Zilqad 1430   ||   November 2009

স্কুল-কলেজের ইসলামিয়াতের সিলেবাস : একটি পর্যালোচনা

Mawlana Muhammad Abdul Malek

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

১. পরিভাষা ও পরিচিতি

ক. ‘ইবাদতে’র অর্থ

এই শিরোনামের অধীনে ইবাদতের অর্থ বর্ণনা করার পর উপাসনাধর্মী কাজগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছিল, যেগুলোকে শরীয়ত একমাত্র আল্লাহর হক সাব্যস- করেছে। এই কাজগুলোর মধ্যে সালাত, যাকাত ও সওমের আলোচনা করা হয়েছে। এ ধরনের চতুর্থ আমল হচ্ছে হজ্ব।

৪. হজ্ব

হজ্ব তাওহীদের নিদর্শন এবং এমন একটি উপাসনাধর্মী আমল, যাতে অনেকগুলো ইবাদতের সমাবেশ রয়েছে। এটি একমাত্র আল্লাহরই জন্য, অন্য কারো সঙ্গে এমন আচরণ করা সম্পূর্ণ শিরক।

হজ্বের কার্যাবলির সারকথা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা কিছু স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যেখানে তাঁকে স্মরণ করা হবে এবং তাঁর প্রতি ভক্তি ও সম্মান নিবেদন করা হবে। যেমন-কা’বা, আরাফা, মুযদালিফা, মিনা, ছাফা-মারওয়া, মাকামে ইবরাহীম, মসজিদে হারাম ও হারাম শরীফ।

আল্লাহ তাআলা বান্দাদের এই সব স্থান যিয়ারতের আদেশ করেছেন, যেন তারা পৃথিবীর সকল প্রান- থেকে পায়ে হেঁটে বা সওয়ারীতে আরোহন করে বাইতুল্লাহর যিয়ারতের জন্য ইহরামের হালতে আসে। সফরের সকল কষ্ট সহ্য করে, বিশেষ ধরনের সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করে বিশেষ অবস্থায় সেখানে পৌঁছায় এবং আল্লাহর নামে কুরবানী করে, মান্নতসমূহ পূরণ করে, বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করে, হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করে, মুলতাযামে চেহারা ও বুক লাগিয়ে আহাজারি করে, প্রয়োজনসমূহ প্রার্থনা করে, হরমের আদব রক্ষা করে, আরাফা, মুযদালিফা, মিনা ও অন্যান্য বন্দেগীর স্থানসমূহে উপসি'ত হয়ে যিকির, দুআ ও নির্ধারিত আমলসমূহ সম্পন্ন করে। মোটকথা, এই সকল কাজ আল্লাহ তাআলার তা’জিম ও বন্দেগী এবং ভক্তি ও উপাসনার জন্য। এজন্য এ সকল কাজ গায়রুল্লাহর তাজিমের জন্য করা হারাম ও শিরক।

হরমে মক্কা ও হরমে মদীনা ছাড়া অন্য কোনো স'ানকে হরম সাব্যস- করা, কোনো মাযার বা দরবারের সঙ্গে হরমের মতো আচরণ করা সম্পূর্ণ হারাম। বাইতুল্লাহর তাওয়াফ হচ্ছে আল্লাহর বন্দেগীর জন্য। তাই অন্য কোনো ঘর, কবর বা ব্যক্তির তাওয়াফ করা শিরক। কোনো মাজার বা দরবারে নিজের প্রয়োজন পূরণ বা সমস্যার সমাধানের উদ্দেশে সফর করা, গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি প্রাhttp://alkawsar.djangoguys.com/admin/articles/article/34/ণী নিয়ে সফর করা, পীরের নৈকট্য হাসিলের জন্য বা তার সন'ষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করা বা মান্নত করা সবই মারাত্মক শিরক।

হজ্ব শুরুই হয় তাওহীদের ঘোষণার মাধ্যমে-

(তরজমা) আমি হাযির, তোমার দুয়ারে। হে আল্লাহ! আমি হাযির। তোমার কোনো শরীক নেই। আমি হাযির, নিঃসন্দেহে সকল প্রশংসা ও নেয়ামত তোমারই এবং বাজত্বও তোমারই। তোমার কোনো শরীক নেই।

সূরা হজ্বে আল্লাহ তাআলা বলেন-

(তরজমা) আর মানুষের মাঝে হজ্বের ঘোষণা করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পদব্রজে এবং সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উষ্ট্রীসমূহের পিঠে। তারা আসবে দূর দূরানে-র পথ অতিক্রম করে। যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানসমূহে উপসি'ত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযিক হিসাবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলিতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা হতে নিজেরা আহার কর এবং অভাবগ্রস-কে আহার করাও। অতঃপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাদের মান্নত পূর্ণ করে ও তাওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের (কা’বার)।-সূরা হজ্ব : ২৭-২৯

হাদীস শরীফে এসেছে-‘বাইতুল্লাহর তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সায়ী, কংকর নিক্ষেপ সবকিছুই আল্লাহ তাআলার যিকিরের জন্য।’- সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ১৮৮৩; জামে তিরমিযী হাদীস : ৯০২

মুশরিকরাও হজ্ব করত। কিন' তারা এটাকে তাওহীদের পরিবর্তে শিরকী কাজ বানিয়ে নিয়েছিল। এজন্য তারা তালবিয়াও পরিবর্তন করেছিল। তারা লা-শারীকা লাকা-এর পরে নিজেদের পক্ষ থেকে সংযোজন করেছিল, ‘ইল্লা শারীকান তামলিকুহু ওয়ামা মালাক’-অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার কোনো শরীক নেই। তবে এমন শরীক আছে যার সত্ত্বা ও ক্ষমতার তুমিই মালিক।

হজ্বকে শিরকী কাজে পরিণত করার সাথে সাথে তার সকল হুকুম-আহকামও তারা পরিবর্তন করে ফেলেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর হুকুমে এ সব কিছু সংশোধন করেছিলেন। কুরআন মজীদ, হাদীস ও সীরাতের কিতাবে এর বিশদ বর্ণনা বিদ্যমান আছে।

কট্টর বিদআতীরা মাজার ও দরবারসমূহের সাথে যে সকল আচার-অনুষ্ঠান জুড়ে রেখেছে, বিশেষ করে ওরছের সময় যে সকল কর্মকাণ্ড তারা করে থাকে, চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, বাস-বে তা হজ্বের মতো ইবাদতে আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করারই একটি রূপ। হযরত মাওলানা শাহ ইসমাঈল শহীদ রাহ. ‘তাকবিয়াতুল ঈমান’ কিতাবে ঐ জাহেলী এবং শিরকী রসমের ইসলাহ করেছেন।

 

advertisement