Zilqal 1445   ||   May 2024

জাতীয় পাঠ্যক্রমে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু ॥
শরীফার গল্পের কী হল শেষ পর্যন্ত

মাওলানা সায়ীদুল হক

২০২১ সালে প্রণীত পাঠ্যক্রম রূপরেখায় যখন রূপান্তরিত লিঙ্গ’ (ট্রান্সজেন্ডার) পরিচয়কে সমাজে গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে মূলধারায় নিয়ে আসার কথা বলা হয়, তখন থেকেই সচেতন জনগণের প্রতিবাদ শুরু হয়। এরপর ২০২৩ সালে রূপরেখাঅনুযায়ী প্রণীত বইয়ের শরীফার গল্পযখন জনসম্মুখে আসে তখন ক্ষোভে ফুঁসে উঠে পুরো দেশ। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে এনসিটিবি তার ওয়েবসাইটে ৩৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ প্রচার করে। সেখানে শরীফার গল্পকে হিজড়ার গল্প বলা হয়।  উক্ত ভিডিওতে গুজবে কান দেবেন নাবলে উল্টো গুজব ছড়ানো হয়।

শরীফার বিবরণের সাথে হিজড়ার কোনো মিল নেই। তাছাড়া সেই গল্পে শরীফার বক্তব্যে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল-আমরা হলাম ট্রান্সজেন্ডারতার পরও সুবিধাবঞ্চিত হিজড়া জনগোষ্ঠীর  প্রতি জনগণের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে শরীফাকে হিজড়াবলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হল। এতেও যখন কাজ হল না তখন ৩০-০৪-২০২৩ তারিখে এনসিটিবির প্রকাশিত সংশোধনীতে বলা হল, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৫২ নং পৃষ্ঠার ৩ নং লাইনে আমরা হলাম ট্রান্সজেন্ডারবাক্যে ট্রান্সজেন্ডারশব্দের পরিবর্তে পড়া হবে থার্ড জেন্ডারপুরো গল্প বহাল থাকল, শুধু একটা শব্দ পরিবর্তন হল।

বাংলাদেশ বলে কথা! দিন-দুপুরে পুরো জাতিকে কীভাবে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হল!

বছরের শেষ দিকে পত্র-পত্রিকায় খবর এল, ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার রক্ষায় আইন হচ্ছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বিক সহযোগিতায় সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর ৫৩ ধারা সম্বলিত খসড়া আইন প্রস্তুতও করে ফেলেছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পদস্থ একজন বলেছেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই তা পাস করা হবে এবং ০৭ই জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পরের প্রথম সংসদ অধিবেশনেই নাকি তা পাস করাতে চান। এভাবে একের পর এক ঘটনাপ্রবাহে জনগণের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়তেই থাকল।

পুরো বছর জুড়ে চলতে থাকা জনগণের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অভিযোগ-অনুযোগের কোনো তোয়াক্কা না করে ২০২৪ সালের বইয়ে শরীফার গল্প পুনরায় বহাল রাখা হল। শরীফার গল্পে যে আছে, আমি তখনও যা (ছেলে) ছিলাম এখনও তাই আছি, নামটা কেবল বদলেছি। পাঠ্যপ্স্তুকের কর্তাব্যক্তিরাও শরীফার মতো কেবল নামটা বদলেছে। ট্রান্সকে থার্ডকরেছে। পুরো গল্প আগে যেভাবে ছিল ঠিক সেভাবেই রেখেছে। তাতে পরিস্থিতি আরো চরম আকার ধারণ করল। ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ এক সেমিনারে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পাঠ্যবই থেকে শরীফার গল্পের দুটি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেললেন। জাতির প্রতি জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের দায়বদ্ধতা যখন চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ, ঠিক তখনি একজন শিক্ষক জাতির প্রতি দায়বদ্ধতার দায়ে একটি সময়োপযোগী যথার্থ কাজ করলেন। এতদিনের বাকহীন জাতি হঠাৎ যেন বাকশক্তি ফিরে পেল। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পুরো জাতি তাঁর সাথে একাত্মতা পোষণ করল। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে তোড়জোড় শুরু হল। দেশের চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী মন্ত্রীমহোদয় বললেন, ‘ধর্মকে ব্যবহার করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার প্রবণতা আছে একটি গোষ্ঠীর।পরে অবশ্য বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করা হবে।

ঐদিকে এক-দুজন কর্তাব্যক্তি এবং চিহ্নিত একটি মহল জোর গলায় বলতে থাকল, ‘পাঠ্যপুস্তকে ট্রান্সজেন্ডার শব্দ  নেই’, ‘এ অধ্যায়ে ট্রান্সজেন্ডার শব্দটিই ব্যবহার করা হয়নিজাতি আবারও দেখল দেশের দুষ্কৃতিকারী গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য! কীভাবে তারা দিন-দুপুরে জনগণকে ধোঁকা দেয়!

যাইহোক, অন্যান্য অনেক ঘটনার মতো এখানেও একটি কমিটি গঠন করা হল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করল। কমিটি শরীফার গল্পপর্যালোচনা করে মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করবে। সে অনুযায়ী বিবেচনা করা হবে বলে দেশবাসীকে জানানো হয়।

কমিটির রিপোর্টের আগেই গণমাধ্যমে প্রচারিত সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির একচেটিয়া বক্তব্য জনগণের কাছে কেমন যেন ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে। ঐদিকে কমিটি গঠনের পর দুই-তিন মাস পার হলেও এখনো রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়নি।

গত ১৪ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে একটি অনলাইন পোর্টালের খবরে জানা যায়-

শরীফার গল্পরিভিউ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা। তারা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা দিতে আগ্রহী। তবে তা রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার শঙ্কায় মতামত দিতে গড়িমসি করছেন কমিটির কোনো কোনো সদস্য। তার পরও ঈদের পর একটি প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান এবং দুজন সদস্য। -শিক্ষাবার্তা.কম (পাঠ্যবইয়ে সংশোধন : শরীফার গল্পের প্রতিবেদন কবে?)

