Safar 1433   ||   January 2012

মিন্ আদাবিল্ ইসলাম

শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

১৭. দেখ, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে যুবকদেরকে আদব-কায়েদা শিক্ষা দিয়েছেন এবং বড়কে সম্মান করার তালিম দিয়েছেন। বিশিষ্ট সাহাবী মালিক বিন হুওয়াইরিছ রা. বলেন, ‘‘আমরা কয়েকজন সমবয়সী যুবক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এলাম এবং তাঁর নিকট বিশ রাত অবস্থান করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন স্নেহশীল ও কোমলস্বভাব। তিনি বুঝতে পারলেন যে, আমরা পরিবারের কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছুক। পরিবারে আমাদের কে কে আছে তিনি জানতে চাইলেন। আমরা উত্তর দেওয়ার পর তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের পরিবারে ফিরে যাও এবং তাদের সাথে অবস্থান কর। তাদেরকে (আল্লাহর বিধিবিধান) শেখাও এবং তা পালনের আদেশ কর। যখন নামাযের সময় হয় তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে’’-বুখারী ও মুসলিম

হাফেয ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. (যায়লু তবাকাতিল হানাবিলাহ ১/৮৭) গ্রন্থে ফকীহ আবুল হাসান আলী বিন মুবারক আলকারখী রাহ. (মৃত্যু : ৪৮৭ হি.)-এর জীবনীতে লেখেন, তিনি ছিলেন হাম্বলী মাযহাবের বড় ইমাম কাযী আবু ইয়ালা আলহাম্বলী রাহ.-এর শিষ্য। তিনি বলেন, একবার আমি কাযী আবু ইয়ালার সঙ্গে হাঁটছিলাম, তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি যখন তোমার কোনো শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির সাথে পথ চলবে তখন তার কোন দিকে থাকবে? আমি বললাম, আমার তা জানা নেই। তিনি বললেন, তাঁকে ইমামের স্থানে রাখবে। অর্থাৎ তুমি থাকবে ডান দিকে আর বাম দিক তার জন্য ছেড়ে দিবে। কারণ তার যদি নাক ঝাড়া বা এ ধরনের কোনো প্রয়োজন হয় তাহলে যেন বাম দিকে তা করতে পারেন।

উল্লেখ্য, বাম দিকে থুথু ফেলাই হল সুন্নত। হযরত মুআয বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি একদা অসুস্থ অবস্থায় ডান দিকে থুথু ফেললেন বা ফেলতে উদ্যত হলে বলতে লাগলেন, আমি ইসলাম গ্রহণের পর থেকে কোনোদিন ডান দিকে থুথু ফেলিনি।-তবারানী, মাজমাউয যাওয়াইদ, হায়ছামী ৯/৩১১

১৮. তাজীম ও মেহমানদারীর ক্ষেত্রেও বড় ও বিশিষ্ট ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দাও। তার মাধ্যমে শুরু কর, এরপর যিনি তার ডানে আছেন। তাহলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত মোতাবেক আমল হবে। ইতিপূর্বে দুটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থাৎ বড়কে অগ্রাধিকার দাও ও তাঁকে সম্মান কর এবং যে ব্যক্তি বড়কে সম্মান করল না সে আমার সুন্নতের অনুসারীদের মধ্য থেকে নয়।

টীকা : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সকল লোক সম্পর্কে, যারা বড়কে সম্মান করে না, ছোটকে স্নেহ করে না এবং আলেমদের তাজীম করে না, বলেছেন যে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। কারণ মানবজীবনে এই শিষ্টাচারের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। তাছাড়া এই নিয়ম লঙ্ঘন করা সাধারণ ভদ্রতারও পরিপন্থী। এর কারণে পরস্পর মনোমালিন্য ও ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়।

এছাড়া আরো অনেক হাদীস দ্বারা বিষয়টি প্রমাণ হয়। এখানে কিছু হাদীস উল্লেখ করা হল।

১. হযরত হুযাইফা রা. বলেন, আমরা যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কোনো নিমন্ত্রণে যেতাম তখন তাঁর শুরু করার আগে আমরা খাবারে হাত দিতাম না।-সহীহ মুসলিম ৩/১৮৭, বাবু আদাবিত তআমি ওয়াশ শারাবি ...।

ইমাম নববী রাহ. রিয়াযুস সালেহীন কিতাবে (পৃ. ২০৬) এ বিষয়ে একটি আলাদা অধ্যায় রচনা করেছেন এবং তাতে অনেক হাদীস উল্লেখ করেছেন। তাঁর শিরোনামটি এই-পরিচ্ছেদ : সম্মান করা আলিমগণকে, বয়স্কদেরকে ও বিশিষ্ট লোকদেরকে; অন্যের উপর তাঁদেরকে প্রাধান্য দেওয়া, তাঁদেরকে বিশিষ্ট স্থানে বসানো এবং তাদের অবস্থানগত মর্যাদা প্রকাশ করা।

টীকা : আল্লামা ইবনে আল্লান রাহ. দালীলুল ফালিহীন কিতাবে (২/২০৫)  এই শিরোনামের উপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, (সম্মান করা আলেমগণকে) অর্থাৎ যদিও তারা বয়স্ক না হন এবং (বয়স্কদেরকে) যদিও তারা আলিম না হন এবং (পদস্থ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে) অর্থাৎ যার দানশীলতা, ভদ্রতা, বীরত্ব প্রভৃতি গুণে অন্যদের তুলনায় বিশিষ্টতার অধিকারী।

(তাঁদেরকে বিশিষ্ট স্থানে বসানো) যদিও তাঁদের কর্তব্য, বিনয়ী হয়ে ও আল্লাহর রাসূলের অনুসারী হয়ে নিজের জন্য উঁচু স্থানের প্রত্যাশা না করা। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসের পিছনে বসে যেতেন।

(তাঁদের অবস্থানগত মর্যাদা প্রকাশ করা) যেন প্রত্যেকে তার প্রাপ্য মর্যাদা লাভ করে।

ইমাম নববী রাহ.-এর কথায় বুঝা যায়, উপস্থিত ব্যক্তিদের স্তরভেদ সেভাবেই হবে যেভাবে শিরোনামে বলা হয়েছে। অর্থাৎ আলেমরা বয়স্ক ব্যক্তিদের আগে, আর বয়স্করা অন্য সকলের আগে। তবে এই স্তরবিন্যাসে ঐ স্থানের কর্তা ব্যতিক্রম থাকবেন। কারণ নিজ কর্মক্ষেত্রে কর্তাই অগ্রগণ্য। তার অনুপস্থিতিতে উপরোক্ত নিয়ম কার্যকর হবে।

   (চলবে ইনশাআল্লাহ)

 

advertisement