Shawal-Zilqad 1428   ||   November 2007

পাঠকের পাতা

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন অতঃপর আমরা...

সংস্কৃতি শব্দটি একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। যা বলতে আমরা বুঝি জ্ঞান, বিশ্বাস, কলা, মার্জিত রুচি ও আচার-আচরণের অপূর্ব সমাবেশ। একটি দেশের সংস্কৃতির ইতিবাচক ও মৌলিক ক্ষেত্রগুলো যখন অন্য দেশের অমার্জিত, অশ্লীল নেতিবাচক সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিকৃত রূপ ধারণ করে তখন তা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে পরিণত হয়। আজকের এই ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার যুগে সমগ্র বিশ্ব অপসংস্কৃতির আগ্রাসনের শিকার। স্যাটেলাইটের বদৌলতে তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্র্য জর্জরিত মুসলিম দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে অপসংস্কৃতির গলিত স্রোত। আমাদের দেশও আজ আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে অত্যন্ত নির্লিপ্তভাবে অবগাহন করে চলেছে। গ্রাম থেকে শহরে পর্যন্ত এমন কোন তথাকথিত সংস্কৃতিমনা পরিবার নেই যেখানে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল নেই। সবাই এখন নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভুলে নষ্ট সংস্কৃতি চর্চায় ব্যস্ত। আমার এক পরিচিত মহিলাকে তার স্বামী বই পড়ার জন্য উপদেশ দিলে ঐ মহিলা প্রত্যুত্তরে বলে যে, এই অডিও ভিজ্যুয়াল যুগে বই পড়া! এর চেয়ে ভারতীয় সিরিয়াল অনেক ভাল। দেখুন! মুসলমান ঘরের ভদ্র মহিলাদের অবস্থা। তারা নিজেদের স্বাতন্ত্র, ধর্মীয় ঐতিহ্য, রুচিশীলতা, মার্জিত সংস্কৃতিকে হারিয়ে আজ পশ্চিমা বেলেল্লাপনা ও অশ্লীলতার সংস্কৃতির ধারক বাহকে পরিণত হয়েছে।

আমাদের সমাজে ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণ হচ্ছে অন্ধ অনুকরণ। অনুকরণের মাধ্যমে মানুষ অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। আজ আমরা পোশাক পরিচ্ছদ ও ভদ্র সম্বোধনেও পশ্চিমা রীতিকে আঁকড়ে ধরে আছি। আমাদের আধুনিক বাবা-মারা সন্তানকে স্মার্ট, প্রগতিশীল বানানোর নামে বিভিন্ন নাচ, গান শিখাচ্ছে। সমাজ ও জাতির প্রাণশক্তি যুব সমাজকে আমাদের সুশীল সমাজের কর্তা-কর্মীরাই ধ্বংস করছে। আজকের বিশ্বায়নের যুগে ইসলাম ও তার চির সুন্দর অনুশাসনগুলো বিশ্বের বিবেকবান মানুষের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। পাশ্চাত্যে অনেক অসৎ, দুশ্চরিত্র, দুর্নীতিবাজ ও চিত্রজগতের লোক আজ শান্তির ধর্ম ইসলামেরই আশ্রয় গ্রহণ করছে এবং সৎ-শালীন জীবনে ফিরে আসছে। তাই আমাদের উচিৎ নিজের ও জাতির ভবিষ্যৎকে রক্ষার জন্য ঈমান ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে আঁকড়ে ধরে রাখা।

নাজনীন ইদ্রিস চৌধুরী

হাটহাজারী মেডিক্যাল রোড, চট্টগ্রাম

 

কুরআনিআ

কিছুদিন আগে 'কুরআন গবেষণা ফাউন্ডেশন' নামক একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে কুরআন বিষয়ক উন্মুক্ত আলোচনা সভা 'কুরআনিআ' অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে কৌতূহলবশে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলাম। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল 'যেসকল ভুল তথ্য মানুষকে না বুঝে কুরআন পড়তে উৎসাহিত করেছে। প্রধান আলোচক ছিলেন একজন সার্জারী বিশেষজ্ঞ অনুষ্ঠানমালায় তার বক্তব্যের পর উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর ও শ্রোতাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আলকুরআন বিষয়ক একটি গবেষণা অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০জন শ্রোতার মধ্যে সবাই ছিলেন সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি। তাদের অনেকের বেশভূষাই প্রমাণ করছিল ব্যক্তিগত জীবনে তারা কতটুকু কুরআনের অনুসারী। টুপি-পাঞ্জাবি পরিহিত পুরোদস্তুর একজন হুজুর হিসাবে আমার উপস্থিতি তাদের অনেকের মাঝে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিল, যা বিভিন্ন আলোচকের বক্তব্য থেকেও বোঝা গেছে।

আমি যে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই তা এই যে, আলকুরআন মুসলিম জাতির এক অমূল্য সম্পদ। কুরআনের জ্ঞান অর্জন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য অপরিহার্য। তাই আলোচনা-গবেষণা, মতবিনিময়, বই-পুস্তক কোনোটিকেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রধানতম লক্ষণীয় বিষয় এই যে, কোনো শাস্ত্র সম্পর্কে গবেষণার অধিকার সেই ব্যক্তিরই রয়েছে যিনি সেই শাস্ত্রের প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বের তত্ত্বাবধানে থেকে শাস্ত্রের মৌলিক ও শাখাগত নীতিমালা ও আনুষাঙ্গিক প্রয়োজনীয় বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেছেন। অন্যথায় এই গবেষণা হবে নিছক অনধিকার চর্চা এবং বিশৃঙ্খলা, যা কোনোদিন কোনো শুভফল বয়ে আনবে না। জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যদিও এই নীতি আমরা সম্পূর্ণরূপে মেনে চলি, কিন্তু ইসলামী উলূম (কুরআন, হাদীস, ফিকহ)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এ মূলনীতি ভুলে যাই। যতদিন ইসলামী বিশ্বে এই নীতি পালিত হয়েছে ততদিন মুসলিমগণ জ্ঞান-গবেষণার ক্ষেত্রে অনভিপ্রেত বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত থেকেছে তাই একথা দৃঢ়তার সঙ্গেই বলা যায় যে, বর্তমানে যারা গবেষণার সকল নীতিতে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে কুরআন নিয়ে গবেষণা' করতে প্রয়াসী হয়েছেন তাদের এই পদক্ষেপ ইলম ও জ্ঞানের পরিম-লে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ব্যতীত আর কিছুই উপহার দিবে না। বিশেষত আলকুরআন গবেষণার ক্ষেত্রে যাদের পথিকৃত হলেন ড. জাকির নাইকের মতো টিভি উপস্থাপক এবং ডা. মতিয়ার রহমানের মত সার্জারী চিকিৎসক, যারা একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারকে 'কুরআনিআ'র মতো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ফলেই অবলীলায় মুফাসসির' খেতাব দিয়ে দিচ্ছে। আমি শুধু বলবো, মিডিয়ার কল্যাণে তথাকথিত গবেষণার এই বিষবাষ্প সমাজের বিভিন্ন স্তরে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে, যা ইসলামী মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের ভিতকে দুর্বল করে দিচ্ছে। আমরা গবেষণার পক্ষে, তবে গবেষণার নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পক্ষে নই। তাই এর প্রতিকারে উলামায়ে কেরামকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। কাউকে প্রতিপক্ষ মনে করে নয়; উদারতা ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে সমস্যার গঠনমূলক সমাধান এখন সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে কাউসারের বিশেষ ভূমিকাও আমাদের কাম্য।

আফনান

লালবাগ, ঢাকা

 

advertisement