জাতীয় জাদুঘরে কাদিয়ানীদের কুরআন প্রদর্শনী ॥
এটি কি কুরআন-প্রেম, নাকি মুসলমানদের কুরআনের বিকৃতি?
গত ২৮ জুন ২০২৪ বাংলাদেশের আহমদীয়া জামাত তথা কাদিয়ানী সম্প্রদায় শাহবাগ জাদুঘরের শেখ ফজিলাতুন্নিসা মুজিব মিলনায়তনে ‘শান্তি সম্মেলন’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ‘বিশ্ব সংকট ও শান্তির পথ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরু ও প্রতিনিধি ব্যক্তিবর্গও উপস্থিত ছিলেন। তারা আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। শ্রোতাদের মধ্যে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও (CEO) সিইও জনাব আহসান খান চৌধুরীসহ দেশের বেশ কয়েকজন শিল্পপতি ও বুদ্ধিজীবী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কিছু শিক্ষিত মানুষ।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে তারা সেখানে বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, হিন্দী, পশতু, চাইনিজ, জার্মানসহ মোট ৭৬টি ভাষায় তাদের কৃত কুরআন অনুবাদের একটি প্রদর্শনী করে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী অনেক শিক্ষিত মানুষ ৭৬ ভাষায় তাদের এই কুরআন অনুবাদ দেখে বেশ অভিভূত হন। এটি কুরআনের এক বিরল খেদমত বলে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। পরের দিন দেশের কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় তাদের এই শান্তি সম্মেলন নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
ইতিপূর্বেও কাদিয়ানীরা বিভিন্ন সময়ে কুরআন প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তবে এবারের আয়োজনটা ছিল অনেকটা ব্যতিক্রম। ইতিপূর্বে তারা এজাতীয় আয়োজন করেছে নিজেদের কেন্দ্রে নিজস্ব পরিমণ্ডলে। কিন্তু এবারের আয়োজনটি তারা করেছে দেশের একটি জাতীয় মিলনায়তন ও অডিটোরিয়ামে। ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেকেই মূল বিষয়টি না জেনে তাদেরকে কুরআনের বড় খাদেমও ভেবে বসতে পারে। এজন্য তাদের এই কুরআন প্রদর্শনী নিয়ে কিছু কথা বলা জরুরি মনে হচ্ছে।
একথা সকলেই অবগত আছেন যে, কুরআন কারীম হচ্ছে মুসলমানদের ধর্মীয় কিতাব। আল্লাহ তাআলার কালাম। যা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, নিজেদেরকে আহমদীয়া মুসলিম জামাত দাবি করা কাদিয়ানী সম্প্রদায় কি কুরআনের বিষয়ে এমন বিশ্বাসই রাখে? এবং মুসলমানগণ যে ঈমান-আকীদা ও শরীয়তে বিশ্বাস করে কাদিয়ানীরাও কি সে রকমই বিশ্বাস করে থাকে? এসবেরই উত্তর হচ্ছে, না। কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের রয়েছে নিজস্ব বিশ্বাস ও ধর্মনীতি। আজকে এ সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে আমরা কাদিয়ানীদের কাছে স্বীকৃত তাদের ধর্মীয় বইপত্র থেকে কিছু উদ্ধৃতি পেশ করার চেষ্টা করব। যাতে কুরআন কারীম সম্পর্কে ঐ সম্প্রদায়ের মূল ব্যক্তিত্ব মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এবং তার প্রধান খলীফাগণ, যাদের একজন তার ঔরসজাত পুত্রও বটে, কী ধারণা পোষণ করেন এবং এ বিষয়গুলোতে তাদের ঈমান ও বিশ্বাস কী ধরনের তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। আশা করি এ থেকেই সম্মানিত পাঠকগণ তাদের কুরআনের তরজমা প্রদর্শনীর পেছনের উদ্দেশ্য বুঝতে সক্ষম হবেন।
কুরআন কারীম সম্পর্কে কাদিয়ানীদের আসল আকীদা
কাদিয়ানীদের আকীদা- কুরআন উঠে গেছে, পুনরায় তা মির্যা কাদিয়ানীর ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে!
আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমকে যেভাবে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ করেছিলেন, আজও সেভাবেই বিদ্যমান। কিয়ামত পর্যন্ত এভাবেই অবিকৃত ও সংরক্ষিত থাকবে। কিন্তু কাদিয়ানীদের আকীদা হল, কুরআন আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং মির্যা কাদিয়ানীর ওপর তা পুনরায় অবতীর্ণ করা হয়েছে! মির্যা কাদিয়ানীর মেজো ছেলে বশীর আহমদ এম এ লিখেছেন-
ہم کہتے ہیں کہ قرآن کہاں موجود ہے؟ اگر قرآن موجود ہوتا تو کسی کے آنے کی کیا ضرورت تھی۔ مشکل تو یہی ہے کہ قرآن دنیا سے اُٹھ گیا ہے۔ اس لئے تو ضرورت پیش آئی کہ محمدرسول اللہؐ کو بروزی طور پر دوبارہ دنیا میں مبعوث کرکے آپ پر قرآن شریف اُتارا جائے۔
আমরা বলি, কোথায় কুরআন বিদ্যমান? যদি কুরআন বিদ্যমান থাকত তাহলে কারো আগমনের কী প্রয়োজন ছিল? মুশকিল তো এটাই যে, কুরআন দুনিয়া থেকে উঠে গেছে। এজন্যই প্রয়োজন দেখা দিয়েছে যে, মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সা.-কে বুরূযীভাবে দ্বিতীয়বার দুনিয়ায় পাঠিয়ে তার ওপর কুরআন শরীফ অবতীর্ণ করার। -কালিমাতুল ফছল (মির্যাপুত্র বশীর আহমদ এম এ কৃত), পৃ. ৮৩
মির্যা কাদিয়ানীর এক বিশিষ্ট মুরিদ কাযী যহুরুদ্দীন আকমল। তিনি মির্যা কাদিয়ানীর প্রশংসায় একটি কবিতা লেখেন, যার একটি চরণ লক্ষ করুন-
پہلی بعثت میں محمد ہے تو اب احمد ہے
تجھ پہ پھر اترا ہے قرآن رسول قدنی
প্রথম আবির্ভাবে তুমি ছিলে মুহাম্মাদ আর এখন আহমদ/তোমার ওপর পুনরায় অবতীর্ণ হয়েছে কুরআন হে রাসূলে কাদনী। -কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের মুখপত্র দৈনিক আলফযল, ১৬ অক্টোবর ১৯২২ ঈ., পৃ. ১, কলাম-৩
তাদের দাবি- মির্যা কাদিয়ানীর ওপর বিপুল পরিমাণে ওহী অবতীর্ণ হয়েছে!
কাদিয়ানী ধর্মমতের প্রতিষ্ঠাতা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী একদিকে যেমন নবী হবার দাবি করেছেন। সাথে সাথে তিনি নিজের ওপর বিপুল পরিমাণে ওহী অবতীর্ণ হওয়ারও দাবি করেছেন। তার দাবি, তার ওপর অবতীর্ণ ওহী একত্র করলে ২০ খণ্ডের কম হবে না। মির্যা কাদিয়ানী তার হাকীকাতুল ওহী পুস্তকে লিখেছেন-
‘খোদার কালাম এত বিপুল পরিমাণে আমার ওপর অবতীর্ণ হইয়াছে যে, যদি ঐগুলির সব কয়টি লেখা হয় তবে ২০ (বিশ) খণ্ডের চাইতে কম গ্রন্থ হইবে না।’ -হাকীকাতুল ওহী (বাংলা), পৃ. ৩৩১ (বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের মূলকেন্দ্র বকশী বাজার, ঢাকা থেকে অনুদিত)
বস্তুত, মির্যা কাদিয়ানী ওহীকে একটি হাসি-মজাকের বস্তু বানিয়ে ফেলেছেন। তার কাছে নাকি আরবী, ফার্সী, উর্দু, ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় ওহী আসত। কখনো কখনো এমন ভাষায়ও ওহী আসত, যা তিনি নিজেই বুঝতেন না।
দেখুন, তাযকিরাহ (মির্যা কাদিয়ানীর দাবিকৃত ওহী-ইলহাম সংকলন), পৃ. ৫০, ৯১
তাদের দাবি- মির্যা কাদিয়ানীর কাছে জিবরীল আমীন ওহী নিয়ে আসতেন
কুরআন কারীম আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ, যা আল্লাহ তাআলা জিবরীল আমীনের মাধ্যমে নাযিল করেছেন। মির্যা কাদিয়ানীর দাবি, তার কাছেও জিবরীল আমীন ওহী নিয়ে আসতেন। মির্যা কাদিয়ানী তার ‘মাওয়াহিবুর রহমান’ গ্রন্থে লিখেছেন-
جاءني آئل واختار وأدار إصبعه وأشار
آمد نزد من جبرئیل علیہ السلام ومرا برگزیدوگردش داد انگشت خود را اشارت کرد۔
আমার নিকট জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে আমাকে নির্বাচন করলেন এবং তার আঙ্গুল ঘুরিয়ে ইশারা করলেন। -মাওয়াহিবুর রহমান, রূহানী খাযায়েন (মির্যা কাদিয়ানীর রচনাসমগ্র), খ. ১৯, পৃ. ২৮২
কাজী ইউসুফ কাদিয়ানী আরো স্পষ্ট করে বলেছেন-
