[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম প্রশ্নোত্তর। এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]

প্রশ্ন ৯০. হুজুর, বনী ইসরাঈল কোন্ কোন্ নবীকে হত্যা করেছে?

উত্তর : কুরআন কারীমে আল্লাহ তাআলা কেবল এতটুকুই ইরশাদ করেছেন যে, তারা নবীদেরকে হত্যা করেছে। যেমন, সূরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছেÑ

وَ ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَ الْمَسْكَنَةُ وَ بَآءُوْ بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ بِاٰيٰتِ اللهِ وَ يَقْتُلُوْنَ النَّبِيّٖنَ بِغَيْرِ الْحَقِّ ذٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَّ كَانُوْا يَعْتَدُوْنَ.

আর তাদের ওপর লাঞ্ছনা ও অসহায়ত্বের ছাপ মেরে দেওয়া হল এবং তারা আল্লাহর গযব নিয়ে ফিরল। তা এ কারণে যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তা এ কারণে যে, তারা নাফরমানী করেছিল এবং তারা অত্যধিক সীমালংঘন করত। Ñসূরা বাকারা (০২) : ৬১

আরও কয়েকটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা কেবল এতটুকুই ইরশাদ করেছেন। ইতিহাসগ্রন্থে বিশুদ্ধ সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে, তারা হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামকে হত্যা করেছে। আরেকটি প্রসিদ্ধ বর্ণনায় রয়েছে, তারা ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের পর তার পিতা হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামকেও হত্যা করেছে। এছাড়া বিভিন্ন বর্ণনায় আরমিয়া আলাইহিস সালামসহ আরও কোনো কোনো নবীর কথা রয়েছে। তবে ইতিহাসগ্রন্থে এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ সূত্রে বেশি নবীর নাম উল্লেখিত হয়নি। এছাড়াও তারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে।

নবী-রাসূলগণ ছাড়া ধর্মপ্রাণ মানুষদেরকেও তারা হত্যা করেছে। কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছেÑ

اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيٰتِ اللهِ وَ يَقْتُلُوْنَ النَّبِيّٖنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّ يَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَاْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ.

যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে, নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে এবং মানুষের মধ্যে যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয় তাদেরকেও হত্যা করে, তাদেরকে যন্ত্রণাময় শাস্তির ‘সুসংবাদ’ দাও। Ñসূরা আলে ইমরান (৩) : ২১ (সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীরÑ তাফসীরে তবারী; তাফসীরে কাবীর; তাফসীরে ইবনে কাসীর; তাফসীরে হেদায়াতুল কুরআন; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/৪১১-৪১৫; কাসাসুল কুরআন, সিওহারবী ১/৬২৪-২-৬২৭)

প্রশ্ন ৯১. শুনেছি কিয়ামতের একটি আলামত হল, কিয়ামতের আগে এক অদ্ভুত প্রাণী আসবে। সে প্রাণীটি সম্পর্কে কুরআন হাদীসে কী বর্ণিত হয়েছে?

উত্তর : সে অদ্ভুত প্রাণীটি সম্পর্কে কুরআন কারীমে বলা হয়েছে,

وَ اِذَا وَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ اَخْرَجْنَا لَهُمْ دَآبَّةً مِّنَ الْاَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ  اَنَّ النَّاسَ كَانُوْا بِاٰيٰتِنَا لَا يُوْقِنُوْنَ.

যখন তাদের সামনে আমার কথা পূর্ণ হওয়ার সময় এসে পড়বে, তখন তাদের জন্য ভূমি থেকে এক জন্তু বের করব, যা তাদের সাথে কথা বলবে, যেহেতু মানুষ আমার আয়াতসমূহে ঈমান আনছিল না। Ñসূরা নামল (২৭) : ৮২

আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ

إِنَّ أَوَّلَ الْآيَاتِ خُرُوجًا طُلُوعُ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا، وَخُرُوجُ الدَّابَّةِ عَلَى النَّاسِ ضُحى، وَأَيَّتُهُمَا مَا كَانَتْ قَبْلَ صَاحِبَتِهَا، فَالْأُخْرَى عَلَى إِثْرِهَا قَرِيبًا.

(কিয়ামতের) সর্বপ্রথম নির্দশন হল, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া এবং দুপুরে মানুষের কাছে একটি প্রাণীর আত্মপ্রকাশ ঘটা। এর মধ্যে যেটাই আগে ঘটবে, অন্যটি এর পরপরই ঘটবে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৪১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৫৩১, ৬৮৮১

হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ততক্ষণ কিয়ামত হবে না, যতক্ষণ দশটি আলামত দেখা না যাবে,...। এর মধ্যে তিনি অদ্ভুত এক প্রাণীর আগমনের কথা উল্লেখ করেছেন। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯০১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬১৪১, ১৬১৪৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ২১৮৩

এ প্রাণীটির আত্মপ্রকাশের কথা আরও বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৯, ২৯৪৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩০৭২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৩০৮ দ্রষ্টব্য।

কুরআনের আয়াত এবং প্রথোমক্ত হাদীস থেকে স্পষ্ট যে, প্রাণীটি মানুষের সঙ্গে কথা বলবে এবং একেবারে কিয়ামতের সময় এর প্রকাশ ঘটবে। তবে সেটির আকার আকৃতি ও কীভাবে কোথায় আত্মপ্রকাশ করবে এবং এটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কুরআন কারীম কিংবা বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়নি। অবশ্য সাহাবায়ে কেরাম থেকে এ সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। এ প্রাণীটি সম্পর্কে এমন অনেক কথাও প্রচলিত রয়েছে, যেগুলোর সূত্র বিশুদ্ধ নয়। (সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীরÑ তাফসীরে তবারী; তাফসীরে কাবীর; তাফসীরে কুরতুবী; তাফসীরে ইবনে কাসীর; তাফসীরে রূহুল মাআনী)