গাজা যুদ্ধের রোজনামচা
শনিবার, ৭ অক্টোবর ২০২৩/২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫
আজকের দিনটি ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে গাজা সীমান্তে কংক্রিট দেয়াল অ্যালার্মবেল সিস্টেম তৈরি করেছিল দখলদার ইসরাইল। ক্যামেরা ও সেন্সরও স্থাপন করেছে সেখানে। কিন্তু সব কিছু ফাঁকি দিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এসব সুরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে ফেলে হামাস।
আজ ইসরাইলের আকাশে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই মুহুর্মুহু রকেট আক্রমণ শুরু করল হামাস। হামাস জানিয়েছে মাত্র ২০ মিনিটে পাঁচ হাজার রকেট ছুড়েছে তারা। একই সময়ে একটি দল প্যারাগ্লাইডিং করে সীমান্ত টপকে ভেতরে ঢুকে পড়ে। আবার ওই সময়েই ড্রোন থেকে বিস্ফোরক নিক্ষেপ করে ইসরাইলের দূর নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা ধ্বংস করে দিচ্ছিল হামাস যোদ্ধারা। বোমা ফেলে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল মোবাইল টাওয়ার। এর পরপরই বিভিন্ন জায়গায় সীমান্ত দেয়াল ধসিয়ে দিতে শুরু করে হামাস। সেসব সীমান্ত পথে হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা গাড়ি এবং মোটরসাইকেল দিয়ে ইসরাইলের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ জায়গায় ইসরাইলের সেনাবাহিনী কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। সেসময় হামাস যোদ্ধারা একটা মিউজিক ফ্যাসটিভ্যালেও আক্রমণ করে।
ইসরাইলের সৈন্যসহ ব্যাপক লোক হতাহত ও জিম্মি হয়।
রবিবার, ৮ অক্টোবর
দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এটি ১৯৭৩ সালের পর ইসরাইলের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
ইসরাইলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সাহায্য তো আছেই। মার্কিন রণতরীকে ফিলিস্তিনের ওপর আগ্রাসনের অংশ বলে আখ্যা দিয়েছে হামাস।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অধিকাংশই ইসরাইলের পক্ষে। ফিলিস্তিনকে কিছুটা সমর্থন জানিয়েছে রাশিয়া ও চীন। চীনের এই অবস্থানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তেল আবিব।
আজ পর্যন্ত হামাসের হামলায় ইসরাইলের ৭০০ জন নিহত, ২ হাজার ১৫৬ জন আহত এবং ৭৫০ জন নিখোঁজ হয়েছে।
তাছাড়া ইসরাইলের ১০০ জনকে পণবন্দি করেছে হামাস।
হামাসের অভিযানে গাজা অঞ্চলে নিযুক্ত সাবেক ইসরাইলী প্রধান সেনা-কমান্ডার বন্দি হয়েছে। এছাড়াও আরো ৫০ জন ইসরাইলী বন্দি হয়েছে। যাদের মধ্যে আছে ইসরাইলী সেনা ও অবৈধ ইসরাইলী বসতির বাসিন্দা। এদেরকে জিম্মি করে ইসরাইলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনীদেরকে উদ্ধার করতে চাইছে হামাস।
বন্দিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন আদামিরের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৫ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনী ইসরাইলের কারাগারে বন্দি আছে।
সোমবার, ৯ অক্টোবর
আজ যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যসহ আমেরিকা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ হয়েছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আলকাস্সামের একজন সদস্য একটি ঘরের ভেতরে একজন বয়স্ক মহিলাকে পেয়েও তার কোনো ক্ষতি না করে চলে যান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতি আল্লাহর রসূলের নির্দেশ হল, কোনো মহিলা, শিশু বা বৃদ্ধকে হত্যা করো না।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের টুইটারে লিখেছেন, ইসরাইলের ওপর জঙ্গি হামলার খবরে গভীর মর্মাহত। কঠিন সময় ইসরাইলের পাশে দাঁড়াচ্ছি।
ইইউ কমিশনার ফিলিস্তিনের জন্য বরাদ্দকৃত ৬৯১ মিলিয়ন ইউরো উন্নয়ন সহযোগিতা অবিলম্বে স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গাজায় পানি-বিদ্যুৎ-খাদ্যসহ সব রকম মৌলিক সেবা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার ফলে ওই শহরে বসবাসকারী প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনীর অবস্থা অকল্পনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ইসরাইলী বিমান হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত সাতজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ১০ জনেরও বেশি সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন। দুইজন ফটো সাংবাদিক নিখোঁজ রয়েছেন।
ইসরাইল যখন মানবতাবিরোধী এসব কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে তখন আলজাজিরার কল্যাণে একের পর এক হামাসের মানবতাবাদী প্রামাণ্যচিত্র বিশ্বের সামনে উঠে আসছে।
