ ময়দানে যারা হাযির হবে তারা রহমতের ভাগিদার হয়েই ফিরে যাবে; এমনকি নিজ নিজ দেশে, নিজ নিজ গোত্রে রহমতের সওগাত তারা বিতরণ করবে। এজন্যই তো হাদীছের বয়ানমতে শয়তানের আজ এত যিল্লতি, এত দুর্গতি! আজ মাতম করবে শয়তান, আনন্দ করবে তুমি! তবে সতর্ক থেকো, আরাফায় হাযির হয়েও গরহাযির যেন না থাকো।

শুরু হয়ে গেছে মসজিদে নামিরায় ইমামুল হজ্বের খোতবা। কিন্তু হায়, মুসলিম উম্মাহর পঁচিশ লাখ  মানুষের এ মহাসমাবেশে কতজন শুনতে পাচ্ছে এ খোতবা? বুঝতে পারছে কতজন?!

ইমামুল হজ্ব যোহরের ওয়াক্তে যোহর-আছর একত্রে আদায় করেন। আরাফার দিনে এটাই শরীয়তের বিধান। যদি প্রশ্ন করো, কেন? বলবো, বান্দার কাজ প্রশ্ন করা নয়, বান্দার কাজ মাওলার হুকুম মেনে চলা। সারা জীবন আছরের ওয়াক্তে আছর পড়েছো, আজ তুমি প্রমাণ করবে যে, এটা তুমি করেছো আল্লাহর হুকুমরূপে, অভ্যাসের বশে নয়। তাই তো আজ সারা জীবনের অভ্যাস বর্জন করছো আল্লাহর হুকুম মেনে নিয়ে। তুমি শুধু আল্লাহর হুকুম মেনে চলবে, কারণ তুমি আল্লাহকে ভয় করো। শুধু ভয় করো?! না, তুমি আল্লাহর হুকুমের অনুগত হও, কারণ তুমি আল্লাহকে ভালোবাসো এবং আল্লাহর ভালোবাসা কামনা করো।

***

মিনার মত আরাফায়ও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। বাস চালক কয়েকবার আরাফার সীমানায় প্রবেশ করলেন এবং বের হলেন, আর বৃত্তপথে ঘুরলেন। তারপর একসময় খুঁজে পেলেন ৮৬ নম্বর মুআল্লিমের তাঁবু, কিন্তু ততক্ষণে আমাদের অবস্থা কাহিল।

তাঁবুতে জামাত হলো যোহরের সময় যোহরের, আছরের সময় আছরের।

যোহরের পর, বিলম্ব যেন আর সয় না। বিলম্ব অবশ্য করতেও হলো না; খাবার এসে গেলো। আরাফার ময়দানে মুআল্লিমগণ হাজী ছাহেবানদের দুপুরের খাবার সরবরাহ করে থাকেন। সৌজন্য ও আতিথেয়তার এ ঐতিহ্য বহুকালের এবং বোধহয় তা প্রশংসার যোগ্য, তবে...!

একবেলা খাবারের তেমন কি প্রয়োজন! আসল প্রয়োজন হলো পুরো সফরে মুআল্লিমদের পক্ষ হতে কিছু সহমর্মিতা ও মানবিকতা, কিছু ইনসানিয়াত ও হামদর্দি। কিন্তু আরাফার ময়দানে ঐ দুপুরটুকু ছাড়া অনেকেরই অভিজ্ঞতা বড় বেদনাদায়ক। কিছু দেখেছি, অনেক কিছু শুনেছি।

সাতাশি সনে যিনি আমাদের মুআল্লিম ছিলেন এখন তিনি কবরবাসী। আল্লাহ তাকে মাফ করুন। গুরুতর এক পরিস্থিতির শিকার হয়ে যেতে হয়েছিলো তার দফতরে। কাজ হয়নি, দীর্ঘ সময় শুধু বসেছিলাম অসহায়ভাবে, আর দেখেছিলাম তুচ্ছ কারণে বয়স্ক এক হাজী ছাহেবের...।

এসব ক্ষেত্রে হাজী ছাহেবান স্বভাবতই ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন এবং আল্লাহর ঘরের মুসাফিরের জন্য শোভনীয় নয় এমন কিছু করে বসেন। আমাদের কিন্তু সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণ করতে হবে, কারণ আমরা আল্লাহর মেহমান, কোন মানুষের মেহমান নই।

