নবীর মর্যাদা, মর্যাদার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
পাঞ্জাবের গভর্ণর সালমান তাছীর নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত ছিল। আসিয়া নামক এক খ্রিস্টান মহিলার কারণে ঘটনার সূত্রপাত হলেও সেক্যুলার ও ইসলামবিদ্বেষী চক্রের অতি উৎসাহের কারণে সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে। অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দ্বারা দোষী প্রমাণিত হওয়ার পরও আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ চলতে থাকে। পাঞ্চাবের গভর্ণর সালমান তাছীর থেকে শুরু করে সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি আসিমা জাহাঙ্গীর পর্যন্ত পাকিস্তান এলিট শ্রেণীর রথি-মহারথিরা আদালতের রায়, এমনকি আইনের ধারা বাতিলের জন্য প্রকাশ্যে বক্তৃতা-বিবৃতি দিতে থাকেন। দেশের সম্মানিত আলেম-ওলামা এবং বিচক্ষণ সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীদের সকল পরামর্শ ও সতর্কবাণী তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিশেষে গত ৪ জানুয়ারি নিজ দেহরক্ষীর হাতে পাঞ্চাবের গভর্ণর সালমান তাছীর নিহত হওয়ার পর তাদের নর্তন-কুর্দন স্তিমিত হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রেযা গিলানী তৎক্ষণাৎ ঘোষণা দিয়েছেন, রিসালত-অবমাননা নিষিদ্ধ আইন বাতিল করা হবে না।
পাকিস্তানের এই ঘটনাকে আমাদের দেশের কিছু লেখক-সাংবাদিক ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে বিষোদগারের একটি উপলক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। একাধিক জাতীয় দৈনিকে প্রায় দুই হালি প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং যথারীতি একতরফা, বিভ্রান্তিকর ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা করা হয়েছে। দেশের সর্বাধিক নীতিবান ও শান্তিপ্রিয় নাগরিকশ্রেণীকে যে কোনো ছূঁতায় জঙ্গি-সন্ত্রাসী বলে অভিযুক্ত করার এবং দেশের সহজ-সরল মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য এই চিহ্নিত গোষ্ঠীটি যেন ছূঁতা খুঁজতে থাকে। সাম্প্রতিক ঘটনাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তাই প্রকৃত অবস্থা পাঠকবৃন্দের সামনে তুলে ধরার জন্য এই সামান্য আয়োজন। পাকিস্তানের আলেম-ওলামা ও ইসলামপ্রিয় লেখক-সাংবাদিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন কীভাবে করেছেন তার কিছু দৃষ্টান্ত পাঠক এখানে পাবেন ইনশাআল্লাহ। লেখাগুলি নেওয়া হয়েছে একটি উর্দু ওয়েবসাইট-`www.deeneislam.com’ থেকে। এরপর সেগুলির চুম্বক অংশের সরল অনুবাদ করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে সর্বাবস্থায় হেদায়েতের পথে থাকার তাওফীক দান করুন আমীন।-সম্পাদক
রিসালত-অবমাননার মূলে বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসা
হযরত মাওলানা সলীমুল্লাহ খান
নবীর মহাববত মুমিনের দ্বীন ও ঈমানের অংশ এবং তিনি ঈমানদারের জীবন ও কর্মের আদর্শ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহববত ও ভালবাসা কেবল আবেগের বিষয় নয়, দ্বীন ও ঈমানের বিষয়।
কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় এ কথা বলা হয়েছে। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) বলুন, তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন এবং ওই সম্পদ, যা তোমরা উপার্জন কর এবং ব্যবসা-বাণিজ্য যার ক্ষতির আশঙ্কা তোমরা কর এবং ঐ ঘর-বাড়ি, যাতে তোমরা বসবাস কর, যদি তোমাদের কাছে আল্লাহর চেয়ে, তাঁর রাসূলের চেয়ে এবং তাঁর রাস্তায় জিহাদের চেয়ে অধিক প্রিয় হয়ে থাকে তাহলে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা তাওবা : ২৪)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, (তরজমা) রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর আর যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক। আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। (সূরা হাশর : ৭)
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ সমর্পিত চিত্তে মেনে নেওয়াই ঈমানের আলামত।
ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) মুমিনদের উক্তি তো এই-যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে আহবান করা হয় তখন তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম এবং আনুগত্য করলাম। আর ওরাই তো সফলকাম। (সূরা নূর : ৫১)
হাদীস শরীফে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (তরজমা) তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা থেকে, পুত্র থেকে এবং সকল মানুষ থেকে অধিক প্রিয় না হই। (হযরত আনাস রা.-এর সূত্রে, বুখারী, কিতাবুল ঈমান, হাদীস : ১৫; মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, হাদীস : ১৭৭)
কুরআন ও হাদীসের এই সুস্পষ্ট নির্দেশনা সর্বযুগে মুমিনের চেতনাকে জাগ্রত রেখেছে। তারা আল্লাহর নবীকে প্রাণের চেয়েও অধিক ভালবেসেছেন এবং সমর্পিত চিত্তে তাঁর আনুগত্য করেছেন। অন্যদিকে ঈমানের দৌলত থেকে বঞ্চিত লোকেরাই আল্লাহর নবীকে ত্যাগ করেছে এবং বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তাঁর বিরোধিতা করেছে। তাই খোদাদ্রোহীদের রাসূল-অবমাননার ঘটনা নতুন নয়। আর তাদের পরিণতিও কারো অজানা নয়। স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগেও রিসালত-অবমাননার ঘটনা ঘটেছে এবং নবী-প্রেমিক সাহাবীগণ তার সমুচিত জবাব দিয়েছেন।
হাদীসের কিতাবে একজন অন্ধ সাহাবীর ঘটনা আছে। তার দাসী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে গোসতাখি করত। সাহাবী তাকে নিষেধ করতেন। একদিন সে যখন আবার গোসতাখি করল তো সাহাবী তাকে তরবারি দিয়ে শেষ করে দিলেন। ঘটনাটি শোনার পর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘দামুহা হাদরুন।’ অর্থাৎ এ হত্যার কোনো শাস্তি নেই।
ইহুদি-নেতা কাব ইবনে আশরাফ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে গোসতাখি করত এবং নিন্দা ও উপহাসমূলক কবিতা পাঠ করত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশে মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রা. তাকে খতম করেছেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৪০৩৭)
মদীনা মুনাওয়ারায় আবু ইফক নামক এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিন্দা করে কবিতা রচনা করেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশে সালিম ইবনে উমাইর রা. তাকে হত্যা করেছেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম ৪/২৮২)
ফতহে মক্কার সাধারণ ক্ষমার সময়ও ইবনে খাতালকে ক্ষমা করা হয়নি। সে আত্মরক্ষার জন্য কাবা ঘরের গিলাফ ধরে রেখেছিল। ঐ অবস্থায় তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশে হত্যা করা হয়। তার দুই দাসীকেও মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল, যারা ইবনে খাতাল রচিত কবিতা লোকদের আবৃত্তি করে শোনাত। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৪০৩৫; আলকামিল ইবনুল আছীর ২/১৬৯)
নবী-যুগের এইসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, তাওহীনে রিসালাত বা রাসূল-অবমাননা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি চরম অপরাধ, যার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। উম্মাহর চার ইমাম এ বিষয়ে একমত। আল্লামা শামী রাহ. বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কটুক্তিকারী ঈমান থেকে খারিজ ও হত্যার উপযুক্ত। চার ইমাম এ বিষয়ে একমত।’
ইসলামের বিজয়ের যুগে যখন মুসলমানদের আইন-আদালত অমুসলিমদের প্রভাব-প্রতিপত্তি থেকে মুক্ত ছিল তখন এ ধরনের অপরাধী মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হত। এমনকি ইতিহাসে আছে যে, নবম শতকের মাঝামাঝিতে আন্দালুসে এক খ্রিস্টানের নেতৃত্বে কিছু লোক দলবদ্ধভাবে রাসূলের অবমাননায় লিপ্ত হয়েছিল। মুসলিম বিচারকরা সে সময় বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি। এদের মৃত্যুদন্ড দেওয়ার কারণে স্পেন থেকে এই ফিতনা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। (দেখুন : তারীখে হিসপানিয়া ১/২০০)
খ্রিস্টজগতের সাথে মুসলিমজাহানের দ্বন্দ-সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। খ্রিস্টান পাদরীদের ইসলাম-বিদ্বেষ এবং মুসলিম-বিরোধী প্রোপাগান্ডা খোদ খ্রিস্টান ঐতিহাসিকরাও স্বীকার করেন।
জে জে সান্ডারস লিখেছেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আরবের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে খ্রিস্টানরা কখনো আগ্রহ ও সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখেনি। অথচ হযরত ঈসা (আ.)-এর নম্র ও নিষ্পাপ ব্যক্তিত্বই ছিল তাঁর আদর্শ। (ক্রুসেড আমলে) ইসলামের কারণে খ্রিস্টজগতের স্বার্থহানি এবং ক্রুসেডারদের অব্যাহত প্রোপাগান্ডার কারণে ইসলাম সম্পর্কে নিরপেক্ষ বিচার-বিবেচনার পরিবেশ ছিল না। ওই সময় থেকে আজ পর্যন্ত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে অন্যায়ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং ভিত্তিহীন কথাবার্তা প্রচার করা হয়েছে। সুদীর্ঘকাল যাবত এগুলোই হচ্ছে মুহাম্মাদ সম্পর্কে খ্রিস্টান জনসাধারণের বিশ্বাস। (আহদে উসতা কে ইসলাম কী তারীখ, ৩৪-৩৫)
ডব্লু মন্টগোমারি ওয়াট লেখেন, ‘মুশকিল এই যে, এই উগ্র সাম্প্রদায়িকতা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছি, যার শিকড় মধ্যযুগের যুদ্ধকালীন প্রোপাগান্ডার মাঝে প্রথিত। এখন তা প্রকাশ্যে স্বীকার করা উচিত। অষ্টম শতাব্দী থেকে ইউরোপের খ্রিস্টজগত ইসলামকে তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু ভাবতে থাকে। কারণ তাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আধিপত্যের জন্য ইসলামই ছিল একমাত্র চ্যালেঞ্জ। তারা প্রতিপক্ষের চরিত্রহননের মাধ্যমে তাদের ধর্ম-বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। বিংশ শতকের মাঝামাঝিতেও এর জের অবশিষ্ট রয়েছে। (ইসলাম কেয়া হ্যায় পৃ. ২০১)
এই বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসাই অমুসলিমদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবমাননার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। আর বিগত দুই তিন শতাব্দী যাবত ইউরোপ থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নামক যে বিষাক্ত মতবাদ প্রচার করা হয়েছে তা দিয়ে রিসালাত-অবমাননার মতো চরম অপরাধকেও বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। পাকিস্তান একটি মুসলিম-রাষ্ট্র হওয়ার সুবাদে যুক্তিসঙ্গতভাবেই এখানে রিসালাত-অবমাননার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। এই আইনের প্রতি পশ্চিমাদের বিষোদগার এবং তা বাতিলের জন্য সরকারের উপর চাপ অব্যাহত থাকলেও আলহামদুলিল্লাহ দেশের নাগরিকদের ভয়ে কোনো সরকার তা পরিবর্তনের দুঃসাহস করেনি।
[জুরমে তাওহীনে রিসালাত : চান্দ পাহলু’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে গৃহীত। অনুবাদ : আবু মুহাম্মাদ]
পশ্চিমাদের কপটতা
মাওলানা যাহেদ রাশেদী
মুসলমানদের সম্পর্কে পশ্চিমাদের সবচেয়ে বড় আপত্তি, মুসলমানরা খুব রাগী ও আবেগপ্রবণ। বিশেষত কুরআন মজীদ ও হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রশ্নে তারা খুবই সংবেদনশীল।
আমি বলি, পশ্চিমাদের কাছে যা আপত্তির বস্ত্ত, তা আমাদের কাছে গর্বের বিষয়। কারণ ক্রোধ একটি স্বভাবজাত প্রবণতা, মানুষের স্বভাবে রাগ-অনুরাগ এবং প্রীতি ও বিদ্বেষের যে প্রবণতাগুলো রয়েছে, তা আল্লাহ তাআলার দান এবং কোনোটিই অপ্রয়োজনীয় নয়। মানুষের কোনো অবস্থাতেই রাগান্বিত হওয়া উচিত নয়-এমন কথা মানবস্বভাবের সম্পূর্ণ বিরোধী। তবে অন্য সকল বিষয়ের মতো রাগ-অভিমান প্রকাশেরও নির্ধারিত ক্ষেত্র ও সীমারেখা আছে।
কেউ যদি দাবি করে যে, কোনো কিছুতেই তার রাগ উঠে না তাহলে সে একজন অসুস্থ মানুষ, তার আশু চিকিৎসা প্রয়োজন। একইভাবে কারো যদি সবকিছুতেই রাগ উঠে তাহলে তারও চিকিৎসার প্রয়োজন।
যার প্রতি আপনার ভালবাসা আছে, তার অসম্মান অবশ্যই আপনাকে ক্ষুব্ধ করবে। এটা প্রেম ও ভালবাসার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
তাই একজন মুসলমান সে যতই বে-আমল হোক কুরআনের অসম্মান বরদাশত করবে না, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবমাননা সহ্য করবে না। কুরআনের মর্যাদা রক্ষার জন্য, নবীর মর্যাদা রক্ষার জন্য একজন সাধারণ মুসলমানও জীবনের বাজি লাগাতে পারে। আজকের এই চরম অবক্ষয়ের যুগে এটিই আমাদের আসল পুঁজি। এটি নবীর প্রতি ভালবাসার প্রমাণ। দ্বীনের ভাষায় একেই বলে ঈমান।
পশ্চিমাদের আরেকটি অভিযোগ, দুনিয়ার সকল জাতি যখন খোদা, রাসূল ও ধর্মগ্রন্থের কথা ছেড়ে দিয়েছে তখনও মুসলমানরা সকল বিষয়ে আল্লাহর কথা বলে, রাসূলের কথা বলে।
তাদের এই অভিযোগও সত্য এবং এটাও আমাদের গর্বের বিষয়। আল্লাহর হাজার শোকর যে, আমাদের কাছে আল্লাহর কালাম ও আল্লাহর নবীর বাণী সুসংরক্ষিত আছে। শুধু তাই নয় আল্লাহর কালাম ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী আমাদের কাছে এতই সুসংহত যে, বুশ, ওবামা ও টনি ব্লেয়ারকেও যদি মুসলমানদের সাথে কথা বলতে হয় তাহলে কুরআনে কারীমের কোনো আয়াত কিংবা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো হাদীস মুখস্থ করে আসতে হয়।
আল্লাহর হাজার শোকর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে শুধু যে আমাদের হৃদয়ের বন্ধন তা-ই নয়; বরং আজও আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্ধৃত্তি কুরআন ও সুন্নাহ। এই আস্থা ও বিশ্বাসই পশ্চিমাদের মাথাব্যথার কারণ। তাই তা বিনষ্ট করার জন্য তারা মরণপন করেছে। দুইশ বছরেরও বেশি সময় যাবত তারা প্রাণান্ত চেষ্টা করেছে, কীভাবে মুসলমানের ঈমান ও আকীদা নষ্ট করা যায় এবং তাদের অন্তর থেকে এই আযমত ও মহববত দূর করা যায়। কিন্তু আলমহামদুলিল্লাহ, এখনও তারা সফল হতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত সফল হতে পারবেও না।
পশ্চিমা ও সেক্যুলার গোষ্ঠী আরো প্রচার করে যে, মুসলমানরা ভিন্নমত সহ্য করে না। এটা একটি মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। কারণ চৌদ্দশত বছর ধরে মুসলিম মনীষীরা ঈমান-আকীদা, কুরআনে কারীম ও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে অমুসলিমদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। আজ পর্যন্ত কোনো মুসলমান কোনো অমুসলিমকে এই প্রশ্ন করেনি যে, সে কেন ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করছে? অতীতেও তাদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে। এখনও দেওয়া হচ্ছে। আর বিগত প্রায় তিনশ বছর যাবত বিশেষভাবে ইসলামী আইন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন ও কর্ম নিয়ে পশ্চিমের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই অধ্যয়ন ও গবেষণা হচ্ছে। অমুসলিমদের মতামত সামনে আসছে। মুসলিম গবেষকরাও যুক্তি-প্রমাণ দ্বারা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরছেন। গ্রন্থের জবাবে গ্রন্থ এবং উদ্ধৃতির জবাবে উদ্ধৃতি সামনে আসছে। সুতরাং ভিন্নমত সহ্য করা হয় না-এ কথা অবাস্তব। ভিন্নমত নয়, মুসলমানরা যা সহ্য করেন না তা হচ্ছে অবমাননা। এটা অতীতেও সহ্য করা হয়নি, ভবিষ্যতেও করা হবে না।
এটা পশ্চিমাদের কপটতা যে, ভিন্ন মতের নামে তারা বিদ্বেষ চরিতার্থ করতে চায়, কোনো আত্মমর্যাদাশীল জাতি যা সহ্য করতে পারে না। ভিন্নমত ও অবমাননা এককথা নয়। তাই এর জবাবও একরকম হয় না। দেখুন, লাহোর থেকে আর্য পন্ডিত দয়ানন্দ স্বরস্বতীর বই প্রকাশিত হয়েছিল, যাতে কুরআনে কারীম সম্পর্কে অসংখ্য প্রশ্ন করা হয়। মাওলানা মুহাম্মাদ কাসেম নানুতুবী ও মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরী কিতাব লিখে তার জবাব দিয়েছিলেন। কিন্তু লাহোরেই জনৈক রাজপাল যখন রঙ্গীলা রাসূল লিখল তখন এর জবাবে কোনো কিতাব লেখা হয়নি। এর জবাব দিয়েছিলেন গাজী আলীমুদ্দীন শহীদ রাহ.।
কপটতার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হল রিসালত-অবমাননা নিষিদ্ধ আইন বাতিলের দাবি। আইনের ধারা ২৯৫-সি সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, এর অপপ্রয়োগ হচ্ছে। অতএব তা বাতিল কর। অথচ আইনের ধারা ৩০২ এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধের ক্ষেত্রেও তো মৃত্যুদন্ডের বিধান আছে। এক্ষেত্রে কি আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে? এইসব আইনে গোটা দেশে দায়েরকৃত মামলা-মোকদ্দমার অন্তত অর্ধেক কি হয়রানিমূলক নয়? তাহলে আইনের এইসব দফা পরিবর্তনের কথা কেন বলা হয় না?
আইনের অপপ্রয়োগ রোধে কোনো নীতিমালা যদি প্রণয়ন করতে হয় তাহলে সকল আইনের ক্ষেত্রেই তা হতে হবে। এ ধরনের নীতি বা পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাব। কিন্তু আইনের অন্য সব ধারা বাদ দিয়ে শুধু রাসূল-অবমাননার আইন সংশোধন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সেক্যুলার গোষ্ঠীর কপটতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
[‘তাহাফফুযে নামূসে রিসালাত’ এবং ইসলামী তাশাখখুছ কে তাহাফফুয কে লিয়ে মুশতারাকা জাদ্দো জাহদ কী জরুরত’ শীর্ষক দুটি নিবন্ধ থেকে গৃহীত। অনুবাদ : মুহাম্মাদ ত্বহা হোসাইন]
রাসূল-অবমাননার পরিণাম
আল্লামা ইহসান ইলাহী জহির
একজন মুমিনের কাছে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মান ও মর্যাদা দুনিয়ার যাবতীয় সম্পদ ও সম্পর্ক থেকে অধিক মূল্যবান হতে হবে। রাসূলের অবমাননা ও বিরুদ্ধাচরণের বিষয়ে কোনো ঈমানদার আপস করতে পারেন না। কারণ রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সম্পর্কে কুরআন মজীদ কঠিন ভাষা ব্যবহার করেছে। সূরা মুজাদালায় (আয়াত : ২২) আল্লাহ তাআলা বলেছেন, (তরজমা) ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা চরম লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ সিদ্ধান্ত করেছেন, অবশ্যই আমি বিজয়ী হব এবং আমার রাসূলগণও। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।
‘তুমি পাবে না আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী কোনো সম্প্রদায়কে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের ভালবাসে, যদিও এই বিরুদ্ধাচরণকারীরা হয় তাদের পিতা, পুত্র, ভাই কিংবা জ্ঞাতি-গোত্র। ওদের অন্তরে আল্লাহ ঈমানকে সুদৃঢ় করেছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর পক্ষ হতে ‘রূহ’ দ্বারা ...।’
সূরাতুল কাউসারের শেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, (তরজমা) ‘নিঃসন্দেহে তোমার শত্রুই হবে নির্বংশ।’
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণকারীদের অবস্থা এবং এদের বিষয়ে মুমিন-মুসলমানের অবস্থান বোঝার জন্য এ দুটি আয়াতই যথেষ্ট।
রিসালাত-অবমাননার শাস্তি সম্পর্কে সবার আগে যে কথাটি স্পষ্টভাবে বলতে চাই তা এই যে, এটি কোনো ইজতিহাদী মাসআলা নয়; বরং কুরআন-সুন্নাহর দ্বারা সুপ্রমাণিত ও সুস্পষ্ট একটি বিষয়।
কুরআন মজীদের একাধিক আয়াত থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে বেয়াদবির শাস্তি দুনিয়াতে মৃত্যুদন্ড। আর আখেরাতে জাহান্নামের আযাব।
এ প্রসঙ্গে সূরা ফুরকানের কয়েকটি আয়াত তুলে ধরছি।
আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) এবং যালিম সেদিন নিজের দুই হাতে দংশন করবে এবং বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে একই পথ অবলম্বন করতাম!
হায় দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। সে তো আমাকে বিভ্রান্ত করেছিল আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। (সূরা ফুরকান : ২৭-২৯)
হাদীসের কিতাবে আছে যে, উবাই ইবনে খালাফের প্ররোচনায় উকবা ইবনে আবী মুয়াইত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে গোসতাখি করেছিল। তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সতর্ক করেছিলেন যে, মক্কার বাইরে তোমাকে পেলে তোমাকে হত্যা করব। বদরের যুদ্ধে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বন্দি অবস্থায় হত্যা করেছিলেন।
অন্য আয়াতে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টি করে তাদের শাস্তি ঘোষণা করে বলা হয়েছে, (তরজমা) যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে। অথবা বিপরীত দিক হতে তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হবে। অথবা দেশ হতে নির্বাসন দেওয়া হবে। এটা তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তো তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। (সূরা মায়েদা : ৩৩)
ওই ব্যক্তির চেয়ে অধিক অশান্তি সৃষ্টিকারী আর কে হতে পারে, যে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে গোসতাখি করে?
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, (তরজমা) তারা যদি চুক্তি সম্পন্ন করার পর নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বীনের নিন্দা করে তাহলে তোমরা কাফির-সর্দারদের সাথে যুদ্ধ কর। এরা এমন লোক, যাদের প্রতিশ্রুতির কোনো মূল্য নেই। যেন তারা নিবৃত্ত হয়। (সূরা তাওবা : ১২)
এই আয়াত স্পষ্ট ঘোষণা করে যে, দ্বীনের নিন্দা হত্যাযোগ্য অপরাধ। সুতরাং যে রাসূলের নিন্দা-সমালোচনা করে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। তার সাথে মুসলমানদের কোনো চুক্তি বা অঙ্গিকার থাকলে রাসূল-অবমাননার কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।
হাদীসের কিতাবে এমন অনেক ঘটনা আছে যে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিসালত-অবমাননাকারীকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেছেন। এ থেকেও প্রমাণ হয় যে, রিসালাত-অবমাননার দুনিয়াবী সাজা মৃত্যুদন্ড।
[এরপর লেখক ইহুদি কাব ইবনে আশরাফ ও আবু রাফের হত্যার ঘটনা, একজন অন্ধ সাহাবী কর্তৃক তার দাসীকে হত্যার ঘটনা এবং উমাইর ইবনে আদী কর্তৃক আসমা বিনতে মারওয়ানকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করেছেন।]
তাওবার দ্বারা কি রিসালাত-অবমাননার সাজা মওকুফ হতে পারে? এর উত্তর এই যে, খাঁটি তাওবা মানুষকে আখিরাতের আযাব থেকে মুক্তি দিবে। কিন্তু অন্যান্য অপরাধের মতো রাসূল-অবমাননার অপরাধ যখন আদালত পর্যন্ত গড়ায় কিংবা জনসাধারণের মাঝে প্রচারিত হয়ে যায় তখন তার শাস্তি মওকুফের অবকাশ নেই। সত্য বা মিথ্যা তাওবার দ্বারা যদি ব্যভিচার, মিথ্যা অপবাদ, চুরি, মদ্যপান ও হত্যার শাস্তি মওকুফ না হয় তাহলে এসবের চেয়েও গর্হিত ও মারাত্মক অপরাধ-রিসালাত-অবমাননার শাস্তি শুধু তাওবা দ্বারা কীভাবে মওকুফ হতে পারে?
[আনসার আববাসী-লিখিত ‘মাসআলায়ে তাওহীনে রিসালাত, কিস সে মুনসিফী চাহেঁ’, শীর্ষক নিবন্ধ থেকে গৃহীত। অনুবাদ : আবদুল হাকীম]
সরকারের কর্তব্য, কুরআন ও সুন্নাহর দন্ড কার্যকর করা
মাওলানা মুফতী আবদুর রউফ সাখখারাভী
প্রশ্ন : ১. শরীয়তের দৃষ্টিতে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদা সংরক্ষণের বিধান কী এবং তার সীমারেখা কী?
প্রশ্ন : ২. যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবমাননা করে তবে শরীয়তের দৃষ্টিতে তার শাস্তি কী?
উত্তর : ১ ও ২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদা সমুন্নত রাখা উম্মতের অপরিহার্য কর্তব্য। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য এটি দ্বীন ও শরীয়তের হুকুম। কারণ মুমিনের উপর নিজের জানের চেয়েও রাসূলের হক বেশি।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তাঁর পত্নীগণ তাদের মা। (সূরা আহযাব : ৬)
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি দুনিয়া ও আখিরাতে প্রত্যেক মুমিনের নিকট সকল মানুষের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। ইচ্ছে করলে তোমরা কুরআন মজীদের এ আয়াত পাঠ করতে পার। (অতপর তিনি পূর্বের আয়াতটি তেলাওয়াত করেন।)-সহীহ বুখারী ২/৭০৫
অর্থাৎ ঈমানদার নারী-পুরুষের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দয়া ও করুণা দুনিয়ার সকল মানুষের চেয়ে বেশি। অতএব তাঁর মহববত-ভালবাসাই মুমিনের অন্তরে সবচেয়ে বেশি হতে হবে।
এক হাদীসে বলা হয়েছে-তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, তার পুত্র এবং সকল মানুষের চেয়ে প্রিয় হব। অন্যদিকে যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে গোসতাখি করে দুনিয়াতে তাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন আযাবের ঘোষণা। এ থেকেও রিসালাতের মর্যাদা সমুন্নত রাখার গুরুত্ব বোঝা যায়। রাসূল-অবমাননার দুনিয়াবী সাজা সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করছি।
১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, একজন অন্ধ সাহাবীর একজন (ইহুদী) উম্মে ওয়ালাদ (যে দাসীর গর্ভে মনিবের সন্তান জন্মলাভ করে) ছিল। সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কটুক্তি করত। সাহাবী তাকে নিষেধ করতেন এবং তিরষ্কার করতেন, কিন্তু সে তা গ্রাহ্য করত না। এক রাতে যখন সে পূর্বের ন্যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কটুক্তি করল তখন ঐ অন্ধ সাহাবী একটি খঞ্জর দ্বারা তাকে হত্যা করলেন। সকালবেলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ ঘটনা জানানো হল। তিনি সকলকে সমবেত করলেন এবং বললেন, আমি আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, যে এ কাজ করেছে তার উপর আমার হক হল সে যেন দন্ডায়মান হয়। একথা শুনে সেই অন্ধ সাহাবী উঠে দাঁড়ালেন এবং কাঁপতে কাঁপতে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে গিয়ে বসলেন এবং আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমিই সেই দাসীর মনিব এবং আমিই তাকে হত্যা করেছি। সে আপনাকে গালমন্দ করত এবং আপনার সম্পর্কে কটুক্তি করত। আমি নিষেধ করতাম, কিন্তু সে শুনত না। আমার প্রতি তার আচরণ ছিল কোমল এবং সে ছিল আমার দুটি ফুটফুটে সন্তানের মা। কিন্তু আজ রাতে যখন সে আপনার সম্পর্কে কটুক্তি করল তখন আমি তার পেটে খঞ্জর বিদ্ধ করি এবং তাকে হত্যা করি। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সাক্ষী থেকো। এই নারীর রক্ত (হত্যার শাস্তি বা বদলা) বাতিল ঘোষিত হল। অর্থাৎ এর কারণে হত্যাকারীর কোনো শাস্তি হবে না। (আবু দাউদ ২/২৫১)
২. হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, এক ইহুদি মহিলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালমন্দ করত। এক ব্যক্তি তাকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারও রক্ত বাতিল সাব্যস্ত করেছেন। (আবু দাউদ ২/২৫২)
৩. ফতহে মক্কার সময় ইবনে খাতালের সাথে তার দুই দাসীকেও মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল। কারণ এরা দু’জন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে গোসতাখি করে কবিতা আবৃত্তি করত। এদের একজনের উপর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল, অন্যজন পালিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে সে ইসলাম গ্রহণ করে। (আবু দাউদ, টীকা : ২/৯; বুখারী, টীকা : ২/৬১৪)
৪. ফতহে মক্কার সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুয়াইরিস ইবনে নাকীদকেও হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেও রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দিত। হযরত আলী রা. তাকে হত্যা করেছিলেন। (বুখারী, টীকা : ২/৬১৪)
এসব ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কটুক্তিকারী ‘মুবাহুদ দম’ হয়ে যায়। অর্থাৎ সে তখন হত্যার উপযুক্ত। অতএব তার হত্যাকারী শরীয়তের বিধান কার্যকর করে বিধায় তার উপর কোনো দন্ড বা শাস্তি আসে না। তবে মনে রাখতে হবে যে, এই দন্ড কার্যকর করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার অপরাধীকে গ্রেফতার করবে এবং উক্ত দন্ড কার্যকর করবে। সাধারণ মানুষের জন্য আইন প্রয়োগের দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়। এটা শৃঙ্খলার পরিপন্থী। তবে কেউ যদি এই ধরনের বেয়াদবকে হত্যা করে ফেলে তবে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী তার উপর কিসাস বা জরিমানা আরোপিত হবে না।
প্রশ্ন : ৩. যদি শরীয়তের দন্ড কার্যকর করা সম্ভব না হয় তাহলে মুসলমানদের করণীয় কী এবং কীভাবে তারা আল্লাহর কাছে দায়মুক্ত হবেন?
উত্তর : সম্ভাব্য সকল উপায়ে এ অপকর্ম রোধ করার চেষ্টা করতে হবে। এই অপকর্মে লিপ্ত ব্যক্তিদেরকে প্রতিহত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলিমের অপরিহার্য কর্তব্য। যার পক্ষে তা সম্ভব নয় তার জন্য মৌখিক প্রতিবাদ করা ওয়াজিব। আর যার এতটুকু সামর্থ্যও নেই অর্থাৎ মৌখিক প্রতিবাদ করতে গেলেও জান-মালের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, তার জন্য অন্তর থেকে এসব অপকর্মকে ঘৃণা করা ওয়াজিব।
এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন কোনো গর্হিত কাজ হতে দেখে তখন সে যেন তা হাত দ্বারা বন্ধ করে। যদি হাত দ্বারা প্রতিহত করার ক্ষমতা না থাকে তাহলে মুখ দ্বারা (প্রতিহত করে)। যদি তা-ও না পারে তাহলে অন্তর দ্বারা (ঘৃণা করে)। আর এটি হল ঈমানের সবচেয়ে দুর্বল স্তর। (মুসলিম ১/৫১)
রিসালাত-অবমাননার প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ করা জায়েয। তবে তা শান্তিপূর্ণভাবে হতে হবে। কোনো হারাম বা নাজায়েয কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না। যেমন মানুষের জান-মালের ক্ষতিসাধন করা, অগ্নিসংযোগ করা, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা ইত্যাদি। কারণ এগুলো গুনাহর কাজ, যা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। এ থেকে বেঁচে থাকা সর্বাবস্থায় জরুরি।
[শায়খুল ইসলাম মাওলানা মুফতী তাকী উসমানী দা.বা. স্বাক্ষরিত দারুল উলূম করাচির একটি ফতোয়া থেকে গৃহীত। অনুবাদ : মুহাম্মাদ ইমদাদুল্লাহ]
পরিবর্তন নয়, আইনের প্রতি জনগণকে আস্থাশীল করুন
কারী হানীফ জালান্ধরি
রিসালাতের মর্যাদা দ্বীন-ধর্মের মূল ভিত্তি। শুধু ইসলামই নয়, সকল আসমানী ধর্মের গোটা সৌধ রাসূলের মর্যাদা ও নিষ্পাপত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। এ কারণে নবী-রাসূল সম্পর্কে, বিশেষত আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বিষোদগারকারীদের বিরুদ্ধে কুরআন মজীদ কঠিন ভাষা ব্যবহার করেছে। কুরআন হাকীমের অনেক আয়াতে রাসূল-অবমাননার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা বলা হয়েছে। সূরা আহযাবে (আয়াত : ৫৭) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দানকারীদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক আযাবের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সূরা তাওবাতে (আয়াত : ৬১-৬৩) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ও চির জাহান্নামি হওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সূরা কালামে এক গোসতাখে রাসূল ওলীদ ইবনে মুগীরা সম্পর্কে যে কঠিন বর্ণনা এসেছে তা থেকে বোঝা যায় আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীর মর্যাদার বিষয়ে কত কঠিন।
কুরআন হাকীমের এইসব পরিষ্কার ঘোষণার পরও কিছু লোক বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকে। অথচ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাহমাতুল্লিল আলামীন হওয়ার পরও বাস্তব দৃষ্টান্তের মাধ্যমে কুরআন মজীদের এইসব আয়াতের যে ব্যাখ্যা রেখে গেছেন এরপর তো বিভ্রান্তি ও অস্পষ্টতার কোনো অবকাশই থাকে না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদি কাব ইবনে আশরাফ ও আবু রাফেকে হত্যার আদেশ দিয়েছেন। বাইতুল্লাহর গিলাফ ধরে থাকা অবস্থায় ইবনে খাতালকে হত্যা করা হয়েছে। একজন অন্ধ সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে আছিমা নামক এক ইহুদি নারীকে রাসূলের অবমাননার কারণে হত্যার অভিযোগ স্বীকার করেছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ নারীর রক্তের দাবি বাতিল ঘোষণা করেন। হযরত উমাইর ইবনে আদী রা. একই কারণে একজনকে হত্যা করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা যদি এমন কাউকে দেখতে চাও যে আল্লাহ ও তার রাসূলের মদদ করেছে তাহলে উমাইর ইবনে আদীকে দেখ।
লক্ষণীয় বিষয় এই যে, কাব ইবনে আশরাফ থেকে শুরু করে ইহুদি নারী আছিমা পর্যন্ত কেউ মুরতাদ ছিল না। (কারণ এরা সবাই ছিল অমুসলিম।) এদেরকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে রাসূল-অবমাননার অপরাধে। কুরআন ও হাদীসের এই সব সুস্পষ্ট দলীলের কারণেই গোটা মুসলিম উম্মাহর সর্ববাদীসম্মত সিদ্ধান্ত, রাসূল অবমাননার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
বস্ত্তত রাসূলের সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টি অত্যন্ত নাযুক ও সংবেদনশীল। রাসূলের মর্যাদা যদি বাকি না থাকে তাহলে দ্বীন ধর্মের কোনো কিছুই বাকি থাকে না। আর এ কারণেই বিষয়টি ধর্মদ্রোহী শ্রেণীর সবসময়ের লক্ষ্যবস্ত্ত।
সম্প্রতি পাকিস্তানেও কিছু অপরিণামদর্শী লোক রাসূল-অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত একজন নারীর অসহায়ত্বের অজুহাত তুলে রিসালাত-অবমাননা নিষিদ্ধ আইন বাতিল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তবে এটিই এই আইনকে টার্গেট করার প্রথম দৃষ্টান্ত নয়। বরং শুরু থেকেই এই আইন সেক্যুলার গোষ্ঠির চোখের কাঁটা হয়ে আছে। অথচ এই আইনের আওতায় আজ পর্যন্ত কারো মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়নি।
এই আইন একটি বিরাট বিশৃঙ্খলার পথ বন্ধ রেখেছে। পাকিস্তানে এই আইন না থাকলে দুদিন পর পর গাজি আলীমুদ্দীন শহীদের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হত। এখন আইন আছে, আদালত আছে, কারো সম্পর্কে রাসূল-অবমাননার অভিযোগ উঠলে বিচার-বিভাগীয় তদন্ত ও অনুসন্ধানের পর ফয়সালা হয়, কে অপরাধী আর কে নিরাপরাধ। সুতরাং দায়িত্বশীলদের কর্তব্য, এই আইনের প্রতি জনগণকে আস্থাশীল করা। এই আইনের বিলুপ্তি বা পরিবর্তনের অর্থ হবে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো।
এটি একটি জটিল প্রশ্ন যে, পাকিস্তানে হিন্দু ও শিখসহ অন্যান্য ধর্মের নাগরিকরাও রয়েছেন, কিন্তু এই আইনের বিরুদ্ধে কিছু বিশেষ সম্প্রদায় যেমন, কাদিয়ানী, খ্রিস্টান ও তাদের সমমনা লোকদেরকেই বিষোদগারে লিপ্ত দেখা যায়। অতীতের রেকর্ড বলে, এই চিহ্নিত গোষ্ঠিটি সাম্রাজ্যবাদের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় এবং রাসূল-অবমাননার ক্ষেত্রে মিডিয়ায় প্রচার, বাইরের রাষ্ট্রের ভিসা, রাজনৈতিক আশ্রয় ও নানাবিধ সুযোগ-সুবিধার কারণে এ জাতীয় অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়ে থাকে।
[নামূসে রিসালাত কা মাসআলা’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে গৃহীত। অনুবাদ : আবু তাসনীম]
শুধু খ্রিস্টান ও কাদিয়ানিরাই কেন ‘উদ্বিগ্ন’
শোআইব ফেরদাউস
ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান’-এ শাআইরে ইসলাম ও নবীয়ে ইসলামের অবমাননা নতুন নয়। মাঝে মাঝেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, যা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে চরমভাবে আহত করে। জুলাই ’০৯-এর শেষ দিকের কথা। গোজরাতে কিছু খ্রিস্টান কুরআন মজীদের কয়েকটি পৃষ্ঠা ছিড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এর প্রতিবাদে যখন মুসলমানদের শান্তিপূর্ণ মিছিল হচ্ছিল তখন খ্রিস্টান এলাকা থেকে ওই মিছিলে গুলি চালিয়ে সমস্যাকে জটিল করে তোলা হয়। সে সময়ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু ধর্মীয় নেতার পক্ষ থেকে রিসালত-অবমাননা এক্ট বাতিল করার দাবি তোলা হয়েছিল। ক্যাথলিক আর্চ ডায়ুযেস করাচির আর্চবিশপ দাবি তুলেছিলেন যে, আইনের ধারা ২৯৫-সি অবিলম্বে বাতিল করা হোক।’
আইনের এই ধারাটির প্রতি সর্বাধিক ক্ষোভ দেশের দুই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কাদিয়ানি ও ঈসায়িদের। কাদিয়ানিরা এজন্য ক্ষুব্ধ যে, তাদের ধর্মের গোড়াতেই বেআদবি ও গোসতাখির প্রবণতা রয়েছে। কাদিয়ানি মতবাদের সূত্রপাতই হয়েছে ইসলামের শত্রুতা ও নবী-রাসূলের অবমাননার মধ্য দিয়ে।
আর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা ইসলামের সাথে তাদের পুরোনো ক্ষোভ ও শত্রুতা চরিতার্থ করাকে এবং ইসলাম ও পয়গাম্বরে ইসলামের অবমাননাকে নিজেদের বৈধ অধিকার বলে মনে করে। এরা সব সময় ইসলামী আইনের বিরোধিতা করে এসেছে। জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ১.৫৬ ভাগ হয়েও শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতির কোনো তোয়াক্কাই এরা কখনো করেনি।
পাকিস্তানে তো খ্রিস্টান ও কাদিয়ানি ছাড়াও হিন্দু, শিখ, পার্সি প্রভৃতি সম্প্রদায় বসবাস করে, কিন্তু এই আইন তাদেরকে স্পর্শ করে না কেন? একমাত্র খ্রিস্টান ও কাদিয়ানি সম্প্রদায়ই কেন এই আইনের কারণে উদ্বিগ্ন? জবাব খুবই সোজা। অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা সাধারণত এই অপরাধ করে না। খ্রিস্টান ও কাদিয়ানিরাও যদি রিসালাত-অবমাননা থেকে বিরত থাকে তাহলে এই আইন তাদের কোনো ক্ষতি করবে না।
দেশের এনজিও এবং তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতি আমাদের প্রশ্ন, ২০০৮ সালের পয়লা জুলাই জার্মানির প্রকাশ্য আদালতে মারওয়া শারবীনিকে যখন এক উগ্র যুবক ধারালো ছোড়ার উপুর্যপরি আঠারোটি আঘাতে হত্যা করল তখন আপনাদের মানবতা কোথায় ছিল? ২০১০-এর দোসরা আগস্ট করাচির এক রাজনৈতিক লিডারের হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ৮০ জন নিরীহ নাগরিককে হত্যা করা হল, তখন তো আপনারা প্রতিবাদ করেননি? সম্প্রতি আমেরিকার আদালতে ড. আফিয়া সিদ্দীকীকে ৮৬ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আপনারা তো টুঁ শব্দটিও করেননি? তবে এখন কেন ‘মানবতা গেল’, ‘মানবতা গেল’ বলে এত হৈ চৈ? প্রেসিডেন্ট জারদারির মনে রাখতে হবে, তিনি যদি আসিয়ার প্রাণভিক্ষার আবেদনে সাক্ষর করেন তাহলে নিজ হাতে ক্ষমতা ছাড়ার পরোয়ানাতেই সাক্ষর করবেন।
[কানূনে তাওহীনে রিসালাত আওর মুলকি আকাল্লিয়াতেঁ’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে গৃহীত। অনুবাদ : আবু মুহাম্মাদ]
ধর্মদ্রোহী গোষ্ঠী আস্তিনে লুকিয়ে থাকা সাপ
আম্মার ইয়াসির
সম্প্রতি ম্যাডাম আসিমা জাহাঙ্গিরকে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি নির্বাচন করা হয়েছে। ১৯৭২ সালে সুপ্রিমকোর্টে পিতার একটি মামলা লড়ে তিনি খ্যাতি পেয়েছিলেন। এরপর একটি কাদিয়ানী পরিবারে তার বিয়ে হয় এবং বিভিন্ন সময় তার ইসলাম বিরোধী তৎপরতা মিডিয়ায় আসতে থাকে। প্রথম দিকে তার বিষয় ছিল মানবাধিকার। এরপর তিনি খোলাখুলি জাতীয় চেতনা ও ভাবমূর্তি বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেন।
নববইয়ের দশকে ভারতীয় বাহিনী যখন জম্মু কাশ্মীরে পৈশাচিকতা চালাচ্ছিল আসিমা জাহাঙ্গির তখন ভারতীয় জওয়ানদের মিষ্টিমুখ করিয়েছিলেন। ২০০০-এর মার্চে ভারত সফরে গিয়ে তথাকথিত বন্ধুত্বের গীত গেয়েছেন এবং ভারতীয় যুবকদের সাথে অন্তরঙ্গ অনুষ্ঠান করেছেন। ভারতের এক চরিত্রহীন লেখক খুশবন্ত সিংকে হাতজোড় করে নমষ্কার করতে এবং তার সাথে আলিঙ্গনাবদ্ধ হতেও তাকে দেখা গেছে। নববইয়ের দশকেও তিনি একবার যথেষ্ট তৎপর হয়ে উঠেছিলেন। তখন ভারতীয় গুপ্তচর রূপলাল পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিল এবং তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল।
রূপলাল ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সদস্য। জম্মু-কাশ্মীরে শিয়ালকোট বর্ডারে তার দায়িত্ব ছিল। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে তার বিরুদ্ধে কোর্টমার্শাল হয়ে যায়। সে প্রাণভিক্ষার আবেদন করে এবং ভারতীয় গোয়েন্দাসংস্থা ‘র’-এর পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করে। বিশেষ প্রশিক্ষণের পর সে পাকিস্তানে প্রবেশ করে এবং গুজরাটে বাসা ভাড়া করে অবস্থান করতে থাকে। পায়জামা-পাঞ্জাবি ও সবুজ পাগড়ি ধারণ করে অল্প দিনেই সে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিল। অধিকাংশ সময় তাকে দওলত শাহর মাজারে দেখা যেত। মাঝে কিছুদিন লাপাত্তা ছিল। এর মধ্যে একদিন লাহোরের একটি মসজিদে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটাল। এতে পাকিস্তান আর্মির মেজর মুহাম্মাদ শফীক মৃত্যুবরণ করেন। পরে তদন্ত ও অনুসন্ধান শেষে আইএসআই রূপলালকে গ্রেফতার করে এবং আদালত তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে। আসিমা জাহাঙ্গীর সে সময় মানবাধিকারের প্রসঙ্গ তুলে তার মৃত্যুদন্ড রহিত করেছিলেন এবং রূপলালের মুক্তির পর ভারতে গিয়ে তার সাথে বিশেষ সাক্ষাত করেছিলেন।
২০০৭ সালে পাকিস্তানের এক মন্ত্রী মিস্টার আনসার বরনি ভারতের আরেক গুপ্তচরকে আদালতের দন্ড থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং ভারতে ফেরার ব্যবস্থা করেছিলেন। এক্ষেত্রেও আসিমা জাহাঙ্গীরের পূর্ণ সহযোগিতা ছিল। পারভেজ মোশাররফের শাসনামলে তিনি প্রচার পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি।
এই শ্রেণীর লোকেরা যেকোনো দেশের স্বার্থ ও ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত করে থাকে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমগুলোতে এরাই ইসলামবিরোধী প্রপাগান্ডা করে। দাড়ি-টুপিওয়ালা, নামায-রোযার পাবন্দ কোনো ব্যক্তি যদি শরীয়তের আইন বাস্তবায়নের কথা বলেন তাহলে আসিমা জাহাঙ্গীরের কাছে তিনি ‘সন্ত্রাসী’ হয়ে যান। সম্প্রতি আবার তাকে খুব তৎপর দেখা গেছে। তার এবারের তৎপরতার বিষয় রিসালাত-অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত আসিয়ার ক্ষমা ও মুক্তি।
আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আসিয়ার মৃত্যুদন্ডের রায় হওয়ামাত্র পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে গভর্ণর সালমান তাসীর ও সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি আসিমা জাহাঙ্গীর পর্যন্ত সকল মৌসুমি পাখি এক সাথে এক সুরে কলরব করতে শুরু করে দেয়।
অথচ আমেরিকার আদালত যখন ড. আফিয়ার ৮৬ বছরের কারাদন্ড ঘোষণা করল তখন তারা টুঁ শব্দটিও করেননি।
তারা কি কখনো ওই সাত হাজার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সম্পর্কে একটি বাক্যও খরচ করেছেন, বিগত ১৫ বছর যাবত কনডেম সেলে বন্দী থেকে যাদের চোখের জ্যোতি পর্যন্ত নষ্ট হতে চলেছে? এদের দিকে পাকিস্তানের আদালত ও সরকারের কোনো নজর আছে বলে মনে হয় না।
নিহত গভর্ণরের চরম হীনতা ও হীনম্মন্যতা যে, তিনি নিজে গিয়ে জেলখানায় ওই নারীর সাথে সাক্ষাত করেছেন এবং প্রাণভিক্ষার আবেদনপত্রে সাক্ষর করিয়েছেন। (কারণ বিষয়টি মানবতার নয়, মানবতার নামে স্বার্থহাসিলের) অথচ এখনো পর্যন্ত মোকদ্দমা হাইকোর্টে চলছে। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদন্ডের রায় এবং সুপ্রিমকোর্টে তা বহাল থাকার মেয়াদ সাধারণত হয়ে থাকে ১২ থেকে ১৫ বছর। এরপরে আসে প্রাণভিক্ষার প্রসঙ্গ। এই কঠিন প্রতীক্ষার প্রহর তো সকল পাকিস্তানি মুসলমান এবং তাদের অসহায় পিতামাতাকেও গুণতে হয়। তাহলে শুধু একজনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা কেন?
আসিমা জাহাঙ্গীর তো প্রথম থেকেই ২৯৫-সি ধারাটির বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই চলেছেন, এখন পিপিপির নেতৃত্বও ময়দানে নেমে পড়েছে।
মনে রাখা দরকার, রিসালাত অবমাননা একটি মারাত্মক অপরাধ। এর সমর্থক ও পক্ষপাতকারীদের আল্লাহর আযাব ও গযবের অপেক্ষা করা উচিত।
[মুহাম্মাদ কী গোলামি দ্বীনে হক কী শর্তে আওয়াল হ্যায়’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে গৃহীত। অনুবাদ : গোলাম এলাহী]
আসল উদ্দেশ্য ধারা ২৯৫-সি বাতিল করা
হামীদ মীর
পাঞ্জাবের গভর্ণর সালমান তাছীরের অবস্থান থেকে এই ধারণাই শক্তিশালী হচ্ছিল যে, আসিয়া বিবির নাম করে আইনের এমন একটি ধারাকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যার উপর সকল মত ও পথের মুসলমান ঐক্যবদ্ধ। পোপ বেনেডিক্টের পক্ষ থেকে আসিয়ার মুক্তির আহবান আসার পর পাকিস্তানের কয়েকজন আলিম আফিয়া সিদ্দীকির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। তাঁরা প্রশ্ন করেছেন যে, যারা এখন আসিয়া সম্পর্কে বলছেন তারা আফিয়ার বিষয়ে নিশ্চুপ ছিলেন কেন?
আসিয়ার প্রসঙ্গটিকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার পরিবর্তে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করা উচিত ছিল। এটা ঠিক যে, অতীতে কিছু মানুষ আইনের ২৯৫-সি ধারার অপপ্রয়োগ করেছে। কিন্তু তা শুধু খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে করা হয়নি। মুসলমানরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে করেছে। ৩০২ ধারায় যেমন অনেক নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে হত্যামামলা দায়ের করা হয়েছে তেমনি ২৯৫-সি ধারায় রাসূল-অবমাননার মিথ্যা মামলা দায়েরের দৃষ্টান্তও আছে। বিগত ২০ বছরে রাসূল অবমাননা ও কুরআন-অবমাননার অভিযোগে ৭০০ রও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার অর্ধেকেরও বেশি মামলা মুসলমানরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে দায়ের করেছে। সুতরাং এটা ঠিক নয় যে, ২৯৫-সি ধারাটি শুধু সংখ্যালঘুদের টার্গেট করার জন্য।
আইনের কোনো ত্রুটি নেই, তবে তার অপপ্রয়োগ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। রাসূল-অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ দায়েরকারীর জন্য বিদ্যমান আইনেও শাস্তির বিধান রয়েছে। ইতিপূর্বে তা প্রয়োগ করা হলে মিথ্যা-মামলার হার অনেক কমে যেত।
শাহবায ভাট্টি ও সালমান তাছীরের দৃষ্টিতে আসিয়া বিবি যদি সত্যিই নির্দোষ হয়ে থাকে তাহলে তাদের সামনে দুটি পথ খোলা ছিল : ১. একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে তারা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন। অতীতে রাসূল-অবমাননার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় হাইকোর্ট থেকে বেকসুর খালাস হওয়ার একাধিক দৃষ্টান্ত রয়েছে। ২. দেশের নেতৃস্থানীয় ও বিজ্ঞ আলেমদেরকে আস্থায় নিয়ে একটি সর্বদলীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা যেত। তাদেরকে এই ক্ষমতা দেওয়া হত যে, আসিয়া নির্দোষ প্রমাণ হলে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির নিকট থেকে তার শাস্তি মওকুফের আবেদন করা হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শাহবায ভাট্টি ও সালমান তাছীরের কার্যকলাপ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য আসিয়াকে মুক্ত করা নয়, আইনের ধারা ২৯৫-সি বাতিল করা।
[আসিয়া বিবি আওর কানূনে তাওহীনে রিসালাত’ শীর্ষক নিবন্ধ থেকে গৃহীত। অনুবাদ : হাবীবুর রহমান]
গভর্ণর সালমান তাছীরের মৃত্যু
মাওলানা মুহাম্মাদ আযহার
গভর্ণর সালমান তাছীর একজন বামপন্থী লিবারেল পলিটিশিয়ান ছিলেন। তিনি ভারতীয় শিখ রমনী তালভীন সিংকে বিয়েও করেছিলেন। রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত হলেও কিছু দিন আগ পর্যন্তও ধর্মীয় অঙ্গনে তার তেমন কোনো পরিচিতি ছিল না। সম্প্রতি আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত খৃষ্টান রমনী আসিয়ার সাথে জেলখানায় গিয়ে সাক্ষাত করার পর দ্বীনদার মহলেও তিনি সমালোচিত হয়ে ওঠেন।
আইন অনুযায়ী রিসালাত-অবমাননার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কিন্তু সালমান তাছীরের বক্তব্য ছিল, বিষয়টি ধর্মীয় নয়, মানবিক। অতএব আইন পরিবর্তন করা উচিত। তিনি একে ‘কালো আইন’ বলেও অভিহিত করেছিলেন। আলিমগণ বারবার তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, কিন্তু তিনি কারো কথা শুনতে প্রস্ত্তত ছিলেন না।
তাছীর-হত্যাকান্ড দ্বীনদার শ্রেণীর এই আশঙ্কাকেই সত্য প্রমাণ করেছে যে, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য উপরোক্ত আইনের বিকল্প নেই। এই আইনের বিলুপ্তি কিংবা তাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ সাধারণ মানুষকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ করবে, যা সব ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে না।
এজন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির সুবিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আইন ও আদালতের প্রতি জনগণের আস্থা অক্ষুণ্ণ রাখা অপরিহার্য।
সালমান তাছীরের হত্যাকান্ড এই বিষয়টিই প্রমাণ করেছে। রিসালাত-অবমাননার অভিযোগে দন্ডপ্রাপ্ত আছিয়া এখনো জেলখানায় জীবিত ও নিরাপদে আছে। সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত তার নিরাপত্তার দায় সরকারের। অথচ তার পক্ষাবলম্বনকারী গভর্ণরকে হাই এলার্ট সিকিউরিটির মধ্যেও প্রাণ হারাতে হয়েছে।
সাধারণত দেখা যায়, কারো মৃত্যুর পর সহানুভূতির আবহ সৃষ্টি হয়। কিন্তু সালমান তাছীরের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে যে, তার বেলায় এর বিপরীত ঘটেছে। জামাতে আহলে সুন্নত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আমীর প্রফেসর মাজহার সায়ীদ কাযেমী, আল্লামা সাইয়্যেদ রিয়ায হোসাইন, আল্লামা শাহ তুরাবুল হক কাদেরীসহ সংশ্লিষ্ট পাঁচ শরও অধিক আলিম ও মুফতী তাদের সম্মিলিত বক্তব্যে সর্বস্তরের মুসলিমকে আহবান জানিয়ে বলেছেন, ‘নিহত তাছীরের জানাযা পড়া ও পড়ানো থেকে এবং তার প্রতি কোনোরূপ সহানুভূতি বা দুঃখপ্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ যে গোসতাখে রাসূলের পক্ষাবলম্বন করে সেও গোসতাখ।’ জমিয়তে পাকিস্তানের নেতা ও তাহরীকে নামূছে রিসালাতের কনভেনার ড. আবুল খায়ের মুহাম্মাদ যুবায়ের বলেন, সালমান ‘তাছীরের মৃত্যুতে কেউ সহানুভূতি প্রকাশ করবে না। কারণ তার বক্তব্য জনগণের অনুভূতিকে চরমভাবে আহত করেছে।’
গালিব যেন তার কবিতায় এই মৃত্যুর চিত্রই অঙ্কন করেছেন-
ہوئے جو ہم مر كے رسوا، ہوئے كيوں نہ غرق دريا + نہ كہيں جنازہ اٹهتا نہ كہيں مزار ہوتا
এই লাঞ্ছনার মৃত্যুই যদি ছিল মোর ললাটে তবে কেন হল না সলীল সমাধি/না হত জানাযা, না হত মাযার।
সালমান তাছীর এমন এক বিষয়ে ভুল অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন, যা গোটা মুসলিম উম্মাহর নিকট অবিসংবাদিত। আফসোফ! এই ভুলের উপরই তার মৃত্যু হয়ে গেল!
তিনি যদি উলামায়ে কেরামের পরামর্শকে উড়িয়ে না দিতেন এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতেন তাহলে হয়তো তার তওবা নসীব হত এবং রিসালাত-অবমাননার দায় নিয়ে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হত না। নিজের পায়ে কুঠারাঘাতের এক মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত হয়ে রইলেন সালমান তাছীর! ষ
[গভর্ণরে পাঞ্জাব কা সানেহায়ে কতল শীর্ষক নিবন্ধ থেকে গৃহীত। অনুবাদ : আবু ইয়াহইয়া]