পবিত্র কুরআনের বর্ণনায় আলোকিত পরিবার
পবিত্র কুরআনের সূরা ফুরকানে আল্লাহ তাআলা নিজের প্রিয় বান্দাদের কিছু পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। সেখানে বর্ণিত তাদের অন্যতম পরিচয়—তারা মহান প্রতিপালকের কাছে এ বলে দুআ করে-
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَ ذُرِّيّٰتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وَّ اجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ اِمَامًا.
হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের এমন জীবনসঙ্গী ও সন্তানসন্ততি দান করুন, যাদের দেখে আমাদের চোখ জুড়াবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে ‘ইমাম’ বানিয়ে দিন। -সূরা ফুরকান (২৫) : ৭৪
স্ত্রী আর সন্তানসন্ততি- এ নিয়েই তো পরিবার। আল্লাহ তাআলার বিশেষ বান্দা যারা, তারা নিজেদের পরিবারের জন্য এভাবেই চোখের পানি ফেলে দুআ করে—আল্লাহ যেন তাদের পরিবারকে নেককার বানিয়ে দেন, চোখের শীতলতা বানিয়ে দেন, মুত্তাকীদের ইমাম বানিয়ে দেন। সন্দেহ নেই, দুআটির অর্থ ও মর্ম অনেক ব্যাপক। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার যে বন্ধন ও ভালবাসা, তা আল্লাহ তাআলার এক অসামান্য সৃষ্টি। কোনো প্রকার পূর্ব পরিচয় ছাড়াই, সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি ছেলে ও মেয়ে যখন বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একে অন্যকে জীবনসঙ্গী রূপে বরণ করে নেয়, তখন আল্লাহ তাআলা তাদের মধ্যে সহসাই সৃষ্টি করে দেন এক আকর্ষণ ও ভালবাসা। আল্লাহ যদি নিজ কুদরতে এ আকর্ষণ সৃষ্টি করে না দিতেন, তবে একসঙ্গে থাকাই দুষ্কর হয়ে পড়ত। পবিত্র কুরআনের বর্ণনা—
وَ مِنْ اٰيٰتِهٖۤ اَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْۤا اِلَيْهَا وَ جَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّ رَحْمَةً.
তাঁর অন্যতম নিদর্শন—তিনি তোমাদের থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করে দিয়েছেন। -সূরা রূম (৩০) : ২১
দিনে দিনে এ ভালবাসা গভীর হয়। সম্পূর্ণ স্বাধীন দুটি মানুষ একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে ধীরে ধীরে একটি যৌথ সত্তায় পরিণত হয়। এ ঘনিষ্ঠতা কতটা গভীর—পবিত্র কুরআনে মহান রাব্বুল আলামীন এর একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন এভাবে—
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَ اَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ.
তারা তোমাদের পোশাক আর তোমরা তাদের পোশাক। -সূরা বাকারা (২) : ১৮৭
মানুষের জীবনে পোশাকের চেয়েও ঘনিষ্ঠ কিছু কি আছে! এ পোশাক আমাদের লজ্জা নিবারণ করে, পোশাক আমাদের আবৃত করে রাখে। পোশাক আমাদের ঘরে-বাইরে সর্বত্রই এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। ধনী-গরিব, সাদা-কালো নির্বিশেষে সকলের গায়ের সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে এ পোশাক। এমন জীবনঘনিষ্ঠ ও অনুপেক্ষ প্রয়োজনীয় বস্তুটির সঙ্গেই তুলনা করা হয়েছে স্বামী ও স্ত্রীকে। এরা একে অন্যের প্রতি গায়ের পোশাকের মতোই ঘনিষ্ঠ। পোশাক ছাড়া যেমন আমাদের জীবন কার্যত অচল, পারিবারিক এ আশ্রয় ছাড়াও আমাদের জীবন অনেকটাই প্রাণহীন। বিয়ের পর স্ত্রী যখন নিজের চেনা পরিবার-পরিবেশ ছেড়ে সম্পূর্ণ নতুন ঠিকানায় আশ্রয় নেয়, তখন স্বামীর চেহারায় তাকিয়ে থেকেই সে ভুলে যায় তার সকল বিরহযন্ত্রণা। আবার স্বামী যখন কাঁধে তুলে নেয় স্ত্রীর যাবতীয় দায়ভার, ধীরে ধীরে ভারি হতে থাকে সে দায়িত্বের বোঝা, এ বোঝা টানতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠে স্বামী, রোদ-বৃষ্টি-ঝড় একাকার করে উপার্জনের নেশায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন স্ত্রীর কাছে ফিরে এসেই সে খুঁজে পায় প্রশান্তির ঠিকানা, ভুলে যায় সারাদিনের সব ক্লান্তিকর পরিশ্রমের কথা। এই তো আমাদের জীবন। পারিবারিক জীবনের এ আকর্ষণ, যেখানে স্ত্রীর সান্নিধ্যে স্বামী শান্তি পায়, এটাই মানুষের স্বাভাবিকতা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে প্রথম মানব ও প্রথম নবী সায়্যিদুনা হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও তাঁর জীবনসঙ্গিনী হযরত হাওয়া রা.-এর সৃষ্টির আলোচনা করেছেন এভাবে—
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ اِلَيْهَا.
তিনি তো সেই সত্তা, যিনি তোমাদেরকে এক প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার নিকট শান্তি পায়। -সূরা আ‘রাফ (৭) : ১৮৯
রহস্য আল্লাহ তাআলা নিজেই উন্মোচন করে দিচ্ছেন এ বলে—স্ত্রীকে সৃষ্টি করা হয়েছে, যেন স্বামী তার কাছে গিয়ে শান্তি পায়। রহস্যের এ বর্ণনা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার হৃদ্যতা ও ভালবাসাকে আল্লাহ তাআলার অন্যতম নিদর্শন বলে উল্লেখ করা এবং নেককার মুমিনদের প্রার্থনা—চোখজুড়ানো জীবনসঙ্গী আমাদের দান করো—সবই এক সূত্রে গাঁথা।
জীবন চলার পথে এ সঙ্গী—স্বামী ও স্ত্রী যে এ কত বড় নিআমত, তা আমরা কিছুটা অনুমান করতে পারি পবিত্র কুরআনে বর্ণিত জান্নাতের নিআমতরাজির বিবরণ থেকেও। জান্নাতের নিআমত সম্পর্কে চূড়ান্ত কথা তো সেটাই, যা হাদীসে কুদসীতে এভাবে বর্ণিত হয়েছে—
أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنَ رَأَتْ ، وَلاَ أُذُنَ سَمِعَتْ ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ.
আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন কিছু প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান যার কথা শোনেনি আর কোনো মানুষের হৃদয়ে যা কখনো কল্পনায়ও আসেনি। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩২৪৪
এরপরও নিআমতরাজির কিছু বিবরণ কুরআন ও হাদীসের পাতায় বর্ণিত হয়েছে। এমনই একটি আয়াত—
وَ بَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ كُلَّمَا رُزِقُوْا مِنْهَا مِنْ ثَمَرَةٍ رِّزْقًا قَالُوْا هٰذَا الَّذِيْ رُزِقْنَا مِنْ قَبْلُ وَ اُتُوْا بِهٖ مُتَشَابِهًا وَ لَهُمْ فِيْهَاۤ اَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَّ هُمْ فِيْهَا خٰلِدُوْنَ.
যারা মুমিন ও সৎকর্মশীল, তুমি তাদের সুসংবাদ দাও, তাদের জন্যে রয়েছে এমন জান্নাতসমূহ, যার নিচ দিয়ে নদীসমূহ বয়ে যায়। যখনই সেখানে তাদেরকে সেখানকার ফলমূল খেতে দেওয়া হবে, তারা বলবে—এ তো সেটাই, ইতিপূর্বে যা আমাদেরকে খেতে দেওয়া হয়েছিল। তাদের কাছে সেসব সাদৃশ্যপূর্ণ অবস্থায় উপস্থিত করা হবে। আর সেখানে তাদের জন্য থাকবে পবিত্র সঙ্গিনীগণ। এবং তারা তাতে চিরকাল থাকবে। -সূরা বাকারা (২) : ২৫
বেহেশতের অফুরন্ত নিআমতরাজির মধ্যেও এক বিশেষ নিআমত- পুতঃপবিত্র স্ত্রী। সহজেই অনুমেয়, দুনিয়াতে এ নিআমত কত বড়!