আলজাজিরা এক ইহুদী নারীর সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে, সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, হামলার দিন তার বাড়িতে প্রবেশ করেছিল হামাসের দুইজন সৈন্য। তারা তাকে ইংরেজিতে আশ্বস্ত করে, আপনি ভয় পাবেন না, আমরা মুসলিম, আমরা আপনাদের কোনো ক্ষতি করব না।
চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান।
ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইসরাইল ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে।
বুধবার, ১১ অক্টোবর
নৃশংসতার চরমে পৌঁছেছে ইসরাইল। গাজায় চিকিৎসা ও খাদ্য সরবরাহের অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪টি ছাত্র সংগঠন ফিলিস্তিনের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে এবং সংঘাতের জন্য এককভাবে ইসরাইলকে দায়ী করেছে।
গাজার আলকারামা এলাকায় সাদা ফসফরাস বোমা ফেলেছে ইসরাইলী বাহিনী। আন্তর্জাতিক নীতি অনুসারে সাদা ফসফরাস বেসামরিক এলাকায় ব্যবহার যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য।
উত্তর গাজায় ইসরাইল সরাসরি একটি অ্যাম্বুলেন্সকে লক্ষ করে বোমা ফেললে ৩ প্যারামেডিক নিহত হন।
বেন গুরিয়ান বিমানবন্দরে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে হামাস। হামাসের সেই রকেট হামলার সাইরেন শুনে দৌড়ে পালিয়েছে ইসরাইল সফররত ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বার্তা সংস্থা এপি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আসকালান ও সিদরোতেও বোমাবর্ষণ করেছে। বেসামরিক লোকদেরকে হত্যার প্রতিশোধ নিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস।
ইসরাইলী সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত অপারেশন আলআকসায় নিহত ১৫৫ জন অফিসার এবং সৈন্যের নাম ঘোষণা করেছে।
ইসরাইলে সর্বমোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১,২০০।
জানা গেছে, বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলকে বার্ষিক ৩৮০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা প্রদান করে।
এরদোগান বলেছেন, ‘মানবাধিকার কোথায়? আমেরিকা কেন ইসরাইলে তার যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে? আমেরিকা কি গাজায় গণহত্যা চায়? মার্কিন রণতরী ইসরাইলকে সাহায্য করবে গণহত্যায়!’
বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর
টানা ৫ দিন ধরে ইসরাইলী বিমান হামলা এবং অবরুদ্ধ গাজার মানবিক পরিস্থিতি ক্রমেই চরম অবনতির দিকে যাচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলের সংসদ অধিবেশনে যোগদান করেছে এবং বলেছে, আমি এখানে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন ইহুদী হিসেবে এসেছি।
হামাসও হামলা অব্যাহত রেখেছে। আলকাস্সাম ব্রিগেড তেল আবিব এবং আশপাশের বসতিতে বোমা বর্ষণ করেছে, যার ফলে দখলদাররা গাজার আশপাশের অঞ্চল থেকে কয়েক হাজার অবৈধ বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।
এক জরিপে দেখা গেছে, ৬৭% ইসরাইলী বিশ্বাস করেন, গত শনিবারের আক্রমণে বিপর্যয়কর ব্যর্থতা ১৯৭৩ সালের ব্যর্থতার চেয়েও বড়।
মিডিয়ার অপপ্রচারও চলছে সমানতালে। ইউরোপের অনেক পত্রিকা, টাইমস অফ ইন্ডিয়া-সহ বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট হামাসের বিরুদ্ধে ৩ ডজনেরও বেশি শিশুর শির-েদের অভিযোগের খবর প্রচার করেছিল।
আনাদোলু এজেন্সি ইসরাইলী সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে স্পষ্ট বলেছে যে, বিষয়টি সত্য নয়।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, বাইডেন বা কোনো কর্মকর্তাই হামাসের শিশুদের শিরশ্ছেদকরার ছবি বা নিশ্চিত কোনো প্রতিবেদন দেখেনি।
শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর
আলআকসা মসজিদে জুমার নামায আদায়েও বাধা দিয়েছে ইসরাইলী পুলিশ।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলী বর্বরতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেছে।
এমনকি বোমা হামলায় আলজাজিরার দুজন সাংবাদিক এবং একজন ফটোগ্রাফার নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছেন।
স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী গাজায় অবস্থানরত শাশুড়ির একটি মর্মান্তিক ভিডিও শেয়ার করেছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি বলছেন, এটা হবে আমার শেষ ভিডিও। গাজার সবাই আমরা যেখানে আছি সেদিকে এগিয়ে আসছে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ। খাবার নেই, পানি নেই, এখনো ইসরাইলী বাহিনী তাদের বোমাবর্ষণ করছে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, আমরা তাদের কোথায় রাখব? হাসপাতালের সমস্ত লোককেও সরিয়ে নেওয়া যাবে না। কোথায় মানবতা! কোথায় মানুষের হৃদয়!
