ফিলিস্তিন সংকট ও আমাদের করণীয়
[গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ ঈ. হামাসের সফল হামলার পর গাজায় ইসরাইল বর্বর গণহত্যা শুরু করে। এ প্রেক্ষিতে শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম ১৩ অক্টোবর জুমার আগের রাতে খতীব ছাহেবানের উদ্দেশে একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি বলেনÑ ‘খতীব ছাহেবানের প্রতি নিবেদন, আগামীকাল জুমার আলোচনায় ফিলিস্তিনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সাধারণ মুসলিমদেরকে সচেতন করবেন। মুসলিম শাসকবর্গকে লক্ষ করে সার্বিকভাবে হামাস মুজাহিদীনের সাহায্যে এগিয়ে আসার গুরুত্ব তুলে ধরবেন। তাদের দায়িত্ব ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করবেন। জুমার খুতবায় এবং নামাযের পর কুনূতে নাযেলার দুআগুলো পড়বেন। হামাসের বিজয়, ইসরাইলের ধ্বংস এবং মজলুম গাজাবাসীর হেফাযতের জন্য কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে দুআ করবেন।’
পরবর্তী দিন জুমাপূর্ব বয়ানে হযরতই এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। শাসক ও শাসিত নির্বিশেষে গোটা মুসলিম উম্মাহ্র উদ্দেশে পেশ করেন উত্তম নির্দেশনা। মাসিক আলকাউসারের পাঠকবর্গের খেদমতে বয়ানটির অনুবাদ পেশ করা হল। Ñস¤পাদক]
হামদ ও ছানার পর ...
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। আজ আমরা এমন একটি মুহূর্তে জুমার নামায আদায় করতে যাচ্ছি, যখন ফিলিস্তিনবাসী এক দুর্বিষহ সময় পার করছে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের মূল বাসিন্দা তো আরব। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইহুদীদের এনে সেই ভূখণ্ডে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এমনিতে যেকোনো ইসলামী ভূখণ্ডে ইহুদীরা বসবাস করলে অমুসলিম নাগরিক হিসেবে ইসলাম তাদের অধিকার নিশ্চিত করে। কেননা ইসলামী ভূখণ্ডে অমুসলিমদের জন্য ঐসকল নাগরিক সুবিধা ও অধিকার সুনিশ্চিত ও সুসাব্যস্ত রয়েছে, যা একজন সাধারণ মুসলিম নাগরিকের জন্য রয়েছে। চাই ইহুদী হোক কিংবা খ্রিস্টান, মূর্তিপূজক হোক অথবা বৌদ্ধÑ মুসলিম সরকারের প্রতি শরীয়তের নির্দেশনা হল, তারা যদি রাষ্ট্রের নিয়ম-কানুন মেনে শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে বসবাস করে, তাহলে তাদেরকে শুধু নিরাপত্তাই দেওয়া হবে না; বরং তাদের জান-মাল-ইজ্জত-আব্রু সবকিছুর সুরক্ষা দেওয়া হবে। এমনকি স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চার অধিকারও তারা লাভ করবে।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হিজরত করে মদীনা মুনাওয়ারায় আগমন করেন তখন সেখানকার ইহুদীদের সাথে সন্ধি করেছেন। অতএব কোনো ইহুদী যদি ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীনে বসবাস করে, কোনো বিশৃঙ্খলা না করে, শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখে, রাষ্ট্রের নিয়ম নীতি মেনে জীবনযাপন করে, ইসলাম তাতে কোনো আপত্তি করে না।
কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তুলে এনে পরিকল্পিতভাবে ইহুদীদেরকে যেভাবে ফিলিস্তিন-ভূমিতে আস্তানা করে দিয়েছে। আর সেখান থেকে মূল বাসিন্দাদেরকে ঠেলে ঠেলে; বরং ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছেÑ এটা সাধারণ কোনো বিষয় ছিল না।
ফিলিস্তিন সংকট : সূত্রপাত যেভাবে
আপনারা শুনে থাকবেন সাহয়ূনিয়্যাহ, যাকে ইংরেজিতে জায়োনিজম বলে। এটা একটা বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিকল্পনার নাম। অর্থাৎ ইহুদীরাই গোটা বিশ্ব শাসন করার অধিকার রাখে। আর ইহুদীদের কেন্দ্র ওখানে স্থাপিত হবে, যেখানে বাইতুল মুকাদ্দাস রয়েছে। সেখান থেকে আশপাশের অঞ্চলে আক্রমণ করে করে সাম্রাজ্য বিস্তার করা হবে। এভাবে ওরা পুরো বিশ্ব শাসন করবে।
এ বিবেচনায় প্রথমে ওরা সেখানে কিছু জমি খরিদ করতে আরম্ভ করে। যাতে ইহুদীদের সেখানে এনে এনে ঘাঁটি তৈরি করা যায়। কোনো ইহুদী যদি আমাদের অঞ্চলে জমি কিনতে চায় তাহলে তো শরীয়তের মাসআলায় তাতে নিষেধ নেই। কিন্তু ওদের ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা ছিলÑ গোটা বিশ্ব থেকে ইহুদীদের এনে এ অঞ্চলে একটি ইসরাইলী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। তারপর আশপাশের এলাকাজুড়ে তা আরো সম্প্রসারণ। সেই পরিকল্পনাকে তারা ‘গ্রেটার ইসরাইল’ নামে অভিহিত করে। সেই গ্রেটার ইসরাইলের একটি পরিকল্পনা হচ্ছে, সীমান্ত বিস্তৃত করতে করতে মদীনা মুনাওয়ারা পর্যন্ত পৌঁছানো, নাউযুবিল্লাহ। এরপর মূল টার্গেট হল, পুরো বিশ্ব শাসন করা।
এটা ১৯২০ সনের দিকের কথা। ঐসময় যদিও ইহুদীরা সংখ্যায় ছিল খুবই নগণ্য; কেবল অল্প অল্প করে ভূমি ক্রয় করছিল। তখন হিন্দুস্তানে আমাদের উলামায়ে কেরাম ফতোয়া দিয়েছিলেনÑ ইহুদীদের কাছে জমি বিক্রি করা জায়েয নয়। তারা ওখানকার মুসলমানদের বলেছিলেনÑ ইহুদীদের কাছে তোমরা জমি বিক্রি করো না। মানুষ বলাবলি করছিল, মুসলিম ভূখণ্ডে কোনো অমুসলিম জমি কিনবে, শরীয়তে তো এতে বিশেষ কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানবী রাহ. ইমদাদুল ফতোয়াতে এ ফতোয়া দিয়েছিলেনÑ এই অঞ্চলে যেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তাদের আনাগোনা চলছে, সেখানে ইহুদীদের কাছে জমি বিক্রি করা জায়েয হবে না। কেননা তাঁরা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, জমি কেনা পর্যন্ত ওদের কাজ শেষ নয়। ওরা যখন আস্তানা গেড়ে বসবে তখন ওদের পরিকল্পনা বুঝে আসবে। (দ্রষ্টব্য : ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৫৯)
উসমানী খেলাফতের সর্বশেষ খলীফা ছিলেন সুলতান আবদুল হামীদ। তার কাছে ইহুদীদের একটি বড় প্রতিনিধি দল এল। তারা বলল, আপনি ফিলিস্তিনের কিছু অঞ্চল আমাদের জন্য বরাদ্দ দিন। আমরা তাতে বসবাস করতে চাই। সুলতান আবদুল হামীদ বললেন, ‘যতদিন আমি জীবিত আছি সেখানে তোমাদের সুযোগ দিতে পারি না।’ মুসলিম সমাজের আলেমগণ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যেহেতু এ পরিকল্পনা ও পেছনের ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পেরেছিলেন, তাই তাঁরা এ থেকে নিবৃত্ত থেকেছেন।