جو لوگ نبیوں اور رسولوں پر حضرت جبرائیل علیہ السلام کا وحی لانا ضروری شرط نبوت قرار دیتے ہیں ان کے واسطے یہ امر واضح ہے کہ حضرت کے پاس نہ صرف ایک بار جبرائیل آیا۔ بلکہ بار بار رجوع کرتا تھا اور وحی خدا وندی لاتا رہا ... اعلیٰ درجہ کی وحی کے ساتھ فرشتہ ضرور آتا ہے۔ خواہ اس کو کوئی دوسرا فرشتہ کہو یا جبرائیل کہو اور چونکہ حضرت احمد بھی نبی اور رسول تھے اور آپ پر اعلیٰ درجہ کی وحی کا یعنی وحی رسالت کا نزول ہوتا رہا ہے۔ لہٰذا آپ کی وحی کے ساتھ فرشتہ ضرور آتا تھا اور خداتعالیٰ نے اس فرشتہ کا نام تک بتادیا ہے کہ وہ فرشتہ جبرائیل ہی ہیں۔
যারা নবুওতের জন্য নবী ও রাসূলদের কাছে জিবরীল আলাইহিস সালামের ওহী নিয়ে আসাকে শর্ত মনে করেন, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, হযরত (মির্যা কাদিয়ানী)-এর কাছে জিবরীল শুধু একবার নয়, বরং বহুবার আগমন করেছেন এবং খোদার ওহী নিয়ে এসেছেন ...। উচ্চমার্গীয় ওহীর সাথে ফেরেশতা অবশ্যই আগমন করেন। তাকে অন্য কোনো ফেরেশতা বলুন বা জিবরীলই বলুুন। যেহেতু হযরত (গোলাম) আহমদ (কাদিয়ানী)-ও নবী ও রাসূল ছিলেন, তার ওপর উচ্চমার্গীয় ওহী অর্থাৎ রিসালাতের ওহী অবতীর্ণ হত, তাই তার ওহীর সাথে ফেরেশতা অবশ্যই আগমন করতেন। আর আল্লাহ তাআলা সেই ফেরেশতার নাম পর্যন্ত বলে দিয়েছেন যে, তিনি হলেন জিবরীল। -আননুবুওয়াতু ফিল ইলহাম (কাযী ইউসুফ কাদিয়ানীকৃত), পৃ. ৩০
তবে মির্যা কাদিয়ানীর বক্তব্য অনুসারে, তার কাছে শুধু জিবরীল আমীনই ওহী নিয়ে আসেননি; বরং বিভিন্ন সময় আরো বিভিন্ন ফেরেশতাও তার কাছে আগমন করেছে। তাদের বিভিন্ন উদ্ভট উদ্ভট নামও তিনি বলেছেন। যেমন, টীচী, শের আলী, খায়রাতী, মিঠন লাল ইত্যাদি।
দেখুন : রূহানী খাযায়েন, খ. ২২, পৃ. ৩৪৬, তাযকিরাহ, পৃ. ২৩, ২৪, ৪৭৪
উপরের আলোচনা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা কাদিয়ানীর ওপর ওহী অবতীর্ণ হওয়ার আকীদা রাখার পাশাপাশি জিবরীল আলাইহিস সালামের আগমনেরও আকীদা রাখে। এখন দেখার বিষয়, মির্যা কাদিয়ানী ও তার অনুসারীরা তার দাবিকৃত ওহীকে কোন্ স্তরের ওহী মনে করে।
তাদের দাবি- মির্যা কাদিয়ানীর ওহী কুরআনের ন্যায় অকাট্য
মির্যা কাদিয়ানীর দাবি, তার ওহী কুরআন কারীমের ন্যায় অকাট্য ও দ্ব্যর্থহীন। মির্যা কাদিয়ানী তার হাকীকাতুল ওহী পুস্তকে লিখেছেন-
‘যেভাবে আমি কুরআন শরীফকে নিশ্চিতভাবে খোদার কালাম বলিয়া বিশ্বাস করি, ঠিক সেইভাবে এই কালামকেও বিশ্বাস করি, যাহা আমার ওপর অবতীর্ণ হয়। ইহাকে আমি খোদার কালাম বলিয়া বিশ্বাস করি।’ -হাকীকতুল ওহী (বাংলা), পৃ. ১৭৫ (বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের মূলকেন্দ্র বকশী বাজার, ঢাকা থেকে অনূদিত)
তাজাল্লিয়াতে ইলাহিয়া নামক পুস্তকে মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন-
‘আমার ঐশীবাণী লাভ এক বাস্তব ব্যাপার। যদি এতে আমি বিন্দুমাত্র সন্দেহ করি, তাহলে আমি কাফের হয়ে যাব এবং আমার পরকাল নষ্ট হয়ে যাবে। যে সমস্ত বাণী আমার কাছে অবতীর্ণ হয়েছে, তা নিশ্চিত ও দ্বিধাহীন...। ঐশী গ্রন্থে (কুরআনে) আমি যেরূপ বিশ্বাসী, এগুলো সম্বন্ধেও আমি তদ্রূপ বিশ্বাসী।’ -তাজাল্লিয়াতে ইলাহিয়া বা ঐশী বিকাশ (বাংলা), পৃ. ১৯ (বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের মূলকেন্দ্র বকশী বাজার, ঢাকা থেকে অনূদিত)
পৃথিবীর কোনো গ্রন্থকে কুরআনের ন্যায় অকাট্য ও দ্ব্যর্থহীন বলে দাবি করা যে স্পষ্ট কুফরী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা কুরআনের চরম অবমাননা। আর কুরআনের অবমাননাকারী যে ইসলাম থেকে খারিজ তা সর্বজন স্বীকৃত। কাদিয়ানী সম্প্রদায় কুরআনের এমন অবমাননার পরও ইসলামের দাবি করা এবং কুরাআন অনুবাদের প্রদর্শনী করা ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে উপহাসের শামিল।
কুরআনের ন্যায় মির্যা কাদিয়ানীর ওহীর ওপর পূর্ণ ঈমান!
কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা কাদিয়ানীর দাবিকৃত ওহী-ইলহামের ওপর তেমনই ঈমান রাখে, যেমন মুসলমানরা কুরআন কারীমের ওপর ঈমান রাখে। মির্যা কাদিয়ানী তার হাকীকতুল ওহী পুস্তকে লিখেছেন-
‘কিন্তু আমি খোদাতা’লার কসম খাইয়া বলিতেছি যে, আমি এই সকল ইলহামের ওপর ঐভাবেই ঈমান আনি, যেভাবে কুরআন শরীফের ওপর ও খোদার অন্যান্য কেতাবের ওপর ঈমান আনি।’ -হাকীকতুল ওহী (বাংলা), পৃ. ১৭৫ (বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের মূলকেন্দ্র বকশী বাজার, ঢাকা থেকে অনূদিত)
মির্যা কাদিয়ানী তার আরবা’ঈন নামক পুস্তকে লিখেছেন-
‘আমি নিজের ওহীতে তেমনই বিশ্বাসী, যেমন তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআন কারিমে।’ -আরবা’ঈন (বাংলা), পৃ. ১১৯ (বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের মূলকেন্দ্র বকশী বাজার ঢাকা থেকে অনূদিত)
‘এক গলতি কা ইযালা’ বা একটি ভুল সংশোধন নামক পুস্তকে লিখেছেন-
‘আমি যেভাবে কুরআন শরীফের আয়াতের প্রতি পূর্ণ ঈমান রাখি, সেরূপ বিন্দুমাত্র পার্থক্য না করে আমার প্রতি অবতীর্ণ আল্লাহর প্রত্যেকটি পরিষ্কার ওহীর ওপর ঈমান রাখি।’ -একটি ভুল সংশোধন (বাংলা), পৃ. ৮ (বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের মূলকেন্দ্র বকশী বাজার ঢাকা থেকে অনূদিত)
ওপরের উদ্ধৃতিগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের নিকট মির্যা কাদিয়ানীর দাবিকৃত ওহী ও কুরআনের মর্যাদা একেবারে সমান। একজন মুসলিম যেমন কুরআন কারীমের ওপর পূর্ণ ঈমান রাখে, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ও তেমনি কুরআনের মতো কোনোরূপ পার্থক্য করা ছাড়া মির্যা কাদিয়ানীর ওহীর (?) ওপর ঈমান রাখে। এটা যে কুরআনের স্পষ্ট অবমাননা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাদের দাবি- মির্যা কাদিয়ানীর ওহীই একমাত্র নাজাতের মাধ্যম
মির্যা কাদিয়ানীর দাবি, সকল মানুষের জন্য তার দাবিকৃত ওহী ও শিক্ষাই নাজাতের একমাত্র মাধ্যম। এছাড়া নাজাত সম্ভব নয়। মির্যা কাদিয়ানী তার আরবা’ঈন পুস্তকে লিখেছেন-
اب دیکھو خدا نے میری وحی اور میری تعلیم اور میری بیعت کو نوح کی کشتی قرار دیا اور تمام انسانوں کے ليے اس کو مدار نجات ٹھہرایا جس کی آنکھیں ہوں دیکھے اور جس کے کان ہوں سُنے۔
‘এখন লক্ষ করো! খোদা আমার ওহী, শিক্ষা ও বয়া’তকে নূহের নৌকা আখ্যা দিয়েছেন, আর সমস্ত মানুষের জন্য এটিকে পরিত্রাণের মাধ্যম বানিয়েছেন। যার চোখ আছে দেখুক আর যার কান আছে শুনুক।’ -আরবা’ঈন, রূহানী খাযায়েন, খ. ১৭, পৃ. ৪৩৫; আরবা’ঈন (বাংলা), পৃ. ১০২ (বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের মূলকেন্দ্র বকশী বাজার ঢাকা থেকে অনূদিত)
এ থেকে স্পষ্ট যে, কাদিয়ানীদের নিকট নাজাতের জন্য কেবলমাত্র কুরআনের ওপর ঈমান আনা ও সে অনুযায়ী আমল করা যথেষ্ট নয়; বরং নাজাতের জন্য এখন মির্যা কাদিয়ানীর দাবিকৃত ওহীর ওপর ঈমান আনা ও সে অনুযায়ী আমল করা শর্ত- নাউযুবিল্লাহ। নির্দ্বিধায় বলা যায়, এটা ইসলাম ও ইসলামের নবীর এবং কুরআন ও কুরআনের শরীয়তের প্রতি চরম অবজ্ঞা।
তাদের দাবি- মির্যা কাদিয়ানীর ওহী ‘কালামে মাজীদ’!