ওয়াশিংটন পোস্টের এক সাংবাদিক বলেছেন, আমেরিকা এক বছরে আফগানিস্তানে যে পরিমাণ বোমাবর্ষণ করত, ইসরাইল গত কয়েকদিনেই গাজায় সেই পরিমাণ বোমাবর্ষণ করেছে।
আলআজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরাইলী বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া উচিত। মুক্তি সংগ্রামে নিয়োজিত ফিলিস্তিনীদের প্রতি আমাদের আহ্বান, যে কোনো মূল্যে নিজেদের ভূমিতে টিকে থাকতে হবে। এই ভূমি একবার হাতছাড়া হয়ে গেলে আর কোনোদিন ফিরে পাওয়া যাবে না। মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে বলছি, আজ যারা ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াবে না, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।’
ইসরাইলের আসকালানে মুহুর্মুহু রকেট হামলাও চালিয়েছে হামাস। তাদের মুখপাত্র জানিয়েছে, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে ১৫০টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে।
শনিবার, ১৪ অক্টোবর
২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামাসপন্থী সমস্ত কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলতে হবে। বেশ কয়েকটি বিখ্যাত সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মকে এই নির্দেশ দিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই তালিকায় রয়েছে মেটা, এক্স ও টিকটক।
মানবতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হাসপাতালগুলোও খালি করার আদেশ দিয়েছে ইসরাইল।
অথচ গাজার হাসপাতালগুলোর মর্গে আর জায়গা নেই। তাই ইসরাইলী হামলায় নিহত ফিলিস্তিনীদের লাশগুলো আইসক্রিম ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা বিদ্যুৎ ছাড়াই জীবন পার করছে।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ হয়েছে। জার্মান প্রশাসন ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করলেও তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে মিউনিখে।
রবিবার, ১৫ অক্টোবর
মিশর সীমান্তে তুরস্ক ও মিশরের শত শত ত্রাণের ট্রাকও ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরাইল।
আজ প্রায় সাতটি স্থানে গণহত্যা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে এক দিনেই প্রায় দেড়শ জন শহীদ হয়েছেন। আহত শতাধিক। দাফনের সুযোগ না পাওয়ায় রিফ্রিজারেটরে রেখে দিতে হচ্ছে লাশ।
ইসরাইলের বর্বর হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না সাংবাদিক এবং রেডক্রস শান্তি মিশনের লোকেরাও। হাসপাতালে আশেপাশের এলাকাতেও চলছে সহিংস হামলা।
প্রতিবাদে তেল আবিব, বেন গুরিয়ান বিমানবন্দর, আসকালানসহ আরো কয়েকটি শহরে বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে আলকুদস এবং আলকাস্সাম ব্রিগেড। তেল আবিব এবং আশেপাশের সমস্ত বসতিতে অনবরত সাইরেন বাজছে। আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না ইসরাইলীদের। রয়টার্স জানিয়েছে, ৯০ শতাংশ ইহুদী (অবৈধ) বসতি স্থাপনকারীরা যুদ্ধ শেষ হলেও গাজা উপত্যকায় ফিরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খান ইউনিসের সীমান্ত পার হয়ে আক্রমণ করে ৩টি সামরিক যান ধ্বংস করেছে হামাস। এ পর্যন্ত ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা ১৩০০ ছুঁয়েছে। ৩৪০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইসরাইলের দুটি ট্যাংক এবং একটি সেনাবাহী ট্র্যাক ধ্বংস করেছে।
ইসরাইলের হাসপাতালে বোমা বর্ষণের হুমকির জবাবে কুয়েতী সংস্থার হাসপাতাল পরিচালক বলেছেন, আমরা হয় শহীদ হয়ে জান্নাতে চলে যাব, নয়তো এখানেই থাকব। কোনো হুমকি আমাদেরকে এখান থেকে বের করতে পারবে না।
গাজায় অবস্থানরত একজন তুর্কী সাংবাদিক সংবাদ চলাকালে বলেন, ‘বহু বছর ধরে ইহুদীরা আমাদেরকে ধোঁকা দিয়ে আসছে যে, তারা অজেয়। আসলে এটা সম্পূর্ণ ভুল। আমি তুরস্কে ফিরে গেলে বিষয়টির সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা পেশ করব।’
