Shaban 1445   ||   February 2024

পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল ॥
দুনিয়ার তাবৎ জালেম শাসকদের কী বার্তা দিয়ে যায়!

Mufti Abul Hasan Muhammad Abdullah

গত ১০ জানুয়ারি ২০২৪, বুধবার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত একটি সংবাদ পাঠক-শ্রোতাদের মনে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সেটি হচ্ছে, পাকিস্তানের প্রয়াত একনায়ক রাষ্ট্রপতি পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল। সেদেশের সুপ্রিম কোর্টের একটি লার্জ বেঞ্চ তাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছে। স্বাভাবিক কারণেই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, মোশাররফের মৃত্যু হয়ে গেছে প্রায় এক বছর হতে চলল, এখন তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অর্থ কী?

আজকে আমরা এ বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করার চেষ্টা করব। সেইসাথে এ মৃত্যুদণ্ডাদেশের তাৎপর্য ও এক্ষেত্রে দেশে দেশে ক্ষমতাসীন একনায়কদের ওপর এর প্রভাব কী হতে পারেসেদিকে নজর  দেওয়ার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ।

১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর জেনারেল পারভেজ মোশাররফ পাকিস্তানের নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তিনি ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলেন প্রায় এক দশক। এসময়ের মধ্যে হেন কোনো রাষ্ট্র বিধ্বংসী কাজ নেই, তিনি করেননি। রাষ্ট্রের কাঠামোই ভেঙে দিয়েছিলেন। বিচারকদের অপসারণ ও বন্দি করেছিলেন, তার অনুসারী কিছু লোককে নতুন করে শপথ পড়িয়ে বিচারক বানিয়ে আদালতপাড়া চালিয়েছিলেন। পেশাদার আর্মি সমাজকে ক্ষমতালিপ্সু ও অর্থের গোলাম বানিয়েছিলেন। নিজ দেশের মাটিকে পশ্চিমাদের হাতে ইজারা দিয়ে দিয়েছিলেন। নিজ দেশের নাগরিকদের ধরে ধরে উঠিয়ে দিয়েছিলেন আমেরিকানদের হাতে, বিনিময়ে নিয়েছিলেন কাড়ি কাড়ি ডলার এবং পাকাপোক্ত করেছিলেন নিজের ক্ষমতা।

ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের সাথে তার দুশমনী ছিল শুরু থেকেই। অসংখ্য দ্বীনদার লোককে হত্যা করেছেন। লাল মসজিদ হত্যাকাণ্ডের সেই ইতিহাস তো কখনো মুছে যাবে না, সেখানে অগণিত নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের হত্যা করেছিল মোশাররফের বাহিনী। সেই পারভেজ মোশাররফ!

তার মৃত্যু ঘটেছে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। পরের মাসে তাকে নিয়ে মাসিক আলকাউসার এপ্রিল ২০২৩সংখ্যায়  একটি নিবন্ধও প্রকাশিত হয়েছিল। শিরোনাম ছিলপারভেজ মোশাররফের করুণ মৃত্যু : তাবৎ ক্ষমতাসীনদের শিক্ষার উপকরণএরও আগে আগস্ট ২০০৮ সালে তিনি যখন ক্ষমতাচ্যুত হন তখন মাসিক আলকাউসার সেপ্টেম্বর ২০০৮সংখ্যার ফিলহাল পাতায় উম্মাহ : বিদায় মোশাররফ! লাল মসজিদের লাল সালামশিরোনামে মন্তব্য কলাম প্রকাশিত হয়েছিল। উভয় লেখাতেই প্রাসঙ্গিক কিছু কথা আরজ করা হয়েছিল। আজকে যে বিষয়ের দিকে আলোকপাত করতে চাই তা হচ্ছে, মোশাররফ তথা প্রয়াত একজন ক্ষমতাসীনের মৃত্যু-পরবর্তী মৃত্যুদণ্ডের তাৎপর্য কী হতে পারে!?

পাঠকদের হয়তো মনে থাকবে, পাকিস্তানের পেশাওয়ার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জাস্টিস আওকার সেইফের নেতৃত্বে গঠিত একটি বিশেষ আদালত মোশাররফকে গাদ্দারির অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।

তখন পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় ইমরান খানের সরকার। আর ইমরান খানের মন্ত্রীসভায় ছিলেন মোশাররফের অনুগত তারই মন্ত্রীসভার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য। এছাড়া তখনকার আর্মিতেও মোশাররফের কয়েকজন বিশেষ শাগরিদ রয়ে গিয়েছিল। তারা সেই রায়ে প্রায় একসাথে চিৎকার করে ওঠেএত বছর ক্ষমতায় থাকা কোনো ব্যক্তি গাদ্দার হতে পারে না, রাষ্ট্রকে যে এত বছর শাসন করেছে, সেবা করেছে, সে কীভাবে গাদ্দার হবে!

পরে তারা লাহোরে নিজেদের অনুগত কোর্টের মাধ্যমে টেকনিক্যাল কারণ দেখিয়ে একটি রায়ও আদায় করে নেয়। তাতে বলা হয় যে, বিশেষ আদালত  গঠন সঠিক ছিল না। তখন সেখানকার আইনজীবীরা বলেছিলেন, লাহোরের ওই আদালতের বিশেষ কোর্টের রায় বাতিল করার কোনো অধিকারই নেই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তখনো কিছু বলেনি।

পরবর্তীতে মোশাররফ সুপ্রিম কোর্টে পেশাওয়ার হাইকোর্টের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন। তখনকার সুপ্রিম কোর্ট এ মামলাকে আর অগ্রসর করেনি। গত বছরের শেষের দিকে (সেপ্টেম্বর ২০২৩) জাস্টিস কাজী ফায়েয ঈসা যখন প্রধান বিচারপতি হন তখন মোশাররফের সেই আপিলের মোকাদ্দমাটি তিনি শুনানির জন্য ধার্য করেন। এতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। মোশাররফ তো মারাই গিয়েছেন, ইহজগতে আর নেই। তার মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের অর্থ কী?

জাস্টিস ফায়েয ঈসা ও তার বেঞ্চের অন্যান্য বিচারপতিগণ অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে মামলাটিকে অগ্রসর করেন। তারা বলেন যে, একজন রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তি, যার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে, তিনি আপিল করেছেন, তা কেন শুনানি হয়নি? এখন শুনানি হলে এতটুকু তো লাভ হবে যে, সেই আপিল যদি মঞ্জুর হয়ে যায়, তাহলে তার পরিবার লাঞ্ছনার এই গ্লানি থেকে মুক্তি পাবে। আর যদি আপিল খারিজ হয়ে যায়, তাহলে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও আর্মিপ্রধান হওয়ার কারণে তার পরিবার এখন যে রাষ্ট্রীয় পারিতোষিক এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে তা আর পাবে না।

এভাবে তার পরিবারের লোকদেরকে নোটিশ পাঠিয়ে বড় বড় উকিলদেরকে আদালতের সহায়ক বানিয়ে এ মামলার শুনানি অগ্রসর হয়। অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট আপিল খারিজ করে মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখে।

সাধারণ দৃষ্টিতে তো এতটুকু হল যে, এতে রাষ্ট্রের হয়তো অনেকগুলো টাকা বেঁচে যাবে, মাসে মাসে তার পরিবার যে পারিতোষিক সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি পেত, তা বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত  কোনো আসামী বা তার পরিবার রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পায় না।

কিন্তু আমরা ইঙ্গিত করতে চাই অন্য বিষয়ের দিকেতা হচ্ছে, এ রায়ের সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য! সেই তাৎপর্যের দিক বিবেচনা করেই হয়তোবা এ সংবাদ বিশ্ব গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। এদেশের গণমাধ্যমগুলোও এ খবর বড় করে প্রচার করেছে।

এই ব্যাপক প্রচারণার আসল তাৎপর্য কী? আসল তাৎপর্যটা হচ্ছে, মোশাররফের করুণ মৃত্যু যেমন একটা শিক্ষা ও ইবরত ছিল, তার চেয়েও বড় শিক্ষা ও ইবরত হচ্ছে, তার মৃত্যু-পরবর্তী মৃত্যুদণ্ডাদেশ।

মোশাররফ তো চলে গেছেন। দুনিয়াতে যতটুকু লাঞ্ছনা ভোগ করে গেছেন এবং অসম্মান দেখে গেছেন, এর চেয়ে বড় কিছু তো নিশ্চয়ই তার জন্য অপেক্ষা করছিলএখন হয়তো তিনি তা দেখতেও পাচ্ছেন। সেখানে তো আর রাখঢাকের কিছু নেই। রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রেখে দেশ ও জনগণের যা ক্ষতি করেছেন প্রত্যেকটার পাই পাই হিসাব তো আল্লাহর দরবারে দিতে হচ্ছেই; মুসলমান হিসেবে এতে তো কারো কোনো সন্দেহ নেই, সে শাস্তি তো অবধারিতই। আর দুনিয়ার বিচারে হয়তো অনেকে উৎসাহিত হয়েছে যে, এত বছর ক্ষমতায় থেকেও অবশেষে মৃত্যুদণ্ডের আসামী হতে হল।

এদেশে জেনারেল এরশাদও এমন জোরপূর্বক নয় বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। এরপর মৃত্যু পর্যন্তই কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করে গেছেন। মন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করে গেছেন। তার কাঁধেও কিন্তু ফাঁসির মামলা ঝুলছিল। আর একই কায়দায় এরশাদের ছোটভাই জিএম কাদেরও এখন বিরোধী দলীয় নেতা হয়ে মন্ত্রী পদমর্যাদার জন্য দৌড়ঝাঁপ দিয়ে যাচ্ছেন।

এভাবে দেশে দেশে বিভিন্নজন বিভিন্ন ছলচাতুরি ও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ক্ষমতা ভোগ করে গেছে ও যাচ্ছে। যাদের কেউ ক্ষমতায় থেকে যায়, আঁকড়ে থাকে এবং রাষ্ট্রের সবকিছুকে তাবেদার করে রাখার প্রয়াস চালায়। এ প্রবণতা এখন বিভিন্ন দেশেই দেখা যাচ্ছে।

যদিও গণতন্ত্রওয়ালারা প্রচার করে বেড়ায়, গণমাধ্যম-সংবাদপত্র রাষ্ট্রের পঞ্চম স্তম্ভ। রাষ্ট্রের আদালত বা বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভএ বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। মানুষের জন্য ন্যায়-বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে? দেশে দেশে এখন দেখা যাচ্ছে, সবই আছে; বিচার বিভাগের সদস্য সংখ্যা বাড়ছে, দিন দিন সেগুলো আরো সচল হচ্ছে, বিচারপতিরা উৎসাহের সাথে রায় দিচ্ছেন। তেমনিভাবে গণমাধ্যম; আগে যা ছিল তা থেকে পরিমাণ ও পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ।

কিন্তু বাস্তবতা কী? দেশে দেশে এই আদালতপাড়া ও গণমাধ্যমএরা কি জনগণের পক্ষে কথা বলছে? বললে তা কত ভাগ? আর অন্যদিকে জনগণের রক্তচুষে খাওয়া জালিম শাসকদের পক্ষে কতটা বলছে। বিশ্ববাসী এটা খুব গভীরভাবে এবং পীড়াদায়ক অস্বস্তির সাথে দেখে যাচ্ছে। গণমাধ্যম বলি, বিচারব্যবস্থা বলি কিংবা অন্যান্য রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র বলা হোক কিংবা জনগণের মুহাফিজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীপৃথিবীর অনেক দেশে এখন এ সবকিছুই জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। কায়েমি স্বার্থবাদী ক্ষমতাসীনদের অনুকূলেই তারা কাজ করে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ক্ষমতাসীনরা যতটুকু না তাদের তাবেদারি চায়, তার চেয়ে বেশি তাবেদার হয়ে ওঠে উচ্চ আদালতের এসব বিচারকগণ ও বড় বড় সংবাদমাধ্যম। অতি উৎসাহী হয়ে তারা বিভিন্ন রায় দিতে থাকে, পক্ষপাতী কলাম ও মন্তব্য লিখতে থাকে।

এধরনের লোকদেরকে বিভিন্ন জায়গায় বসিয়ে এখন ক্ষমতাসীনরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তারা ভাবে, আমরা স্থায়ী ক্ষমতায় বসেছি। একসময় যখন আমাদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে যাবে তখনো দুনিয়ায় আমাদের গুণগান চলতে থাকবে। কারণ, সব জায়গায় তো আমাদের লোকই বসা। যেমন তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন শুধু তাদের গুণগান ও স্তুতিবাক্যের জন্যই রাষ্ট্রের শত হাজার কোটি টাকা ব্যয় করায়।

এভাবে নিজের এবং নিজ গোষ্ঠীর গুণগান গাইয়ে তাদেরকে রাষ্ট্রের ত্রাণকর্তা বানানোর জন্য তারা রাষ্ট্রকাঠামোটাকেই ধ্বংস করে। এভাবে অসংখ্য তাবেদার তৈরি করে। লুটপাট করে রাষ্ট্রের হাজার লক্ষ কোটি টাকা। এসবের আসল বিচার তো আখেরাতে হবে; কিন্তু দুনিয়াতে কি তাদের শেষ রক্ষা হয়! না, আসলে হয় না। এতসব আয়োজন কি তাদেরকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা করে? না, করে না। এমনকি মৃত্যুর পরও অসম্মান তাদের পেছনে দৌড়াতে থাকে। তাদের তাবেদার-অনুচররা সময়ের সাথে সাথে বিলীন হতে থাকে। কেউ আবার নিজ নিজ মতলবে মুখের বুলিও পাল্টে ফেলে।

এই জালেম গোষ্ঠী শুধু ইতিহাসের আস্তাকুঁড়েই নিক্ষিপ্ত হয় না; বরং অসম্মান ও লাঞ্ছনা তাদেরকে তাড়া করতে থাকে। কুরআন কারীমে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন জায়গায় অপরাধীদের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন

ذٰلِكَ لَهُمۡ خِزۡيٌ فِي ٱلدُّنۡيَا وَلَهُمۡ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ.

[এটা তো তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা। আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। সূরা মায়িদা (০৫) : ৩৩ ]

বড় অপরাধীদের ক্ষেত্রে এখানে দুটো শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আখেরাতের কঠিন শাস্তি তো তাদের জন্য আছেই; কিন্তু দুনিয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে, خِزۡيٌ তথা লাঞ্ছনা। লাঞ্ছনা এদেরকে আমৃত্যু তাড়া করে। অনেকের নির্ধারিত সময় এসে যায়, মৃত্যুও হয়ে যায়। কিন্তু মৃত্যুর পরও তাদেরকে লাঞ্ছনা তাড়া করে।

আজকের তথাকথিত গণতান্ত্রিক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তারা মানুষকে মানবাধিকারের কথা বলে, নাগরিক অধিকার, বাকস্বাধীনতার বুলি আওড়ায়। কিন্তু দেশে দেশে আমরা দেখি, জবরদস্তি ক্ষমতায় থাকা হচ্ছে, অথচ বলা হচ্ছে, তারা জনপ্রতিনিধি। জনগণের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই, জনগণ তাদেরকে ক্ষমতায় বসায়ও না। নিজেরা বসে গিয়ে জনপ্রতিনিধি হয়ে যায়!

তেমনিভাবে বলা হয় বাকস্বাধীনতা! বাস্তবে তেমন কিছুই থাকে না। তাদের বিরুদ্ধে কেউ দুটো কথা বললেই তারা বলে ওঠেমানহানি হয়েছে’, ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা হয়েছে’, ‘ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছেএরকম আরো অনেক পরিভাষা এখন তারা তৈরি করে নিয়েছে; যা বলে তারা তাদের তাবেদার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং তথাকথিত বিচারবিভাগকে দিয়ে নিজ নাগরিকদের ওপর অত্যাচার চালাতে থাকে।

সেই ক্ষমতাবান শাসক এবং তাদের গোষ্ঠীরাই দিনশেষে কুরআনে বর্ণিত خِزۡيٌ বা লাঞ্ছনার শিকার হতে থাকে।

এ থেকে বেঁচে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। কুরআনে বর্ণিত خِزۡيٌ এটা অবধারিত। এমনকি মৃত্যুর পরও দেখা যায়, তারা এবং তাদের অনুগত জালেমরা, তাদের পরিবার সেই লাঞ্ছনার মাঝেই থাকে।

পারভেজ মোশাররফের মৃত্যু-পরবর্তী মৃত্যুদণ্ডাদেশ সেই শিক্ষাই দিয়েছে দুনিয়াকে। ২০১৯ সনে হাইকোর্ট এবং বিশেষ আদালত যখন তার মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করে তখন একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠেছিল তার তাবেদার গোষ্ঠী, ইমরান খানের সরকারে থাকা তার আমলের বিভিন্ন সুবিধাভোগী মন্ত্রীরা এবং তার অনুচর কয়েকজন সেনা সদস্য।

কিন্তু এখন! এই মাত্র দুই-চার বছরের ব্যবধানে প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে গেছে। এখন তো তার পক্ষে বলার একটা লোকও থাকেনি। অথচ আগের সে লোকেরা তো এখনো বেঁচে আছে। কিন্তু গত ১০ জানুয়ারি ২০২৪, বুধবার যে রায় হয়ে গেল, তার বিরুদ্ধে একটা আওয়াজও ওঠেনি।

কেন? এখন তার তাবেদাররাই পালাতে ব্যস্ত, নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। তারা আপনি জানবাঁচানোর দৌড়ে আছে। এখন আর তাদের মোশাররফের পক্ষে বলার মতো সময় নেই। এটিই হচ্ছে দুনিয়ার শিক্ষা

হায়! যদি জালেম শাসকরা, যদি একনায়করা, যদি জবরদস্তি ক্ষমতায় বসা, ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা লোকেরা বুঝত!

 

advertisement