সাহরী খাওয়ার ভিত্তিহীন ফযীলত
‘বারো চান্দের ফযীলত’ শিরোনামের আরেকটি পুস্তিকায় সাহরী খাওয়ার ফযীলত বিষয়ে লেখা হয়েছে-
‘সেহেরীর আহারের প্রতি লোকমার পরিবর্তে আল্লাহ তাআলা এক বছরের ইবাদতের সওয়াব দান করবেন।’
‘যে সেহেরী খেয়ে রোযা রাখবে, সে ইহুদীদের সংখ্যানুপাতে সওয়াব লাভ করবে।’
‘তোমাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি সেহেরী খাওয়া হতে বিরত থাকবে, তার স্বভাব-চরিত্র ইহুদীদের ন্যায় হয়ে যাবে।’
এ বর্ণনাগুলোও উপরোক্ত বর্ণনার মতো জাল ও ভিত্তিহীন। নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে তা পাওয়া যায় না।
সাহরীর ফযীলত বিষয়ে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
تَسَحّرُوا فَإِنّ فِي السّحُورِ بَرَكَةً.
তোমরা সাহরী কর। কেননা সাহরীর খাবারে বরকত রয়েছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৫
আরেক হাদীসে এসেছে-
সাহরী খাওয়াতে বরকত রয়েছে। অতএব তোমরা তা ছেড়ো না; এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী গ্রহণ কর। কেননা যারা সাহরী খায়, আল্লাহ তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ তাদের জন্য রহমতের দুআ করতে থাকে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১১০৮৬
আর উপরে ইহুদীদের সাথে যুক্ত করে সাহরীর ভিত্তিহীন ফযীলতের যে দুটি বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে- এ ব্যাপারে কথা হল, সহীহ হাদীসেই এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ، أَكْلَةُ السّحَرِ.
আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবের (ইহুদী-নাসারার) রোযার মাঝে পার্থক্য হল সাহরী খাওয়া। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৬
অর্থাৎ আমরা সাহরী খায়, তারা খায় না।
ইহুদীদের রোযার সাথে আমাদের রোযার এটি একটি বড় পার্থক্য; কিন্তু ‘সাহরী খেলে ইহুদীদের সংখ্যানুপাতে সওয়াব লাভ হবে’ বা ‘না খেলে স্বভাব-চরিত্র ইহুদীদের ন্যায় হয়ে যাবে’- এমন কথার কোনো ভিত্তি নেই।
রমযানের ২৭-এর রাতে ইবাদতের ভিত্তিহীন ফযীলত
‘মকছুদোল মোমিনীন’ শিরোনামের একটি পুস্তিকায় রমযানের ২৭-এর রাতের ইবাদতের ফযীলত বিষয়ে লেখা হয়েছে-
‘যে ব্যক্তি রমযানের ২৭শে তারিখের রাত্রিতে জাগিয়া এবাদত-বন্দেগী করিবে, আল্লাহ তাআলা তাহার আমলনামায় এক হাজার বৎসরের এবাদতের সওয়াব লিখিয়া দিবেন। আর বেহেশতে তাহার জন্য অসংখ্য ঘর নির্মাণ করাইবেন।’
আর ‘বারো চান্দের ফযীলত’ শিরোনামের একটি পুস্তিকায় লেখা হয়েছে-
‘যে ব্যক্তি রমযান মাসের ২৭ তারিখের রজনীকে জীবিত রাখবে, তার আমলনামায় আল্লাহ ২৭ হাজার বছরের ইবাদতের তুল্য সওয়াব প্রদান করিবেন এবং বেহেশতের মধ্যে অসংখ্য মনোরম বালাখানা নির্মাণ করিবেন, যার সংখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেহই অবগত নন।’
এখানে প্রথম কথা হল ‘২৭-এর রাত্রি’ বলতে এসব পুস্তিকায় ‘শবে কদর’ই উদ্দেশ্য করা হয়েছে। ফলে এর বিশাল বিশাল ফযীলতের কথা বলা হয়েছে। অথচ ২৭-এর রাত্রিকে নির্দিষ্ট করে শবে কদর ভাবা যে উচিত নয়- তা পাঠক মাত্রই জানেন।
দ্বিতীয়ত শবে কদরের ফযীলত কুরআন কারীম ও বিভিন্ন সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এ বর্ণনা জালকারীরা কুরআনের হাজার মাসের সাথে মিল রেখে বলে দিয়েছে- ‘হাজার বছর’ ইবাদতের সওয়াব। আবার দ্বিতীয় বর্ণনায় হাজার ঠিক রেখেছে, কিন্তু ২৭-এর সাথে মিল করে বলে দিয়েছে- ‘২৭ হাজার বছরের ইবাদতের তুল্য সওয়াব!’
এসব থেকেই বোঝা যায়, এসকল বর্ণনা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এমনকি এসকল পুস্তিকার অনেক বর্ণনা পুস্তিকাওয়ালাদেরই বানানো বলে অনুমান হয়; কারণ সেগুলো জাল হাদীস বিষয়ক কিতাবাদিতেও খুঁজে পাওয়া যায় না।
সুতরাং এসকল পুস্তিকার ভিত্তিহীন বর্ণনা থেকে নিজেরা সতর্ক থাকব এবং অন্যদের সতর্ক করব।