নতুন বছর : চাই নতুন সংকল্প
الْحَمْدُ للهِ وَسَلَامٌ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِينَ اصْطَفَى، وَأشْهَدُ أَن لَا إِلهَ إلّا اللهَ وَحْدَه لَا شَرِيكَ له، وأشهد أن محمداً عبده ورسوله، وآخر أنبيائه ورسله، صلى الله عليه وآله وسلم تسليما كثيرا كثيرا. أما بعد:
আমাদের শিক্ষাবর্ষ তো আরো তিন মাস আগেই শুরু হয়েছে। এখন শুরু হচ্ছে নতুন বছর। মুহাররামুল হারামের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে ১৪৪৬ হিজরীবর্ষ।
اَللّٰهُمَّ أدْخِلْه عَلَيْنَا بِالْأمْنِ وَالْإيْمَان، وَالسَّلَامَة والْإسْلاَم، وجِوارٍ من الشيطان، ورضوانٍ من الرحمن.
‘হে আল্লাহ! আমাদের মাঝে এ বছরের আগমন ঘটান— শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে, ঈমান ও ইসলামের সঙ্গে এবং শয়তান থেকে মুক্তি ও দয়াময়ের সন্তুষ্টির সঙ্গে।’
মুমিনের যিন্দেগীতে, বিশেষ করে তালিবে ইলমের জীবনে سوف এবং عسى-এর প্রবণতা খুবই ভয়ংকর। সময়ের কাজ ঠিক সময়ে না করা এবং নেযামুল আওকাত যথাযথভাবে পালন না করার কারণে তালিবে ইলমের জীবনে অনেক বিপর্যয় নেমে আসে।
سوف أفعل
(শিগগির করে ফেলব)
عسى أن أفعل
(আচ্ছা, করে ফেলব)
—এ ধরনের আরো কত ভাষা আছে আমাদের। সবগুলোর খোলাসা হল, নিজের অলসতা ও উদাসীনতা আড়াল করা আর আত্মপ্রবঞ্চনায় ডুবে থাকা।
আমাদের সালাফ তো আমাদের সতর্ক করেই গেছেন। এ ধরনের আত্মপ্রবঞ্চনা থেকে বেঁচে থাকার বিষয়টি তাঁরা আমাদের বিভিন্নভাবে বুঝিয়েছেন। তাঁরা এটাও বলেছেন—
إياك وعسى فإن المقت في عسى، وإياك ولعل فإنها أخطر علة.
তাই আমাদের দরকার নতুন সংকল্প। আরবীতে বলে عَزْم। এই عزم-এর মধ্যে আবার থাকতে হবে جَزْم। অর্থাৎ عَزْمٌ بِالْجَزْمِ। এই عزم যেন ইলম ও আমল সবকিছুকেই শামিল করে। যাতে কোনো কিছু কোনোদিন না ছোটে, ناغہ না হয়। এমনকি বড় কোনো ওযর ছাড়া তা যেন নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বিত না হয়।
মনে রাখতে হবে, عَزْمٌ بِالْجَزْمِ এটি আমলবিহীন কোনো ‘ইরাদার’ নাম নয়। কাজ ছাড়া কথা, আমল ছাড়া নিয়ত এবং বাস্তব পদক্ষেপ ছাড়া শুধু ইচ্ছাপোষণের নাম عزم নয়। তাই তালিবে ইলমের নেযামুল আওকাত শুধু কাগজের পাতায় থাকে না, বরং তা অক্ষরে অক্ষরে তার চব্বিশ ঘণ্টার যিন্দেগীতে বাস্তবায়ন হয়।
যেসব বিষয়ে কোনো ধরনের বিলম্ব কাম্য নয়, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. কুরআন তিলাওয়াত।
২. কিছু মাসনূন যিকির ও দুআ এবং কিছু নফল নামায।
৩. সবকের আগের মুতালাআ।
৪. সবকে ঠিক সময়ে উপস্থিতি এবং দিল-দেমাগ সব এক করে উস্তাযের তাদরীস ও তাকরীরগুলো খেয়াল করে শোনা ও বোঝা।
৫. সবকের পর তাকরার।
৬. উস্তাযের দেওয়া কাজ, তামরীন ও হাতের লেখা যথাযথভাবে পূর্ণ করা।
৭. প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিনই ভালোভাবে বুঝে নেওয়া ও ইয়াদ করা।
৮. সাফায়ী ও মাদরাসার পক্ষ থেকে দেওয়া কোনো কাজ থাকলে তা করে নেওয়া।
