Shawal-Zilqad 1428   ||   November 2007

কালচার
বিপন্নদের সাহায্যে নাচগান!

Waris Rabbani

যে কোন মুসলমানকে তার বিপদকালে সাহায্য করার ফযীলত ও মর্যাদা অনেক। একইভাবে যে কোনো মানুষকে বরং যে কোনো প্রাণীকেই বিপন্নতার মুহূর্তে সাহায্য ও সেবা দেওয়ার প্রেরণা ইসলামের অন্যতম সুন্দর বৈশিষ্ট্য। এ ধরনের সাহায্যে যেমন মানবিকতা, ভ্রাতৃত্ব ও উদারতার প্রকাশ ঘটে তেমনি এসব সাহায্য ইখলাসের সঙ্গে করা হলে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেও অনেক উত্তম প্রতিদানের আশা করা যায়। এক কথায় অন্যের বিপন্নতার মুহূর্তে নিজের সম্পদ, শ্রম ও মনযোগ ব্যয়ের বিষয়টি প্রশংসনীয় একটি সুন্দর আচরণ, সন্দেহ নেই। তীব্র অর্থ কষ্টের সময়, অসুস্থতা ও পীড়ার সময়, খরা বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ ধরনের সাহায্যে মানুষের বিপদও কাটে, সাহায্যকারীর মহত্বও ফুটে উঠে। নিজের খরচে অন্যের গরজ পুরা করার মতো এসব আচরণ ও ঘটনার মধ্য দিয়েই মানুষের মনুষ্যত্ব বিকশিত হয়। স্বার্থহীন সেবা ও সহায়তার মধ্য দিয়ে মানবিক দায় ও বন্ধনের অমলিন চিত্র ফুটে ওঠে। কিন্তু বিপন্ন মানুষের বিপন্নতা দূর করতে সক্ষম, স্বচ্ছল ও সুখী মানুষের কাছ থেকে ফা- সংগ্রহের জন্য যদি গান-বাদ্য, নাচের আয়োজন করতে হয়, চিত্র জগতের নায়ক-নায়িকাদের খেলার মাঠে নামিয়ে ছুটাছুটি করিয়ে মনোরঞ্জন ঘটাতে হয় তাহলে সেই ফা- ও সে 'সাহায্য'কে আপনি কী বলবেন? এটা কি কোনো মানবিক আচরণ? বন্যার্তদের জন্য পকেট থেকে টাকা বের করতে হচ্ছে নর্তকীদের নাচ দেখিয়ে, গায়ক-গায়িকাদের দিয়ে গান গাইয়ে-এরপরও এটা কি সাহায্য' বা 'সেবা'র আওতায় পড়ে? অন্য কথায় ক্ষুধার্ত ও বিপন্ন নারীকে তার ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থার বদৌলতে সে নারীর শরীরী সৌন্দর্য উপভোগ করানোর শর্ত করা হলে আপনি তাকে কী বলতে পারেন? হাঁ, প্রবৃত্তি ও অশ্লীলতাকাতর সমাজেরই এটি একটি পাশবিক কালচার। এসেছেও সেখান থেকেই। দুর্গতদের জন্য মন ভেজাতে হলে চোখ, মন ও শরীরে কিছু ফূর্তির তারল্য আমদানি করায় যারা কোনো দোষ দেখেন না, তাদের সেবাধারণা' আমরা ধার করে জাতে উঠার ভুল কসরৎ করে চলেছি। এ কারণেই বন্যার্তদের নামে বিভিন্ন ধরনের চ্যারিটি শো, কনসার্ট ইত্যাদি অনুষ্ঠানের হিড়িক পড়ে যায়। গেল বন্যায় কেবল নয়, এ ধরণের দুর্যোগে-সংকটে আখেরাতে বিশ^াসী হয়েও নিজেদের বদআমল নিজেদের উপর দুর্ভোগ আনে- এই চেতনায় আস্থাশীল হয়েও আমরা ঈমান বিনাশী, চরিত্র বিধ্বংসী ও অমানবিক এসব ঘটনায় নিজেদের কিভাবে জড়িয়ে ফেলি বুঝতে কষ্টই হয়। আমাকে, 'ফূর্তি' দিলে বিপদগ্রস্তদের আমি টাকা দেবো- এই হচ্ছে এসব ঘটনার মূলকথা। মারাত্মক ব্যাপার হলো, এসব তথাকথিত চ্যারিটি শো ও খোলার প্রচারে প্রধান মিডিয়াগুলোও বড় রকম উৎসাহী ভূমিকা পালন করে থাকে। ভাবখানা এমন যে, এসব চ্যারিটি নাচগান দিয়ে আসলেই যেন বন্যার্তদের বিপদ কেটে যাচ্ছে। সাহায্যের জন্য, সেবার জন্য পাশবিক এই আয়োজন ও প্রনোদনার মাঝে তারা কোনো ফাঁকই যেন খুঁজে পান না। আসলে প্রবৃত্তিকে দুলুনি দেওয়া প্রতিটি তামাশাতেই মিডিয়ার উৎসাহ দেখা যায় বেশি। চাই সেটি মানবিক বিষয় হোক, চাই কি অমানবিক নিষ্ঠুরতাই হোক। ফূর্তিবাজ ও মিডিয়াকে তামাশা হিসেবে পেতে আগ্রহী একশ্রেণীর মানুষের রুচিও এখন এমন হয়ে গেছে যে, খোলামেলা, চটকদারি ও চিত্তদোলা দেওয়া কিছুই তারা মিডিয়াতে খুঁজে। এই রুচির মানুষেরাই সেবা ও সাহায্যের হাত প্রসারিত করে নাচগান দেখে। বন্যায় দুর্গত ও বিপন্ন মানুষের সাহায্য সহায়তার সময় তাদের চেয়েও বেশি দুর্গত ও বিপন্নচিত্ত এ অদ্ভুৎ স্বভাবের মানুষদের দুর্বুদ্ধিজাত দুরবস্থার জন্যও সকলের ভাবা দরকার।

 

 

advertisement