প্রশ্নোত্তর
[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম প্রশ্নোত্তর। এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]
প্রশ্ন ৭১. কুরআনে বিভিন্ন জয়গায় ‘আরশ’ শব্দটি রয়েছে। ‘আরশ’ মানে কী?
উত্তর : আরশ (عرش) শব্দের অর্থ হল সিংহাসন, উঁচু মাচা বা চালাঘর। এর বহুবচন হল উরূশ (عروش)। কুরআন কারীমে মাচা এবং সিংহাসন অর্থে বিভিন্ন জাগায় ‘আরশ’, ‘উরূশ’ এবং এর বিশেষণ ‘মা‘রূশ’ (معروش) ইত্যাদি শব্দ রয়েছে। যেমন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম তাঁর পিতামাতাকে সিংহাসনে বসিয়েছেন, একথা কুরআন কারীমে এভাবে এসেছে-
وَ رَفَعَ اَبَوَیْهِ عَلَی الْعَرْشِ.
অর্থাৎ সে তার পিতামাতাকে সিংহাসনে বসাল। -সূরা ইউসুফ (১২) : ১০০
হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম যে সাবা দেশের রাণীর সিংহাসন উঠিয়ে নিয়ে আসতে বলেছেন, তা কুরআন কারীমে এভাবে এসেছে-
قَالَ یٰۤاَیُّهَا الْمَلَؤُا اَیُّكُمْ یَاْتِیْنِیْ بِعَرْشِهَا.
অর্থাৎ সুলাইমান বলল, ওহে সভাসদগণ! তোমাদের মধ্যে কে আমার কাছে তার সিংহাসন নিয়ে আসবে? -সূরা নামল (২৭) : ৩৮
আবার অন্যত্র বাগানের মাচা বোঝাতে বর্ণিত হয়েছে-
وَ هُوَ الَّذِیْۤ اَنْشَاَ جَنّٰتٍ مَّعْرُوْشٰتٍ وَّ غَیْرَ مَعْرُوْشٰتٍ.
অর্থাৎ আল্লাহ তিনি, যিনি উদ্যানসমূহ সৃষ্টি করেছেন, (যার মধ্যে) কতক (লতাযুক্ত, যা) মাচা আশ্রিত এবং কতক মাচা আশ্রিত নয়। -সূরা আনআম (৬) : ১৪১
এখানে মা‘রূশাত শব্দটি আরশ শব্দ থেকেই নির্গত বিশেষণ, যার অর্থ মাচা আশ্রিত।
অনেক সময় ইজ্জত, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বোঝাতেও ‘আরশ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
কুরআন কারীমে আল্লাহ তাআলার আরশের কথাও বহুবার এসেছে। যেমন,
وَ تَرَی الْمَلٰٓىِٕكَةَ حَآفِّیْنَ مِنْ حَوْلِ الْعَرْشِ یُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ.
তুমি ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাবে, তারা আরশের চারপাশ ঘিরে তাদের প্রতিপালকের প্রশংসার সাথে তাঁর তাসবীহ পাঠ করছে। -সূরা যুমার (৩৯) : ৭৫
আরও বলা হয়েছে-
قُلْ مَنْ رَّبُّ السَّمٰوٰتِ السَّبْعِ وَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِیْمِ.
বল, কে সাত আকাশের মালিক এবং মহা আরশের মালিক? -সূরা যুমার (২৩) : ৮৬
আরও বলা হয়েছে-
وَ هُوَ الْغَفُوْرُ الْوَدُوْدُ،ذُو الْعَرْشِ الْمَجِیْدُ.
তিনি অতি ক্ষমাশীল, অতি প্রেমময়। আরশের মালিক, সম্মানিত। -সূরা বুরুজ (৮৫) : ১৪-১৫
তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আরশের বিস্তারিত বিবরণ কী এবং তার ধরন ও প্রকৃতি কী- তা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। এ বিষয়ে কুরআন কারীম ও সহীহ হাদীসে যতটুকু এসেছে, আমাদেরকে তাতেই ক্ষান্ত থাকতে হবে। (দ্রষ্টব্য : মুফরাদাতুল কুরআন, পৃষ্ঠা ৫৫৮; লিসানুল আরব ১০/৯৬; লুগাতুল কুরআন ৪/২৬৯; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৩৫২)
প্রশ্ন ৭২. সূরা রূমে যে রোমাকদের বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, তারা কোন্ অঞ্চলের কোন্ জাতি ছিল?
উত্তর : সেটা তখনকার রোমান সাম্রাজ্য, যা আরবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে শাম, মিশর, এশিয়া মাইনর ও ইউরোপের বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এক সাম্রাজ্য ছিল। এর সম্রাটকে বলা হত কায়সার। এর সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ছিল।
এ ভবিষ্যদ্বাণীর নয় বছরের মধ্যেই রোমানরা পারসিকদের ওপর বিজয় লাভ করে এবং কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হয়।
প্রশ্ন ৭৩. সূরা আররহমানের فَبِاَیِّ اٰلَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ (সুতরাং তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ নিআমতকে অস্বীকার করবে?) আয়াতে দ্বিবচন দ্বারা কারা উদ্দেশ্য?
উত্তর : এখানে দ্বিবচন দ্বারা মানুষ ও জিনজাতি উদ্দেশ্য। এ সূরারই ১৪ ও ১৫ নম্বর আয়াতে মানুষ ও জিন সৃষ্টির উপাদানের কথা বলা হয়েছে। আবার ৩৩ নম্বর আয়াতে یٰمَعْشَرَ الْجِنِّ وَ الْاِنْسِ (হে মানুষ ও জিন সম্প্রদায়!) বলে মানুষ ও জিনকে একত্রে সম্বোধন করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৭৪. হুজুর, আমি এমন দুই-তিনটি কিতাবের নাম জানতে চাচ্ছি, যেগুলোতে বিভিন্ন তাফসীরের কিতাবের বৈশিষ্ট্যসহ পরিচিতি লেখা হয়েছে। যেন তাফসীরের কিতাবাদি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেতে পারি। আল্লাহ তাআলা আপনাকে জাযায়ে খায়ের দান করেন।
উত্তর : এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে আপনি নিম্নোক্ত কিতাবগুলো মুতালাআ করতে পারেন।
১.
التفسير والمفسرون – الدكتور محمد حسين الذهبي
কিতাবটি একাধিক মাকতাবা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। একই নামে আরও কিতাব আছে। তুলনামূলকভাবে শায়েখ মুহাম্মাদ হুসাইন আযযাহাবীর কিতাবটি ভালো।
২.
علوم القرآن – مولانا محمد تقي عثماني
এ কিতাবের শেষ দিকে মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম প্রসিদ্ধ কিছু তাফসীরের তাআররুফ (পরিচিতি) দিয়েছেন।
৩.
يتيمة البيان في شيء من علوم القرآن – مولانا محمد يوسف البنوري رحمه الله (১৩৯৭هـ)
মূলত এটি মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রাহ.-এর ‘মুশকিলাতুল কুরআন’ কিতাবের মুকাদ্দিমা। তবে আলাদাভাবেও এটি ছেপেছে। এখানে ইউসুফ বানূরী রাহ. উলূমুল কুরআনের অন্যান্য বিষয়ের আলোচনার সঙ্গে অল্প কয়েকটি তাফসীরগ্রন্থ সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন।
৪.
الإسرائيليات والموضوعات في كتب التفسير - محمد أبو شُهبة (১৪০৩هـ)
এছাড়া তাফসীরের কিতাবের আরও বিস্তারিত তালিকা জানতে চাইলে নিম্নোক্ত কিতাবটিও দেখতে পারেন-
৫।
فهرست مصنفات تفسير القرآن الكريم
কিতাবটি তিন খণ্ডে মারকাযুদ দিরাসাতিল কুরআনিয়্যাহ প্রস্তুত করেছে। এখানে তাফসীরের কিতাবের তালিকার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও রয়েছে।
এছাড়াও আপনি মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব দামাত বারাকাতুম-এর ‘তালিবানে ইলম : পথ ও পাথেয়’ গ্রন্থটি পড়তে পারেন। এটি আলকাউসারেরই শিক্ষার্থীদের পাতায় প্রকাশিত মাকালা ও প্রশ্নোত্তরসমূহের সংকলন। এ গ্রন্থেও এ বিষয়ক কয়েকটি মাকালা রয়েছে।
প্রশ্ন ৭৫. আপনাদের পত্রিকা থেকে জেনেছি, ইমাম রাগেব আসফাহানী রাহ.-এর المفردات في غريب القرآن কিতাবটি এই নামে এবং مفردات ألفاظ القرآن নামেও ছেপেছে। আমার প্রশ্ন হল, আমি একটা বাংলা বইয়ে এই কিতাবের নাম المعجم في غريب القرآن লেখা দেখেছি। কিতাবটি কি এই নামেও ছেপেছে? অথবা অন্য আরও কোনো নামে?
উত্তর : রাগেব আসফাহানী রাহ.-এর কিতাবটি المفردات في غريب القرآن নামে একাধিক মাকতাবা থেকে, مفردات ألفاظ القرآن নামে দারুল কলম, দিমাশক থেকে এবং معجم مفردات ألفاظ القرآن নামে দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বইরুত থেকে ছেপেছে।
এছাড়া المعجم في غريب القرآن নামে ছেপেছে বলে আমরা খুঁজে পাইনি এবং তাঁর জীবনীকাররাও তাঁর কিতাবের নাম এভাবে উল্লেখ করেননি।
উল্লেখ্য, معجم غريب القرآن নামে ইমাম কাসেম ইবনে কুতলূবুগা রাহ.-এর একটি কিতাব আছে; যা দারুন নাওয়াদিরসহ অন্যান্য মাকতাবা থেকেও ছেপেছে।