প্রশ্নোত্তর
আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম প্রশ্নোত্তর। এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]
প্রশ্ন ৯৫. সূরা ইয়াসীনে ৫২ নং আয়াতে مِنْ مَّرْقَدِنَا -এর পরে আমরা সাকতা করি। কুরআন শরীফে এখানে সাকতাও লেখা আছে, আবার ওয়াকফে লাযেম, ওয়াকফে মানযিল ইত্যাদিও লেখা আছে। আমরা তো সাকতা করি, অর্থাৎ থামি, কিন্তু নিঃশ্বাস ছাড়ি না। আর ওয়াকফে লাযেম করতে হলে নিঃশ্বাস ছেড়ে দিতে হবে। সুতরাং একটা করতে গেলে আরেকটা করা যাচ্ছে না।
আমার প্রশ্ন হল, এখানে উভয়টা লেখার কারণ কী এবং আমাদের সাকতা করা ঠিক আছে কি না?
উত্তর : আমরা যে কেরাত অনুযায়ী তিলাওয়াত করি, অর্থাৎ قراءة حفص عن عاصم رحمه الله (হাফসের সূত্রে আসেম)-এর কেরাত, সে অনুযায়ী এখানে সাকতাই হবে, অর্থাৎ যেভাবে আমরা তিলাওয়াত করি। তবে এখানে ওয়াকফেরও চিহ্ন দেওয়ার কারণ হল, অন্য কারো কারো কেরাত অনুযায়ী এখানে ওয়াকফ করা উত্তম। (আলমুকতাফা ফিল ওয়াকফি ওয়াল-ইবতিদা, আবু আমর আদদানী ১/১৭৪-১৭৫; সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীর, তাফসীরে মাযহারী; তাফসীরে রূহুল মাআনী)
প্রশ্ন ৯৬. হুজুর, হযরত থানভী রাহ.-এর ‘আহকামুল কুরআন’ কিতাবটি কি তাঁর নিজের রচিত? আমি কিতাবটি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
উত্তর : থানভী রাহ. ‘আহকামুল কুরআন’ কিতাব রচনার উদ্যোগ জীবনের শেষদিকে নিয়েছিলেন। তখন এ কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য চারজনকে দায়িত্ব দিলেন। মাওলানা যফর আহমদ উসমানী রাহ. (১৩৯৪ হি.), মাওলানা মুফতী শফী রাহ. (১৩৯৬ হি.), মাওলানা ইদরীস কান্ধলভী রাহ. (১৩৯৪ হি.) এবং মাওলানা জামীল আহমাদ থানভী রাহ. (১৪১৫ হি.)।
যফর আহমদ রাহ.-এর দায়িত্বে ছিল, সূরা ফাতিহা থেকে সূরা তাওবার শেষ পর্যন্ত। জামীল আহমাদ রাহ.-এর দায়িত্বে ছিল, সূরা ইউনুস থেকে সূরা ফুরকানের শেষ পর্যন্ত। মুফতী শফী রাহ.-এর দায়িত্বে ছিল সূরা শুআরা থেকে সূরা হুজুরাতের শেষ পর্যন্ত। আর ইদরীস কান্ধলভী রাহ.-এর দায়িত্বে ছিল সূরা কফ থেকে কুরআনের শেষ পর্যন্ত।
তাঁরা কিছু কিছু অংশ করে লিখতেন আর থানভী রাহ.-কে সেটা শোনাতেন। থানভী রাহ.-এর যেহেনেও আহকাম সংক্রান্ত কোনো ফাওয়ায়েদ এলে সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে ডেকে যথাস্থানে তা লিখতে বলতেন। কিতাবটিতে কেবল আহকামের আয়াতগুলো নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। এভাবে হযরত থানভী রাহ.-এর জীবদ্দশায় মুফতী শফী রাহ. ও ইদরীস কান্ধলভী রাহ. নিজেদের অংশ পুরো লিখতে পেরেছিলেন, তবে ইদরীস কান্ধলভী রাহ.-এর অংশের অল্প কিছু সূরার কাজ রয়ে গিয়েছিল। আর যফর আহমদ রাহ. সূরা ফাতিহা থেকে কেবল সূরা নিসার শেষ পর্যন্ত এবং জামীল আহমাদ থানভী রাহ. নিজের ভাগের কিছু অংশ লেখতে পেরেছিলেন।
থানভী রাহ.-এর ইন্তেকালের পরে জামীল আহমাদ রাহ. সূরা ইউনুস থেকে সূরা নাহল পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ করেন। তখনো পর্যন্ত সূরা মায়েদা থেকে সূরা তাওবা, সূরা বনী ইসরাঈল থেকে সূরা ফুরকান এবং ইদরীস কান্ধলভী রাহ.-এর অংশের কিছু সূরার কাজ বাকি রয়ে গিয়েছিল।
পরবর্তীতে মাওলানা আবদুশ শাকূর রাহ. সূরা মায়েদা থেকে সূরা তাওবা পর্যন্ত এবং ইদরীস কান্ধলভী রাহ.-এর অংশের বাকি সূরাগুলোর কাজ করেন। আর জামীল আহমাদ রাহ. তাঁর জীবনের শেষ কয়েক বছরে সূরা বনী ইসরাঈল থেকে সূরা ফুরকান পর্যন্ত অংশটির কাজ শেষ করেন। এভাবে ‘আহকামুল কুরআন’ কিতাবটির কাজ পরিপূর্ণ হয়।
১৪০৭ হিজরীতে ইদারাতুল কুরআন, করাচি থেকে যফর আহমাদ রাহ., মুফতী শফী রাহ. ও ইদরীস কান্ধলভী রাহ.-এর লিখিত অংশটুকু ৪ খণ্ডে ছাপা হয়েছিল। সেখানে আবদুশ শাকূর রাহ. ও জামীল আহমাদ থানভী রাহ.-এর অংশ ছিল না। ১৪১৯ হিজরীতে ইদারায়ে আশরাফুত তাহকীক ওয়াল বুহূছিল ইসলামিয়্যাহ, লাহোর থেকে জামীল আহমাদ রাহ.-এর কেবল সূরা ইউনুস থেকে সূরা নাহল পর্যন্ত অংশটুকু ৩ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল।
এর অনেক পরে ১৪৩৩ হিজরীতে সবার অংশ নিয়ে ইদারায়ে আশরাফুত তাহকীক থেকে একসঙ্গে পুরো ‘আহকামুল কুরআন’ কিতাবটি ১৮ খণ্ডে ছাপা হয়।
থানভী রাহ.-এর ‘আহকামুল কুরআন’ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য এবং কিতাবটির বৈশিষ্ট্য জানতে আহমাদ হুসাইন ইসমাঈল রচিত―
منهج تلاميذ حكيم الأمة الشيخ أشرف علي التهانوي في التفسير كتاب أحكام القرآن نموذجا.
কিতাবটি মুতালাআ করতে পারেন। এ কিতাবটি ‘দারুল ফাতহ লিদ-দিরাসাতি ওয়ান নাশর’ থেকে এক খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন ৯৭. উলূমূল কুরআনের দু-একটি কিতাবে ফাতহুল কাদীর নামে একটি কিতাবের হাওয়ালা পেয়েছি। এটি তো ইবনুল হুমাম রাহ.-এর ফিকহের ফাতহুল কদীর কিতাব হওয়ার কথা নয়। এটি কোন্ কিতাব?
উত্তর : ফাতহুল কদীর নামে একটি তাফসীরের কিতাব রয়েছে। পুরো নাম―
فتح القدير الجامع بين فنّي الرواية والدراية من علم التفسير.
মুসান্নিফ : মুহাম্মাদ ইবনে আলী আশশাওকানী রাহ. (১২৫০ হি.)। কিতাবটি বিভিন্ন মাকতাবা থেকেই প্রকাশিত হয়েছে।
কিতাবের নাম এবং ভূমিকা থেকে স্পষ্ট, শাওকানী রাহ. এ কিতাবে فن الرواية (রেওয়ায়েত) এবং فن الدراية (দিরায়াত) উভয়টার সম্মিলন ঘটাতে চেয়েছেন। তাফসীরের ক্ষেত্রে কিতাবটিতে অনেক ফাওয়ায়েদ রয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় শাওকানী রাহ.-এর বিচ্ছিন্ন মতও রয়েছে। এজন্য কিতাবটি মুতালাআ করার সময় সতর্ক থাকা জরুরি।