মির্যা কাদিয়ানী দাবি করেছেন, তার ওপর অবতীর্ণ ওহী ‘কালামে মাজীদ’! তিনি তার নুযূলুল মাসীহ নামক পুস্তকে লিখেছেন-
بخدا ہست این کلام مجید
আল্লাহর কসম, এটি (আমার ওহী) ‘কালামে মাজীদ’! -নুযূলুল মাসীহ, রূহানী খাযায়েন (মির্যা কাদিয়ানীর রচনাসমগ্র), খ. ১৮, পৃ. ৪৭৭
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, কাদিয়ানীদের আকীদামতে কুরআন আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তীতে মির্যা কাদিয়ানীর ওপর পুনরায় কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। কাদিয়ানীদের সেই কুরআন তাদের নিকট কুরআন কারীমের ন্যায় অকাট্য ও নিশ্চিত এবং সকল মানুষের জন্য নাজাতের একমাত্র মাধ্যম! এখন প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানীর ওপর অবতীর্ণ হওয়া সেই কুরআন কোন্টি? এর উত্তর কাদিয়ানীদের কাছ থেকেই জানা যাক।
মির্যা কাদিয়ানীর দাবি- কুরআন আমার মুখের কথা!
আমরা জানি, কুরআন একমাত্র আল্লাহর কালাম, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু কাদিয়ানীদের আকীদা হল, মির্যা কাদিয়ানীর মুখের কথার সমষ্টিও কুরআন। এ বিষয়ে মির্যা কাদিয়ানীর বক্তব্যটি লক্ষ করুন-
‘এই নিদর্শনের অর্থ এই যে, কুরআন শরীফ খোদার কেতাব এবং আমার মুখের কথা।’ -হাকীকতুল ওহী (বাংলা), পৃ. ৬৮ (বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের মূলকেন্দ্র বকশী বাজার ঢাকা থেকে অনূদিত)
তাহলে কি মির্যা কাদিয়ানীর মুখের কথাই কাদিয়ানীদের কুরআন শরীফ! কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদ তো তেমনই বলেছেন।
তাদের দাবি- বর্তমানে মির্যা কাদিয়ানীর পেশকৃত কুরআন ব্যতীত আর কোনো কুরআন নেই
মির্যা কাদিয়ানীর বড় ছেলে, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদ তো খুব স্পষ্ট ও জোরালো ভাষায় তাদের এই আকীদা উপস্থাপন করেছেন। তার বক্তব্যটি লক্ষ করুন-
اب کوئی قرآن نہیں سوائے اس قرآن کے جو حضرت مسیح موعود نے پیش کیا اور کوئی حدیث نہیں سوائے اس حدیث کے جو حضرت مسیح موعود کی روشنی میں نظر آئے اور کوئی نبی نہیں سوائے اس کے جو حضرت مسیح موعود کی روشنی میں دکھائی دے۔
এখন কোনো কুরআন নেই, ওই কুরআন ছাড়া, যা মাসীহে মাওউদ পেশ করেছেন এবং কোনো হাদীস নেই, ওই হাদীস ছাড়া, যা মাসীহে মাওউদের আলোতে দৃষ্টিগোচর হয়। এবং কোনো নবী নেই, ওই নবী ছাড়া, যা হযরত মাসীহে মাওউদের আলোতে দৃষ্টিগোচর হয়। -খুতুবাতে মাহমুদ (মির্যা মাহমুদের বক্তৃতাসমগ্র), খ. ৮, পৃ. ৪৫৬
মির্যা মাহমুদের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট ও পরিষ্কার। এ বক্তব্য ব্যাখ্যা করে বোঝানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তার স্পষ্ট দাবি, এখন মির্যা কাদিয়ানীর কুরআন ব্যতীত অন্য কোনো কুরআন নেই। অন্যভাবে বলতে গেলে, মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ এখন বেকার ও মানসূখ। একারণেই কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রথম খলীফা স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন-
میرا تو ایمان ہے کہ اگر حضرت مسیح موعود صاحب شریعت نبی ہو نے کا دعویٰ کریں اور قرآنی شریعت کو منسوخ قرار دیں تو پھر بھی مجھے انکا ر نہ ہو۔
আমার বিশ্বাস, যদি হযরত মাসীহে মাওউদ (মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী) শরীয়তবাহী নবী হবার দাবি করেন এবং কুরআনী শরীয়তকে রহিত ঘোষণা করেন, তাহলেও আমি অস্বীকার করব না। -সীরাতুল মাহদী (মির্যাপুত্র বশীর আহমদ এম এ কৃত মির্যা কাদিয়ানীর জীবনীগ্রন্থ), খ. ১, পৃ. ৯৯
কাদিয়ানীদের ‘আলকিতাবুল মুবীন’!
আল্লাহ তাআলা একাধিক আয়াতে কুরআন কারীমকে ‘আলকিতাবুল মুবীন’ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু কাদিয়ানীদের আকীদা মতে, মির্যা কাদিয়ানীর ওপর অবতীর্ণ ওহীর সমষ্টিকে আল্লাহ তাআলা ‘আলকিতাবুল মুবীন’ নামে অভিহিত করেছেন। কাজী ইউসুফ কাদিয়ানী তার ‘আননুবুওয়াতু ফিল ইলহাম’ নামক পুস্তকে লিখেছেন-
خداتعالیٰ نے حضرت احمد علیہ السلام کے بحیثیت مجموعی الہامات کو الکتاب المبین فرمایا ہے اور جدا جدا الہامات کو آیات سے موسوم کیا ہے۔ حضرت مرزا صاحب کو یہ الہام متعدد دفعہ ہوا ہے۔ پس آپ کی وحی بھی جدا جدا آیت کہلاسکتی ہے۔ ۔ ۔پس جس شخص یا اشخاص کے نزدیک نبی اور رسول کے واسطے کتاب لانا ضروری شرط ہے۔ خواہ وہ کتاب شریعت کاملہ ہو یا کتاب المبشرات والمنذرات ہو تو ان کو واضح ہو کہ ان کی اس شرط کو بھی خدا نے پورا کر دیا ہے اور حضرت صاحب کے مجموعہ الہامات کو جو مبشرات اور منذرات ہیں۔ ‘‘الکتاب المبین’’ کے نام سے موسوم کیا ہے۔ پس آپ اس پہلو سے بھی نبی ثابت ہیں۔ ولو کرہ الکافرون ۔
আল্লাহ তাআলা হযরত আহমদ আলাইহিস সালামের ওপর অবতীর্ণ ইলহামের সমষ্টিকে ‘আলকিতাবুল মুবীন’ নামে অভিতিত করেছেন এবং তার পৃথক পৃথক ইলহামকে ‘আয়াত’ নাম দিয়েছেন। একাধিকবার হযরত মির্যা সাহেবের এই ইলহাম হয়েছে। সুতরাং তার ওহীকেও পৃথক পৃথক ‘আয়াত’ বলা যাবে...। অতএব যাদের নিকট নবী ও রাসূলের জন্য ‘কিতাব’ আনা শর্ত- চাই তা পূর্ণ শরীয়তবাহী কিতাব হোক অথবা সুসংবাদ এবং সতর্কবাণী সম্বলিত উপদেশমূলক কিতাব হোক- তাদের কাছে স্পষ্ট হওয়া উচিত যে, এই শর্তও আল্লাহ তাআলা পূর্ণ করে দিয়েছেন। হযরত সাহেবের (মির্যা কাদিয়ানীর) ইলহামের সমষ্টি, যা মূলত সুসংবাদ ও সতর্কবাণী সম্বলিত উপদেশমূলক কিতাব, তাকে আল্লাহ তাআলা ‘আলকিতাবুল মুবীন’ নামে অভিহিত করেছেন। অতএব, এদিক থেকেও তিনি নবী প্রমাণিত হলেন। যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে। -আননুবুওয়াতু ফিল ইলহাম (কাজী ইউসুফ কাদিয়ানীকৃত), পৃষ্ঠা ৪৩-৪৪
কাদিয়ানীদের দাবিকৃত ওহীগ্রন্থ ‘তাযকিরাহ’
কাজী ইউসুফ কাদিয়ানী স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার করেছে যে, তাদের আকীদা অনুযায়ী মির্যা কাদিয়ানীও আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব নিয়ে এসেছেন। যাকে আল্লাহ তাআলা ‘আলকিতাবুল মুবীন’ নাম দিয়েছেন। আর এটিই হল কাদিয়ানীদের আসমানী ওহীগ্রন্থ, যা তার ওপর অবতীর্ণ (?) হয়েছে। কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের উচিত ছিল, তারা তাদের নবীর কিতাবকে এ নামেই প্রকাশ করবে। কিন্তু তারা মির্যা কাদিয়ানীর দাবিকৃত ওহী-ইলহাম সংকলনের নাম রেখেছে ‘তাযকিরাহ’।
উল্লেখ্য, তাযকিরাহ নামক কাদিয়ানীদের ধর্মগ্রন্থের টাইটেল পৃষ্ঠায় বড় করে লেখা আছে-
تذکرہ ، یعنی وحی مقدس
তাযকিরাহ অর্থাৎ ‘পবিত্র ওহী’। অর্থাৎ এ গ্রন্থের আদ্যোপান্ত মির্যা কাদিয়ানীর প্রতি অবতীর্ণ তথাকথিত পবিত্র ওহীর সমষ্টি!
কাদিয়ানীদের কাছে তাযকিরাহ তিলাওয়াতের হুকুম!
