Rajab 1432   ||   June 2011

মাজালিসুয যিকর

Mawlana Muhammad Abdul Malek

কুরআন-সুন্নাহয় যিকিরের যে ফযীলত এবং যিকিরের মজলিসের যে ফায়েদার কথা বলা হয়েছে তা সকলেই জানেন। তবে অনেকের ধারণা, তা শুধু ঐসব মজলিসের জন্য, যাতে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবাহনাল্লাহ ইত্যাদি পড়া হয় কিংবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সালাত-সালাম পাঠ করা হয়। এই ধারণা ঠিক নয়। দোয়া ও যিকিরের সাধারণ মজলিসের মতো ঈমানী মোযাকারা, দ্বীনী ইলমের চর্চা, ইসলাহ ও সংশোধন এবং দাওয়াত ও তাবলীগের মজলিসগুলোও আল্লাহর যিকিরের মজলিস। তেমনি আল্লাহর নেয়ামত ও কুদরতের আলোচনা, ওয়াজ-নসীহত, দরসে তাফসীর, দরসে হাদীস, মাসায়েলের মজলিস, সর্বোপরি কুরআন তিলাওয়াত ও সহীহ-শুদ্ধভাবে কুরআন শেখার মজলিস, এককথায় যেসব মজলিসে আল্লাহর কথা স্মরণ করা হয় সবগুলোই মাজালিছুয যিকর বা যিকরের মজলিস। ইনশাআল্লাহ যিকিরের মজলিসের ফায়েদা ও ফযীলত এই সকল মজলিসে পাওয়া যাবে।

বন্ধুদের বারংবার অনুরোধ এবং বড়দের অনুমতি ও আদেশের পর মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়ায় দ্বীনী মোযাকারার বিভিন্ন মজলিস শুরু হয়েছে। প্রতি ইংরেজি মাসের প্রথম বুধবার আসর থেকে ইশা পর্যন্ত দ্বীনী মজলিস আলহামদুলিল্লাহ কয়েক বছর যাবৎ চলছে। এখন  তা মাসিক থেকে সাপ্তাহিক হয়েছে এবং প্রতি বুধবার মজলিসটি হচ্ছে। মাসের প্রথম বুধবার আসর থেকে ইশা পর্যন্ত হলেও অন্যান্য বুধবার তা হয় মাগরিবের পর। এই মজলিসগুলোতে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে আদব-আখলাকের উপর আলোচনা হয়ে থাকে। এখন তা হচ্ছে আলআদাবুল মুফরাদ কিতাবটিকে ভিত্তি করে।

একটি নতুন সুসংবাদ এই যে, এখন মারকাযুদ দাওয়ায় প্রতি ইংরেজি মাসের প্রথম জুমায় বাদ আসর হযরত পাহাড়পুরী হুজুর দামাত বারাকাতুহুমের ইসলাহী মজলিস শুরু হয়েছে। আগামী মাসের মজলিসটি হবে ৩রা জুন বাদ আসর ইনশাআল্লাহ। অনেকগুলো কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও খাদিমদের দরখাস্ত হযরতওয়ালা মঞ্জুর করেছেন। আল্লাহ তাআলা হযরতকে পূর্ণ সিহহত ও আফিয়াত দান করুন। আমীন।

মারকাযুদ দাওয়াহর হযরতপুর প্রাঙ্গণেও (কেরানীগঞ্জ শাখা) ইনশাআল্লাহুল আযীয আগামী ১৬ জুন বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকে মজলিসের সিলসিলা শুরু হবে এবং ঐ দিনের মজলিসে মশোয়ারার মাধ্যমে তারিখ ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে।

এই অধঃপতনের যুগেও মাজালিছে যিকরের মাধ্যমে দ্বীন ও ঈমান, ইলম ও আমল, আদব ও আখলাক, যিকর ও ফিকর, মোটকথা সবদিকের ফায়েদা হাসিল হচ্ছে। এজন্য যেখানেই এ ধরনের মজলিস হয় তাতে শামিল হতে পারাকে নিজের সৌভাগ্য মনে করা উচিত।

বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের যে মজলিসগুলো হয়ে থাকে, জানা থাকলে এখানে সবগুলোর তালিকা দিতে পারতাম। শুধু প্রফেসর হামীদুর রহমান ছাহেবের কিছু মজলিসের কথা আমার জানা আছে। সেগুলোর কথা উল্লেখ করছি। প্রতি শনিবার মাগরিব থেকে ইশা আজিমপুর চায়না বিল্ডিং গলির ১৩৬ নম্বর বাসার নীচতলায় একটি মজলিস হয়। মাশাআল্লাহ ১৪১৭ হিজরীর যুকাদাহ থেকে মজলিসটি চলছে। এর প্রায় দুই-আড়াই বছর পর উত্তরায় (সেক্টর-৩, রোড-১৮, বাসা-৫৪) প্রতি সোমবার মাগরিব থেকে ইশা পর্যন্ত আরেকটি মজলিস শুরু হয়েছে। প্রতি মঙ্গলবার বুয়েট বাইতুস সালাম মসজিদে ইশার পর কুরআনের ভাষার দরস হয়। এছাড়া আরো কিছু সাপ্তাহিক মজলিসও হয়ে থাকে।

তাঁর মাসিক মজলিসগুলোর মধ্যে রয়েছে বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদের মজলিস, যা প্রতি চন্দ্রমাসের প্রথম জুমায় বাদ মাগরিব হয়ে থাকে। প্রতি চন্দ্রমাসের প্রথম বুধবার শান্তিনগরে প্রফেসর ড. আনোয়ারুল করীম ছাহেব যীদা মাজদুহুম (আল্লাহ তাঁকে শিফায়ে কামেল নসীব করুন এবং আফিয়াত ও সালামতের সাথে দীর্ঘ ও বা-বরকত জীবন দান করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন)-এর আজরুন কারীমে মাগরিবের পরে একটি মজলিস হয়। মহিলাদের জন্যও বাসার দোতলায় বসার ব্যবস্থা থাকে।

চন্দ্রমাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার ও জুমাবার চট্টগ্রামে তাঁর কয়েকটি মজলিস হয়। উপরোক্ত কোনো মজলিসে শরীক হয়ে অন্যান্য মজলিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যেতে পারে।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আলিম-উলামা এবং দায়ী ও বুযুর্গানে দ্বীনের মজলিসে শরিক হওয়ার এবং তাঁদের সোহবত ও মোলাকাত থেকে ফায়েদা হাসিল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।     


 

advertisement