পাঁচ সদস্যের কমিটির তিনজন হলেন ইসলামিক স্কলার, একজন হলেন এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) আর অপরজন হলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষা ও গবেষণাডড ইনস্টিটিউটের পরিচালক।

খবরে প্রকাশ, ‘কমিটিতে থাকা ইসলামিক স্কলারস তথা বিশেষজ্ঞরা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মতামত দেওয়ার পক্ষে। ...কমিটির সদস্য সচিব ও এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, এতে বেশি কিছু পরিবর্তনের সুযোগ আছে বলে মনে করি না। তার পরও কমিটির সব সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। -শিক্ষাবার্তা.কম (পাঠ্যবইয়ে সংশোধন : শরীফার গল্পের প্রতিবেদন কবে?)

সেই শুরু থেকে আজ অবধি শরীফার গল্পনিয়ে জাতির সাথে যা যা করা হয়েছে, তা থেকে সচেতন জনগণ আঁচ করতে পারছিলেন, ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে কর্তৃপক্ষ কেমন যেন গাঁটছাড়া বেঁধে নেমেছে। জনগণ আঁচ করতে পারে, শঙ্কিত হতে পারে; কিন্তু দেয়ালের ওপাশের খবর তো তাদের জানার সুযোগ থাকে না। তবে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’-এর ২০২১ ও ২০২২-এর বার্ষিক রিপোর্ট দেখে জনগণ বুঝতে পারে- কীভাবে এক-দুটি এনজিওর পদতলে পিষ্ট হচ্ছে দেশের কোটি কোটি জনগণের দাবি-দাওয়া, অভিযোগ ও প্রত্যাশা। চিহ্নিত গোষ্ঠীগুলোর কাছে কীভাবে যিম্মি হয়ে যাচ্ছে আমাদের পুরো জাতি!!

শরীফার গল্পপাঠ্যবইয়ে এখনো বিদ্যমান আছে। কয়েকদিন পর বছরের পঞ্চম মাস শুরু হচ্ছে। যেহেতু গল্পটি বইয়ের ৩৯-৪০ পৃষ্ঠায়। তাই এরই মধ্যে শ্রেণিকক্ষে তা পড়ানো হয়ে যাওয়ার কথা। জাতির লক্ষ লক্ষ সন্তানকে শেখানো হল, ট্রান্সজেন্ডারিজমের মতো বিপর্যয়কর মানসিক বিকৃতির মতবাদ। গতবারও তা শিখল লক্ষ লক্ষ কোমলমতি শিক্ষার্থী।

পাঠ্যপুস্তক থেকে ট্রান্সজেন্ডারিজম ও অন্যান্য বিতর্কিত বিষয় বাদ দেওয়ার কোনো লক্ষণ এখনো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না; তদুপরি ২২ এপ্রিলের এক খবরে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, “কমিটির রিপোর্টে শরীফার গল্পটি পাঠ্যক্রমে রাখার সুপারিশ থাকছে।তাই একরকম বাধ্য হয়েই পাঠকবর্গের সামনে কিছু কথা আরয করছি

ট্রান্সজেন্ডারিজম

ট্রান্সজেন্ডারিজম হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বেরর একটি অদ্ভুত মতবাদ। এ মতবাদের বক্তব্য এতটাই বিদঘুটে যে, প্রথম শোনার পর কেউ বিশ্বাসই করতে পারে না- আদৌ এমন কোনো মতবাদ থাকতে পারে। এ মতবাদ অনুযায়ী, শারীরিক গঠনে সুস্থ স্বাভাবিক কোনো পুরুষ, যার জন্ম হয়েছে পুরুষ হিসেবেই, যার দেহে পুরুষের সব আলামতই আছে, পুরুষ হিসেবে তার শারীরিক কোনো ত্রুটি নেই, তার পরও সে যদি কখনো নিজেকে নারী মনে করে, তাহলে সে একজন নারী (ট্রান্সওমেন তথা রূপান্তরিত নারী)। সমাজ ও আইন তাকে নারী হিসেবেই গণ্য করতে হবে এবং নারী হিসেবে যাবতীয় অধিকার লাভ করবে।

তদ্রুপ একজন মানুষ নারী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছে; দৈহিকভাবে সম্পূর্ণ নারী; এতে তার কোনো ত্রুটি নেই; তার ঋতুস্রাব হয়; গর্ভধারণ করে এবং সন্তান জন্ম দেয়; স্তন্যদান করে, তথাপি সে যদি কখনো নিজেকে পুরুষ মনে করে, তাহলে সে একজন পুরুষ। সমাজ ও আইন তাকে পুরুষ হিসেবেই গণ্য করতে হবে এবং পুরুষ হিসেবে যাবতীয় অধিকার লাভ করবে।

এ মতবাদ অনুযায়ী ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিকে নারী থেকে পুরুষ বা পুরুষ থেকে নারী হওয়ার জন্য সার্জারি কিংবা হরমোন থেরাপি গ্রহণ করাও জরুরি নয়; বরং তা ঐচ্ছিক বিষয়। মূল বিষয় হল, নিজেকে কোন্ লিঙ্গের মনে করে সেটিই। এ মতবাদের প্রবক্তাদের বক্তব্যে বিষয়টি পরিষ্কার ভাষায় এভাবেই বলা হয়েছে।

এ বিকৃত মতবাদের প্রচারক প্রভাবশালী এক সংস্থা ÔGLAADÕ -এর বক্তব্য দেখুন-

Transgender is a term used to describe people whose gender identity differs from the sex they were assigned at birth. Gender identity is a person’s internal, personal sense of being a man or a woman (or boy or girl.) ... As part of the transition process, many transgender people are prescribed hormones by their doctors to change their bodies. Some undergo surgeries as well. But not all transgender people can or will take those steps, and it’s important to know that being transgender is not dependent upon medical procedures.