মুহাম্মাদ দাঈফ এক ভিডিও বার্তায় গাজাবাসীকে লক্ষ করে বলেন, ‘এখনই, এখনই সময়, যাদের বন্দুক আছে তারা বন্দুক বের করো। যাদের বন্দুক নেই, তারা যা আছে তা নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ো। যার পাঞ্জা আছে, সে পাঞ্জা দিয়ে লড়াই করুক। যার কাছে কুড়াল আছে, সে সেটাই ব্যবহার করুক। যার গাড়ি আছে সে গাড়ি নিয়েই বেরিয়ে পড়ুক।’
সোমবার, ১৬ অক্টোবর
ইউরো-ভূমধ্যসাগরীয় মানবাধিকার মনিটরিং সংস্থা বলছে, ইসরাইল গাজায় যে পরিমাণ বোমা বর্ষণ করেছে, তা একটি পারমাণবিক বোমার এক চতুর্থাংশের সমান।
আজ তেল আবিবের মন্ত্রিসভার কাছেই সাইরেন বাজতে শুরু করলে পার্লামেন্টের সকল সদস্য পার্লামেন্ট ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় পালিয়ে যান। নেতানিয়াহু এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও পালিয়ে বাঙ্কারে আশ্রয় নেন।
হামাসের এক বিবৃতিতে জানা গেছে, ইসরাইলী দখলদার সাইটগুলোতে আক্রমণকারী ৮৫% ফিলিস্তিনী প্রতিরোধযোদ্ধা নিরাপদে গাজায় ফিরে এসেছিল। শুধু তাই নয়, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, অধিকৃত অঞ্চলের ভেতরে তারা ‘ক্যামেরা’ সেট করে এসেছে।
অধিকৃত ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডের মধ্যে আলজাজিরা স্যাটেলাইট চ্যানেল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোসাদ।
গাজার বিরুদ্ধে আগ্রাসনের কারণে ‘দখলদার ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত’কে আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কার করেছে কলম্বিয়া।
অথচ কলম্বিয়া না কোনো মুসলিম রাষ্ট্র আর না কোনো আরব রাষ্ট্র। আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর তাতে লজ্জা হয়নি।
এক ভিডিওতে দেখা যায়, আলকাস্সাম ব্রিগেডের সদস্যরা ইসরাইলী দখলদারদের ওপর আক্রমণ করেছে। গাজা উপত্যকার আশেপাশের বসতিগুলিতে ইসরাইলী দখলদার বাহিনীকে শেষ করে দিচ্ছে। যুদ্ধ চলাকালে একজন মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করছেন, তার শেষ কথাটি ছিল- আশহাদু আললা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া...।
পশ্চিমা মিডিয়া ইসরাইলী দখলদারদের মিথ্যা ও ভুয়া অভিযোগ প্রচার করেছিল কদিন ধরে। এর জন্য এখন আবার ফিলিস্তিনী জনগণ এবং গাজার বাসিন্দাদের কাছে তারা ক্ষমা চেয়েছে! কারণ সেগুলো তাদের কাছে ভুল প্রমাণিত হয়েছে! অথচ এই মিথ্যা অভিযোগগুলোকেই গাজায় ফিলিস্তিনী বেসামরিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অজুহাত হিসেবে পেশ করতে গেছে ইসরাইল।
মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর
এ যুদ্ধে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে আজ।
অ্যাংলিকান চার্চের অর্থায়নে পরিচালিত গাজার আহলী (আলমুস্তাশফা আলআহলী আলআরাবী আলমা‘মাদানী) হাসপাতালে পৈশাচিক বিমান হামলা করেছে ইসরাইল। এই বর্বর হামলার শিকার হয়ে শহীদ হয়েছেন ছয় শ’রও বেশি মানুষ। অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত প্রায় এক হাজার।
এই হামলার পরপরই বিক্ষোভের ঝড় উঠেছে আরব রাষ্ট্রগুলোতে। জর্ডানের রাজধানীতে মানুষ ফজর পর্যন্ত বিক্ষোভ করেছে।
বুধবার, ১৮ অক্টোবর
গতকালকে চালানো গণহত্যার দায় অস্বীকার করেছে ইসরাইল।
হামাস জানিয়েছে, হাসপাতালে গণহত্যা চালানোর অল্প কিছুক্ষণ পরেই দখলদারদরদের মুখপাত্র তার টেলিগ্রাম এবং এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে স্বীকার করেছিল যে, বোমা হামলার পেছনে তারাই স্বক্রিয় ছিল এবং তারা হাসপাতালকে সতর্ক করে দিয়েছিল যে, এটি যেন অবশ্যই খালি করা হয়। কিন্তু শহীদের সংখ্যা বৃদ্ধির পরে সে স্বীকারোক্তি মুছে দেয় এবং বিবৃতি অস্বীকার করে।
চলমান যুদ্ধে ইসরাইলের প্রতি সংহতি জানাতে ইসরাইল সফর করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের সময় হামাসের হামলায় নিহত ইসরাইলীদের প্রতি শোক প্রকাশ করেন বাইডেন।
বাইডেন দাবি করেন, গাজার হাসপাতালে হওয়া ওই হামলা ইসরাইলী সেনাবাহিনী নয়, বরং ‘অন্য পক্ষ’ চালিয়েছে।
