Shawal-Zilqad 1428   ||   November 2007

কেবলই মেয়ে মানুষ

নাজনীন ইদ্রিস চৌধুরী

মাস খানেক আগে একটি লাইব্রেরীতে সদস্য হয়েছিলাম। উদ্দেশ্য কিছু বই পড়া। লাইব্রেরীটি ছিল আমাদের বাসার কাছেই। এতে সবসময় জনসধারণের অবাধ বিচরণ ছিল। ওখানে বইয়ের নির্দিষ্ট ক্যাটালগ না থাকায় আমি নিজে গিয়ে বই ইস্যু করতাম। উল্লেখ্য, লাইব্রেরীটি ছিল এক মাদরাসা শিক্ষিত ছাত্রের। বই ইস্যু করতে গেলে ওখানকার কিছু ভদ্র লেবেলের লোক বাজে মন্তব্য করতো। ওরা কি বলতো তা না-ই বললাম। দেখলাম, কোন মহিলা লাইব্রেরী থেকে বই নেয়া মানে উপহাসের বস্তুতে পরিণত হওয়া। আমি মেয়ে- এটা দেখেও এসব আশোভন মন্তব্য করতে তাদের কেন বাঁধতো না? বুঝিনি। আসলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছু না কিছু বাজে ছাত্র থাকে। যারা রাস্তা-ঘাটে, বাসে-ক্লাসে নিজেদের বিকৃত রুচি ও অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় না দিয়ে পারে না। আমার এই লেখাটি এ রকম কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা মাত্র। কিছু দিন আগে একটি ইসলামী পত্রিকায় একটি বিতর্কে অংশগ্রহণ করি। ঐ লেখায় আমি নির্যাতিত, নিরীহ নারীদের সম্পর্কে কিছু কথা লিখি। কিন্তু ওখানে ঐ লেখাটি ছাপা হয়নি। লেখা না ছাপানোর প্রতিবাদ করছি না। হয়তো সম্পাদকের দৃষ্টিতে আমার বিশ্লেষণটা অযৌক্তিক ছিল। কেউ কেউ কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা, পুরুষ কর্তৃক নারীদের হয়রানী ও নির্যাতনের কিছু পেলেই তার জন্য একমাত্র দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করেন ঐ নারীকেই। কিন্তু তাদের বিশ্লেষণে আসে না যে, একটা জাতির মধ্যে সব খারাপ মানুষ থাকলেও কিছু ভালো ও সুস্থ রুচির মানুষ থাকা দরকার। যাদের কারণে এই পৃথিবীর নীতি, নৈতিকতা, আদর্শ, মূল্যবোধ, সততা, উন্নত চারিত্রিক ও মানবিক গুণাবলীগুলো এখনো টিকে থাকবে। ধর্মের অনুশাসন পালন করতে হবে এবং এটাই উচিত। কারণ মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্যই ধর্মের সৃষ্টি। সে ক্ষেত্রে নারী যদি কখনো ভুল পথে চলে তবে পুরুষের তো সঠিক পথে চলতে কোন সমস্যা নেই।

ইসলামী শরীয়তে, কুরআনে ও হাদীসে নারী জাতির সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান দানের কথা আমরা জানি ও মানি। অথচ এ সত্ত্বেও আজকাল শুধু স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নয়, শালীন ও মার্জিত রুচির অধিকারী বোরকা-পরা ভদ্র মহিলাকেও অপ্রত্যাশিত মুহূর্তের শিকার হতে হচ্ছে। এটা ঘটছে শুধু কিছু ব্যক্তিত্বহীন মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধহীনতা ও নীতির অবক্ষয়ের কারণে। বিভিন্ন সময় দেখা যায়, কিছু মানুষের ব্যক্তিত্বের অবক্ষয়, সম্পদের লিপ্সা, আদর্শগত ধ্বস ও পক্ষপাতিত্বমূলক নীতির কারণে সমগ্র জাতি অন্ধকারের অতলে হারিয়ে যায়। সামান্য কারণে একটি প্রতাপশালী সভ্যতার পতন ত্বরান্বিত হয়।

অতএব, ইসলামী মূল্যবোধের যথাযথ অনুশীলন ও আদর্শিক নিয়ম-কানুনকে আমাদের যথার্থ মূল্য দেওয়া উচিত। আমাদের স্বজাত্যবোধ ও ইসলামী চেতনা মূলমন্ত্র ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। তাহলেই সম্ভব হবে একটি সুস্থ ও পরিশীলিত সমাজের কাঠামো নির্মাণ।

 

advertisement