দেখুন, কাশ্মীরেও একই ইতিহাস সৃষ্টি করা হচ্ছে। সেখানে অন্যান্য জায়গা থেকে হিন্দুদের টেনে এনে বসতি করা হচ্ছে। যাতে সেখানকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা আর না থাকে। ওই সময় উলামায়ে কেরাম ফতোয়া দিয়েছিলেন, আমিও ফতোয়া দিয়েছিÑ যেসকল হিন্দুরা অন্যান্য অঞ্চল থেকে এসে এখানে বসতি গড়তে চাচ্ছে, মুসলমানরা তাদের কাছে জমি বিক্রি করবে না। কেননা তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা খতম করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিতে পরিণত করা। এ মুহূর্তে শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলমানদের জন্য হিন্দুদের কাছে জমি বিক্রি করা জায়েয নয়। এ ফতোয়া ব্যাপকভাবে সেখানে প্রচার করা হয়। আলহামদু লিল্লাহ, এর খুব ইতিবাচক সাড়াও পড়ে।
যাইহোক, ইসরাইল তো প্রথমে ফিলিস্তিন অঞ্চলে জমি কেনা শুরু করেছিল। আফসোসের কথা হচ্ছে, যখন মুসলিমরা দেখল, ওরা মোটা অঙ্কের বিনিময়ে জমি নিচ্ছে তখন অনেকেই ওদের কাছে জমি বিক্রি করা শুরু করল। এভাবে যখন একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমি হয়ে গেল। তখন ওরা ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়ে স্থানীয় মুসলিমদের উৎখাত করতে শুরু করল। ব্রিটেন ও তার মিত্রগোষ্ঠীরা তো আগ থেকেই ওদের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল। বেলফোরের সেই কুখ্যাত ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইসরাইলী রাষ্ট্রকে স্বীকৃতিও দিয়ে দিল।
এটাও আজ থেকে বহু বছর পূর্বের ইতিহাস। ওইসময় একদিকে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠিত হতে যাচ্ছিল অপরদিকে ইসরাইলও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আজম মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহকে যখন ইসরাইল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, তিনি বললেন, এটা হচ্ছে পশ্চিমা শক্তির অবৈধ সন্তান। তার জীবনীতে তার বোন লিখেছেন, অন্তিম মুহূর্তে কায়েদে আজমের মুখে তিনটি শব্দই ছিলÑ কাশ্মীর, মুহাজিরীন এবং ফিলিস্তিন। এরপর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
একই সময়। একদিকে পাকিস্তান অপরদিকে ইসরাইল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠালগ্নে মুসলিম উম্মাহ্র মাঝে একধরনের প্রত্যাশা বিরাজ করছিলÑ পাকিস্তান এমন একটি রাষ্ট্র হবে, যা পুরো মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে।
সালাম মুজাহিদীনের প্রতি
পৃথিবীর ইতিহাসে হয়তো একমাত্র দৃষ্টান্তÑ যেখানে এত বিশাল অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে এভাবে ঘেরাও করে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। তাদের কাছে দানা-পানি ছাড়া আর কিছুই পৌঁছে না। বছরের পর বছর এভাবে কেটে যাচ্ছে। আপনি একটু চিন্তা করুন তো সেসকল মর্দে মুমিনের কথা, যারা সেই অবরুদ্ধ অবস্থায় জীবন যাপন করে। রাত দিন তাদের ওপর হামলা হতে থাকে। অবিরাম বোমা বর্ষিত হয়। তাদের শহীদ করা হয়। মসজিদে আকসার প্রাঙ্গণে এমনকি মসজিদের ভেতরেও যাদের দিকে বন্দুকের নল তাক করা থাকে! অপরদিকে তাদের কথাও চিন্তা করুন, যারা এমন নারকীয় তাণ্ডব পরিচালনা করে!!