মুআল্লিম অর্থ শিক্ষাদানকারী। নাম থেকেই বোঝা যায়, কী মহৎ চিন্তা ও কল্যাণভাবনা থেকে এ প্রথার উদ্ভব ঘটেছিলো। মুআল্লিম তার তত্ত্বাবধানে আগত হাজীছাহেবানের নির্ভুল হজ্ব আদায়ের ব্যবস্থা করবেন। হজ্বের প্রয়োজনীয় আহকাম শিক্ষা দেবেন। এজন্য পর্যাপ্তসংখ্যক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিয়োজিত করবেন; এটাই ছিলো প্রত্যাশা। এজন্য মুআল্লিম ‘অসামান্য’ পরিমাণ অর্থ লাভ করেন, কিন্তু বিনিময়ে প্রচুর অনর্থ সৃষ্টি করেন। মূল উদ্দেশ্যই যদি অর্জিত না হয় তাহলে মুআল্লিমপ্রথার প্রয়োজনীয়তা কোথায়?

ইন্না লিল্লাহ! আবার কী হলো আমার কলমের?! এসব কথার এটাই কি উপযুক্ত সময়?! এ তো নফস ও শয়তানের ধোকা ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহ, তুমি মাফ করো।

আমি ভুল বলেছি। মুআল্লিমের আতিথেয়তার আমাদের প্রয়োজন ছিলো এবং আমরা তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করলাম। তবে খাবার নষ্ট হবে ভেবে আমি ও ইমাম ছাহেব একটি প্যাকেট নিলাম এবং একসঙ্গে তৃপ্তিসহকারে আহার করলাম, আর আল্লাহর শোকর আদায় করলাম। ঊনিশ বছর পর আবার তিনি আমাদের আরাফায় একত্র করেছেন এবং একপাত্রে আহার করিয়েছেন। ছাত্রজীবনে এভাবে একত্রে বহুদিন আহার করেছি। দিনগুলো আজ নেই; আরাফার মহাসৌভাগ্যের এদিনটিও জীবন থেকে চলে যাবে এবং .. এবং একদিন জীবনেরও অবসান হবে। দয়াময় আল্লাহ যেন আরশের ছায়ায় আমাদের একত্র করেন। আল্লাহর পেয়ারা হাবীব বলেছেন, ‘দু’জন মানুষ যদি পরস্পরকে ভালোবাসে শুধু আল্লাহর জন্য, আল্লাহ তাদের আরশের ছায়া দান করবেন, যেদিন আরশের ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না।’

কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার পর তাঁবুতে আছরের জামাত হলো, তারপর ইজতিমাঈ মুনাজাত হলো। যথারীতি ইমাম ছাহেব মুনাজাত করলেন।

বড় মর্মস্পর্শী মুনাজাত হলো। যার চোখে সহজে পানি আসে না, সেও কাঁদলো অশ্রুজলে সণাত হয়ে। রহমত যেন আসমান থেকে ঝিরঝির করে ঝরলো; কবুলিয়াত ও মাগফিরাত যেন আমাদের ছায়া দান করলো। এমন মুনাজাতেরই প্রয়োজন আরাফার ময়দানে। ইমাম ছাহেব যখন মুসলিম উম্মাহর জন্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মজলুম মুসলমানদের জন্য দিলের দরদ-ব্যথা নিয়ে দু‘আ করলেন তখন কান্নার এমন রোল উঠলো যে...।

আফগানিস্তানে, ইরাকে, কাশ্মীরে, ফিলিস্তিনে এবং দেশে দেশে মুসলিম ভাইদের রক্ত ঝরছে, আর তাদের উদ্ধারের জন্য আরাফার ময়দানে ঝরছে লক্ষ লক্ষ হাজীর চোখের অশ্রু। রক্তের চেয়ে অশ্রুর মূল্য কম নয়।

আজ আরাফার ময়দানে বড় বেশী মনে পড়লো হযরত হাফেজ্জী হুযূর (র.)-এর কথা। যুবক বয়সে আল্লাহ তাওফীক দান করেছিলেন তাঁর ঐ প্রিয় বান্দার ছোহবত ও তারবিয়াতের ছায়ায় হজ্ব আদায়ের। তিনিও মুনাজাত করেছিলেন আরাফার ময়দানে, সিজদায় পড়ে ছিলেন তপ্ত বালুর উপর। সেই সিজদা ও মুনাজাত স্মরণ করে বুকের ভিতরে কান্না যেন উথলে উঠলো। তেমন ‘ছোহবতের হজ্ব’ আর কী নছীব হবে কখনো?

 (চলবে ইনশাআল্লাহ)

 

advertisement