প্রশ্নোত্তর
[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম প্রশ্নোত্তর। এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]
প্রশ্ন ৬৭. কুরআন শরীফের কিছু সূরার নামের পাশে লেখা থাকে মাক্কী আবার কিছু সূরার নামের পাশে লেখা থাকে মাদানী। এর কারণ কী?
উত্তর : কুরআন কারীমের যে আয়াতগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদীনায় হিজরতের পূর্বে নাযিল হয়েছে, সেগুলো সব মাক্কী আয়াত। আর তাঁর মদীনায় হিজরতের পরে যত আয়াত নাযিল হয়েছে, সেগুলো মাদানী আয়াত। অথার্ৎ হিজরতের আগে মক্কা শহরের বাইরে যত আয়াত নাযিল হয়েছে এবং সেসময়ের বিভিন্ন সফরে যত আয়াত নাযিল হয়েছে, সেগুলোও মাক্কী আয়াত। তেমনি হিজরতের পরে মদীনা শহরের বাইরে যত আয়াত নাযিল হয়েছে এবং হিজরত পরবর্তী বিভিন্ন সফরে যত আয়াত নাযিল হয়েছে, সেগুলোও মাদানী আয়াত।
কোনো কোনো সূরা পুরোটাই হিজরতের আগে নাযিল হয়েছে, সেগুলো মাক্কী সূরা। আর কোনো কোনো সূরা পুরোটাই হিজরতের পরে নাযিল হয়েছে, সেগুলো মাদানী সূরা। তবে কিছু সূরা এমন আছে, যেগুলো প্রায় পুরোটা হিজরতের আগে নাযিল হয়েছে, কেবল অল্প কিছু আয়াত ছাড়া। আবার কিছু সূরা এমন, যেগুলো প্রায় পুরোটাই হিজরতের পরে নাযিল হয়েছে, কেবল অল্প কিছু আয়াত ছাড়া। এসকল সূরাকে অধিকাংশ আয়াতের হিসাবে মাক্কী বা মাদানী সূরা বলা হয়। এ বিষয়টি বোঝাতেই প্রত্যেক সূরার পাশে মাক্কী বা মাদানী লেখা থাকে। (আলবুরহান ফী উলূমিল কুরআন ১/২৮০; উলূমুল কুরআন, পৃষ্ঠা ৬২)
এ বিষয়ের প্রাথমিক জ্ঞানলাভের জন্য এতটুকু আলোচনাই যথেষ্ট। বিস্তারিত জানার জন্য উলূমুল কুরআনের কিতাবাদি দেখা যেতে পারে।
প্রশ্ন ৬৮. তাফসীর ও উলূমুল কুরআনের কোনো কোনো কিতাবে بحر নামক কিতাবের হাওয়ালা দেখা যায়। এটা যে ফিকহে হানাফীর البحر الرائق কিতাব নয়, তা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এটি কোন্ কিতাব?
উত্তর : البحر المحيط নামে একটি তাফসীরগ্রন্থ রয়েছে। বিশিষ্ট নাহুবিদ ইমাম আবূ হায়্যান মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ আন্দালুসী রাহ. এ কিতাবের মুসান্নিফ। তাফসীর ও উলূমুল কুরআনের কোনো কোনো কিতাবে بحر বলে সাধারণত এ কিতাবের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়। এ কিতাবে কুরআন কারীমের শাব্দিক ব্যাখ্যা এবং لغوي ও نحوي কাওয়ায়েদ বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাফসীরের অন্যান্য অনেক দিকও এ কিতাবে সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এর একটি সংস্করণ দারু ইহইয়াইত তুরাছ থেকে ৮ খণ্ডে ছেপেছে। (আততাফসীর ওয়াল মুফাসসিরূন ১/৩১৮; তবাকাতুল মুফাসসিরীন, পৃষ্ঠা ২৭৯)
প্রশ্ন ৬৯. মুহতারাম, আমার জানার বিষয় হল, ইমাম ইবনুল জাওযী রাহ.—কৃত فنون الأفنان في عيون علوم القرآن কিতাবটি কি অন্য কোনো নামেও পরিচিত? কিতাবটি আমাদের জন্য কতটুকু উপযোগী? অনুগ্রহপূর্বক বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : কিতাবটি فنون الأفنان في عيون علوم القرآن নামে হাসান যিয়াউদ্দীন—এর তাহকীকে দারুল বাশাইরুল ইসলামিয়া থেকে ছেপেছে। তবে রশীদ আবদুর রহমান আলউবাইদীর তাহকীকে আলজামিউল ইলমী আলইরাকী থেকে فنون الأفنان في عجائب علوم القرآن নামে ছেপেছে।
জালালাইন—মিশকাত জামাতের ছাত্রভাইদের জন্য কিতাবটি উপকারী হতে পারে।
প্রশ্ন ৭০. সূরা মুরসালাতের ৩০ ও ৩১ নং আয়াতে ظِلّ ও ظَلِیْل শব্দদুটি রয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, ظَلِیْل —কি ظِلّ —এর বহুবচন, নাকি মাসদার? আমি লুগাতে খুঁজে পাইনি। জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর : ظَلِیْل শব্দটি ظِلّ থেকে নির্গত সীগায়ে সিফাত। এটি ظِلّ -এর বহুবচনও নয়, মাসদারও নয়। (লিসানুল আরব ১১/৪১৭; তাজুল আরূস ২৯/৪০৫)