যেহেতু তাযকিরাহ কাদিয়ানীদের নিকট মির্যা কাদিয়ানীর প্রতি অবতীর্ণ (?) আসমানী ওহীগ্রন্থ, তাই কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদ কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে ‘তাযকিরাহ’ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তিলাওয়াতের প্রতি জোর দিয়েছে। মির্যাপুত্র বশীর আহমদ এম এ লিখেছেন-
آپ کو علم ہوگا کہ جہاں حضرت امیرالمومنین ایدہ اللہ بنصرہ العزیز نے تین سال گزرے جلسہ،سالانہ پر احباب جماعت کو ان کے تزکیہ نفس کے لیے حضرت مسیح موعود علیہ الصلوٰۃ والسلام کے الہامات کے مجموعہ کی بالالتزام تلاوت کرنے کی تاکید فرمائی تھی۔ اور اس سے جو فوائد حاصل کئے جاسکتے ہیں ان کا ذِکر فرمایا تھا۔
আপনারা জেনে থাকবেন, হযরত আমীরুল মুমিনীন (মির্যাপুত্র বশীরুদ্দীন মাহমুদ) তিন বছর পূর্বে সালানা জলসায় জামাতের সদস্যদেরকে তাদের আত্মশুদ্ধির জন্য হযরত মাসীহে মাওউদ আলাইহিস সালামের ইলহামের সমষ্টিকে (তাযকিরাহ) নিয়মিত তিলাওয়াত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। এবং এর দ্বারা যেসব ফায়দা হাসিল হয় তার আলোচনা করেছেন। -মাযামীনে বশীর (মির্যাপুত্র বশীর আহমদ এম এ কৃত), খ. ১, পৃ. ২১৪
উপরের আলোচনা থেকে যে বিষয়গুলো পরিষ্কার তা হল, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বিশ্বাসমতে-
১. কুরআন আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। মির্যা কাদিয়ানীকে মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ হিসাবে প্রেরণ করে তার ওপর পুনরায় কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে!
২. মির্যা কাদিয়ানীর ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রচুর পরিমাণে ওহী অবতীর্ণ হয়েছে, যা প্রায় ২০ খণ্ড হবে।
৩. মির্যা কাদিয়ানীর নিকট জিবরীল আলাইহিস সালাম ওহী নিয়ে আগমন করতেন!
৪. মির্যা কাদিয়ানীর ওহী কুরআনের ন্যায় অকাট্য ও সংশয়মুক্ত!
৫. অন্যান্য আসমানী কিতাবের মতো মির্যা কাদিয়ানীর দাবিকৃত ওহীর ওপরও ঈমান আনতে হবে।
৬. মির্যা কাদিয়ানীর ওহী নাজাতের একমাত্র মাধ্যম।
৭. মির্যা কাদিয়ানীর ওহী ‘কালামে মাজীদ’।
৮. কুরআন শরীফ খোদার কিতাব ও মির্যা কাদিয়ানীর মুখের কথা।
৯. মির্যা কাদিয়ানীর পেশকৃত কুরআন ব্যতীত বর্তমানে আর কোনো কুরআন নেই।
১০. মির্যা কাদিয়ানীর ওহী-সমষ্টিকে আল্লাহ তাআলা ‘আলকিতাবুল মুবীন’ নামে অভিহিত করেছেন।
১১. মির্যা কাদিয়ানীর দাবিকৃত ওহীর সমষ্টিকে তারা ‘তাযকিরাহ’ নামে ছেপেছে এবং তার ওপর ওহীয়ে মুকাদ্দাস (পবিত্র ওহী) লিখেছে।
১২. মির্যা মাহমুদ তার কাদিয়ানী জামাতকে ‘তাযকিরাহ’ তিলাওয়াতের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
দেখা যাচ্ছে, কাদিয়ানীদের নবী ভিন্ন, ওহী ভিন্ন, কিতাব ভিন্ন, সর্বোপরি তাদের ধর্মও ভিন্ন। তারা যে ভিন্ন ধর্মের অনুসারী তা তাদের গুরুরাই অকপটে স্বীকার করে গেছে।
মির্যা কাদিয়ানীর বড় ছেলে ও কাদিয়ানী সস্প্রদায়ের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমূদ তার এক বক্তব্যে বলেছেন-
حضرت مسیح موعود نے فرمایا ہے: ان کا اسلام اور ہے اور ہمارا اسلام اور ہے۔ان کا خدا اور ہے اور ہمارا خدا اور۔ہمارا حج اور ہے ان کا اور۔اور اسی طرح ان سے ہر بات میں اختلاف ہے۔
হযরত মাসীহে মাওউদ (মির্যা কাদিয়ানী) তো বলেছেন, তাদের (মুসলমানদের) ইসলাম ভিন্ন এবং আমাদের ইসলাম ভিন্ন। তাদের খোদা ভিন্ন এবং আমাদের খোদা ভিন্ন। আমাদের হজ্ব ভিন্ন এবং তাদের হজ্ব ভিন্ন। এমনিভাবে প্রতিটি বিষয়ে তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য রয়েছে। -কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের মুখপত্র দৈনিক আলফযল, ২১ আগস্ট ১৯১৭ ঈ., পৃ. ৮ কলাম ১
এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, তারা সবকিছুতে ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও মুসলিমদের কুরআনের ব্যাপারে এত উৎসাহী কেন?
