সেবা
হাজী সাহেবদের বাড়িভাড়া নিয়ে কেন এই গাফলতি?
প্রায় প্রতিবারই হজ্বব্যবস্থাপনার কোনো না কোনো ত্রুটি ও অসঙ্গতি নিয়ে হজ্বের প্রাক্কালে হাজী সাহেবগণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বলা যায় তারা উদ্বিগ্ন হতে বাধ্য হন। সেসব ত্রুটি ও অসঙ্গতির খবর পত্র পত্রিকাতেও ছাপা হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, হজ্ব এজেন্সিসমূহ এবং হজ্ব ব্যবস্থাপনায় জড়িত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তখন তড়িঘড়ি করে দায়সারা বক্তব্য দেয়। কিন্তু তাতে বাস্তব পেরেশানী ও উদ্বেগের ক্ষেত্রে তেমন কোনো হেরফেরের কারণ ঘটে না। কখনো টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি, কখনো অননুমোদিত অযোগ্য বাড়িঘর ভাড়া নেওয়া ইত্যাদি। এবার জানা গেল, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রায় একচল্লিশ হাজার হজযাত্রীর অধিকাংশের জন্যই অগ্রিম বাড়িভাড়ার কাজ অক্টোবরের ২০/২২ তারিখ নাগাদ সম্পন্ন হয়নি একারণে হাজ্বী সাহেবদের হজ্বকালীন দুর্ভোগের প্রবল আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। পত্রপত্রিকার রিপোর্টে দেখা গেল, সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্ব পালনেচ্ছু প্রায় পাঁচ হাজার হজ্বযাত্রীর জন্য বাড়িভাড়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলেও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় একচল্লিশ হাজার হজযাত্রীর সবার জন্য বাড়িভাড়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। রমযান মাসের মধ্যে বাড়িভাড়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করার সরকারি চাপ থাকলেও হজ্ব এজেন্সিগুলো তাতে তেমন একটা আমল দেননি। এক সাক্ষাৎকারে হাব-এর সেক্রেটারি বলেছেন, মৌখিকভাবে বাড়িভাড়ার বিষয়টি অনেকেই সেরে ফেলেছেন, চুক্তিপত্র হতে বাকী রয়ে গেছে। সেটি হয়ে যাবে কয়েকদিনের মধ্যে। কয়েকশ এজেন্সির করণীয় দায়িত্ব সম্পর্কে তার দেওয়া এ জবাব সন্তুষ্টিদায়ক মনে হয়নি। এজেন্সিগুলো তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে এরকম দায়সারা বক্তব্য ও কাজ আগেও দেখিয়েছে। সেজন্যই আশংকার মাত্রা পুরোপুরিই থেকে গেছে। আসলেই যদি হাজী সাহেবদের বাড়িভাড়ার বিষয় নিয়ে এজেন্সিগুলোর খামখেয়ালি অব্যাহত থাকে তাহলে হজ্বের সময় হাজ্বী সাহেবদের দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না। হজ্বব্যবস্থাপনায় বেসরকারি সেবার উদ্যোগ ও সুযোগ একটি ভালো ধারণা ছিল। কিন্তু বিগত দিনগুলোতে বিপুল সংখ্যক এজেন্সির ব্যবসাপ্রবণতা, প্রতারণা এবং মক্কা-মদীনায় হাজী সাহেবদের নানা দুর্ভোগে ফেলার অভিজ্ঞতা এ ধারণাটিকে একটি ভোগান্তিপূর্ণ ধারণায় পরিনত করেছে। দায়িত্ব পালনের চেয়ে হাজ্বী সাহেবদের টাকা হাতে নিয়েই দায়িত্বহীন ব্যবসাপ্রবণতার এ চেহারা প্রতি বছর সামান্য রদবদল হলেও মাত্রায় কোনো হেরফের ঘটেনি। একবার ভোগান্তিটা এদিক থেকে আসলে আরেকবার আসে আরেকদিক থেকে। সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের পক্ষ থেকে আইন-কানুন চাপিয়ে দিয়েও দেখা যায় এসব ভোগান্তি খুব একটা লাঘব করা যাচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে আসলে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি আরো সতর্ক ও কঠোর হওয়া বাঞ্ছনীয়। এবং সেটি করা দরকার হজ্বের সব ধরনের প্রস্তুতি শুরুর বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই। সেবা ও পেশাদারিত্বের প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গে মুনাফাবাজির ফাঁদ খোলার জন্য যারা হজ্বএজেন্সি দিয়েছে তাদের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া দরকার। হাব-কে আরো জবাবদিহিতাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতেও সরকার উদ্যোগ নিতে পারে। এখনও সময় আছে। প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ থাকলে মক্কা-মদীনায় হাজ্বী সাহেবদের জন্য বাড়িভাড়ার বিষয়টি নিয়ে যে কোনো এজেন্সি গা-ছাড়া আচরণ থেকে বিরত হতে বাধ্য হবে। এতে হাজ্বী সাহেবদের উদ্বেগ কমবে। সময় মতো পেরেশানীও হ্রাস পাবে। হজ্বব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে আসলে ব্যবসা ও মুনাফার চোখে না দেখে সেবার চোখে দেখার মতো মানসিকতা এদেশের হজ¦এজেন্সিগুলোর মাঝে গড়ে না উঠলে হাজ্বী সাহেবদের দুর্ভোগ ও কষ্টের যে কোনো হেরফের হবে না তা বলাই বাহুল্য। অনন্তকাল আমাদের হাজ্বী সাহেবদের কি এরকম কষ্ট দিয়েই আমরা 'ব্যবসা' করে যাব! হাজ্বীদের সঙ্গে এই নিবর্তনমূলক ব্যবসার পরিণতি নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।