Shaban 1446   ||   February 2025

ফিলিস্তিনের জিহাদ ও শাহাদাতের নাযরানা

Mawlana Mufti Taqi Usmani

সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, যিনি এই বিশ্বজগৎকে অস্তিত্ব দান করেছেন। দরূদ ও সালাম তাঁর প্রেরিত আখেরী নবীর প্রতি, যিনি এ ধরায় সত্যের ঝাণ্ডা বুলন্দ করেছেন।

গত ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ঈসাব্দে সন্ত্রাসী ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের মুজাহিদীনের অব্যাহত জিহাদের এক বছর পূর্ণ হল। এর মাঝে পৃথিবী এমন দুটি চিত্র প্রত্যক্ষ করেছে, যুদ্ধের ইতিহাসে যা নেহায়েত বিরল।

একদিকে হামাস; যাদের কাছে নেই কোনো ট্যাঙ্ক-কামান, নেই কোনো যুদ্ধবিমান, নেই কোনো সামরিক জাহাজ। কিন্তু তারাই আজ পৃথিবীর ‘সর্বাধিক শক্তিধর’ সুপার পাওয়ার আমেরিকার সরবরাহকৃত অত্যাধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত শত্রুকে প্রতিহত করে যাচ্ছে। যে ইসরাইল দম্ভভরে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিল, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষান্ত হবে, আজ তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করার পরও হামাসকে নির্মূল করতে পারেনি; এমনকি নিজেদের বন্দিগুলোকেও মুক্ত করতে পারেনি।

হামাসের জিহাদী জযবা ও ঈমানী হিম্মতে কোনো ছেদ পড়েনি। পূর্ণ উদ্যমের সাথে তারা লড়াই করে যাচ্ছে। তবে হামাসের সাথে পাঞ্জা নিতে গিয়ে আজ ইসরাইল প্রচণ্ডভাবে ঝাঁকুনি খাচ্ছে। তাদের অসংখ্য যুদ্ধসরঞ্জাম, অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস হয়েছে। অনেক সৈনিক নিহত হয়েছে। বহু জেনারেল খুইয়ে বসেছে। ‘মাছির সাথে হাতির লড়াইয়ের’ এ দৃশ্য এক আফগানিস্তান ছাড়া অন্য কোথাও মেলা ভারি দুষ্কর। পার্থক্য শুধু এতটুকু, আমেরিকা ও ন্যাটোর মোকাবেলায় আফগানিস্তানের জন্য ছিল পর্বতগহ্বর আর গাজার মুজাহিদদের আশ্রয় নিতে হচ্ছে পাহাড়ের পরিবর্তে মাটি খুঁড়ে সুড়ঙ্গ করে।

দ্বিতীয়ত আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদে ইসরাইল গাজা উপত্যকাজুড়ে যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, সাজানো গোছানো একটি শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, শহরের নিরীহ নারী, নিরপরাধ শিশু ও নিরস্ত্র বৃদ্ধদেরকে হত্যা করেছে; এমনকি নবজাতক ও দুধের শিশুদের রক্ত প্রবাহিত করেছে; হাসপাতালের বেডে কাতরানো রোগীদের পর্যন্তও তারা রেহাই দেয়নি এমন নির্মম গণহত্যার নজির ইতিহাসে মেলা মুশকিল।

বলা হয়ে থাকে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চুক্তি ও জাতিসংঘের মাধ্যমে বর্তমান এ ‘সভ্য দুনিয়ায়’ যুদ্ধনীতিকে পরিশীলিত ও মানবিক করার ক্ষেত্রে আশ্চর্য রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা কী দেখি? আমরা দেখতে পাই, কাগজ-কলম পর্যন্তই তা সীমাবদ্ধ থাকে। বাস্তবতার পৃথিবীতে দেখা যায়, শক্তিধরেরা বিশেষ করে আমেরিকা, সেই বর্বরোচিত আইনই প্রয়োগ করে অর্থাৎ বেঁচে থাকার অধিকার কেবল তারই আছে, যে নিজের শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিপক্ষকে বিলীন করে দিতে পারে।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, নারী আধিকার, শিশু অধিকার ইত্যাদি স্বাধীনতা ও অধিকারের নামে যে মুখরোচক দাবি-দাওয়ার ফুলঝুরি দিয়ে পশ্চিমা সভ্যতা অন্যদের প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়, আজ তারা নিরীহ নগরবাসীর প্রবাহিত রক্ত-লালিমা দেখতে পায় না। গোলায় বিধ্বস্ত ছটফট করা শিশুদের অবয়বগুলো নজরে পড়ে না। চোখের সামনে স্বামী-সন্তানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ সামাল দেওয়া অসহায় নারীর আর্তনাদ তারা শুনতে পায় না। হাসপাতালের আইসিইউতে কাতরাতে থাকা রোগীদের প্রতি তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

আন্তর্জাতিক আদালত ইসরাইলকে গণহত্যার অপরাধী ঘোষণা করেছে। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর নাগরিকেরা ইসরাইলের পাশবিকতা ও হিংস্রতার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতার ধ্বজাধারী পশ্চিমে প্রতিবাদীদের টুঁটি চেপে ধরা হচ্ছে। আর তার চাইতেও আগ বাড়িয়ে পশ্চিমা মদদপুষ্ট মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ‘প্রভুর চেয়ে ভৃত্যের অগ্রগামিতার’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

***

ফিলিস্তিন-ইসরাইলের এ লড়াইকে ঘিরে বর্ষব্যাপী এ দুটি চিত্র বিশ্ববাসী অবলোকন করে আসছে। রক্তক্ষয়ী এ ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের প্রতিটি মুহূর্ত বিশ্বমানবতার বিবেকে দস্তক দিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে মুসলিম শাসকদের এ বার্তা দিয়ে যাচ্ছে, তোষামোদির দ্বারা দাসত্বের জোয়াল কাঁধে আরো জেঁকে বসে। আর তা উৎখাত হয় জীবন বাজি রেখে আত্মত্যাগের নাযরানার মাধ্যমে।

আফসোসের কথা হচ্ছে, মরোক্ক থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর এ বেল্ট, যারা বাহ্যিক উপায় উপকরণে সমৃদ্ধ, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে শুনতেও অক্ষম রয়ে গেল। পাকিস্তানসহ গুটিকয়েক রাষ্ট্র ফিলিস্তিনবাসীর পক্ষে মৌখিক কিছু বিবৃতি দিয়েছে বটে, কিন্তু কুরআন কারীমের বিধান মেনে নিতে কেউ প্রস্তুত নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন

وَ مَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللهِ وَ الْمُسْتَضْعَفِیْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَ النِّسَآءِ وَ الْوِلْدَانِ الَّذِیْنَ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْ هٰذِهِ الْقَرْیَةِ الظَّالِمِ اَهْلُهَا وَ اجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ وَلِیًّا وَّ اجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ نَصِیْرًا.

(হে মুসলিমগণ!) তোমাদের জন্য এর কী বৈধতা আছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে সেইসকল অসহায় নর-নারী ও শিশুদের জন্য লড়াই করবে না, যারা দুআ করছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই জনপদ থেকে—যার অধিবাসীরা জালিম—অন্যত্র সরিয়ে নাও এবং আমাদের জন্য তোমার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক বানিয়ে দাও এবং আমাদের জন্য তোমার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী দাঁড় করিয়ে দাও? সূরা নিসা (০৪) : ৭৫

বিগত পাঁচ মাসে কয়েকটি রাষ্ট্রে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সব জায়গায় আমি লক্ষ করলাম, সাধারণ মুসলমানদের হৃদয় জিহাদী জযবায় উদ্বেলিত হয়ে আছে। কেউ কেউ তো সশরীরে মুসলিম ভাই-বোনদের সাথে জিহাদে শরীক হওয়ার জন্য উদগ্রীব। কিন্তু ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় তা করার সুযোগ হচ্ছে না। ফলে তারা শাসকবর্গের প্রতি সীমাহীন রুষ্ট ও অসন্তুষ্ট। আলহামদু লিল্লাহ, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রভাবে বিভিন্ন পথে আর্থিক সহযোগিতার ধারা অব্যাহত আছে। কিন্তু ইসরাইলের ষড়যন্ত্রকে ধূলিসাৎ করার জন্য কোনো কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, ওআইসি-ও এক্ষেত্রে দায়সারা গোছের কিছু ঘোষণা ব্যতীত কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সর্বসাকুল্যে ইরান নামকাওয়াস্তে কিছু করেছে। আর ইয়েমেন ও হিযবুল্লাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে কিছু কাজের কাজ করেছে। হিযবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে তো ইসরাইল টার্গেট করে মেরেই ফেলল। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। যদিও সিরিয়ায় সুন্নিদের বিরুদ্ধে হিযবুল্লাহ যে আক্রমণ করেছে তা নিন্দাযোগ্য। তবে পুরো বিশ্ব যখন খামোশ, তখন ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিযবুল্লাহর এ প্রতিশোধ গ্রহণ ও এজন্য জান বাজি রাখা প্রশংসার দাবি রাখে।

***

এমন কঠিন মুহূর্তে হামাসের আত্মত্যাগী সাহসী মুজাহিদীন স্বাধীনতা ও স্বাধীকার আদায়ের এ মিশনকে রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তাদের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মহান ব্যক্তিত্ব শাহাদাতের সুউচ্চ মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন। তাদের সেই শাহাদাতই তাদের সততা ও নিষ্ঠার সাক্ষ্য প্রদান করে।

দুইজনের কথা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। একজন ড. ইসমাঈল হানিয়া, অপরজন জনাব ইয়াহইয়া সিনওয়ার রাহিমাহুমাল্লাহু তাআলা ওয়া জাআলাল জান্নাতা মাছওয়াহুমা। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন।

জনাব ইসমাঈল হানিয়া রাহ. হামাসের প্রধান ছিলেন। ইসরাইলের বিরুদ্ধে এবারের জিহাদ শুরু হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই তার সাথে সাক্ষাৎ এবং সম্ভাব্য সহযোগিতার লক্ষ্যে বান্দা কাতারের দোহায় উপস্থিত হই। তিনি অত্যন্ত সজ্জন, প্রখর ধীশক্তি সম্পন্ন, বিনয়ী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। পবিত্র কুরআনের হাফেয ছিলেন। নির্বাচিত হয়ে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। তাঁর সাথে দীর্ঘ দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ হয়। আমার ধারণা বিশ্বাসে পরিণত হয় এ কাফেলা দুনিয়াবী কোনো উদ্দেশ্যে নয়; কেবল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে লড়াই করে যাচ্ছে।

আমার নিকট তার পুত্র-পৌত্রের শাহাদাতের সংবাদ পৌঁছল। তখন তার দৃঢ়তা ও সুস্থিরতা ছিল বিস্ময়কর। ফোনে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার সুযোগ হল। তিনি খুবই শান্ত-স্বাভাবিক ছিলেন। অত্যন্ত প্রসন্নভাবে বলছিলেন, আমার সন্তানরা গাজার অপরাপর শহীদান অপেক্ষা ব্যতিক্রম কেউ নয়। এ মুহূর্তে তার আচরণ ও উচ্চারণ এবং সুদৃঢ় মনোবল ও অভাবনীয় সুস্থিরতা ছিল নজিরবিহীন।

আলহামদু লিল্লাহ, ফোনে তাঁর সাথে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। হঠাৎ করে ইরান সফরে তার ওপর বোমা হামলা হয়। তিনি স্বীয় লক্ষ্যে চূড়ান্ত সাফলতা লাভ করেন। শাহাদাতের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে অমরত্ব বরণ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন।

তার শাহাদাতের পর তাযিয়াতের (শোক প্রকাশের) জন্য দোহায় যাওয়ার সুযোগ হয়। হামাস আন্দোলনে তাঁর ডান হাত এবং হামাস নেতা জনাব খালেদ মিশালের সাথে সাক্ষাৎ হয়। জনাব ইসমাঈল হানিয়ার ছেলেদের সাথেও সাক্ষাৎ হয়। তাদের কারো চেহারায় শোক-তাপের কোনো রেখা পরিলক্ষিত হল না; বরং সকলকে জিহাদী চেতনায় উদ্দীপ্ত মনে হল।

আমার আহলিয়া জনাব ইসমাঈল হানিয়ার স্ত্রী-কন্যাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি জানালেন, শোকে ভেঙে পড়ার পরিবর্তে অন্তঃপুরের নারীদেরও মনে হল জিহাদী জযবায় ব্যাকুল। তাদের তেজোদীপ্ত অবয়বগুলো আমাদেরকে সেই সোনালি ইতিহাস মনে করিয়ে দিল।

ইসমাঈল হানিয়া রাহ.-এর পর হামাসের সকল নেতার ঐক্যমতে জনাব ইয়াহইয়া সিনওয়ারকে হামাসের প্রধান নিযুক্ত করা হয়। তিনি ময়দানে সশরীরে জিহাদের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। আজ যার নামে ‘রাহিমাহুল্লাহু তাআলা’ লিখতে প্রচণ্ডভাবে শিউরে উঠছি। আমি তাশখন্দে ছিলাম। সেখানে মুসলমানদেরকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাগ্রত করার কাজ করে যাচ্ছিলাম। এরমধ্যে তার শাহাদাতের সংবাদ লাভ করি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন।

জনাব ইয়াহইয়া সিনওয়ার রাহ.-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়নি। তবে তার ঈমানোদ্দীপক বিভিন্ন ভাষণ শোনার সুযোগ হয়েছে। হামাসের লড়াইয়ে তিনি প্রথম থেকেই যুক্ত ছিলেন এবং নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। ইসরাইলের জন্য তার অস্তিত্বটাই ছিল একটি আতঙ্কের নাম। তারা এ অভিযোগ করছিল, তিনি কোনো টানেলে বন্দিদের সাথে নিরাপদে অবস্থান করছেন। কিন্তু ইসরাইল যেভাবে তাকে শহীদ করল, তাতে তারা নিজেরাই সাক্ষী, তিনি কোথাও নিরাপদ স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন না। বীরদর্পে ময়দানে জিহাদ করে শহীদ হয়েছেন। তার সামনে যে ড্রোন ছিল, তিনি শেষ সম্বল হিসেবে একটি লাঠি দিয়ে তাতে আঘাত করেন; অবশেষে শাহাদাত বরণ করেন। এভাবে তিনি সাধ্যের সর্বশেষটুকু দিয়ে শত্রুকে প্রতিহত করে গেছেন।

তার একটি বক্তব্যের রেকর্ড পাওয়া যায়; সেখানে তিনি বলেন

ইসরাইল আমাকে সর্বোচ্চ যে উপহারটা দিতে পারে তা হচ্ছে, বিছানায় পড়ে না থেকে আমি ইসরাইলের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে করতে শাহাদাত বরণ করব।

আল্লাহ তাআলা তার সেই আকাক্সক্ষা পূরণ করেছেন

بنا کردند خوش رسمے بخاک و بخون غلطیدن

خدا رحمت کند ایں عاشقانِ پاک طینت را

(নিজের খুন পানি করে, জীবন কোরবান করে তারা উম্মাহর জন্য আদর্শ স্থাপন করে গেছেন। আল্লাহ এই পবিত্র ভূমির আশেকানদের প্রতি রহম করুন।)

ইসরাইল মনে করছে, হামাসের প্রধান দুই সিপাহসালারকে শহীদ করে তারা যুদ্ধে বিজয় লাভ করেছে। তবুও  এ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে তারা এখনো গোঁ ধরে আছে। গাজার ভূমিতে অবিরাম বোমা বর্ষণ করে যাচ্ছে। কিন্তু তারা জানে না, যেসকল মুজাহিদীনের সাথে তারা পাঞ্জা লড়ছে, আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে শাহাদাত বরণ করাই হচ্ছে তাদের জীবনের আরাধনা। এর বিপরীতে পৃথিবীর সকল প্রাচুর্য ও বিলাসিতা তাদের নিকট নিতান্ত তুচ্ছ। তারা হার মেনে নেওয়ার জন্য নয়, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আত্মত্যাগের নাযরানা পেশ করতে ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন। সহযোদ্ধাদের শাহাদাতের দৃশ্য তাদেরকে হতোদ্যম করে না, এগিয়ে নেয় গন্তব্যের পথে।

তারা জানেন

کہ خون صد ہزار انجم سے ہوتی ہے سحر پيدا

অজস্র নক্ষত্রের বিলীনেই একটি প্রভাত প্রস্ফুটিত হয়।

যেই ত্যাগ ও নিষ্ঠার সাথে এ জিহাদ পরিচালিত হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার রহমতের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে বলা যায়, পরিশেষে মুজাহিদগণই বিজয় লাভ করবেন। আজ নয় কাল ইনশাআল্লাহ এ জিহাদের মাধ্যমেই মুসলিম দুনিয়ার কাঁধ থেকে দাসত্বের শৃঙ্খল অপসারিত হবে।

আল্লাহ তাআলা নিজ ফযল ও করম এবং খাছ রহমতে এই আশা পূর্ণ করুন। মুসলমানদের শির সমুন্নত করুন। হৃদয়গুলো প্রশান্ত করুন আমীন।

 

[মুহাম্মাদ তাকী উসমানী

১৬ রবিউস সানী ১৪৪৬ হি.

বিমানে, তাশখন্দ থেকে করাচির পথে]

(মাসিক আলবালাগ থেকে, জুমাদাল উলা ১৪৪৬ হি., ডিসেম্বর ২০২৪ ঈ.)

ভাষান্তর : মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর

 

advertisement