হামাস বলেছে: জায়োনিস্টদের মিথ্যা প্রোপাগান্ডাকে মেনে নিয়ে আমেরিকান প্রশাসন আসলে দখলদার ইসরাইলের হাসপাতালে চালানো গণহত্যায় অংশগ্রহণ করল।
ইসরাইল সফরের পরে জর্ডানে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও জর্ডানের বাদশাহর সাথে বৈঠকের কথা ছিল বাইডেনের। কিন্তু এই ঘটনার প্রতিবাদে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সফর বাতিল করেছেন জর্ডানের বাদশাহ।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তার বিবৃতিতে বলেছেন, ওই হামলা ইসরাইলই চালিয়েছে, ইসরাইলের মুখপাত্রের পোস্টের প্রমাণও আমাদের কাছে আছে।
এই ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় সারা বিশ্বে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ মানুষ। ইউরোপেরও প্রায় সব শহরে বিক্ষোভের ঝড় উঠেছে। এই প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। আরব লীগ ৩ দিনের জন্য শোক ঘোষণা করেছে।
বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হামাস। হামলায় ভয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন জার্মান চ্যান্সেলর এবং তার সাথে থাকা প্রতিনিধিদল। জার্মান চ্যান্সেলর দখলদার ইসরাইলের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে ইসরাইলে এসেছেন।
মিডিয়ার আগ্রাসনও অব্যাহত আছে। সত্যের প্রচার রুদ্ধ করতে ১২ মিলিয়ন ফলোয়ার থাকা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের সংবাদ প্রচার করার কারণে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম।
গাজার একটি সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম এর পর এবার ইউটিউব ম্যানেজমেন্টও আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেল মুছে দিয়েছে। এমতাবস্থায় টেলিগ্রাম হয়ে উঠেছে তাদের একমাত্র প্রচারমাধ্যম।
হামাসকে ধ্বংস করতে মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসি পরামর্শ দিয়েছে, ইসরাইল গাজার সাধারণ অধিবাসীদেরকে বাস্তুচ্যুত করে ইসরাইলের নেগেভ মরুভূমিতে নিয়ে যেতে পারে। হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শেষ হওয়ার পরে তাদের আবার গাজা স্ট্রিপে ফিরিয়ে দেবে!!
সিসির এই পরামর্শ শুনে মুসলিমরা থু থু দিয়েছেন।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন বৃদ্ধ একটি শিশুর খণ্ড বিখণ্ড দেহ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, এই ভিডিও প্রকাশ করে গাজার সংবাদ সংস্থা বলেছে, আমরা এই দৃশ্যগুলো দেখাবার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী, কিন্তু বিশ্বকে অবশ্যই ইসরাইলী সন্ত্রাসী নব্য নাৎসিদের সম্পর্কে সত্য দেখতে এবং জানতে হবে...।
একটি আহত শিশুকে দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আর সে চিৎকার করে বলছে, আমরা আলকুদসের জন্য উৎসর্গিত।
বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর
তেল আবিব সফর করেছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তিনি বলেন, আপনাদের কষ্ট দেখে কান্না আসছে।
ওআইসির প্লাটফর্মে ৫৭টি মুসলিম দেশের প্রতিনিধিরা সৌদী আরবে একত্রিত হয়েছিল। তারা ইসরাইলী হামলার নিন্দা জানিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে।
এত কষ্টের মাঝে আসমান থেকে নেমে আসছে মুজাহিদদের জন্য বিভিন্ন সান্ত্বনা। গাজায় একজন শহীদের শরীর থেকে মেশকের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে, সেই ঘ্রাণের টানে মানুষ তাকে কবর দিতে চাচ্ছে না।
জাতিসংঘে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধি বলেছেন, ইসরাইল যুদ্ধাপরাধে জড়িত। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এর জন্য ইসরাইলকে জবাবদিহির সম্মুখীন করা উচিত।
বাইডেন গাজা ও পশ্চিম তীরে মানবিক সহায়তার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের মার্কিন তহবিল ঘোষণা করেছে। এ যেন গরু মেরে জুতা দান!
আমেরিকান সিআইএর প্রাক্তন প্রধান বলেছেন, সোমালিয়ায় আমেরিকান বাহিনী যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল স্থলপথে গাজায় প্রবেশ করলে ইসরাইলী সেনাবাহিনী তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে ।
আলকাস্সাম ব্রিগেডের সামরিক মুখপাত্র আবু উবাইদা এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে। আমরা একটি দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। শত্রুকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি যে, তার কর্মকাণ্ডের হিসাব-নিকাশ খুবই কঠোর ও বেদনাদায়ক হবে।
শুক্রবার, ২০ অক্টোবর
কাতারের মধ্যস্থতায় মানবিক কারণে দুই বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।
সিএনএনের সূত্র অনুযায়ী- দুই আমেরিকান জিম্মি, একজন মা ও তার মেয়ে, গাজা থেকে বের হওয়ার পথে রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শুক্রবারে সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে বিক্ষোভের জন্য আহ্বান করেছেন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে স্লোগান তুলেছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরাইলের অতিরিক্ত সহায়তার জন্য কংগ্রেসের কাছে ১৪ বিলিয়ন ডলার চেয়েছেন বাইডেন। কোনো বিরোধী ভোট ছাড়াই ৯৭ সদস্যের মার্কিন সিনেট ইসরাইলকে সমর্থন করে একটি খসড়া প্রস্তাব পাস করেছে।
গাজা উপত্যকার প্রাচীনতম গ্রীক অর্থোডক্স গির্জা (যা বিশ্বের প্রাচীনতম গির্জা হিসেবে তৃতীয় স্থানে ছিল) ইসরাইলের বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রায় ৩৮০ জন বাস্তুচ্যুত বেসামরিক লোক সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল।
‘ফিলিস্তিনের জন্য স্বাধীনতা’ শ্লোগানে ফিলিস্তিনের সমর্থনে এবং ইসরাইলী রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের দাবিতে আয়ারল্যান্ডে বিক্ষোভ হয়েছে।
টানা দ্বিতীয় শুক্রবারের মতো আলআকসা মসজিদে মুসল্লিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইসরাইল।
তুরকিয়ে-এর প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, পশ্চিমা দেশ ও পশ্চিমা মিডিয়ার সমর্থিত উন্মাদনা থেকে এই অঞ্চলকে বাঁচাতে হবে।
শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০২৩
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের নির্বিচার বোমা হামলা বন্ধের চেষ্টার অংশ হিসেবে মিশরে শুরু হয়েছে কায়রো শান্তি সম্মেলন। মিশরের রাজধানী কায়রোতে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে আরব বিশ্বের নেতারা একত্র হয়েছেন। এছাড়াও এতে যোগ দিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের প্রধান অ্যান্তোনিও গুতেরেসসহ আফ্রিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর প্রতিনিধিরাও।
তবে ইসরাইল বা হামাসের কোনো প্রতিনিধি এই সম্মেলনে ছিলেন না।
এই সম্মেলনে ইসরাইলের কড়া সমালোচনা করেছেন জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাও ইসরাইলের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। অন্যদিকে জাতিসঙ্ঘের প্রধান অ্যান্তোনিও গুতেরেস ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে মানবিক যুদ্ধবিরতির আবেদন করেছেন।
সম্মেলনে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জানান, ‘তাদের সামনে যত চ্যালেঞ্জই আসুক, যতকিছুই হোক, তারা কখনো তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড ছাড়বেন না।
তবে এ সম্মেলনে আরব নেতারা মুখে যে যাই বলুক, কার্যকরি কোনো পদক্ষেপের দিকে যাওয়ার কোনো আভাসও দেননি তারা। এদিকে ইঙ্গিত করেই আমাদের দেশের কোনো কোনো পত্রিকা শিরোনাম করেছে- ‘কায়রো শান্তি সম্মেলনে গাজায় সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানাতে ব্যর্থ নেতারা’।
অন্যদিকে যুদ্ধ শুরুর দুই সপ্তাহ পর ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ঢুকেছে ২০টি ট্রাক। তবে জ্বালানিবাহী কোনো ট্রাক গাজায় ঢোকেনি।
ইসরাইলী সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছে, আমরা গাজা উপত্যকায় জ্বালানি প্রবেশ করতে দেব না।
সারা বিশ্বে এখনো বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ ভবন ক্যাপিটাল হিলের সামনে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে হাজার হাজার ইহুদী। প্রায় ৩০০ ইহুদীকে গ্রেফতার করেছে মার্কিন পুলিশ।
সিডনিতে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। স্লোগান ছিল, ফিলিস্তিন মুক্ত কর, ইসরাইল নিপাত যাক। গাজা যুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন দেওয়ার কারণে টরেন্টোর একটি মসজিদে তোপের মুখে পড়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। মসজিদে মুসল্লিরা শেইম অন ইউ (ধিক তোমাকে) স্লোগান তুলে মসজিদ থেকে বের করে দেয় তাকে।
গাজায় দখলদার ইসরাইলের লাগাতার বোমা বর্ষণের সমালোচনা করে ৮০০ জনেরও বেশি ইইউ কর্মকর্তা ব্লকপ্রধানের কাছে চিঠি লিখেছেন। তারা ইসরাইলকে অনিয়ন্ত্রিত সমর্থন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরাইলী ইতিহাসবিদ ইলান পাপ্পে বলেছেন, হামাস একটি মুক্তিকামী সংগ্রামী আন্দোলন... কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নয়।
এরদোগান বলেছেন, জাতিসংঘ আবারও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
ইসরাইলী দখলদারদের বোমা হামলায় ফিলিস্তিনী লেখক ও ঔপন্যাসিক হেবা আবু নাদা শহীদ হয়েছেন।
রবিবার, ২২ অক্টোবর
হাসপাতালে হামলার পর বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষের টনক নড়েছে। ইউরোপে বিক্ষোভকারীদেরকে দমন করতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। লন্ডনে পুলিশের অনুমান, প্রায় এক লাখ বিক্ষোভকারী শহরে বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় দিয়ে মিছিল করেছে, শ্লোগান ছিল ‘গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করো’। উত্তর আয়ারল্যান্ডেও জড়ো হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। এছাড়াও ফ্রান্স, কানাডাসহ ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোতেও দেখা গেছে ইসরাইল বিরোধী বিশাল জনসমাবেশ।
ইসরাইলী বন্দিদের শত শত পরিবার নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে তেল আবিবে বিক্ষোভ করে।
গাজার শিশুরা তাদের হাতে নাম লিখে রাখছে এই ভয়ে যে, বোমার আঘাতে তাদেরকে চেনা না গেলে বেনামে কবর দেওয়া হতে পারে।
ইসরাইল লেবাননের সীমান্তবর্তী ১৪টি অতিরিক্ত শহর খালি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিতে কংগ্রেসের ১০০ সদস্য বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, গত সাত অক্টোবরের পর থেকে আজ হামাসের হামলার মাত্রা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ।
আলকাস্সাম ব্রিগেডস দুটি বুলডোজার এবং একটি ট্যাংক ধ্বংস করে এবং শত্রুকে পালাতে বাধ্য করে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধের শুরু থেকে ১২১০ জন অফিসার ও সৈন্য আহত বা নিহত হয়েছে।
গত চব্বিশ ঘন্টায় ইসরাইলী বোমা হামলায় ২৬৬ ফিলিস্তিনী শহীদ হয়েছেন।
শহীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৫১ আহত ১৪,২৪৫।
টঘজডঅ জানিয়েছে : ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় আমাদের ২৯ জন কর্মচারী নিহত হয়েছে। আমরা হতবাক।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত গাজার ১২,৮৭৫ আবাসন ইউনিট ধ্বংস করা হয়েছে। জনসংখ্যার ৭০% ঘরের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে। দশ দিন ধরে গাজা সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
সোমবার, ২৩ অক্টোবর
নেতানিয়াহু লেবাননকে ‘অকল্পনীয়’ ধ্বংসের হুমকি দিয়েছেন।
ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় গাজার ৩২০ টার্গেটে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
এরমধ্যে শুধু খান ইউনিসেই অন্তত ৬০ বার বিমান হামলা চালানো হয়েছে। সেখানকার একটি হাসপাতালের ১০০ মিটারের মধ্যে দশবার বোমা হামলা চালানো হয়েছে।
এসব হামলায় গত ২৪ ঘন্টায় ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হাসপাতালে হামলার পরে এটি ইসরাইলের চালানো সবচেয়ে বড় গণহত্যা হিসেবে দেখছে গণমাধ্যমগুলো।
এদিকে গাজা উপত্যকার ভেতর প্রবেশ করা ইসরাইলী সৈন্যদের উপর আকস্মিক হামলা চালানোর তথ্য জানিয়েছে হামাস। আলকাস্সাম ব্রিগেডস জানিয়েছে, তারা ইসরাইলীদের দুটি সামরিক বুলডোজার ও একটি ট্যাংক লক্ষ করে হামলা চালিয়েছে। এরপর সেখান থেকে সামরিক যান রেখে পালিয়ে যায় ইসরাইলী সৈন্যরা।
ইসরাইলের একজন সেনা নিহত হয়েছে বলে ইসরাইলী সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছে ইসরাইলের আরো তিন সেনাসদস্য।
যুদ্ধ থামানোর অনুরোধ জানিয়েছে পোপ ফ্রান্সিস।
এখন পর্যন্ত মোট ৩১টি মসজিদ ধ্বংস করেছে ইসরাইল বাহিনী। ৩টি গির্জাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর
ইসরাইলের সাথে সংহতি জানাতে ইসরাইল সফর করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। এ সময় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসরাইলের প্রতি ফ্রান্সের সমর্থন ও সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন এমানুয়েল ম্যাঁক্রো।
হামাসের হাতে বন্দিদের মধ্যে ৩০ জন ফ্রান্সের নাগরিক আছে বলে জানা গেছে।
এ পর্যন্ত ইসরাইল সফর করেছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট, জার্মান চ্যান্সেলর, ইটালি ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।
গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ১৯ ফিলিস্তিনী সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন।
আলজাজিরার রিপোর্টার ফওজি বুশরা বলেছেন, গাজার গণহত্যা আমেরিকা ও পশ্চিমারা ছাড়া সারা বিশ্ব দেখে!
ইরাক থেকে কূটনীতিকদের সরানোর নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা হলে প্রতিশোধ নেবে যুক্তরাষ্ট্র।
হামাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া বন্দি সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, ‘আলকাস্সামের সদস্যরা বন্দিদের সাথে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেছে।’ তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি এবং তার সাথে আরো যারা বন্দি ছিলেন তাদের সাথে সদয় আচরণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যের দিকেও মনোযোগী ছিল তারা। হামাসের সৈন্যরা যা আহার করত তাদেরকে তা-ই দিত।
গতকাল মাত্র ১৪টি ট্রাককে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে রাফাহ সীমান্তে প্রবেশ করতে দিয়েছে ইসরাইল।
ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, এ পর্যন্ত যে সাহায্য প্রবেশ করেছে তা গাজা উপত্যকার চাহিদার তুলনায় সমুদ্রে এক ফোঁটা পানি।
হামাস বিয়ারশেবা, তেল আবিব এবং বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে।
হামাস জানিয়েছে, তাদের বাহিনী আসকালানের দক্ষিণে জিকিমের সৈকতে সমুদ্রপথে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে।
বুধবার, ২৫ অক্টোবর
এরদোগানের সাহসী উচ্চারণ : হামাস সন্ত্রাসী সংগঠন নয়, বরং একটি মুক্তি আন্দোলন। তারা নিজেদের ভূমি ও জনগণকে বাঁচাতে সংগ্রাম করছে।
নিউইয়র্ক টাইমস একটি তদন্ত প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা বলেছ, হাসপাতালে যে ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল তা গাজা থেকে নয়, তেল আবিব থেকেই ছোঁড়া হয়েছিল।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
মার্কিন সামরিক উপদেষ্টারা ইসরাইলকে এবং ইরাকের যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান এড়াতে আহ্বান জানিয়েছে।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান বলেছে, ইসরাইলের জেনে রাখা উচিত যে, হামাসকে ধ্বংস করা সুদূরপরাহত।
অন্যদিকে ব্রিটিশ অভিবাসন মন্ত্রী বলেছে, আমরা যুদ্ধবিরতির দাবি জানাচ্ছি না। আমরা বিশ্বাস করি না যে, ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে!
গতকাল মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত নিয়ে বৈঠকে বসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। সেখানে নিজের দেওয়া বক্তব্যে মহাসচিব গুতেরেস বলেন, হামাস বিনা কারণে ইসরাইলে হামলা চালায়নি। এতে তার পদত্যাগ দাবি করে ইসরাইল।
নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের উদ্দেশে জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস বলেছিলেন, ‘এটি স্বীকার করে নিতে হবে যে, ইসরাইলে হামাসের হামলা এমনিতেই হয়নি। ফিলিস্তিনের মানুষ ৫৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর দখলদারির মধ্যে রয়েছে। তারা দেখেছে, তাদের ভূখণ্ড দীর্ঘদিন ধরে দখল করা হয়েছে, তারা সহিংসতায় জর্জরিত হয়েছে, তাদের অর্থনীতির গলা টিপে রাখা হয়েছে, তাদের বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে এবং বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই সমস্যার রাজনৈতিক সমস্যার যে আশা তাদের ছিল, সেটি হারিয়ে যাচ্ছে।’
গুতেরেসের বক্তব্যের পর জাতিসঙ্ঘকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘ ত্রাণবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথসের ভিসা বাতিল করেছে ইসরাইল।
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে : তুরস্কের জ্বালানি মন্ত্রী তেল আবিব সফর বাতিল করেছেন এবং জ্বালানি ক্ষেত্রে ইসরাইলের সাথে সহযোগিতা করার পরিকল্পনা স্থগিত করেছেন।
আলজাজিরা জানায় : সাংবাদিক জামাল আলফাকাউই খান ইউনিসে ইসরাইলী বোমা হামলায় শহীদ হন। এপর্যন্ত ২৩ সাংবাদিক শহীদ হলেন।
ইউনিসেফ জানিয়েছে : গাজায় চলমান হামলার ফলে ২,৩৬০ শিশু নিহত এবং ৫,৩৬৪ শিশু আহত হয়েছে।
UNRWA বলছে : প্রায় ৬,০০,০০০ বাস্তুচ্যুত। গাজার ৫০% মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। ‘অনেক মানুষ রাস্তায় ঘুমাচ্ছে।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় : যুদ্ধে শহীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬,৫৪৬ যার মধ্যে ২,৭০৪ শিশু রয়েছে।
একজন ইসরাইলী সাংবাদিক গাজা উপত্যকার সকল নাগরিককে হত্যার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘গাজায় নিরপরাধ কেউ নেই, সবাইকে হত্যা করা হোক!’