৯. রোযনামচা।
১০. সময় থাকলে ইযাফী মুতালাআ।
১১. পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে জামাআতের সাথে তাকবীরে উলাসহ আদায় করা। ‘মাসবুক হলাম তো হেরে গেলাম’— এ কথা মনে রাখা। নামায প্রথম কাতারে আদায় করার চেষ্টা করা। ফরযের আগের সুন্নত আগেই আদায় করা।
যিন্দেগী গঠনের জন্য যে বিষয়টা আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে, তা হল— নেযামুল আওকাতের পাবন্দি। অর্থাৎ সময়ের কাজ সময়েই করে ফেলা এবং পরে করব বলে না রেখে দেওয়া। পরে করব বলে কাজ রেখে দেওয়া— এটা একটা মারাত্মক রোগ। এর দ্বারা মানুষের মধ্যে অলসতা চলে আসে এবং কাজের উদ্দীপনা নষ্ট হয়ে যায়। এ সম্পর্কে সালাফ ও আকাবিরের কথায় অনেক সতর্কবাণী পাওয়া যায়। একটা বাণী তো আমরা উর্দূ কায়েদাতেই পড়েছি—
آج کا کام کل پر نہ ڈال
আবদুল্লাহ ইবন উমর রা. বলেন—
إِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تُحَدِّثْ نَفْسَكَ بِالمَسَاءِ، وَإِذَا أَمْسَيْتَ فَلاَ تُحَدِّثْ نَفْسَكَ بِالصَّبَاحِ.
وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ قَبْلَ سَقَمِكَ، وَمِنْ حَيَاتِكَ قَبْلَ مَوْتِكَ، فَإِنَّكَ لاَ تَدْرِي يَا عَبْدَ اللهِ مَا اسْمُكَ غَدًا.
তুমি যখন সকালে উপনীত হও তখন নিজেকে সন্ধ্যার কথা বলো না। আর যখন সন্ধ্যায় উপনীত হও তখন সকালের কথা বলো না।
তোমার অসুস্থতা আসার আগেই তোমার সুস্থতা থেকে পাথেয় সঞ্চয় কর এবং মৃত্যু আসার আগেই তোমার জীবন থেকে পাথেয় সঞ্চয় কর। কারণ হে আবদুল্লাহ! তুমি তো জান না, আগামীকাল তোমার কী নাম হবে। —সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪১৬; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৩৩
খোদ উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকেও এ সম্পর্কে তাম্বীহ ও সতর্কবাণী বর্ণিত হয়েছে। হাসান বসরী রাহ. বর্ণনা করেন—
كتب عمر بن الخطاب إلى أبي موسى الأشعري: أما بعد، فإن القوة في العمل أن لا تؤخر عمل اليوم إلى الغد، فإنكم إذا فعلتم ذلك تداركت عليكم الأعمال –أي تتابعت و تكاثرت-، فلم تدروا أيها تأخذون فأضعتم.
উমর রা. আবু মূসা আশআরী রা.-কে এ মর্মে পত্র লিখলেন— কাজের শক্তিই হল, তুমি আজকের কাজ কাল পর্যন্ত বিলম্ব করবে না। এমনটা করলে তোমাদের ওপর ক্রমান্বয়ে কাজের চাপ বাড়তে থাকবে। তখন কী রেখে কী করবে বুঝতে পারবে না। ফলে সবই বরবাদ করে দেবে। —আলমাওয়ায়িয, আবু উবায়েদ কাসেম ইবনে সাল্লাম, বর্ণনা ১৩৬; কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা, আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ, পৃ. ৪৬-৪৭
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ নসীহতগুলো যিন্দেগীর সব ক্ষেত্রে মনে রাখার তাওফীক দান করুন। নতুন বছরের নতুন সংকল্পকে কাজে লাগানোর তাওফীক দান করুন— আমীন।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين