নতুন শিক্ষাবর্ষ
তালিবানে ইলমের জন্য আকাবিরের পয়গাম
আলকাউসার রজব ১৪২৮ হি. মোতাবেক আগস্ট ২০০৭ ঈ. সংখ্যা থেকে তালিবানে ইলমের খিদমতে আকাবিরের বিভিন্ন পয়গাম পেশ করেছি। একটি নতুন শিক্ষাবর্ষের সূচনা উপলক্ষে এ সংখ্যায় আকাবিরের দু'টি গুরুত্বপূর্ণ পয়গাম পেশ করছি।
প্রথম পয়গাম
প্রথম পয়গাম এই যে, আমরা যেন ছুটির সময় ছাড়া অন্য কোনো সময় মাদরাসায় গরহাজির না থাকি। বিশেষত সবকে হাজিরির বিষয়ে পূর্ণ মনোযোগী থাকা কর্তব্য, যেন কোনো অবস্থাতেই একটি সবকও ছুটে না যায়। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাআলার দরবারে দু'আ করতে থাকা উচিত-ইয়া আল্লাহ! সব ধরনের আকস্মিক দুর্ঘটনা ও রোগ-ব্যাধি থেকে আমাকে রক্ষা করুন। যে যুগে বর্তমান সময়ের মতো দ্বীনী শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগত ব্যবস্থা ছিল না এবং শিক্ষার্থীদের স্থায়ী আবাসনেরও সুবিধা ছিল না সে সময়েও আকাবির ও আসলাফ নিয়মিত উপস্থিতির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁরা এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে, বর্তমান সময়ের তালিবে ইলমরা তাকে বাড়াবাড়ি নামেও আখ্যায়িত করতে পারে।
হযরত আবু হুরাইয়া রা. সম্পর্কে তালহা রা.-এর এ কথা হয়ত সবাই জানেন,
وَكَانَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مِسْكِينًا لَا مَالَ لَهُ وَلَا أَهْلَ وَلَا وَلَدَ، إِنَّمَا كَانَتْ يَدُهُ مَعَ يَدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَانَ يَدُورُ مَعَهُ حَيْثُمَا دَارَ، وَلَا يَشُكُّ أَنَّهُ قَدْ عَلِمَ مَا لَمْ نَعْلَمْ وَسَمِعَ مَا لَمْ نَسْمَعْ.
আবু হুরায়রা ছিলেন সহায় সম্বলহীন সম্পদ, সন্তান বা পরিজন বলতে তার কিছু ছিল না; তার হাত ছিলো নবীজীর হাতের সঙ্গে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে যেতেন তিনিও তাঁর সঙ্গে যেতেন। আর সন্দেহ নেই, তিনি যে ইলম হাসিল করেছেন আমরা তা পারিনি এবং তিনি যা হাদীস শুনেছেন আমরা তা শুনিনি। -আলমুসতাদরাক, হাকেম নিসাপুরী ৩/৫১২
মানাকিব বিষয়ক কিতাবসমূহে ইমাম আবু ইউসুফ রাহ. (১১৩-১৮২) হিজরী সম্পর্কে উল্লেখিত হয়েছে যে, তিনি সতেরো বছর ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর সাহচর্য গ্রহণ করেছেন, কোনদিন তাঁর সঙ্গে ফজরের নামায ছুটেনি। কোনোদিন এর ব্যতিক্রম হয়নি, এমন কি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনও নয়। তিনি তার নিজের একটি ঘটনা এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, আমার এক সন্তানের মৃত্যু হল। আমি তার দাফন-কাফনের দায়িত্ব আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-পড়শিদের উপর ন্যস্ত করি। কেন? তিনি নিজেই বলেন,
مخافة أن يفوتني من أبي حنيفة شيئ لا تذهب حسرته عني
‘শুধু এ আশঙ্কায় যে, আবু হানীফা রাহ. এর নিকট থেকে এমন কোনো বিষয় আমার ছুটে যাবে যার আফসোস আর কখনো শেষ হবে না। -মানাকিবু আবী হানীফা মুওয়াফফাক আলমক্কী ২/২১৫
এটা হচ্ছে সে সময়ের কথা যখন ইলম অন্বেষণকারীদের জন্য প্রতিষ্ঠানগত সুযোগ সুবিধা ছিল না। এরপর যখন শিক্ষা-ব্যবস্থার ধরন পরিবর্তন হল এবং প্রতিষ্ঠানগত ব্যবস্থাপনার অধীনে তালিবানে ইলমের জন্য ছাত্রাবাস ইত্যাদির সুবিধা সৃষ্টি হল তখন যেন তালিবানে ইলমের জন্য নেমে এল আসমানী ঈদ। তারা তখন দিন রাত মাদরাসার মধ্যেই আবদ্ধ থাকত এবং কিতাব ও উস্তাদের সাহচর্য্যে ইলম অর্জনে মগ্ন থাকত। নিম্নোক্ত প্রসিদ্ধ পংক্তি
وطن سے ہم كيا کرینگے مدرسہ ہے وطن اپنا
مرينگے ہم کتابوں پر ورق ہوگا کفن اپنا
তাঁদের সে অবস্থাই প্রকাশ করেছে। আজ যদি আমরা এই পংক্তি দুটি পড়ি তবে তা কেবল মৌখিক দাবি হিসেবেই গণ্য হবে। যদি না আমরা আমাদের অবস্থা পরিবর্তন করে দিল-দেমাগ তাদের মতো করে গঠন করার চেষ্ট করি এবং তনমন এক করে ইলমে রামি, বুলুকে আযীম, ফিকরে মুস্তাকীম ও যাওকে সালীম হাসিল করার জন্য নিজেদেরকে কুরবান করি।
এ যুগের একজন মুদাররিস আব্দুল আযীম মুনযিরী (৫৮১ হি.-৬৫৬ হি.) যিনি ‘আততারগীব ওয়াত তারহীব’ গ্রন্থের সংকলন, তার সম্পর্কে ইতিহাসের সাক্ষ্য হল-
كـان لا يـخـرج مـن المدرسة لا للحزاء ولا لهـنـا ولا لفرجة ولا لغير ذلك الا لصلاة الجمعة بل يستغرق كل الاوقات في العلم (بستان العارفين امام نووي ص১৯১)
-বুসতানুল আরিফিন, ইমাম নববী পৃষ্ঠা ১৯১
যে যুগে মুদাররিসগণেরই এই অবস্থা, যাদের বিভিন্ন ইজতিমায়ী কাজে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় সে যুগের তালিবে ইলমদের অবস্থা কেমন হবে, যাদের জন্য পূর্ণ ইলম নিমগ্নতাই কাম্য।
আমাদের নিকট অতীতের একজন আলিম, 'তাফসীরে রূহুল মাআনী'র গ্রন্থকার মাহমুদ আলূসীর সৌহিত্র মাহমুদ শাকরী আলুসী সম্পর্কে তার শাগরিদ বাহজাত আছারীর বক্তব্য হচ্ছে, ‘একদিন প্রচ- ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল, রাস্তা-ঘাট কর্দমাক্ত হয়ে গিয়েছিল, আমি ভাবলাম, উস্তাদজী হয়তো আজ আসতে পারবেন না, তাই আমিও সবকে হাজির হলাম না। পরদিন যখন সবকে হাজির হলাম তখন উদ্ভাদজী অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন এবং এ পংক্তির মাধ্যমে আমাকে ভর্ৎসনা করলেন,
و لا خير فيمن عاقه الحر و البرد
উস্তাযে মুহতারাম শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ রাহ.-এর কিতাব قيمة الزمان عند العلماء -তে এ ধরনের আরো অনেক ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে। আকাবিরে হিন্দুস্তান, বিশেষত আকাবিরে দেওবন্দের এ জাতীয় ঘটনাবলি তো আমাদের চোখের সামনে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শায়খুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া রাহ.-এর ‘আপবীতী' পড়ে দেখার মতো। তার এ ঘটনা সর্বজনবিদিত যে, তিনি ও তাঁর এক সহপাঠী সংকল্প করেছিলেন, কোনো হাদীস যেন উস্তাদের নিকট থেকে শোনা ছাড়া না থাকে আর কোনো হাদীস বিনা অজুতে শোনা না হয়। আল্লাহ তাকে এই সংকল্প পুরা করারও তাওফীক দান করেছিলেন। এর অর্থ এই যে, তিনি নিয়মিত দরসে উপস্থিত থেকেছেন এবং দেহ ও মন দুটো নিয়েই উপস্থিত থেকেছেন। যেন لِمَنْ كَانَ لَهٗ قَلْبٌ اَوْ اَلْقَی السَّمْعَ وَ هُوَ شَهِیْدٌ
-এর বাস্তব নমুনা, বলাবাহুল্য, অমনোযোগিতার সঙ্গে শুধু দৈহিক উপস্থিতি কখনো উপস্থিতি হিসেবে গণ্য হতে পারে না।
এখানে একথাও বলে দেওয়া প্রয়োজন মনে করছি যে, আজকাল আমাদের তালিবে ইলম ভাইরা গরহাজিরির অর্থ অনেক সীমাবদ্ধ করে নিয়েছেন। তাদের মতে কেবল ছুটি নেওয়া ছাড়া এবং কোনোরূপ ওযর ছাড়া অনুপস্থিত থাকাই গরহাজিরি হিসেবে গণ্য। অতএব কেউ যদি ছুটি নিয়ে কিংবা কোনো ওযর বা অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত থাকে তবে তা আর গরহাজিরি নয়। এই ধারণা ভুল। ছুটি নিয়ে কি বিনা ছুটিতে, ওযরের কারণে কি বিনাওযরে অনুপস্থিতি সবসময়ই অনুপস্থিতি। দরসে উপস্থিত থাকার সুফল উভয় ক্ষেত্রেই হাতছাড়া হবে। কোনো রোযাদারের গলায় যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি চলে যায় তাহলে যেমন তার রোযা বিনষ্ট হয় এখানেও তেমনি। হাঁ, কেউ যদি বাস্তবিকই কোনো সমস্যার কারণে বাধ্য হয়ে ছুটি নেয় আর এজন্য তার মনস্তাপ হতে থাকে তবে হয়তো আল্লাহ তাআলা তার গরহাজিরির ক্ষতি পুষিয়ে দেবেন, কিন্তু সেটা তো ভিন্ন প্রসঙ্গ। তাই যথাসাধ্য ছুটি নেওয়া থেকে বিরত থাকা এবং সামান্য অসুস্থতার কারণে সবকে গরহাজির থাকা তালিবানে ইলমের জন্য কোনোভাবেই সমীচীন নয়।
আজকাল তালিবে ইলমরা খালাতো, মামাতো, চাচাতো ভাই-বোনদের বিয়ের জন্যও ছুটি নিতে আসে। আর তা-ও শুধু আকদের দিনের জন্য নয়: ঘর-বাড়ি দেখার দিনের জন্য, আকদের দিনের জন্য, রুখসতী বা অলীমার দিনের জন্যও ছুটি নিতে আসে। নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক! অথচ আপন বোনের বিয়েও এমন কোনো বিষয় নয়, যার জন্য তালিবে ইলমকে ছুটি নিতে হবে।
তালিবে ইলমকে দরসে উপস্থিতির বিষয়ে এমন গুরুত্ব দিতে হবে এবং ইলমের জন্য এমনভাবে মগ্ন থাকতে হবে যেন অভিভাবকরাও তাকে ছুটি নেওয়ার কথা বলতে কিংবা তার জন্য ছুটি চাইতে হিম্মত না করেন। বাড়িতে কোনো কাজ থাকলে তা অন্য কেউ সমাধা করবে। বিয়ে-শাদীর বিষয় হলে ছুটির দিনে তার আয়োজন করবে। অথচ এখন অবস্থা এমন হয়েছে, যেন শুধু কওমী মাদরাসার তালিবে ইলমই ছুটি নিতে সক্ষম, আর বাড়ির অন্য লোকেরা ব্যস্ততার কারণে ছুটি নিতে অপারগ! এত মানুষের মাঝে শুধু সেই হচ্ছে অকর্মা, যার কোনো কাজ নেই। এই আবহ সৃষ্টির পিছনে খোদ তালিবে ইলমেরও অপরাধ রয়েছে। সে কেন নিজেকে বেকার ভাববে, কিংবা তার সম্পর্কে অন্যদের মনে এ ধারণা সৃষ্টির সুযোগ দিবে। তার উচিত ইলমের মধ্যে এমনভাবে নিজেকে নিমগ্ন করা যেন পরিবারের অন্যান্য সদস্য, পাড়া-পড়শি ও সমাজের লোকেরা এ চিন্তা করতে বাধ্য হয় যে, তার একটি দিন কেন একটি ঘণ্টা নষ্ট করাও আমাদের জন্য সমীচীন নয়।
তাখাস্সুস-এর তালিবে ইলমদের জন্য উপস্থিতির বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু হায় রেওয়াজ সর্বস্বতা! এটা এখন ‘তাখাসসুসে’ও এসে প্রবেশ করেছে। তাই নামকেওয়াস্তের ‘তাখাসসুসকারী’দের অবস্থা লক্ষ করে অভিভাবকেরা ভাবেন, ‘তাখাসসুসে’ ভর্তির পর বেচারা নিঃশ্বাস ফেলার অবকাশ পেয়েছে। এখন নিশ্চিন্তমনে তার জন্য ছুটি নেওয়া যেতে পারে! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ! আল্লাহ তাআলাই আমাদের অবস্থার উপর মেহেরবানী করতে পারেন।
অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে অনেক ছাত্র ছুটি নিয়ে থাকে। অথচ সাধারণ অসুস্থতায় দরসে গরহাজির থাকা উচিত নয়। আমাদের উস্তায হযরত মাওলানা মিসবাহুল্লাহ শাহ ছাহেব রাহ. যার কাছে আমরা ‘শরহু মাআনিল আছার’ পড়েছি, তিনি বলতেন, ‘তোমরা অসুস্থতার কারণে দরসগাহে গরহাজির থাক কেন? কামরায় তো শুয়েই থাকবে, দরসগাহের পিছনদিকেই শুয়ে শুয়ে সবক শুনতে থাক।’ হযরত মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানভী রাহ. ‘শখসিয়াত ওয়া তাআছছুরাত’ কিতাবে (১/২১০) এ বিষয়ে এক আশ্চর্য ঘটনা উল্লেখ করেছেন। হযরত মাওলানা ক্বারী রহীম বখশ পানিপথী রাহ. (১৪০২ হি.)-এর আলোচনায় তিনি লেখেন, ‘হযরত ক্বারী ছাহেব তালিবে ইলমদের ছুটির বিষয়টি সমর্থন করতেন না। অসুস্থ তালিবে ইলমদের প্রতিও এই নির্দেশ ছিল যে, তারা যদি পড়তে না পারে তবে যেন দরসগাহে এসে শুয়ে থাকে। তবুও দরসগাহে অনুপস্থিত থাকা তিনি অনুমোদন করতেন না।...
‘এ প্রসঙ্গে এক আশ্চর্য ঘটনা তিনি আমাকে শুনিয়েছেন। ঘটনা এই যে, এক তালিবে ইলম একটু বেশি রকম অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। অভিভাবকরা তাকে হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। হযরত কারী ছাহেব রাহ. বললেন, ‘যদি তাকে বাঁচাতে হয় তবে এখানেই দরসগাহে থাকতে দাও, আর যদি মেরে ফেলতে হয় তবে হাসপাতালে নিয়ে যাও।’ অভিভাবকরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। তিন-চারদিন পর্যন্ত চিকিৎসা হল, পরিশেষে ডাক্তাররা অপারগতা প্রকাশ করল। ছেলেটির বাপ ও চাচা কাঁদতে কাঁদতে হযরত ক্বারী ছাহেব রাহ.-এর কাছে এসে বলল, ছেলেটি তো মারা যাচ্ছে, আপনি বলেছিলেন, যদি ওকে মেরে ফেলতে হয় তবে হাসপাতালে নিয়ে যাও! আল্লাহর ওয়াস্তে আপনি বলুন, ছেলেটি জীবিত থাকবে! হযরত ক্বারী ছাহেব বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, আল্লাহর বান্দা, আমার বলায় কী আসে যায়। আমি তো ওই কথা এমনি জযবার কারণে বলেছিলাম। আমার বলার কারণেই সে মারা যাচ্ছে এমন কথা তোমরা ভাবছ কেন? কিন্তু তারা বারবার বলতে লাগল, না আপনি বলুন, সে মারা যাবে না। আমি বললাম, আচ্ছা তাকে দরসগাহে এনে শুইয়ে দাও। ইনশাআল্লাহ ভালো হয়ে যাবে। তারা সেই অর্ধমৃত ছেলেটিকে দরসগাহে এনে শুইয়ে দিল। আর আল্লাহ তাআলা তার কালামের বরকতে তাকে সুস্থ করে দিলেন।’
এখন যদি কোনো তালিবে ইলম ক্বারী ছাহেবের ওই শাগরিদের মতো হিম্মত না করে না করুক, কিন্তু সামান্য অসুস্থতার কারণে গরহাজির থাকার যে প্রবণতা কারো কারো মধ্যে দেখা যায় তা অবশ্যই পরিহার করা উচিত।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নিয়মিত সবকে উপস্থিত থাকার তাওফীক দান করুন এবং আমাদের মধ্যে দু'চার জনকে হলেও শাইখুল হাদীস যাকারিয়া রাহ.-এর ইত্তেবা করার তাওফীক দান করুন, যার ছয় মাস পর্যন্ত মাদরাসার চার দেয়ালের বাইরে যাওয়ারও প্রয়োজন হত না।
দ্বিতীয় পয়গাম
দ্বিতীয় পয়গাম আমি আপনাদেরকে শোনাচ্ছি উস্তাযে মুহতারাম হযরত মাওলানা আব্দুর রশীদ নুমানী রাহ.-এর ভাষায়। তিনি বলতেন, ‘প্রতিদিন সকালে যখন কাজ শুরু করবে তখন নতুন করে নিয়ত বিশুদ্ধ করবে।’ তিনি এ বিষয়ে এজন্য তাকীদ করতেন যে, এর মাধ্যমে ইখলাসের মুহাসাবা হয় এবং নতুন উদ্যম সৃষ্টি হয়, যা ইলমের জন্য নিজেকে বিলীন করার প্রেরণা সৃষ্টি করে। এর তৃতীয় সুফল এই যে, প্রতিদিন নতুন করে নিয়ত করার দ্বারা একথা হৃদয়ে বদ্ধমূল হতে থাকে যে, এ সকল মেহনত-মুজাহাদা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এবং আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য। এই মানসিকতা গড়ে ওঠার পর তালিবে ইলমের মনে সুন্দর চরিত্র, উন্নত চিন্তা এবং বিশুদ্ধ রুচি অর্জন করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এ বিষয়গুলো যেকোনো তালিবে ইলমের জন্য এমনিতেও কাম্য, বিশেষ করে ইলমী প্রয়োজনে আরো বেশি কাম্য। কেননা রুসূখ ফিল ইলম ও তাফাককুহ ফিদ্দীন, যা প্রত্যেক তালিবে ইলমের মনযিলে মকসূদ, আখলাক-চরিত্রের পরিচ্ছন্নতা এবং চিন্তা ও রুচির পরিশুদ্ধি ছাড়া সে পথে উন্নীত হওয়া সম্ভবপর নয়। এজন্য তালিবে ইলমকে তালিবে ইলমীর সময় থেকেই কোনো মুত্তাবিয়ে সুন্নত ও অভিজ্ঞ শায়খকে ইসলাহী মুরুব্বী হিসেবে গ্রহণ করা উচিত এবং সামান্য পরিমাণে হলেও নফল ও তাসবিহাতের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। আর কিছুটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তারতীলের সঙ্গে কুরআন তেলাওয়াত করা খুবই জরুরি। যাদের অর্থ বোঝার মতো যোগ্যতা হয়েছে তাদের তেলাওয়াত হওয়া উচিত চিন্তা ভাবনার সঙ্গে। আল্লাহ তাআলা লেখক-পাঠক সবাইকে তাওফীক দান করুন।
এই দ্বিতীয় পয়গাম এ মুহূর্তে বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, গত কিছু দিনের মধ্যে হযরত পাহাড়পুরী দামাত বারাকাতুহুম একথা কয়েকবার বলেছেন যে, তোমাদের মুতালাআ তো হয়ে থাকে মেধার বিলাসিতার জন্য, কোথাও ওয়াজ শুনতে গেলে সেটাও এজন্যই হয়, একারণেই এগুলো দ্বারা আখলাক ও সীরাতের ইসলাহ হয় না এবং আমলের মধ্যে পরিবর্তন আসে না। তাই -আল্লাহ হিফাযত করুন- আমাদের ইলম যেন শুধু ‘দানিসতানে’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে যায় এজন্য আমি নিজেকে ও আমার দোস্তদেরকে স্মরণ করানোন জন্য আকাবিরের এ পয়গামও এখানে উল্লেখ করলাম। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আমলের তাওফীক দান করুন। আমীন