একজন নেককার পুরুষের জন্য নেককার স্ত্রীর মতোই অসামান্য এক নিআমত—নেককার সন্তান। নিজের ঔরসজাত কিংবা গর্ভজাত বলে সন্তানের প্রতি ভালবাসা মানুষ পোষণ করে, বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। সন্তান ছাড়া সংসারে পূর্ণতা আসে না। শুধু সাংসারিক পূর্ণতাই নয়, নিজের জীবনও যেন অপূর্ণ থেকে যায়। অপূর্ণতার এ অনুভবে নারী-পুরুষে কোনো ফারাক নেই। নিঃসন্তান দম্পতি যারা, তারা আন্দায করতে পারবে— নিআমত হিসেবে সন্তান যে কতটা অসামান্য! পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা এমনই এক নিঃসন্তান দম্পতির আকুতির বিবরণ দিয়েছেন। ঘটনাটি আমাদের নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামের। নিঃসন্তান অবস্থাতেই কেটে গিয়েছিল তাঁর যৌবনের দিনগুলো। তাঁর জীবনে এসে হানা দেয় বার্ধক্য। মাথার কালো চুলগুলো সাদা হয়ে যায়। বার্ধক্যের আঘাতে শরীর হয়ে পড়ে দুর্বল। বার্ধক্যে আক্রান্ত হয়েও সন্তানের আকাক্সক্ষা উপেক্ষা করতে পারেননি। আকুতিভরে আল্লাহ তাআলার দরবারে ফরিয়াদ করেছেন একজন সন্তানের জন্যে। পবিত্র কুরআনের বিবরণ পড়ুন-
ذِكْرُ رَحْمَتِ رَبِّكَ عَبْدَهٗ زَكَرِيَّا، اِذْ نَادٰي رَبَّهٗ نِدَآءً خَفِيًّا، قَالَ رَبِّ اِنِّيْ وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّيْ وَ اشْتَعَلَ الرَّاْسُ شَيْبًا وَّ لَمْ اَكُنْۢ بِدُعَآىِٕكَ رَبِّ شَقِيًّا، وَ اِنِّيْ خِفْتُ الْمَوَالِيَ مِنْ وَّرَآءِيْ وَ كَانَتِ امْرَاَتِيْ عَاقِرًا فَهَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّا، يَّرِثُنِيْ وَ يَرِثُ مِنْ اٰلِ يَعْقُوْبَ وَ اجْعَلْهُ رَبِّ رَضِيًّا، يٰزَكَرِيَّاۤ اِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلٰمِ اسْمُهٗ يَحْيٰي لَمْ نَجْعَلْ لَّهٗ مِنْ قَبْلُ سَمِيًّا.
(এটি) স্বীয় বান্দা যাকারিয়ার প্রতি তোমার প্রতিপালকের রহমতের বিবরণ—যখন সে স্বীয় প্রতিপালককে মৃদুস্বরে ডাকল। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে গেছে, চুলগুলো সাদা হয়ে গেছে; কিন্তু হে আমার প্রতিপালক! আপনার নিকট প্রার্থনা করে আমি কখনো বিফল হইনি। আমি আমার পরে আমার ভাই-বেরাদরের ব্যাপারে ভয় করি, অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। তবুও আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন, যে আমারও উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকুবের বংশধরের উত্তরাধিকারও লাভ করবে। হে প্রতিপালক! তাকে এমন বানান, যে আপনার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত হবে। (আল্লাহ বললেন,) হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি, যার নাম হবে ইয়াহইয়া। আমি আগে এ নামে আর কাউকে সৃষ্টি করিনি। -সূরা মারইয়াম (১৯) : ২-৭
এই হল সন্তান। এ সন্তানের জন্য একজন নবী বার্ধক্যে উপনীত হয়েও আল্লাহর দরবারে দুআ করতে পারেন। তবে সবিশেষ লক্ষণীয়, হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম দুআ করেছেন এভাবে—আমাকে এমন এক সন্তান দান করুন, যে হবে আপনার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত। সহজ ভাষায় আমরা বলতে পারি— নেককার। তাঁর এ প্রার্থনা সূরা আলে ইমরানে বর্ণিত হয়েছে এভাবে—
رَبِّ هَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً.
হে আমার প্রতিপালক! আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে এক নেককার সন্তান দান করুন। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩৮
শুরুতে সূরা ফুরকানে বর্ণিত আল্লাহ তাআলার খাস বান্দাদের যে দুআর কথা বলা হয়েছে, সেখানে এমন নেককার সন্তান আর নেককার জীবনসঙ্গীই প্রার্থনা করা হয়। সন্তান ও জীবনসঙ্গী যদি নেককার না হয়, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত না হয়, তাহলে সুখের শত উপকরণে ডুবে থেকেও জীবন হয়ে পড়ে বিভীষিকাময়। কুরআনের ভাষায় যাকে বলা হয়েছে, ‘ফিতনা’। সূরা তাগাবুনের আয়াত—
اِنَّمَاۤ اَمْوَالُكُمْ وَ اَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ.
নিশ্চয়ই তোমাদের ধনসম্পদ ও তোমাদের সন্তানসন্ততি ফিতনাস্বরূপ। -সূরা তাগাবুন (৬৪) : ১৫
ফিতনা মানে পরীক্ষা। সন্তান যদি নেককার হয়, তবে তো তা এক মহা নিআমত। তা এমন এক নিআমত, যার ফল মানুষ দুনিয়াতেও ভোগ করে, ভোগ করে মৃত্যু-পরবর্তী কবরের জীবনেও। মৃত মা-বাবার জন্য জীবিত সন্তানের যে আকুতিভরা দুআ—তা কি দুনিয়ার কোনো ভাষায় সংজ্ঞায়িত করা যায়! কিন্তু যদি -আল্লাহ না করুন- সে এমন না হয়, দুশ্চরিত্রের অধিকারী হয়, তবে যে সে সন্তান কেবল নিজের জীবন বরবাদ করবে, কিংবা বাবা-মা তার দুআ থেকে বঞ্চিত হবে— এমন নয়; বরং এ সন্তানের কারণে বাবা-মায়ের দ্বীনদারীও আক্রান্ত হতে পারে। তখন পরকাল বরবাদ হবে সকলের—সন্তানের এবং বাবা ও মায়ের; এমনকি দুনিয়ার স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনও জাহান্নাম হয়ে পড়তে পারে। মন্দ সন্তান বাবা-মাকেও মন্দ কাজে বাধ্য করতে পারে। অন্যায় মন্দ আবদার দিয়ে বাবা-মাকে তাদের অনুসৃত সরল পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারে। সন্তানের কাছে বাবা-মা এতটাই অসহায় হয়ে পড়েন, সারা জীবনের মেনে চলা রীতি-নীতিও তারা বিসর্জন দিতে বাধ্য হন ঐ দুশ্চরিত্র সন্তানের কারণে। সূরা কাহফে আল্লাহ তাআলা নবী হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও খাযির-এর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মূসা আ. হযরত খাজিরের সফরসঙ্গী হয়েছিলেন, কিছু সময়ের জন্য। পথিমধ্যে খাযির আ. অস্বাভাবিক ও অবোধগম্য কিছু কাজ করেছিলেন। মূসা আলাইহিস সালাম কিছুটা বিস্ময়, কিছুটা আপত্তি নিয়ে সেসব সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি ছিল—খাযির একটি ছোট বালককে হত্যা করেছিলেন। ঘটনা তো কুরআন কারীমে সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি এ বালককে হত্যার কারণ হিসেবে বলেছেন, পবিত্র কুরআনের বর্ণনানুসারে—
وَ اَمَّا الْغُلٰمُ فَكَانَ اَبَوٰهُ مُؤْمِنَيْنِ فَخَشِيْنَاۤ اَنْ يُّرْهِقَهُمَا طُغْيَانًا وَّ كُفْرًا.
আর বালকটির বাবা-মা ছিল ঈমানদার। আমার আশঙ্কা হল, সে তাদেরকে অবাধ্যতা ও কুফরিতে লিপ্ত হতে বাধ্য করবে। -সূরা কাহফ (১৮) : ৮০
সন্তান যখন এমন হয়, তখনই সে ফিতনা বা পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। একদিকে বুকের সন্তানের আবদার কিংবা দাবি, আরেকদিকে আল্লাহ তাআলার বিধান। এমন পরিস্থিতিতে যারা আক্রান্ত, তারাই এর জটিলতা অনুধাবন করতে পারবেন।
মোটকথা, পরিবার আমাদের জীবনে এক স্বাভাবিক বাস্তবতা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আপদে-বিপদে পরিবারের কাছেই আমরা আশ্রয় খুঁজে পাই। শত কষ্টের উপশম খুঁজে পাই। পরিবারের সদস্যরা—জীবনসঙ্গী কিংবা সঙ্গিনী এবং সন্তানাদি যদি দ্বীনদার হয়, নেককার হয়, তাহলে সে পরিবার আলোকিত পরিবার। দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী আবাসস্থলটাও এক টুকরা বেহেশত মনে হতে পারে। পার্থিব কোনো কষ্টই সেখানে মুখ্য নয়। কিন্তু যদি উল্টো হয়, তাহলে এর ফলও বিপরীতই হবে। এটাই স্বাভাবিকতা। পবিত্র কুরআনে তাই আমাদের এ চিরন্তন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে—আমরা যেন নিজেরাও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করি, আমাদের পরিবার-পরিজনকেও যেন বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি। পড়ুন—
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قُوْۤا اَنْفُسَكُمْ وَ اَهْلِيْكُمْ نَارًا وَّ قُوْدُهَا النَّاسُ وَ الْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلٰٓىِٕكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُوْنَ اللهَ مَاۤ اَمَرَهُمْ وَ يَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ.
হে ঈমানদারেরা! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত থাকবে কঠোরহৃদয় ফেরেশতারা, তারা আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করে না এবং তিনি তাদের যা আদেশ করেন, তারা তা-ই করে। -সূরা তাহরীম (৬৬) : ৬
আলোকিত পরিবার গড়ার জন্য এর বিকল্প নেই।