সূরাসমূহের নামের অর্থ
(পূর্ব প্রকাশের পর)
৫০। সূরা ক্বফ
সূরাটির প্রথম আয়াত قٓ (ক্বফ)। এটি ‘আলহুরূফুল মুকাত্তাআত’-এর অন্তর্ভুক্ত। এর অর্থ আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। সূরাটির শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
قٓ وَ الْقُرْاٰنِ الْمَجِیْدِ، بَلْ عَجِبُوْۤا اَنْ جَآءَهُمْ مُّنْذِرٌ مِّنْهُمْ فَقَالَ الْكٰفِرُوْنَ هٰذَا شَیْءٌ عَجِیْبٌ.
ক্বফ, কুরআন মাজীদের কসম (কাফেররা যে নবীকে অস্বীকার করছে, তা কোনো দলীলের ভিত্তিতে নয়); বরং কাফেররা এই কারণে বিস্ময়বোধ করছে যে, খোদ তাদেরই মধ্য থেকে তাদের কাছে একজন সতর্ককারী (কীভাবে) আসল? সুতরাং কাফেররা বলে, এটা তো বড় আজব ব্যাপার! –আয়াত ১-২
অর্থাৎ সূরার শুরুতে কাফের মুশরিকদের হঠকারিতা ও অজ্ঞতাবশত ঈমান না আনার কথা উল্লেখ করে তাদেরকে আল্লাহর বিভিন্ন সৃষ্টি ও নিআমতরাজি দেখে ঈমান আনার দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।
প্রথম আয়াতের শুরুতে উল্লেখিত قٓ (ক্বফ) হরফ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা ক্বফ’।
৫১। সূরা যারিয়াত
‘যারিয়াত’ (ذٰرِیٰت) শব্দটি যারিয়াতুন (ذَارِيَة) শব্দের বহুবচন। অর্থ প্রবল বাতাস। সূরার প্রথম আয়াতেই শব্দটি রয়েছে। সূরাটির শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
وَ الذّٰرِیٰتِ ذَرْوًا، فَالْحٰمِلٰتِ وِقْرًا، فَالْجٰرِیٰتِ یُسْرًا، فَالْمُقَسِّمٰتِ اَمْرًا، اِنَّمَا تُوْعَدُوْنَ لَصَادِقٌ، وَّ اِنَّ الدِّیْنَ لَوَاقِعٌ.
কসম সেই সবের (অর্থাৎ সেই বায়ুর), যা ধুলোবালি উড়িয়ে বিক্ষিপ্ত করে দেয়। তারপর সেই সবের, যা (মেঘের) ভার বহন করে, তারপর সেই সবের, যা স্বচ্ছন্দ গতিতে চলাচল করে, তারপর সেই সবের, যা বস্তুরাজি বণ্টন করে। তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে তা নিশ্চিত সত্য এবং কর্মের প্রতিফলও অবশ্যম্ভাবী। –আয়াত : ১-৬
প্রথম আয়াতে উল্লেখিত ‘যারিয়াত’ (ذٰرِیٰت) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা যারিয়াত’।
৫২। সূরা তূর
‘তূর’ (الطُّوْر) একটি পাহাড়ের নাম। এ পাহাড় কেন্দ্রিক হযরত মূসা আলাইহিস সালামের বিভিন্ন ঘটনা কুরআন কারীমে বর্ণিত হয়েছে। এ সূরার প্রথম আয়াতে আল্লাহ তাআলা তূর পাহাড়ের নামে শপথ করেছেন। সূরাটির শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
وَ الطُّوْرِ، وَ كِتٰبٍ مَّسْطُوْرٍ، فِیْ رَقٍّ مَّنْشُوْرٍ، وَّ الْبَیْتِ الْمَعْمُوْرِ، وَ السَّقْفِ الْمَرْفُوْعِ، وَ الْبَحْرِ الْمَسْجُوْرِ، اِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ لَوَاقِعٌ، مَّا لَهٗ مِنْ دَافِعٍ.
কসম তূর পাহাড়ের, এবং সেই কিতাবের, যা লেখা আছে খোলা পাতায়। এবং কসম ‘বায়তুল মামুর’-এর ও উন্নীত ছাদের এবং উত্তাল সাগরের। তোমার প্রতিপালকের আযাব অবশ্যম্ভাবী। তা রোধ করতে পারে এমন কেউ নেই। –আয়াত : ১-৮
সূরার শুরুতে উল্লেখিত তূর (الطُّوْر) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা তূর’।
৫৩। সূরা নাজম
‘নাজমুন’ (نَجْم) অর্থ নক্ষত্র, তারকা। সূরাটির প্রথম আয়াতেই শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে। তাতে তারকার শপথ করা হয়েছে। সূরাটির শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
وَ النَّجْمِ اِذَا هَوٰی،مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَ مَا غَوٰی، وَ مَا یَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰی، اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْیٌ یُّوْحٰی.
