মসজিদ মাদরাসার কমিটি
শর্ত, মেজাজ ও ব্যবস্থাপনা কেমন হতে পারে
মসজিদ এবং মাদরাসা হচ্ছে দ্বীনের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বিশেষত মসজিদ জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়ের এমন এক কেন্দ্র, এদেশের প্রতিটি শহর, গ্রাম ও মহল্লায় যে কেন্দ্রের বহু অস্তিত্ব বিদ্যমান। আর দ্বীনী মাদরাসার অস্তিত্বও প্রায় প্রতিটি গ্রাম-মহল্লায় বিদ্যমান। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এসব মসজিদ-মাদরাসার ব্যবস্থাপনা, সেবা ও ব্যয় নির্বাহের জন্য স্থানীয় ভিত্তিতে দ্বীনদার, অপেক্ষাকৃত বিত্তবান ও আগ্রহী ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠন করে কাজ করার একটি রেওয়াজ এদেশে ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠিত। অতি অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া মসজিদ মানেই তার জন্য একটি কমিটি, মাদরাসা মানেই তার জন্য একটি কমিটির অস্তিত্ব থাকা প্রায় সর্বজনবিদিত।
মসজিদের সঙ্গে কমিটির অস্তিত্ব থাকার এ প্রতিষ্ঠিত রেওয়াজের ইতিবাচক দিক তো আছেই, নেতিবাচক কিছু আলামতও এখন দেশ জুড়ে বিভিন্ন স্থানে পরিলক্ষিত হচ্ছে। মসজিদের ব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলা ও সেবার বাহ্যিক জাকজমকের পাশাপাশি এতে বিড়ম্বনাকর কিছু কিছু বিষয়েরও সৃষ্টি হচ্ছে। যদি কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সদস্যদের মাঝে ন্যূনতম কিছু শর্ত ও আদবের উপস্থিতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং কমিটির লক্ষ্য ও মনোভাব পুনঃ স্থির করে নেওয়া যায়-তাহলে এ সব বিড়ম্বনার পথ বন্ধ হবে, ধরে নেওয়া যায়। দ্বীনী কাজে সর্ব সাধারণ মুসলমানের জান-মালের অংশ গ্রহণের সুযোগ থাকার রীতি ঐতিহ্যপূর্ণ। এ সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত না হতে চাওয়া প্রশংসনীয়। আল্লাহ তায়ালা কার কোন ইখলাসপূর্ণ খেদমত গ্রহণ করে নিচ্ছেন দুনিয়ার বিচারে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা অসম্ভব। সেজন্যই মসজিদ-মাদরাসার কমিটি নামের সেবক প্রতিষ্ঠানটির দ্বারা অধিকতর সুফল কিভাবে প্রকাশ হতে পারে সে সম্পর্কে কিছু পরামর্শ নিবেদন করা যায়।
এক. মসজিদ ও মাদরাসায় যারা শ্রম ও অর্থ দেন ধরে নেওয়া উচিৎ যে, তারা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যই দেন। সুতরাং এ সব কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মানেই সেবক হওয়া, পরিচালক কিংবা কতৃর্ত্ববান হওয়া নয়। তাই মসজিদ মাদরাসার সেবার ক্ষেত্রে সেবক মেজাজ লালন করাই কমিটির ক্ষেত্রে কাম্য। কতৃর্ত্ব করার মেজাজ লালন করলে কমিটির দ্বারা এসব দ্বীনী কেন্দ্রগুলোতে শৃঙ্খলা ও সেবার পরিবর্তে বিশৃঙ্খলা ও বিড়ম্বনার পরিবেশ বেশি সৃষ্টি হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সীমা লংঘনের ঘটনাও ঘটে যায়। এতে সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহর পেছনে পড়ে যাওয়ার আশংকাই অবধারিত হয়ে যায়। দ্বীনী খেদমতে যুক্ত হয়ে সওয়াব কামানোর পরিবর্তে গুনাহ্ কামানোটা নিশ্চয়ই কারো কাম্য হতে পারে না।
দুই. মসজিদ মাদরাসা-কমিটির সদস্যদের দ্বীনদার হওয়া জরুরি। দ্বীনের প্রতি মহব্বত এবং ব্যক্তিগত জীবনে দ্বীনের উপর তাদের আমলও থাকা চাই। মসজিদ কমিটির সদস্য যদি মসজিদে এসে জামাতে নামায আদায়েই আগ্রহী না হন, মাদরাসা কমিটির সদস্য যদি খাছভাবে দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেই স্বচ্ছ ধারণার অধিকারী ও উৎসাহী না হন তাহলে এমন সব সদস্য দ্বারা দ্বীনী খেদমতের পরিবর্তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশংকাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কমিটির সদস্য হয়ে আছেন, খেদমতও করছেন, কিন্তু যাদের দ্বীনী হাল এরকম তাদের অবস্থার উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হওয়া উচিত।
তিন. মসজিদে যোগ্য ইমাম নিযুক্ত করতে উদ্যোগী হওয়ার দায়িত্ব কমিটির। এরপর সে যোগ্য ইমাম ও খতীবের সহীহ দ্বীনী কথা শোনা এবং মেনে নেওয়ার দায়িত্বও তাদের। ইমাম-খতীবকে নিজেদের বুঝ অনুযায়ী বাধা দেওয়া কিংবা নিজেদের বুঝ ও মেজাজ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া তাদের কাজ হতে পারে না। অভিজ্ঞ আলেম না হলে শ্রোতা হওয়া চাই তাদের, বক্তা নয়।
খেদমতের মেজাজ লালন, দ্বীনদার হওয়া এবং যোগ্য ইমাম-খতীব ও উস্তায আলেমের শ্রোতা হয়ে কাজ করলে কমিটির সদস্যদের দ্বারা ফায়দা ও সুফল বেশি হওয়ার সম্ভবনাই বেড়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।