বোঝাই যায়, কাদিয়ানীরা এজাতীয় আয়োজন করে নিজেদের কুফরীকে আড়াল করতে চায়। কুরআনের বুলি আওড়িয়ে নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে জাহির করতে চায়।
এছাড়া তারা যে কুরআন অনুবাদ করেছে, তা কুরআনের বিকৃত অনুবাদ। নিজেদের কুফরী আকীদাগুলো প্রমাণ করার জন্য কুরআনের মাঝে তারা অর্থগত বিকৃতি সাধন করেছে।
কুরআন কারীমের মাঝে অর্থগত বিকৃতি কুরআন অস্বীকারের নামান্তর। কাদিয়ানী সম্প্রদায় যে ৭৬ ভাষায় কুরআন অনুবাদ করেছে, তা কুরআনের আসল অনুবাদ নয়; বরং তার বিকৃত অনুবাদ। তারা তাদের কুফরী আকীদাগুলোর পক্ষে দলীল দেওয়ার জন্য কুরআনের অসংখ্য আয়াতের মাঝে অর্থ ও মর্মগত বিকৃতি সাধন করেছে। কুরআনের শাব্দিক পরিবর্তন যেহেতু অসম্ভব, এজন্য তারা কুরআনের অর্থগত বিকৃতির পথই বেছে নিয়েছে।
তাদের অনূদিত কুরআনের স্বরূপ উন্মোচনে ইতিপূর্বে মাসিক আলকাউসারে ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল-মে, জুন ২০২০ ঈ. সংখ্যায় ‘কুরআনের বিকৃত অনুবাদের প্রদর্শনী করছে কাদিয়ানী সম্প্রদায়’ শিরোনামে দীর্ঘ প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্য আমরা উক্ত প্রবন্ধ পাঠ করতে পারি।
কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের এহেন কর্মকাণ্ড দেখে দেশের নাগরিকদের মাঝে স্বভাবতই কিছু প্রশ্ন জেগেছে-
১. একটি সম্প্রদায়, যার কাফের ও অমুসলিম হওয়া স্বীকৃত বিষয়। দেশের সকল আলেম সম্প্রদায় ও সকল দ্বীনী প্রতিষ্ঠানই নয়; বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন ফোরাম ও সংস্থায় যাদের অমুসলিম হওয়ার বিষয়টি সমাধা হয়ে গেছে অনেক আগেই। এমনকি ওআইসি (ঙওঈ), যার অন্যতম সদস্য বাংলাদেশও সেখানেও কাদিয়ানীদেরকে ইসলাম বহির্ভূত বলে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
সে সম্প্রদায়ের লোকদেরকে জাতীয় জাদুঘরে কুরআন প্রদর্শনী করতে দেওয়া হল কীভাবে এবং কার স্বার্থে? সরকার তো জনগণের অভিপ্রায় নিয়ে কাজ করার কথা। তাহলে কীভাবে তারা একটি জাতীয় অডিটোরিয়াম এ কাজের জন্য বরাদ্দ করল?
২. কেউ হয়তো বলতে পারেন যে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে যে কেউ তার ধর্ম প্রচার করতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটি কি আসলেই তাই? কাদিয়ানীদের ক্ষেত্রে কি আসলে একথা প্রযোজ্য হয়? কাদিয়ানীরা কি স্বনামে নিজেদের ধর্ম প্রচার করে? তারা তো বরং নিজেদের বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠানকে ইসলাম ও মুসলিম নাম দিয়ে চালাচ্ছে। তো ধর্মের প্রচার এক কথা আর মানুষের সাথে প্রতারণা করা ভিন্ন কথা। তারা যদি নিজেদেরকে কাদিয়ানী জামাত, মির্জায়ী জামাত, গোলামী জামাত নামে আখ্যা দিত; তারা যদি তাদের ধর্মগুরু মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বক্তব্যগুলোকে কোনো ধর্মগ্রন্থের নাম দিয়ে প্রচার করত, তাহলে তো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তেমন আপত্তির বিষয় ছিল না। কিন্তু তারা তো পবিত্র কুরআন মাজীদকে নিজেদের মতলব অনুযায়ী বিকৃত তরজমা ও ব্যাখ্যা করে দেশবাসী ও বিশ্বকে দেখাচ্ছে যে, তারা কুরআনের অনুসারী এবং নিজেদের ধর্মকে ইসলাম ধর্ম নাম দিয়ে নিজদেরকে মুসলিম দাবি করে অসংখ্য সরলমনা মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। রাষ্ট্র ধর্ম প্রচারের তো স্বাধীনতা দেয়, বিভ্রান্তি ছড়ানো ও প্রতারণার স্বাধীনতাও কি দেয়?
৩. সরকার এমন অনুমতি দেওয়ার পূর্বে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে তাদের তথাকথিত কুরআনের তরজমাকে একটু যাচাই করিয়ে নিতে পারত না? তবেই তো স্পষ্ট হয়ে যেত যে, এ অনুবাদ কুরআনের প্রকৃত অনুবাদ নয়। রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব নয়, তার নাগরিকদেরকে ভেজাল ও প্রতারণা থেকে বাঁচিয়ে রাখা?
আল্লাহ তাআলা ঈমানবিধ্বংসী এই ভয়াবহ কুফরী ফেতনা থেকে গোটা মুসলিম উম্মাহকে হেফাজত করুন- আমীন।