https://glaad.org/transfaq/

মোটকথা, এ মতবাদের দাবি হল, জন্মগত দেহ যা-ই হোক না কেন, নিজেকে যে নারী দাবি করবে, তাকে নারী বলে মেনে নিতে হবে; নিজেকে যে পুরুষ দাবি করবে, তাকে পুরুষ বলে মেনে নিতে হবে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে। ইচ্ছে মতো থেরাপি আর অপারেশনের মাধ্যমে বদলে নেবে নিজের দেহকে। তাদের কেউ যদি থেরাপি বা অপারেশন না করেই নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের বলে দাবি করে, তাও মেনে নিতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজ তাকে কোনো বাধা দিতে পারবে তো না-ই; বরং উল্টো তাকে দিতে হবে বিশেষ সুবিধা। শুধু তা-ই নয়, সেইসাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একেবারে ছোটবেলা থেকেই সবাইকে শেখাতে হবে, মানুষের মনটাই গুরুত্বপূর্ণ; দেহ নয়তার মানসিক বিকৃতিকে বিকৃতি বলা যাবে না, তার চিকিৎসা করা যাবে না; বরং তাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে হবে।

পশ্চিমা বিশ্বজুড়ে চলছে এ মতবাদের রাজত্ব। তাদের স্কুলগুলোতে তা শেখানো হচ্ছে। এ মতবাদ তাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনেক বিষয়কে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। এ বিদঘুটে বিকৃতিকে উপস্থাপন করা হচ্ছে মানবাধিকারের প্রশ্ন হিসেবে। মানবাধিকারের নামে এ মতবাদের ফেরি করে বেড়াচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব, জাতিসংঘ  ও পশ্চিমের এনজিওগুলো। আর তাদের কিছু সেবাদাস ক্ষমতাধর ব্যক্তির হীন স্বার্থের বলি হয়ে বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশের পাঠ্যপুস্তকেও তা ঢুকে পড়েছে।

আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন হয়েছে কয়েক দশক পার হল; ক্ষমতার পালাবদলে অনেক সরকার ক্ষমতায় এল, কিন্তু দেশের জনগণের বিশ্বাস-মূল্যবোধ, রুচি-প্রকৃতি, চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন ঘটে- এমন শিক্ষাক্রম এখনো জাতির ভাগ্যে জোটেনি। কিছুদিন পরপরই শিক্ষার উন্নয়নের নামে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, খুব হাঁক-ডাকের সাথে বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হয়, জনগণের ট্যাক্সের অজস্র পয়সা খরচ করা হয়; কিন্তু ফলাফল শূণ্য। বরং উল্টো যা হয়- প্রত্যেক কমিশনই তাদের নিজস্ব ধ্যান-ধারণা জাতির ওপর চাপিয়ে দিয়ে যায়, যার অধিকাংশই দেশের গণমানুষের বোধ-বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না।

বর্তমান সরকারের আমলে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখাপ্রণয়ন করা হয় ২০২১ সালে। প্রকাশিত হওয়ার পর তা তুমুল বিতর্কের মুখে পড়ে। শিক্ষাক্রম রূপরেখার ওপর পর্যালোচনা এখন আমার উদ্দেশ্য নয় এবং তার সুযোগও নেই। তবে যে কথাটি না বললেই নয় তা হল, এ রূপরেখা  প্রণয়নের কুশলীবরা পশ্চিমের মাত্রাতিরিক্ত অন্ধ অনুকরণে বা বলি, চিহ্নিত কিছু এনজিওর প্ররোচনায় এমন অনেক বিষয় এতে দাখিল করেছে, যা আমাদের সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য মারাত্মক বিপর্যয়কর।

২০২১ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রম রূপরেখাও তার আলোকে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকগুলোতে পাশ্চাত্যের কিছু নোংরা মানসিক বিকৃতির জন্য স্পেস তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে এবং পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে  সেগুলো  স্বাভাবিকিকরণের চেষ্টা করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে লিঙ্গ বৈচিত্র্য, যৌন বৈচিত্র্য ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে এগুলো হল স্পষ্ট মানসিক বিকার ও খুব নোংরা মানসিক বিকৃতি। এ ধরনের বিকৃতির লোকদেরকে সমাজের মূলধারায় দাখিল করার জোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

পাঠ্যক্রম রূপরেখার ২.১৭ অধ্যায়ের ২.১৭.১ -এ বলা হয়েছে-

শিশু যাতে তাঁর নিজের জেন্ডার পরিচিতি (ছেলে, মেয়ে, তৃতীয়/রূপান্তরিত লিঙ্গ) নিয়ে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রবেশ ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিখন অর্জন করতে পারে, সেই বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।

এখানে খুব স্পষ্ট ভাষায় রূপান্তরিত লিঙ্গ তথা ট্রান্সজেন্ডারের কথা বলা হয়েছেতাদের মেইনস্ট্রিম করাকে শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় দাখিল করা হয়েছে।

রূপরেখা অনুযায়ী পরবর্তীতে এ বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে ট্রান্সজেন্ডারিজম বিষয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করে দেওয়া হয়েছে। এ অধ্যায়ের শিরোনাম হল, ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা

এ অধ্যায়ের ৩৯-৪০ নং পৃষ্ঠায় শরীফার গল্পশিরোনামের লেখায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে ট্রান্সজেন্ডারবাদের দীক্ষা দেওয়া হয়েছে।

গল্পে ক্লাসটিচার খুশি আপা একদিন ক্লাসে একজন অতিথিকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। তিনিই তাকে শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। বলেন, ইনি তোমাদের স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। সেই অতিথি হল শরীফা। খুশি আপা শরীফাকে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেন। শরীফা বলে, আমার নাম শরীফা আখতার। যখন আমি তোমাদের স্কুলে পড়তাম তখন আমার নাম ছিল শরীফ আহমাদ।

আনুচিং (শিক্ষার্থী) অবাক হয়ে বলল, আপনি ছেলে থেকে মেয়ে হলেন কী করে?

