প্রশ্নোত্তর
[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম প্রশ্নোত্তর। এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]
প্রশ্ন ৭৬ : সিদরাতুল মুনতাহা কী?
উত্তর : সিদরাহ (سدرة) অর্থ বরই গাছ। মুনতাহা (منتهى) অর্থ শেষপ্রান্ত। সপ্তম আকাশে একটি বিশাল বরই গাছ আছে, যা অতিক্রম করার অনুমতি ঊর্ধ্বজগতেরও কারও নেই। এটিই সিদরাতুল মুনতাহা। (দ্র. তাফসীরে তবারী ২২/৩৩-৩৯; তাফসীরে কাবীর ২৮/২৫২; ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ৭/২১২)
প্রশ্ন ৭৭ : সূরা যুমারের ৬ নম্বর আয়াত সম্পর্কে আমি দুটি বিষয় জানতে চাচ্ছি—
ক. উক্ত আয়াতে কোন্ আট প্রকার চতুষ্পদ প্রাণীর কথা বলা হয়েছে?
খ. মাতৃগর্ভের তিন স্তরের অন্ধকার কী কী?
উত্তর : (ক) সূরা যুমারের ৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে—
خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَ اَنْزَلَ لَكُمْ مِّنَ الْاَنْعَامِ ثَمٰنِیَةَ اَزْوَاجٍ یَخْلُقُكُمْ فِیْ بُطُوْنِ اُمَّهٰتِكُمْ خَلْقًا مِّنْۢ بَعْدِ خَلْقٍ فِیْ ظُلُمٰتٍ ثَلٰثٍ ذٰلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَاَنّٰی تُصْرَفُوْنَ.
তিনি তোমাদের সকলকে সৃষ্টি করেছেন একই ব্যক্তি থেকে, আর তার জোড়া বানিয়েছেন তারই থেকে। আর তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু থেকে আটটি প্রকার সৃষ্টি করেছেন। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভে এভাবে সৃষ্টি করেন যে, তিন অন্ধকারের মধ্যে তোমরা একের পর এক সৃজনস্তর অতিক্রম কর। তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের প্রতিপালক। সমস্ত রাজত্ব তাঁরই। তিনি ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই, তারপরও কে কোথা থেকে তোমাদের মুখ ফিরিয়ে দিচ্ছে? —সূরা যুমার (৩৯) : ৬
এ আয়াতে ‘আট প্রকার’ চতুষ্পদ জন্তু দ্বারা উট, গরু, ভেড়া ও ছাগল বোঝানো উদ্দেশ্য। এর প্রত্যেকটির নর ও মাদী মিলে মোট আটটি হয়। অন্যত্র সূরা আনআমেও এ আটটি প্রাণীর কথা বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে—
ثَمٰنِیَةَ اَزْوَاجٍ مِنَ الضَّاْنِ اثْنَیْنِ وَ مِنَ الْمَعْزِ اثْنَیْنِ ...
وَ مِنَ الْاِبِلِ اثْنَیْنِ وَ مِنَ الْبَقَرِ اثْنَیْنِ.
‘(আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন) আটটি নর ও মাদি : ভেড়ার দুটি এবং ছাগলের দুটি।... এবং (সৃষ্টি করেছেন) উটের দুটি ও গরুর দুটি।... —সূরা আনআম (৬) : ১৪৩—১৪৪।
(খ) মাতৃগর্ভের তিন স্তরের অন্ধকার হল, পেটের অন্ধকার, গর্ভাশয়ের অন্ধকার এবং শিশু যে পাতলা ঝিল্লি দিয়ে আবৃত থাকে সে স্তর। (দ্র. তাফসীরে তবারী ২০/১৬২, ১৬৫; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৭০-৭১)
প্রশ্ন ৭৮ : হুজুর, আমি জালালাইন জামাতে পড়ি। আমি শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী সাহেব দামাত বারাকাতুহুমের ‘উলূমুল কুরআন’ কিতাবটি মুতালাআ করেছি। এরপরে উলূমুল কুরআনের কোন্ কিতাবগুলো মুতালাআ করা আমার জন্য উপকারী হবে— জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর : এ কিতাবটি আপনি ভালোভাবে একাধিকবার মুতালাআ করুন। এরপরে আপনি নিম্নোক্ত কিতাবগুলো মুতালাআ করতে পারেন—
ا. يتيمة البيان في شيء من علوم القرآن – مولانا محمد يوسف البنوري رحمه الله (১৩৯৭) هـ
ب. مناهل العرفان في علوم القرآن – مولانا محمد عبد العظيم الزُّرْقاني رحمه الله (১৩৬৭) هـ
ج. التبيان لبعض المباحث المتعلقة بالقرآن على طريق الإتقان – الشيخ طاهر الجزائري رحمه الله (১৩৩৮)هـ.
اعتنى به : الشيخ عبد الفتاح أبو غدة رحمه الله (১৪১৭) هـ
সেইসঙ্গে আপনি তাফসীরে ইবনে কাসীরের মুকাদ্দিমা এবং তাফসীরে হক্কানীর মুকাদ্দিমা মুতালাআ করতে পারেন। আরও বিস্তারিত মুতালাআ করার সুযোগ থাকলে নিম্নোক্ত কিতাবদুটি মুতালাআ করতে পারেন—
د. الإتقان في علوم القرآن – جلال الدين السيوطي رحمه الله (৯১১) هـ
ه. البرهان في علوم القرآن – أبو عبد الله بدر الدين الزركشي رحمه الله (৭৯৪) هـ
এছাড়া আপনি মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম-এর ‘তালিবানে ইলম : পথ ও পাথেয়’ গ্রন্থে এ বিষয়ে আরও দিকনির্দেশনা পাবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন ৭৯ : গত সংখ্যায় মাসিক আলকাউসার পত্রিকায় এক ভাইয়ের একটি প্রশ্নের জবাবে ‘আততাফসীর ওয়াল মুফাসসিরূন’ নামে একটি কিতাবের নাম লেখা হয়েছে। আমি কিতাবটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি।
উত্তর : শায়েখ মুহাম্মাদ হুসাইন আযযাহাবী (ওফাত : ১৩৯৭ হি.) التفسير والمفسرون (আততাফসীর ওয়াল মুফাসসিরূন) কিতাবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তাফসীরশাস্ত্রের ক্রমবিকাশের ইতিহাস এবং যুগে যুগে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর বিভিন্ন শাস্ত্রীয় ব্যক্তিবর্গ কী কী তাফসীরগ্রন্থ লিখেছেন সেগুলোর পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য বিশদভাবে তুলে ধরেছেন। সেইসঙ্গে বাতিল ফেরকাগুলো যেসব তাফসীরগ্রন্থ লিখেছে সেগুলো নিয়েও আলোচনা করেছেন। এ কিতাবে একটি মুকাদ্দিমা, তিনটি অধ্যায় এবং একটি পরিশিষ্ট রয়েছে।
কিতাবটি অনেক মাকতাবা থেকেই প্রকাশিত হয়েছে। এর দারুল হাদীস, কায়রোর নুসখাটি এক ভলিউমে তিন অংশে বিভক্ত। প্রথম দুই অংশ মুসান্নিফের লেখা আর শেষ অংশটি মুসান্নিফের ছেলে মুসতফা মুহাম্মাদ আযযাহাবীর লেখা। সেই অংশে মুসতফা আযযাহাবী মুসান্নিফের কিতাবে উল্লেখ নেই এমন আরও কিছু তাফসীরগ্রন্থের আলোচনা করেছেন।
দারুল আরকাম ইবনে আবিল আরকাম, বৈরুতের নুসখাটি তিন খণ্ডে ছেপেছে। প্রথম দুই খণ্ডে মুসান্নিফের মূল কিতাব, আর শেষ খণ্ডে এ বিষয়ে মুসান্নিফের আরও কিছু লেখা যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। শিয়াদের বিভিন্ন ফেরকার উৎপত্তির ইতিহাস এবং তাদের কিছু তাফসীরগ্রন্থ ও তাফসীরের ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন তাহরীফ নিয়ে তিনি কিছু নোট করেছিলেন। সেগুলোকেই তৃতীয় খণ্ডে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
কোনো কোনো মাকতাবার নুসখায় এ সংযুক্তি বা মুসতফা আযযাহাবীর লেখা কোনোটিই নেই। শুধু মুসান্নিফের মূল কিতাবটি ছাপা হয়েছে। এ বিষয়ে এ কিতাবটি একটি অনবদ্য সংকলন।
প্রশ্ন ৮০ : আমি শুনেছি যে, তরজমায়ে শাইখুল হিন্দ স্বতন্ত্র তরজমা নয়। আমি এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি। আরও জানতে চাচ্ছি, তরজমায়ে শাইখুল হিন্দের কি আলাদা কোনো নাম আছে?
উত্তর : শাহ আবদুল কাদের রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উর্দূতে কুরআন কারীমের তরজমা করেন। সেটার নাম মূযিহে কুরআন। সে অনুবাদের ভাষা ছিল প্রাচীন উর্দূ, যা পরবর্তীকালের পাঠকদের বোঝার জন্য কঠিন ছিল। তাই শাইখুল হিন্দ রাহ. সে অনুবাদটির কিছু ভাষাগত পরিবর্তন ও পরিমার্জন করেন। এটিই তরজমায়ে শাইখুল হিন্দ নামে পরিচিত। তবে তরজমায়ে শাইখুল হিন্দের নাম মূযিহে ফুরকান।