কসম নক্ষত্রের, যখন তা পতিত হয়। (হে মক্কাবাসী!) তোমাদের সঙ্গী পথ ভুলে যায়নি এবং বিপথগামীও হয়নি। সে তার নিজ খেয়াল-খুশি থেকে কিছু বলে না। এটা তো খালেস ওহী, যা তাঁর কাছে পাঠানো হয়। –আয়াত : ১-৪
প্রথম আয়াতে উল্লেখিত নাজমুন (نَجْم) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে সূরা ‘নাজম’।
৫৪। সূরা কমার
‘কমারুন’ (قَمَر) অর্থ চাঁদ। সূরাটির প্রথম আয়াতে শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে। তাতে চাঁদ খণ্ডিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে–
اِقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَ انْشَقَّ الْقَمَرُ.
কিয়ামত কাছে এসে গেছে এবং চাঁদ ফেটে গেছে। –আয়াত : ১
আল্লাহ তাআলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক বিস্ময়কর মুজিযা দান করেছিলেন, তাঁর নির্দেশে চাঁদ খণ্ডিত হয়েছিল। উক্ত আয়াতে সেদিকেই ইশারা করা হয়েছে।
আয়াতে উল্লেখিত কমারুন (قَمَر) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা কমার’।
৫৫। সূরা আররহমান
‘রহমান’ (الرَّحْمٰن) আল্লাহ তাআলার একটি নাম। সূরার প্রথম আয়াতেই আল্লাহ তাআলার ‘রহমান’ নামটি উল্লেখিত হয়েছে। সূরার শুরুতে ইরশাদ হয়েছে–
اَلرَّحْمٰنُ، عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ، خَلَقَ الْاِنْسَانَ، عَلَّمَهُ الْبَیَانَ.
তিনি তো রহমানই, যিনি কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তাকে ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন। –আয়াত : ১-৪
সূরার শুরুতে উল্লেখিত আল্লাহ তাআলার পবিত্র ‘রহমান’ (الرَّحْمٰن) নাম অনুযায়ীই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা আররহমান’।
এ সূরায় অনেকবার একটি আয়াতের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। তা হল–
فَبِاَیِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ.
সুতরাং তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ নিআমতকে অস্বীকার করবে?
৫৬। সূরা ওয়াকিয়া
‘ওয়াকিয়া’ (وَاقِعَة) অর্থ ঘটনা, বিশাল ঘটনা, বড় কোনো ব্যাপার ইত্যাদি। সূরাটির প্রথম আয়াতেই শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে। সূরার প্রথম দুই আয়াতে ইরশাদ হয়েছে–
اِذَا وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ، لَیْسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةٌ.
যখন অবশ্যম্ভাবী ঘটনা ঘটবে, তখন এর সংঘটনকে অস্বীকার করার কেউ থাকবে না। –আয়াত : ১-২
আয়াতে উল্লেখিত ‘ওয়াকিআ’ (وَاقِعَة) শব্দ দ্বারা কিয়ামত উদ্দেশ্য। এ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা ওয়াকিয়া’।
৫৭। সূরা হাদীদ
‘হাদীদ’ (حَدِیْد) অর্থ লোহা। সূরাটির ২৫ নম্বর আয়াতে শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে। তাতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন–
وَ اَنْزَلْنَا الْحَدِیْدَ فِیْهِ بَاْسٌ شَدِیْدٌ وَّ مَنَافِعُ لِلنَّاسِ.
আমি লোহা অবতীর্ণ করেছেন, যার ভেতর রয়েছে রণশক্তি এবং মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ।
আয়াতে উল্লেখিত ‘হাদীদ’ (حَدِیْد) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা হাদীদ’।
৫৮। সূরা মুজাদালাহ
‘মুজাদালাহ’ (مُجَادَلَة) অর্থ বাদানুবাদ করা, তর্ক করা ইত্যাদি। সূরাটির প্রথম আয়াতে مجادلة মাসদার বা ক্রিয়ামূল থেকে تُجَادِلُكَ ফেয়েল বা (স্ত্রীবাচক) ক্রিয়াপদ ব্যবহৃত হয়েছে। সূরার শুরুতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক নারীর বাদানুবাদের কথা বিবৃত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে–
قَدْ سَمِعَ اللهُ قَوْلَ الَّتِیْ تُجَادِلُكَ فِیْ زَوْجِهَا وَ تَشْتَكِیْۤ اِلَی اللهِ وَ اللهُ یَسْمَعُ تَحَاوُرَكُمَا اِنَّ اللهَ سَمِیْعٌۢ بَصِیْرٌ.
(হে নবী!) আল্লাহ সেই নারীর কথা শুনেছেন, যে তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছে। আল্লাহ তোমাদের কথোপকথন শুনছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন।’
এ হিসেবেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা মুজাদালাহ’।
৫৯। সূরা হাশর
‘হাশর’ (حَشْر) অর্থ একত্র করা, সমবেত করা। সূরাটির দ্বিতীয় আয়াতে এ শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে। তাতে ইরশাদ হয়েছে–
هُوَ الَّذِیْۤ اَخْرَجَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا مِنْ اَهْلِ الْكِتٰبِ مِنْ دِیَارِهِمْ لِاَوَّلِ الْحَشْرِ.
তিনিই (আল্লাহ তাআলা) কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফের তাদেরকে প্রথম সমাবেশেই তাদের ঘর-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছেন। –আয়াত : ২
আয়াতে উল্লেখিত হাশর (حَشْر) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা হাশর’।
৬০। সূরা মুমতাহিনা
‘মুমতাহিনা’ (مُمْتَحِنَة) শব্দটি ইমতিহান (امْتِحَان) মাসদার বা ক্রিয়ামূল থেকে স্ত্রীবাচক কারক-পদ। ইমতিহান (امْتِحَان) অর্থ পরীক্ষা নেওয়া, যাচাই করা। আর এ থেকে স্ত্রীবাচক কারক-পদ তথা ‘মুমতাহিনা’ (مُمْتَحِنَة) শব্দের অর্থ হল পরীক্ষা গ্রহণকারী (স্ত্রীবাচক)। সূরাটির দশম আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন–
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا جَآءَكُمُ الْمُؤْمِنٰتُ مُهٰجِرٰتٍ فَامْتَحِنُوْهُنَّ اَللهُ اَعْلَمُ بِاِیْمَانِهِنَّ.
‘হে মুমিনগণ! মুমিন নারীগণ হিজরত করে তোমাদের কাছে আসলে তোমরা তাদেরকে পরীক্ষা করে নিও। তাদের ঈমান সম্পর্কে আল্লাহ্ই ভালো জানেন। –আয়াত : ১০
হুদায়বিয়ার সন্ধির পরে যেসকল মুমিন নারীগণ হিজরত করে মদীনায় এসেছিলেন, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতে এ নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে, তারা সত্যিকারভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছেন কি না, তা যেন পরীক্ষা করে দেখা হয়।
এ হিসেবেই সূরাটির নাম ‘সূরা মুমতাহিনা’। অর্থাৎ এমন সূরা, যাতে মুমিন নারীগণের ঈমানের পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
৬১। সূরা সফ্ফ্
‘সফ্ফ্’ (صَفّ) অর্থ, সারি, কাতার। সূরাটির চতুর্থ আয়াতে শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে। তাতে আল্লাহ তাআলা জিহাদের আলোচনা প্রসঙ্গে যেসব মুসলিম আল্লাহর পথে সারিবদ্ধ হয়ে জিহাদ করে, তাদের প্রশংসা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে–
اِنَّ اللهَ یُحِبُّ الَّذِیْنَ یُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِهٖ صَفًّا كَاَنَّهُمْ بُنْیَانٌ مَّرْصُوْصٌ.
বস্তুত আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে এভাবে সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে, যেন তারা সিসাঢালা প্রাচীর। –আয়াত : ৪
এ আয়াতে উল্লেখিত ‘সফ্ফ্’ (صَفّ) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা সাফ্ফ্’।
৬২। সূরা জুমুআ
‘জুমুআ’ (جُمُعَة) দ্বারা উদ্দেশ্য জুমার নামায। সূরাটির ৯ নম্বর আয়াতে ‘জুমুআ’ (جُمُعَة) শব্দটি এসেছে। তাতে জুমার নামাযের বিধান বর্ণিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে–
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا نُوْدِیَ لِلصَّلٰوةِ مِنْ یَّوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا اِلٰی ذِكْرِ اللهِ وَ ذَرُوا الْبَیْعَ ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.
হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাযের জন্য ডাকা হয়, তখন আল্লাহর যিকিরের দিকে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ছেড়ে দাও। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়; যদি তোমরা উপলব্ধি কর। –আয়াত : ৯
আয়াতে উল্লেখিত ‘জুমুআ’ (جُمُعَة) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা জুমুআ’।
৬৩। সূরা মুনাফিকূন
‘মুনাফিকূন’ (مُنٰفِقُوْن) শব্দটি ‘মুনাফিক’ (مُنافِق) শব্দের বহুবচন। সূরাটির প্রথম ৮ আয়াতে মুনাফিকদের কিছু স্বভাব-চরিত্র নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তারমধ্যে কয়েকটি হল–
ক. মুনাফিকরা মুখে তো ঈমানের কথা বলে, কিন্তু তাদের অন্তরে ঈমান নেই। অর্থাৎ তারা বাহ্যিকভাবে ঈমানের কথা বলে, কিন্তু তাদের মনের মধ্যে কুফর।
খ. মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী।
গ. তারা অন্যদেরকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত রাখে।
ঘ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করবেন– এ কথা শোনার পরেও তারা অহংকারবশে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
ঙ. তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে যে, মুমিনদের জন্য ব্যয় করো না।
এছাড়াও তাদের আরো কিছু স্বভাব তুলে ধরা হয়েছে।
এ হিসেবেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা মুনাফিকূন’।
৬৪। সূরা তাগাবুন
‘তাগাবুন’ (تَغَابُن) অর্থ একে অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, আক্ষেপে ফেলা। সূরাটির ৯ নম্বর আয়াতে শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে, তাতে ইরশাদ হয়েছে–
یَوْمَ یَجْمَعُكُمْ لِیَوْمِ الْجَمْعِ ذٰلِكَ یَوْمُ التَّغَابُنِ وَ مَنْ یُّؤْمِنْۢ بِاللهِ وَ یَعْمَلْ صَالِحًا یُّكَفِّرْ عَنْهُ سَیِّاٰتِهٖ وَ یُدْخِلْهُ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِیْنَ فِیْهَاۤ اَبَدًا ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ.
যেদিন আল্লাহ তোমাদের সমবেত করবেন একত্রীকরণের দিনে। সেটা কিছু লোক কর্তৃক অন্যদেরকে আক্ষেপে ফেলার দিন। আর যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন ও তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার নিচে নহর প্রবাহিত থাকবে। তাতে তারা সর্বদা থাকবে। এটাই মহা সাফল্য। –আয়াত : ৯
উক্ত আয়াতে یَوْمُ التَّغَابُن বলে কিয়ামত দিবসকে বোঝানো হয়েছে। কারণ কিয়ামতের দিন যারা জান্নাতে যাবে, তাদেরকে দেখে জাহান্নামীরা আক্ষেপ করে বলবে, আহা! আমরা যদি দুনিয়ায় তাদের মতো আমল করতাম, তবে আজ আমাদের এমন পরিণতি হত না, আমরাও তাদের মতো জান্নাতের নিআমত লাভ করতে পারতাম।
আয়াতে উল্লেখিত ‘তাগাবুন’ (تَغَابُن) শব্দ থেকেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা তাগাবুন’।
৬৫। সূরা ত্বলাক
‘ত্বলাক’ (طَلَاق) অর্থ ত্যাগ, পরিত্যাগ, বর্জন, বিচ্ছেদ ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় বিবাহ-বিচ্ছেদকে ত্বলাক (طَلَاق) বলা হয়। এ সূরার শুরু থেকেই তালাক বা বিবাহ-বিচ্ছেদ সংক্রান্ত কিছু বিধিবিধান বর্ণিত হয়েছে। তালাক দিতে হলে সঠিক সময় ও সঠিক নিয়ম কী? ইদ্দতকালে নারীদেরকে ভরণ-পোষণ প্রাক্তন স্বামীরা কতটুকু পরিমাণ এবং কত দিন পর্যন্ত দেবে? সন্তান থাকলে তার দুধ পান করানোর দায়িত্ব কার ইত্যাদি। এ হিসেবেই সূরাটির নামকরণ হয়েছে ‘সূরা ত্বলাক’। অর্থাৎ যে সূরায় তালাক সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে।