সূরাসমূহের নামের অর্থ
(পূর্ব প্রকাশের পর)
১৬. সূরা নাহল :
নাহল অর্থ ‘মৌমাছি’। সূরাটির ৬৮-৬৯ আয়াতে মৌমাছির কথা রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, তোমার প্রতিপালক মৌমাছির অন্তরে এই নির্দেশ সঞ্চার করেন যে, পাহাড়ে, গাছে এবং মানুষ যে মাচান তৈরি করে তাতে নিজ ঘর তৈরি কর। তারপর সব রকম ফল থেকে নিজ খাদ্য আহরণ কর। তারপর তোমার প্রতিপালক তোমার জন্য যে পথ সহজ করে দিয়েছেন, সেই পথে চল। (এভাবে) তার পেট থেকে বিভিন্ন বর্ণের পানীয় বের হয়, যার ভেতর মানুষের জন্য আছে শেফা। নিশ্চয়ই এসবের মধ্যে নিদর্শন আছে সেই সকল লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে।
১৭. সূরা বনী ইসরাঈল বা আলইসরা :
সূরাটির প্রথম আয়াতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাতের বেলা মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসায় নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখিত হয়েছে, যে সফরকে ইসরা বলা হয়। আর সে রাতেই মসজিদে আকসা থেকে ঊর্ধ্ব জগতে তাঁর সফর হয়েছিল। সেই সফরকে মেরাজ বলে। সে অনুযায়ী সূরাটির এক নাম আলইসরা। আবার সূরার শুরুর দিকেই বনী ইসরাঈলের দুটি ঘটনার দিকে ইশারা করা হয়েছে, যাতে দুই বার ভিন্ন দুটি জাতি বনী ইসরাঈলের ওপর আক্রমণ করে তাদেরকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে ফেলেছিল। এ থেকে সূরাটির আরেক নাম বনী ইসরাঈল।
১৮. সূরা কাহ্ফ :
কাহফ অর্থ ‘গুহা’। সূরাটিতে কাফের বাদশাহর অত্যাচার থেকে বাঁচতে গুহায় আত্মগোপনকারী কিছু যুবকের কথা বর্ণিত হয়েছে, তাদের সঙ্গে একটি কুকুরও ছিল। আল্লাহ তাআলা তাঁর বিশেষ কুদরতে তাদেরকে তিন শ নয় বছর সে গুহায় নিদ্রিত রাখেন। তাদেরকে ‘আসহাবে কাহ্ফ’ বা গুহাবাসী বলা হয়। এ থেকে সূরাটির নাম ‘সূরা কাহ্ফ’।
১৯. সূরা মারইয়াম :
মারইয়াম ছিলেন হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের মা। ঈসা আলাইহিস সালামের অলৌকিক জন্ম এবং তাঁর মা মারইয়ামের তখনকার অবস্থা এ সূরায়ই বেশি বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। এ কারণে সূরাটির নাম ‘সূরা মারইয়াম’।
২০. সূরা ত্ব-হা :
ত্ব-হা-এর অর্থ কেবল আল্লাহ তাআলাই জানেন। এগুলো আলহুরুফুল মুকাত্তাআত। সূরাটির শুরুতেই
‘ত্ব-হা’ শব্দটি রয়েছে। এখান থেকেই সূরাটির নাম ‘সূরা ত্ব-হা’।
২১. সূরা আম্বিয়া :
আম্বিয়া শব্দটি নবী শব্দের বহুবচন, অর্থ ‘নবীগণ’। এ সূরায় বিভিন্ন আয়াতে ১৪ জন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যথা, মূসা আলাইহিস সালাম, হারূন আলাইহিস সালাম, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, লূত আলাইহিস সালাম, ইসহাক আলাইহিস সালাম, ইয়াকূব আলাইহিস সালাম, নূহ আলাইহিস সালাম, দাঊদ আলাইহিস সালাম, সুলাইমান আলাইহিস সালাম, আইয়ূব আলাইহিস সালাম, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম, ইদরীস আলাইহিস সালাম, যাকারিয়া আলাইহিস সালাম, ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম।
এছাড়া আরো দুই-তিন জন নবীর প্রতি নাম উল্লেখ না করে ইশারা করা হয়েছে। বহু সংখ্যক নবীর বৃত্তান্ত বর্ণিত হওয়ার কারণে সূরাটির নাম ‘সূরা আম্বিয়া’।
২২. সূরা হজ্ব :
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের যামানায় কীভাবে হজ্ব শুরু হয়েছিল এবং এর মূল আরকান কী- তা এ সূরায় ২৬তম আয়াত থেকে বর্ণিত হয়েছে। সে কারণে এ সূরার নাম ‘সূরা হজ্ব’।
২৩. সূরা মুমিনূন :
মুমিনূন শব্দটি মুমিন শব্দের বহুবচন, অর্থ ‘মুমিনগণ’। আল্লাহ তাআলা এ সূরার শুরুতে মুমিনের বিশেষ কতগুলো গুণ উল্লেখ করেছেন। যে গুণগুলো প্রতিটি মুসলিমের মধ্যে থাকা উচিত। তন্মধ্যে কয়েকটি গুণ হল-
ক. নামাযে মনোযোগিতা ও বিনয়-নম্রতা।
খ. অনর্থক বিষয় ত্যাগ করা।
গ. যাকাত আদায় করা।
ঘ. বিশেষ অঙ্গের হেফাযত করা।
ঙ. আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে সতর্ক থাকা ইত্যাদি।
তারপরে বলা হয়েছে, যাদের মধ্যে এ গুণগুলো থাকবে তারা জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করবে। সেখানেই তারা সর্বদা থাকবে।
সূরার প্রথম আয়াতে মুমিনূন শব্দটি রয়েছে। এ থেকেই সূরাটির নাম ‘সূরা মুমিনূন’।