শরীফা বলল, আমি তখনও যা ছিলাম এখনও তাই আছি। নামটা কেবল বদলেছি।

শিক্ষার্থীরা শরীফার কথা ঠিকঠাক বুঝতে পারল না। শরীফা সপ্তম শ্রেণির কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে তার

কাহিনী শুনিয়েছে- ছোটবেলায় সবাই আমাকে ছেলে বলত। কিন্তু আমি নিজে একসময় বুঝলাম, আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে। আমি মেয়েদের মতো পোশাক পরতে ভালবাসতাম। কিন্তু বাড়ির কেউ আমার পছন্দের পোশাক কিনে দিতে রাজি হত না। মেয়েদের সঙ্গে খেলতেই আমার বেশি ইচ্ছা করত। কিন্তু মেয়েরা আমায়... স্কুলের সবাই, পাড়া-পড়শি এমনকি বাড়ির লোকজনও আমাকে ভীষণ অবহেলা করত। 

একদিন এমন একজনের সঙ্গে পরিচয় হল, যাকে সমাজের সবাই মেয়ে বলে, কিন্তু সে নিজেকে ছেলে বলেই মনে করে। আমার মনে হল, এই মানুষটাও আমার মতোন। সে আমাকে বলল, আমরা নারী বা পুরুষ নই, আমরা হলাম তৃতীয় লিঙ্গ (থার্ডজেন্ডার)।

এ একই গল্পে এখানে গত বছরের পাঠ্য বইয়ে ছিল, ‘আমরা হলাম ট্রান্সজেন্ডার২০২৪ সালের বইয়ে তা করা হয়েছে থার্ডজেন্ডার। ট্রান্সথেকে থার্ডএতটুকু পরিবর্তন করেই কর্তা ব্যক্তিদের দায়িত্ব শেষ। এভাবেই জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। গল্পে স্পষ্ট আছে, ‘আমি তখনো যা ছিলাম এখনো তাই আছি। নামটা কেবল বদলেছি।আর কর্তা মহল গলা ফাটিয়ে বলছেন, পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডার শব্দ নাই। আফসোস হয়Ñ আমরা কোন্ বোকার রাজ্যেবাস করি!

শরীফার গল্পের পরের কয়েক পৃষ্ঠায় ট্রান্সজেন্ডারিজমের মৌলিক বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদেরকে আত্মস্থ করানো হয়েছে।

বইটির ৪১ নং পৃষ্ঠায় নতুন প্রশ্নঅনুচ্ছেদে খুশি আপার ক্লাসের পরে পাঁচজন শিক্ষার্থীর কথোপকথনের  বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন, রনি বলছে যে, তার মা তাকে বলেছে-

ছোটদের কোনো ছেলেমেয়ে হয় না। বড় হতে হতে তারা ছেলে বা মেয়ে হয়ে ওঠে।

উপরোক্ত বাক্যে নারী পুরুষের আলাদা লিঙ্গ পরিচয়ের ধারণাকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মন থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।  ১০/১২ শব্দের এ বাক্যে যে শিক্ষা (!)  দেওয়া হয়েছে, তা গোটা সমাজকে উলট-পালট করে দিতে পারে। ১১/১২ বছরের  ছোট ছোট শিক্ষার্থীদেরকে তাদের লিঙ্গ পরিচয় নিয়েই কনফিউশনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ছোট শিশুদের প্রতি যা জঘণ্য  মানসিক টর্চার।

৪৪ নং পৃষ্ঠায় কয়েকটি প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে চিন্তার খোরাক দেওয়া হয়েছে। আসলে তাদেরকে চরমভাবে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। খুশি আপা বলেন, কয়েকটা প্রশ্নের মাধ্যমে আমরা চিন্তার খোরাক পেতে পারি...

-আমরা নিজেদের ছেলে এবং মেয়ে বলে আলাদা করে চিনি কীভাবে?

-একজন মানুষকে বাইরে থেকে দেখেই কি সবসময় সে ছেলে না মেয়ে তা বোঝা যায়?

-এমনটা কি হতে পারে যে, কাউকে আমরা তার শারীরিক বৈশিষ্ট্য দেখে গলার স্বর শুনে ছেলে বা মেয়ে বলে ভাবছি, কিন্তু সে নিজেকে ভিন্ন কিছু ভাবছে?

এ পৃষ্ঠাতেই বলা হয়েছে, হাস্না (শিক্ষার্থী) বলল, ‘আমার মনে হচ্ছে, আমরা যে মানুষের শারীরিক গঠন দেখেই কাউকে ছেলে বা মেয়ে বলছি, সেটা হয়তো সবার ক্ষেত্রে সত্যি নয়।

আরেক শিক্ষার্থী মামুন বলল, ‘তাই তো! আমরা শরীফার জীবনের গল্প শুনলাম, যিনি দেখতে ছেলেদের মতন, কিন্তু মনে মনে তিনি একজন মেয়ে। তার কাছে এমন একজনের কথা শুনলাম, যিনি দেখতে মেয়েদের মতো কিন্তু মনে মনে তিনি ছেলে।’...

সুমন বলল, ‘আমার মনে হচ্ছে, আমরা যেমন করে ভাবছি, অনেকেই তার চেয়ে ভিন্ন রকম করে ভাবে।

সাবা বলল, ‘কিন্তু সবার তো নিজের মত, নিজের অনুভূতি, নিজের পছন্দ-অপছন্দ প্রকাশের স্বাধীনতা আছে!

খুশি আপা বলেন, ‘যতক্ষণ না তাতে অন্যের কোনো ক্ষতি হচ্ছে, ততক্ষণ নিশ্চয়ই আছে।

শিহান বলল, ‘তাহলে শরীফা আপারা কার কী ক্ষতি করেছেন?’

পাঠক লক্ষ করেছেন, শিক্ষার্থীদের আলাপচারিতার গল্প পাতানো হয়েছে। পাতানো আলাপের ফাঁকে শিক্ষার্থীদের যবানীতেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে ট্রান্সজেন্ডারিজম আত্মস্থ করানো হয়েছে। গল্পের শুরুটায় শরীফাদেরকে দেখানো হয়েছে, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী হিসেবে। শেষে এসে তা হয়ে গেছে অধিকার (!)।

পাশ্চাত্যের বিকৃতিগুলো এভাবেই আমাদের সমাজে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এরপর একপর্যায়ে এগুলোকেই বানিয়ে ফেলা হয় আমাদের সভ্যতা ও  সংস্কৃতির অঙ্গ।

২০২৪ সালের বইয়ে শিহানের কথা দিয়েই প্রসঙ্গ শেষ করা হয়েছে। ২০২৩ এর বইয়ে এর পরে শিক্ষিকা খুশি আপার আরেকটি কথা ছিল-

খুশি আপা বলেন, ‘একটি শিশু যখন জন্ম নেয় তখন তার শরীর দেখে আমরা ঠিক করি, সে নারী, নাকি পুরুষ। এটি হল তার জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়। জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে একজন মানুষের কাছে সমাজ যে আচরণ প্রত্যাশা করে, তাকে আমরা জেন্ডার বা সামাজিক লিঙ্গ বলি। জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে তার জেন্ডার ভূমিকা না মিললে সমাজের প্রথাগত ধারণায় বিশ্বাসী মানুষেরা তাকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

খুশি আপার কথার অর্থ হল, একজন মানুষ পুরুষের শরীর নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও সে যদি কখনো নিজেকে নারী দাবি করে, তাহলে তাকে নারী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তদ্রƒপ কোনো মানুষ নারীর শরীর নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও সে যদি কখনো নিজেকে পুরুষ দাবি করে, তাহলে তাকে পুরুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তাদের মানসিক বিকৃতিকে বিকৃতি বলা যাবে না; যতক্ষণ না অন্যের ক্ষতি হয়, ততক্ষণ যা খুশি তা-ই করা যায়। যারা এগুলো মানবে না, তারা সেকেলে; পশ্চাৎপদ।

আফসোস! জনগণের ঘাম ঝড়ানো ট্যাক্সের টাকায় পাঠ্যক্রম-পাঠ্যপুস্তক তৈরি হয় আর তা দিয়ে জনগণের গলায় ছুরি চালানো হয়। এখন আমাদের  সন্তানদেরকে পাশ্চাত্যের যৌন বিকৃতিগুলো শেখানো হচ্ছে। আত্মপরিচয় এবং যৌনতা নিয়ে বিকৃতিকে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করে নিতে শেখানো হচ্ছে আমাদের কোমলমতি শিশুদের।

সপ্তম শ্রেণির উক্ত বিষয়ের (ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান) শিক্ষক সহায়িকাতে স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে- ‘...সামাজিক প্রথাগত ধারণা জেন্ডারের বৈচিত্র্যকে সব সময়ে মেনে নেয় না। ...আমরা লিঙ্গ ও জেন্ডার বৈচিত্র্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিয়ে, এই বৈচিত্র্যকে স্বীকার করে নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করব।-শিক্ষক সহায়িকা, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, সপ্তম শ্রেণি, পৃ. ২১, এনসিটিবি।

বাস্তবে যেগুলো চরম মানসিক বিকৃতি সেগুলোকেই বলা হচ্ছে বৈচিত্র্য। তথাকথিত বৈচিত্র্য স্বীকার করে শিক্ষার্থীদেরকে তা আত্মস্থ করাতে হবে। যারা তথাকথিত বৈচিত্র্য মেনে নেবে না, তারা হল প্রথাগত ধারণার অনুগামী, সেকেলে ইত্যাদি।

শিশু-কিশোররা সহজে প্রভাবিত হয়, নতুন জিনিসের প্রতি তাদের থাকে সহজাত আগ্রহ। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোমলমতি কিশোরদের সামনে বিকৃতি ও অসুস্থতাকে স্বাভাবিক হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।

বয়ঃসন্ধিকালে এমনিতেই নানা মনস্তাত্বিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। তার ওপরে তাদেরকে এমন বিভ্রান্তিতে নিপতিত করার পরিণতি হবে ব্যাপক বিপর্যয়কর।

ট্রান্সজেন্ডারিজমের হাকীকত বুঝে থাকলে এর ভয়াবহতা নিয়ে আর কিছু বলার প্রয়োজন থাকে না। পাশ্চাত্যের ভয়ঙ্কর যৌনবিকৃতিগুলোর শীর্ষে আছে এই ট্রান্সজেন্ডারিজম। যাকে বলা যায় সকল নোংরামী ও অশ্লীলতার মূলইসলামের দৃষ্টিতে তা ভয়াবহ কুফর ও জঘণ্য অপরাধ। ট্রান্সজেন্ডারবাদে নারী-পুরুষের সৃষ্টিগত লিঙ্গ পরিচয়ই পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। এধরনের কাজ যারা করে, তাদের ওপর আল্লাহ তাআলার লানত ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লানত।

ট্রান্সজেন্ডারবাদকে স্বাভাবিকিকরণ করা হলে এর দ্বারা মানব সমাজের জীবন ব্যবস্থা ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। সমকামিতার মতো ভয়ানক অপরাধের পথ খুলে যাবে। যিনা-ব্যভিচার, নারী ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ব্যাপক বিস্তার ঘটবে। এ মতবাদের ভয়াবহতা নিয়ে বিভিন্ন ভাষায় এবং আমাদের বাংলা ভাষায়ও অনেক লেখালেখি হয়েছে, এখনো হচ্ছে। মাসিক আলকাউসারে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সংখ্যায় এ বিষয়ে নিবন্ধ (ট্রান্সজেন্ডারবাদ : বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ) ছাপা হয়েছে।

ট্রান্সজেন্ডারবাদের অবধারিত ফলাফল হল, সমকামিতার স্বাভাবিকীকরণ এবং বৈধতা দেওয়া। যেমন ধরুন, শরীফ আহমদ নামের এক পুরুষ নিজেকে নারী বলে দাবি করল। নাম পরিবর্তন করে শরীফা রাখল। আইন ও সমাজ তাকে নারী বলে মেনে নিল। এখন বিয়ের ক্ষেত্রে বা যৌনচাহিদা মেটাতে গিয়ে সে কী করবে?

যদি সে কোনো পুরুষকে বেছে নেয়, তাহলে তা হবে সমলিঙ্গের সাথে বিয়ে বা যৌনতা। কারণ সে একজন পুরুষ, যাকে সে বেছে নিয়েছে, সেও পুরুষ।

আর যদি সে কোনো নারীকে বেছে নেয়, তাহলে ট্রান্সজেন্ডারবাদ হিসেবেই সেটা সমকামিতা। কারণ সে একজন ট্রান্সনারী, যাকে বাছাই করেছে সেও নারী। তাছাড়া আইন ও সমাজ যদি ট্রান্সনারীকে নারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে সামাজিক ও আইনি দৃষ্টিতেই সেটা হবে সমকামিতা।

মোটকথা, যা-ই বেছে নেওয়া হোক না কেন, ফলাফলে তা সমকামিতার স্বাভাবিকীকরণ। অথচ ধর্ম ও সমাজ উভয় দিক থেকেই সমকামিতা মারাত্মক অপরাধ। আমাদের দেশের আইনেও তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশের পেনাল কোড (১৮৬০ সনের ৪৫ নং আইন)-এর ৩৭৭ নং ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে-

377. Whoever voluntarily has carnal intercourse against the Unna order of nature with any man, woman or animal, shall be punished with [imprisonment] for life, or with imprisonment of either description for a term which may extend to ten years, and shall also be liable to fine. (Bangladesh Code, vol. 1, p. 199, published in 2007)

৩৭৭। অস্বাভাবিক অপরাধসমূহ :

যদি কোনো ব্যক্তি প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে কোনো পুরুষ, স্ত্রীলোক বা পশুর সহিত যৌনসঙ্গম করে, তাহা হইলে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, কিংবা দশ বৎসর পর্যন্ত যেকোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবে এবং তাহাকে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা যাইবে। -দণ্ডবিধি, আশরাফুল আলম এডভোকেট, কামরুল বুক হাউস, দ্বাদশ মুদ্রণ ২০২২

ট্রান্সজেন্ডারবাদের অনিবার্য পরিণতি যেহেতু সমকামিতার বৈধতা। তাই ইতিমধ্যেই আমাদের দেশের একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বাতিল করার চেষ্টা করছে। পত্র-পত্রিকায় নিবন্ধ ছাপা হচ্ছে-দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা : সমকামী ব্যক্তির মৌলিক মানবাধিকার পরিপন্থী

২০২২ সালের ২৯ আগষ্ট, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য রোধ এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষাশীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে আয়োজনে প্রচার সহযোগী ছিল প্রথম আলো। গোলটেবিল বৈঠকের এক বক্তা তাসলিমা ইয়াসমিন ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার সুরক্ষার জন্য ৩৭৭ নং ধারাটির সংশোধনের প্রয়োজন মনে করেন। তিনি বলেন, ‘গবেষণায় এসেছে, আইনের ৩৭৭ ধারাটি তাদের (ট্রান্সজেন্ডারদের) ভীতি প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হয়। এ আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন।’ (হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য রোধ এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, প্রথম আলো, প্রকাশ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২

https://www.prothomalo.com/roundtable/ei1f8vpteg)

ট্রান্সজেন্ডারবাদের অরেকটি ভয়াবহ দিক হল, যিনা-ব্যভিচার ও অবাধ যৌনাচারের বিস্তার। কোনো পুরুষ যদি  নিজেকে নারী দাবি করে আর দেশের আইন তা মেনে নেয়, তাহলে সে আবাসিক হোটেল, বাসা-বাড়িতে, কিংবা স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রী হোস্টেলে নারীদের সাথে থাকার সুযোগ পাবে। অনুরূপভাবে কোনো নারী যদি নিজেকে পুরুষ দাবি করে আর  দেশের আইন তার স্বীকৃতি দেয়, তাকে পুরুষ বলে মেনে নেয়, তাহলে সে আবাসিক হোটেলে, বাসা বাড়িতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হোস্টেলে পুরুষদের সাথে থাকার সুযোগ পাবে। এর পরিণতি যে কত ভয়াবহ হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

এ মতবাদ সমাজে স্থান পেলে শুধু যিনা-ব্যভিচারই নয়, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ অতি সহজে সমাজে ছড়িয়ে পড়বে। কোনো নারী না বুঝে নিজের সমলিঙ্গের মনে করে নারীরূপী কোনো পুরুষের সাথে থাকলে তার কাছ থেকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া একেবারেই স্বাভাবিক। অসৎ লোকেরা ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের উদ্দেশ্যে সহজে নারীদের কাছে পৌঁছার জন্য এই পথ বেছে নেবে। ফলে সমাজে নারীদের জন্য নিরাপদ স্থান পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

ট্রান্সনারী (বাস্তবে পুরুষ) কি নারীদের বাথরুম, নারীদের কমনরুম ব্যবহার করবে? আপনি কি চাইবেন আপনার বোন, স্ত্রী বা সন্তান কোনো ট্রান্সনারীর সাথে একই বাথরুম ব্যবহার করুকবিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া রূপান্তরিত নারী কোন্ হলে সিট পাবে? ক্যাডেট কলেজ, আর্মি ব্যারাক, পুলিশ ব্যারাক ও জেলখানায় কোথায় তাদেরকে রাখা হবে? ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি অনুযায়ী তাদেরকে নারীদের সাথে রাখতে হবে। একজন পুরুষ নিজেকে নারী দাবি করার কারণে সে এখন অনায়াসেই নারীদের সাথে থাকার সুযোগ পাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রী হোস্টেলে, গার্লস স্কুলে, মেয়েদের ক্লাসরুমে এবং হাসপাতাল ও অফিস আদালত ও কলকারখানায় নারীদের জন্য নির্ধারিত রুমে অনায়াসেই সে প্রবেশাধিকার পাবে। পরিস্থিতি তখন কী দাঁড়াবে তা আর বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই।

১৭ জুলাই ২০২২ তারিখে নিউইয়র্ক পোস্ট’-এর খবর-

নিউজার্সির জেলখানায় ডেমি মাইনর নামের এক পুরুষ কয়েদি হঠাৎ করে নিজেকে নারী দাবি করতে শুরু করে। পরে জেলখানা কর্তৃপক্ষ ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ অনুযায়ী তাকে মহিলা কারাগারে স্থানান্তরিত করে। কারাগারে নারীদের সাথেই রাখা হয় আপাদমস্তক পুরুষ ডেমিকে। ফলে তার সান্নিধ্যে গর্ভবতী হয়ে পড়ে দুই নারী কয়েদি।  এ ঘটনায় তাকে পুনরায় পুরুষের কারাগারে পাঠানো হয়।

(https://nypost.com/2022/07/16/transgender-woman-demi-minor-impregnates-two-inmates-at-nj-prison/)

ট্রান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠা পেলে সমাজে সমকামিতা, যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ও নানা ধরনের যৌন নিপীড়নের ব্যাপক ছড়াছড়ি ঘটবে। এগুলো যে ভয়াবহ সামাজিক বিপর্যয়, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ছাড়া পরিবার ও সংসারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কাঠামোতে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। কে পিতা, কে মাতা, কে ভাই, কে বোন- তা নিয়েই তৈরি হবে অনিশেঃষ জটিলতা।

এতদিন ধরে যিনি পিতা ছিলেন, হঠাৎ তিনি নারী হয়ে গেলে, তদ্রূপ এতদিন ধরে যিনি মা ছিলেন, হঠাৎ তিনি পুরুষ হয়ে গেলে পরিবার ও সংসারের কী হবে!!

উপরন্তু ট্রান্সজেন্ডারবাদ বাস্তবতাকে অস্বীকার করার দাবি করেএকজন পুরুষকে নারী হিসেবে মেনে নিতে বলা কিংবা একজন নারীকে পুরুষ হিসেবে মেনে নিতে বলার অর্থ হল, বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে বলা; বিভ্রান্তি ও বিকৃতির স্বীকৃতি দেওয়া।

কারো অবস্থা যদি বাস্তবেই এমন হয় যে, সে পুরুষ হয়েও নিজেকে ভেতরে ভেতরে নারী মনে হয়, বা নারী হয়েও নিজেকে ভেতরে ভেতরে পুরুষ মনে হয়, বা পুরুষ হয়েও অন্য পুরুষের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে, বা নারী হয়েও অন্য নারীর প্রতি আকর্ষণ বোধ করে- এসব হল মানসিক ব্যাধি। ডাক্তারী শাস্ত্রে যার চিকিৎসাও রয়েছে। রোগের চিকিৎসা না করে রোগকে প্রশ্রয় দেওয়া, রোগকে স্বাভাবিকীকরণ করার কাজই করছে ট্রান্সজেন্ডারবাদ। যার সর্বগ্রাসী পরিণাম ভোগ করবে অত্র অঞ্চলের সুস্থ্য সুন্দর পরিবার, সংসার, সমাজ, দেশ ও জাতি।

দরকার ছিল ট্রান্সজেন্ডারের মতো ঘৃণ্য মানসিক বিকৃতিকে নিন্দা করা। শিক্ষার্থীদের সামনে এগুলোর ভয়াবহতা তুলে ধরা। পাশ্চাত্যের নোংরা সংস্কৃতি যেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্পর্শ করতে না পারে সে দীক্ষা দেওয়া। কিন্তু উল্টো এখন পাঠ্যবইতে সে ঘৃণ্য বিকৃতিগুলোই ভালোভাবে আত্মস্থ করানো হচ্ছে।

কারা আমাদের দেশের পাঠ্যপুস্তকে ট্রান্সজেন্ডারবাদ ঢুকিয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে দেন-দরবার করেছে সরকারের তরফ থেকে জনগণকে তার কিছু জানানো হয়নি। সাধারণত এগুলো জানানো হয়-ও না। তাই জনগণের জানার সুযোগও নেই। এরই মধ্যে একটি এনজিও-বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’-এর (বন্ধু) ২০২১ ও ২০২২ সালের বার্ষিক রিপোর্টদুটি আলোচনায় আসে। প্রথমেই বন্ধুর পরিচয় একটু জেনে নেই। এই এনজিওটি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি আমাদের দেশে সমকামিতার পক্ষে কাজ করে। এলজিবিটি গোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি জার্নালে বন্ধুর পরিচয়ই বলা হয়েছে এভাবে-

The Bandhu Social Welfare Society, a ‘men having sex with men’-focused NGO, set up a project-based organisation called Sustho Jibon in 2001

(The Paradox of Recognition: Transgender, Third Gender and Sexual Rights in Bangladesh, by Adnan Hossain. v. 19. no. 12, p.1422, Culture, Health and Sexuality, 2017. Published by Informa UK Limited)

বন্ধু ২৬টির মতো বিদেশী সংস্থার সাথে যুক্ত। যার মধ্যে রয়েছে  MenEngage Alliance। ৩০টিরও অধিক দেশে এ এনজিও এলজিবিটি গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করে। বাংলাদেশে এর সদস্য হল বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। MenEngage Alliance’-এর ওয়েবসাইটে বন্ধুর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে-

Bandhu aim has been to improve the health (including SRHR), human rights and social position of gender-diverse people (GDP) in Bangladesh.

...Gender-diverse people or the gender-diverse population refers to all people in Bangladesh who are not cisgender heterosexuals (even though many if not most of them will end up being married to the opposite sex, for reasons of societal expectation and familial pressure).

GDP therefore includes gay men and other men who have sex with men, hijra, transgender men and women, intersex people, lesbian women and other women who have sex with women, bisexual people, et cetera.

https://menengage.org/members/bandhu/

অর্থাৎ ...বন্ধুবাংলাদেশে লিঙ্গ বৈচিত্র্যপূর্ণ লোকদের (জিডিপি) সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করে।

...লিঙ্গ বৈচিত্র্যপূর্ণ মানুষ (জিডিপি) বলতে বুঝায় বাংলাদেশের ঐসকল মানুষ, যারা সিসজেন্ডার (স্বাভাবিক পুরুষ বা মহিলা, যারা জন্মগতভাবে যা, মনমানসেও তা) ও বিষমকামী (স্বাভাবিক যৌনতা, যেখানে একপক্ষ পুরুষ অপর পক্ষ নারী) নয়। সুতরাং জিডিপি হল, সমকামী পুরুষ, পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক করে- এমন পুরুষ, ট্রান্সজেন্ডার... লেসবিয়ান, নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক করে এমন নারী ইত্যাদি।

বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটিএসব লোকদের কল্যাণে কাজ করে। আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক উভয় দিক থেকে সমকামিতা অনেক বড় অপরাধ। রাষ্ট্রীয় আইনেও তা দণ্ডনীয় অপরাধ; তবুও বন্ধুরা সরকারের নাকের ডগায় বসে সমকামিতার উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

যাইহোক, ‘বন্ধুর বার্ষিক রিপোর্ট থেকেই পাঠ্যপুস্তকে ট্রান্সজেন্ডারিজম দাখিল হওয়ার নেপথ্য কাহিনী বের

হয়ে আসে।

২০২১ সালের বার্ষিক রিপোর্টে তারা লিখেছে-

Policy Advocacy is a continuous process. Bandhu, therefore, has started a dialogue with the NCTB with a specific agenda since 2015. As the NCTB reviews the curriculum every five years, Bandhu pushes its agenda for the inclusion Comprehensive Sexuality Education along with recognition of the needs of the Hijra communities in the national curriculum. ... Bandhu believes that the needs and the rights issues of the Hijra and TG communities will soon be reflected in the curriculum, a process which is already under way.

অর্থাৎ পলিসি এডভোকেসি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তাই বন্ধু২০১৫ সাল থেকে একটি নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে এনসিটিবি’-এর সাথে সংলাপ শুরু করেছে। যেহেতু এনসিটিবিপ্রতি পাঁচ বছরে কারিকুলামে রিভিউ করে, তাই হিজড়া জনগোষ্ঠীর চাহিদার স্বীকৃতিসহ বিস্তৃত যৌন শিক্ষা (কম্প্রিহেন্সিভ সেক্সুয়ালিটি এডুকেশন, সিএসই) পাঠ্যপুস্তকে দাখিল করার এজেন্ডা পুশ করে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি।

বন্ধুবিশ্বাস করে, হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির বিষয়গুলো অতি শীঘ্রই পাঠ্যপুস্তকে প্রতিফলিত হবে। একটি প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই চলমান  রয়েছে। (BANDHU Annual Report 2021, p. 28)

২০২২ সালের বার্ষিক রিপোর্টের ১৬ নং পৃষ্ঠায় সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের প্রচ্ছদের ছবি ও শরীফার গল্পের ২য় পৃষ্ঠার ছবি দিয়ে তারা লিখেছে-

Transgender, gender-transformative approach and hijra topic were included in a chapter in both curriculum and textbook through a series of advocacy initiatives with NCTB.

অর্থাৎ এনসিটিবির সাথে সিরিজ এডভোকেসির মাধ্যমে কারিকুলাম ও টেক্সট বইয়ের একটি অধ্যায়ে ট্রান্সজেন্ডার, জেন্ডার  রূপান্তরমূলক এপ্রোচ ও হিজড়ার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

(BANDHU Annual Report 2022, p. 16.)

বন্ধুর বয়ান থেকে বোঝা যাচ্ছে, এনসিটিবির সাথে বন্ধুর অনেক মোআমালা হয়েছে। বিস্তারিত তো আর জনগণের জানার সুযোগ নেই। তবে এতটুকু জানা গেল, ‘বন্ধুও তার সহযোগীদের যোগসাজশেই এ বিপর্যয়কর মানসিক বিকৃতি পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে।

আর সমাজসেবা অধিদপ্তর যে ট্রান্সজেন্ডারদের সুরক্ষার খসড়া আইন তৈরি করেছে, ‘বন্ধুর দাবি অনুযায়ী তাতেও রয়েছে ওদের হাত। ২০২২ সালের বার্ষিক রিপোর্টের ১৬ নং পৃষ্ঠায় বলেছে-

Drafting committee of transgender protection act

The Department of Social Services, Bandhu and NHRC collaborated to draft transgender protection act to legally ensure constitutional and citizen rights of the transgender. Further necessary steps have been taken towards finalizing the protection act.

জাতির প্রশ্ন- সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি। কেন তারা দেশের প্রায় শতভাগ ধর্মানুরাগী জনগণের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের বিপরীতে চরম বিতর্কিত এক-দুটি এনজিওর প্ররোচনায় ট্রান্সজেন্ডারিজমের মতো বিকৃতিকে পাঠ্যক্রমে স্থান দিয়েছে। জনগণের সেবকদের কেন জনগণের প্রতি এবং জনগণের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি দায়বোধ কাজ করে না- এটাই আজ জনগণের সামনে জ্বলন্ত প্রশ্ন। 

 

[ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে আরো জানতে পড়ুন :

১. ট্রান্সজেন্ডারবাদ : বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ

    মাসিক আলকাউসার  (ফেব্রুয়ারি ২০২৪)

২. ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু : বাস্তবতা ও প্রোপাগান্ডা

    আলকাউসারের সাপ্লিমেন্ট ত্রৈমাসিক নারী (মার্চ-মে ২০২৪) নবম সংখ্যা]

 

advertisement