এতদসত্ত্বেও সেই যুবকদের প্রতি সালাম, যারা ইসরাইলের এত ভয়াবহ পাশবিক ও নির্মম নির্যাতনের মোকাবেলা করে যাচ্ছেন। প্রথমে পাথর দিয়ে তাদের প্রতিহত করতেন। অর্থাৎ ট্যাঙ্ক ও গোলার মোকাবেলায় তাদের কাছে পাথরের টুকরা ছাড়া কিচ্ছু ছিল না। ষোলো-সতেরো বছরের কিশোর তরুণেরা পাথর দিয়েই ওদের ধরাশায়ী করে ফেলত। এটা ছিল হামাসের সূচনা। এরপর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এতটা শক্তিমত্তা দিলেনÑ আজ তারা ইসরাইলের সেই অধরা শক্তিকে, যা পৃথিবীব্যাপী দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল, যারা পারমাণবিক শক্তি ধারণ করে, অসংখ্য যুদ্ধবিমান রয়েছে যাদের, যতসব অত্যাধুনিক সাজ-সরঞ্জাম, রকেট প্রতিহত করার যেই সুসংহত ব্যবস্থাপনা... এতকিছুর মোকাবেলায় এ জানবাযরা অবিরাম শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে, ক্ষেপণাস্ত্র বানানো শুরু করে।
এখন তারা যখন ওদের ওপর রকেট নিক্ষেপ শুরু করল, তখন রকেট প্রতিহত করার জন্য ওদের যেই আয়রন ডোমের ব্যবস্থা রয়েছে, সেটাকে তারা অকেজো করে ফেলল। ফলে ওদের ইন্টেলিজেন্স ফেল হয়ে গেল। ওদের সকল পরিকল্পনা ওভাবেই পড়ে রইল। তারা গিয়ে ওদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে হামলা করে। ইসরাইল তার ইতিহাসে এমন ক্ষয়ক্ষতির শিকার আর হয়নি। হামাসের এই হামলায় ওরা যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এখন পর্যন্ত ওদের তথ্য অনুযায়ী তের-চৌদ্দশ ইসরাইলী মারা গিয়েছে। তাদের মনে আতঙ্ক ও শঙ্কা কাজ করছে। কিন্তু এর জবাবে ওরা গাজাবাসীর ওপর যেই পাশবিকতা ও নির্মমতা চালাচ্ছে, ইতিহাসে তার দৃষ্টান্তও বিরল। আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতি অনুসারে আপনি শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হানতে পারেন, সরাসরি শত্রুপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেন। কিন্তু সাধারণ জনবসতিতে হামলা পরিচালনা করা, বোমা বর্ষণ করা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এগুলোকে যুদ্ধাপরাধ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
আর নিছক বোমা বর্ষণ নয়, তথ্য মতে ফসফরাস বোমাও সেখানে ব্যবহৃত হচ্ছে। লাশগুলো দেখা যাচ্ছে ঝলসে গিয়েছে। যেকোনো যুদ্ধে ফরফরাস ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। কিন্তু সেই বোমা ফেলা হচ্ছে। পুরো গাজা সিটিকে বিরানভূমিতে পরিণত করার চক্রান্ত চলছে। হামাসের জানবায মুজাহিদগণ এর মোকাবেলা করে যাচ্ছেন এবং ওদেরকে নাজেহাল করে ছাড়ছেন।
বিশ্ব পরিস্থিতি
এদিকে অবস্থা দেখুনÑ ইসরাইলের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় গোটা পশ্চিমাবিশ্ব একজোট হয়ে গেছে। যুদ্ধের শুরুতেই আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে গিয়ে বলে এসেছেনÑ যতদিন আমরা আছি, ইসরাইলের কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আমরা তাদের সঙ্গে আছি। ব্রিটেনসহ গোটা পশ্চিমা দুনিয়া সমস্বরে ইসরাইলের পক্ষ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ সেই অবৈধ সন্তানের জন্য গোটা পশ্চিমা দুনিয়া দাঁড়িয়ে গেছে। আমেরিকা থেকে ব্রিটেন এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশসহ পুরো অমুসলিম দুনিয়া এমনকি ভারতও ওদের সাথে রয়েছে। ভারত বলছে, আমরা ইসরাইলের সাথে আছি। কারণ মুসলিম দুনিয়ার প্রতি যদি লক্ষ করেন, তাহলে দেখবেন মরক্কো থেকে নিয়ে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত ভৌগলিকভাবে পুরো মুসলিম বিশ্ব একটি শৃঙ্খলের ন্যায়। এর মাঝে কেবল দুটি প্রভাবশালী অমুসলিম রাজত্ব রয়েছে। একটি ভারত অপরটি ইসরাইল। এরা দুজন একে অপরের সহযোগী। তাই ভারতও ঘোষণা করে দিল, আমরা ইসরাইলের সাথে আছি।
কিন্তু যে বিষয়টি অত্যন্ত আফসোস ও পীড়াদায়ক, তা হচ্ছে এ পরিস্থিতিতে মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা; যারা ইন্দোনেশিয়া থেকে মরক্কো পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। যারা গাজার সীমান্ত ঘেঁষে আছে। মুসলিম দেশগুলোর মাঝে থাকা ইসরাইল যেখানে একটি বিন্দুর পর্যায়ে রয়েছে। যেখানে একসময় বলা হত, মুসলমানরা সবাই মিলে থুথু নিক্ষেপ করলেই ইসরাইল সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু আফসোস, সেই মুসলিম রাষ্ট্রগুলোই বলতে গেলে খামোশ হয়ে আছে। নতুবা নিছক মৌখিক সান্ত্বনা এবং সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বসে আছে।
আল্লাহর বান্দারা! আমাদের নবী তো বলেছেন, মুমিনগণ এক দেহতুল্য। দেহের কোনো অঙ্গ আহত হলে, কোথাও কোনো ব্যথা অনুভূত হলে গোটা শরীর রাতে ঘুমাতে পারে না। জ¦র এসে যায়। তেমনিভাবে ভূপৃষ্ঠে কোথাও কোনো মুসলিম নির্যাতিত হলে গোটা মুসলিম বিশ্ব তাতে ব্যথিত হবেÑ এটা আমাদের নবীর বার্তা।
কুরআনের ঘোষণাÑ সকল মুমিন ভাই ভাই। কুরআন এ ঘোষণার মাধ্যমে জাতিগত ভেদাভেদের প্রাচীর ভেঙে দিয়েছে। বলেছে, মুমিনদের জাতি শুধু একটিই। আর তা হচ্ছে উম্মতে মুসলিমা। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই সে থাকুক না কেন, আফ্রিকায়, এশিয়ায়, ইউরোপে, মধ্যপ্রাচ্যে যেখানেই থাকুকÑ সকল মুসলিম ভাই ভাই। আর হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী ভ্রাতৃত্বের দাবি হচ্ছেÑ এক মুসলমান তার ভাইকে সহায়-সম্বলহীন অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দিতে পারে না। তাকে শত্রুর মুখে ঠেলে দিতে পারে না। এটাই হচ্ছে মুসলমানের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য। ইসলামের ইতিহাসে লক্ষ করলে এর প্রচুর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়Ñ কোথাও কোনো মুসলিম শত্রুর আক্রমণের শিকার হলে অপরাপর মুসলমান তার সুরক্ষায় এগিয়ে আসে। তাকে শত্রুর আগ্রাসন থেকে রক্ষা করে। আমাদের ভারত বর্ষের গোটা ইতিহাসে এর অসংখ্য নজির রয়েছে। যখন মুসলমানদের ওপর হিন্দুদের আগ্রাসন চলত তখন আফগান থেকে বড় বড় বীর বাহাদুর এসে তাদের উদ্ধার করেছেন।
হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ রাহ.-এর আমলে মারাঠীদের প্রতাপ বেড়ে গিয়েছিল। মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চলত। হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ রাহ. চিঠি লিখে হযরত আহমাদ শাহ আবদালীকে ডেকে এনেছেন। হযরত শাহ আবদালী পানিপথে যুদ্ধ করে মারাঠীদের কোমর ভেঙে দিয়েছেন। অতএব মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছেÑ অপর মুসলমান, চাই সে যেকোনো অঞ্চলের হোক, যেকোনো ভাষার হোক; ঈমানের সম্পর্ক তাদেরকে এক সূত্রে গেঁথে দিয়েছেÑ সে তার ভাইয়ের সর্বাত্মক সাহায্যে এগিয়ে আসবে।
কিন্তু আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছেÑ ইসরাইলের মতো একটি ছোট্ট অবৈধ সন্তানের সুরক্ষার জন্য গোটা পশ্চিমা দুনিয়া কোমর বেঁধে নেমেছে। জঙ্গি বিমান বহনকারী রণতরী পাঠিয়ে দিয়েছে, ছোট্ট একটি উপত্যকা ধ্বংস করার জন্য। যেখানে স্বয়ং ইসরাইলের কাছেই রয়েছে প্রচুর শক্তি, হামাসের শক্তির চেয়ে যা হাজার গুণ বেশি। তার পরও তার দাবি, তোমরা আমাকে আরো সরঞ্জাম সরবরাহ কর। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়ে বলে এসেছে যে, আমরা তোমাদের সাথে আছি। তো শুনে রাখো, আল্লাহ বলেছেন-
ضُرِبَتْ عَلَیْهِمُ الذِّلَّةُ اَیْنَ مَا ثُقِفُوْۤا اِلَّا بِحَبْلٍ مِّنَ اللهِ وَ حَبْلٍ مِّنَ النَّاسِ وَ بَآءُوْ بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ وَ ضُرِبَتْ عَلَیْهِمُ الْمَسْكَنَةُ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَانُوْا یَكْفُرُوْنَ بِاٰیٰتِ اللهِ وَ یَقْتُلُوْنَ الْاَنْۢبِیَآءَ بِغَیْرِ حَقٍّ ذٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَّ كَانُوْا یَعْتَدُوْنَ.
তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাক, তাদের ওপর লাঞ্ছনার ছাপ মেরে দেওয়া হয়েছে, অবশ্য আল্লাহর তরফ থেকে যদি কোনো উপায় সৃষ্টি হয়ে যায়, কিংবা মানুষের পক্ষ থেকে কোনো অবলম্বন বের হয়ে আসে, (যা তাদেরকে পোষকতা দান করবে) তবে ভিন্ন কথা। এবং তারা অল্লাহ্র ক্রোধ নিয়ে ফিরেছে, আর তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অবমাননা। এর কারণ এই যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। (তাছাড়া) এর কারণ এই যে, তারা অবাধ্যতা করত ও সীমালংঘনে লিপ্ত থাকত। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১১২
অর্থাৎ এদের ওপর লাঞ্ছনা ও ভর্ৎসনা সিল করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কখনো কখনো এরকমও হবে যে, কিছু লোক এসে এদের সাহায্য করতে থাকবে। তো সেই সাহায্যের কারণে এরা কিছুটা সুযোগ পাবে। আজ ইউরোপ আমেরিকার শক্তিগুলো সেই ‘হাবলুন মিনান নাস’, সেই ‘মানব অবলম্বন’-ই প্রকাশ করছে। ওদের সাহায্য সহযোগিতা করছে। পক্ষান্তরে মুসলিম বিশ্ব সুখনিদ্রায় বিভোর হয়ে আছে। মরক্কো থেকে নিয়ে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত রয়েছে মুসলমানদের শাসন। মাঝখানে ইসরাইল এক বিন্দু পরিমাণ স্থান দখল করে আছে। বাকি ডানে বামে চতুর্দিকে শুধু মুসলিম দেশ। তবুও তারা কেবল মৌখিক কিছু আশ্বাস প্রকাশ ও সান্ত্বনা প্রদান পর্যন্তই ক্ষান্ত থাকে। কোনো সাহায্য সরবরাহ করা হচ্ছে না। হামাসকে কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না। গাজার সাধারণ বাসিন্দাদের, যাদের মাঝে নারী ও শিশুরা প্রাণ হারাচ্ছে, তার ওপর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, পানি সরবরাহ বন্ধ, খাদ্য সরবরাহের পথ অবরুদ্ধ। মিশর সীমান্ত দিয়ে কিছুটা খাবার দাবার সরবরাহের যে প্রক্রিয়া রয়েছে, সেটাকেও ইসরাইল বন্ধ করে দিয়েছে। এখন ইসরাইল যেহেতু খুলতে দিচ্ছে না, তাই মিশরও বসে আছে। অর্থাৎ আপনি যেহেতু প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না, তাই আমরাও পাঠাচ্ছি না। মানে আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে। আপনি রাস্তা খুলতে বললে খুলব নতুবা এভাবেই বসে থাকব। পুরো মুসলিম বিশ্বের আজ এই অবস্থা!
আলহামদু লিল্লাহ, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী পুরো মুসলিম বিশ্বের মাঝে সবচে শক্তিশালী। পাকিস্তানের কাছে পরমাণু শক্তিও আছে। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রটিকে অর্থনৈতিক বিভিন্ন মারপ্যাঁচে এতটা অস্থিতিশীল করে রাখা হয়েছে যে, ঋণের বোঝায় তারা জর্জরিত হয়ে আছে। অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তান বিদেশীদের গোলাম হয়ে আছে। ফলে এখান থেকেও যে বক্তব্যগুলো আসছে, সেগুলো ঠুনকো কিসিমের। যাতে কোনো শক্তি নেই। এমনকি আমাদের মিডিয়াগুলোও এই সংবাদগুলোকে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না। মিডিয়া অন করলে আমাদের পারস্পরিক বিভিন্ন বাদানুবাদের সংবাদই পাওয়া যায়। নাওয়াজ শরীফ, শাহবাজ শরীফ, ইমরান খান এদের নিয়েই মিডিয়া ব্যস্ত। এমনকি ক্রিকেটের সংবাদগুলোও প্রাধান্য পাচ্ছে তাদের কাছে। একেবারে শেষে গিয়ে ইসরাইল ফিলিস্তিন নিয়ে দু-চার কথা বলে দেয়। নির্লজ্জতা, নির্লিপ্ততা এবং আত্মমর্যাদাহীনতা ও মেরুদণ্ডহীনতার এ এক নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
আমাদের করণীয়
ভাইয়েরা আমার! মনের কিছু ব্যথা আপনাদের খেদমতে প্রকাশ করার ইচ্ছা নিয়ে কিছু বললাম। মূল কথা হচ্ছে, এই সময়ে গোটা মুসলিম বিশ্ব যদি হামাসের সহযোগিতায় দাঁড়িয়ে যেত, তাহলে ইসরাইলের নাম-নিশানা মিটে যেত। কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে, বাহ্যত এর কোনো প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। আল্লাহ তাআলা নিজ রহমতে কোনো ব্যবস্থা করে দিন। কিন্তু জনসাধারণের মাঝে তো এই প্রতিক্রিয়া থাকা উচিত- তারা নিজেদের জযবা- ক্ষোভ ও আবেগ নিজেদের সরকার পর্যন্ত পৌঁছাবেন। বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ চলছে। জর্ডানে প্রতিবাদ হয়েছে। সেখানের মুসলমানগণ সরকারকে বার্তা দিয়েছে- সরকারকে এই কাজে অংশগ্রহণ করা উচিত। বিভিন্ন দেশে এরকম প্রতিবাদ চলছে। কিন্তু এখানে সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকেও কোনো মজবুত প্রতিবাদ শোনা যায়নি। সাধারণ মুসলমানগণকে বলছি- আপনারা নিজেদের এই ক্ষোভ প্রকাশ করুন। সকল মুসলিম দেশের নাগরিকদের বলছি- ইসরাইলের নিন্দায় এবং হামাসের পক্ষে আওয়াজ উচ্চকিত করুন।
সময় যেহেতু কম তাই সংক্ষেপে কিছু কথা বললাম। প্রশ্ন হচ্ছে, এ মুহূর্তে আমার আপনার করণীয় কী? যখন মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানগণ এবং বিশ্ব মুসলিম নেতৃবর্গ বাহ্যত নিজেদের দায়িত্বটুকু আদায় করছে না, এমন সময়ে আমাদের সাধারণদের করণীয় কী? প্রথম কথা তো বললাম, সবাই নিজের অবস্থান থেকে প্রতিবাদের আওয়াজ তুলুন। সরকারের কাছে জোর দাবি জানান, এ যুদ্ধে আপনি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করার নামে বসে থাকবেন না; বরং হামাসের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়ান। শুধু মৌখিক কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং তাদের সকল প্রয়োজনে এগিয়ে আসুন।
আমি একটি আয়াত তিলাওয়াত করছি; আমাদের সরকারের কান পর্যন্ত এই আয়াত পৌঁছা দরকার। কুরআন গোটা মুসলিম উম্মাহকে সম্বোধন করে বলছে-
وَ مَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُوْنَ فِیْ سَبِیْلِ اللهِ وَ الْمُسْتَضْعَفِیْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَ النِّسَآءِ وَ الْوِلْدَانِ الَّذِیْنَ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اَخْرِجْنَا مِنْ هٰذِهِ الْقَرْیَةِ الظَّالِمِ اَهْلُهَا وَ اجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ وَلِیًّا وَّ اجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ نَصِیْرًا.
তোমাদের কী হয়ে গেল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর না এবং নিষ্পেষিত লোকদের পক্ষে, যারা এই দুআ করছে যে, আয় আল্লাহ! আমাদের সেই বসতি থেকে উদ্ধার করুন, যার অধিবাসী জালেম। আর আপনি আমাদের জন্য কোনো সাহায্যকারীর ব্যবস্থা করে দিন। -সূরা নিসা (৪) : ৭৫
আজ এই আয়াতটি গাজার মুসলমানদের চিত্রায়ণ করছে। আজ তারা নির্যাতিত নিষ্পেষিত। তারা দুআ করছে, আয় আল্লাহ, আমাদের এই মুসিবত থেকে উদ্ধার করুন। কুরআন বলে যে, হে মুসলিমরা! তোমরা তাদের পক্ষে কেন জিহাদে অবতীর্ণ হচ্ছ না! এটা হল কুরআনের বার্তা।
আমরা সাধারণ মানুষ তো সেখানে গিয়ে জিহাদে শরীক হতে পারছি না। এটা আমাদের সক্ষমতারও বাইরে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ যেতে চাইলেও সমস্যা তৈরি হওয়া ছাড়া কোনো কাজের কাজ হবে না। কিন্তু নিজেদের সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান এবং তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করুন। যাতে সরকার কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। আমি মনে করি, আমাদের সরকার ও সেনাবাহিনী এতটা বোধহীন নয় যে, এতকিছু চাক্ষুষ দেখার পরও কোনো ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে না। অনেক সময় তাদের সেই প্রচেষ্টাগুলো জনসম্মুখে আসে না। কিন্তু জনগণের শক্তি যদি তাদের সাথে থাকে তখন তারা সাহস বোধ করে। এজন্য সর্বস্তর থেকে এ মুহূর্তে প্রতিবাদের আওয়াজ উচ্চকিত হওয়া চাই।
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, মুসলমানদের একটি বড় অস্ত্র হচ্ছে দুআ। আফসোস, আমরা একে অস্ত্র মনে করি না। আল্লাহ তাআলা মুসাব্বিবুল আসবাব। রকেট, মিসাইল, রণতরী, যুদ্ধবিমান যতকিছু আছে সবগুলোই বাহ্যিক উপায়-উপকরণমাত্র। এতে প্রভাব সৃষ্টিকারী কে? আল্লাহ ছাড়া আর কেউ না।
আরেকটি হচ্ছে রুজু ইলাল্লাহ। প্রতিটি মুসলমানের প্রতি আমার আহ্বান- তাদের জন্য দুআ করতে থাকুন। এমন যেন না হয় যে, আপনি তাদের জন্য দুআও করছেন না।
আমাদের বুযুর্গদের একটি নিয়ম ছিল- যখন মুসলমানদের ওপর এমন দুর্দশা আসত তখন আয়াতে কারীমার- ‘লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নি কুনতু মিনায যলিমীন’-এর খতম হত। হিসনে হাসীনের খতম হত। মুসলমানেরা একসাথে বসে খতম পড়ত। এভাবে আল্লাহর প্রতি রুজু হত। আমাদের এ বিষয়গুলোরও ইহতিমাম করা উচিত। দুআ অত্যন্ত কার্যকরী একটি অস্ত্র। নবীজী বলেন-
الدُّعَاءُ سِلَاحُ الْمُؤْمِنِ.
দুআ হচ্ছে মুমিনের হাতিয়ার। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৮১২
আর এটা এমনই হাতিয়ার, কুরআনের ভাষ্য মতে যা ব্যবহার করে-
كَمْ مِّنْ فِئَةٍ قَلِیْلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِیْرَةًۢ بِاِذْنِ اللهِ .
এমন কত ছোট দলই না রয়েছে, যারা আল্লাহর হুকুমে বড় দলের ওপর জয়যুক্ত হয়েছে! -সূরা বাকারা (২) : ২৪৯
দুআর মাধ্যমে ছোট ছোট দল বিশাল বিশাল বাহিনীকে পরাস্ত করে ফেলে। ইতিহাসে এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। এ মুহূর্তে যা আলোচনা করার সময় নেই। কিন্তু এ সফলতা মূলত আল্লাহমুখী হওয়ার কারণে অর্জিত হয়েছে।
সুতরাং নিজের গোনাহ থেকে তওবা করুন এবং দুআ করুন। কেননা আমাদের গোনাহের কর্মফল আজ আমাদের ভুগতে হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা যেন তা দূর করে দেন, এজন্য দুআ করা, তওবা করা, ইস্তিগফার করা, আল্লাহমুখী হওয়া- এগুলো আমাদের কাজ হওয়া চাই এবং সকাল-সন্ধ্যার ওযীফা হওয়া চাই। আল্লাহ তাআলা স্বীয় রহমত, ফযল ও করমে আমাদের সেই তাওফীক দান করুন।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.
[অনুবাদ : মাওলানা মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর]