নবীজীর পদাঙ্ক অনুসরণে একটি দিন
হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নোমানী রাহ.-এর সুন্নতী জীবনের একটি রূপ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ঘরে প্রবেশের সময় হযরত দুআ পড়লেন—
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ، وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ، بِسْمِ اللهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا.
(হে আল্লাহ! আপনার নিকট ঘর থেকে বের হওয়ার ও ঘরে প্রবেশ করার কল্যাণ চাই। আমরা আল্লাহ তাআলার নামেই প্রবেশ করি, আল্লাহ তাআলার নামেই বের হই এবং আমাদের রব আল্লাহর উপরই আমরা ভরসা করি। —সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫০৯৬)
হযরতের কামরায় মেঝেতে দস্তরখান বিছানো ছিল। খাওয়ার পূর্বে হাত ধোয়ার জন্য হযরত গোসলখানায় গেলেন। আমরাও হাত ধুয়ে নিলাম।
আমরা পৌঁছতেই নাশতা উপস্থিত করা হল। নাশতায় তেলে ভাজা রুটি ও আলুর তরকারি ছিল। সাথে রাতের অবশিষ্ট কিমাও ছিল। ইসলামে খাবারের উদ্দেশ্য হল ক্ষুধা নিবারণ করা। তাছাড়া আল্লাহ তাআলার দেওয়া নিআমত একপর্যায়ের উপভোগ করা। তবে পানাহারকেই জীবনের উদ্দেশ্য বানিয়ে নেওয়া ঠিক নয়।
খাওয়ার শুরুতে হযরত—
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
পড়লেন। হযরত অর্ধেক রুটি খেলেন। এক পেয়ালা দুধে দুই চামচ মধু মিশিয়ে পান করলেন। হযরত খাবারে মধুকে প্রাধান্য দিতেন। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, এতে মানুষের জন্য শিফা রয়েছে।
নাশতা শেষে হযরত দুআ পড়লেন—
اَلْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مُسْلِمِيْنَ.
(সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, যিনি আমাদেরকে আহার করিয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং আমাদেরকে মুসলমান করেছেন। —মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ২৪৯৯২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৫০)
আমরা সবাই এই দুআ পড়লাম। হযরত নাশতার পর কিছু সময় বিশ্রামের জন্য শুয়ে পড়লেন। আব্দুশ শহীদ খবরের কাগজের শিরোনাম শোনাতে লাগলেন। শিশানের মুসলমানদের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও অন্যান্য মজলুম জনপদের কথা শুনে হযরত মুসলমানদের জন্য বিজয় ও নুসরতের দুআ করলেন। আর কাফেরদের জন্য বললেন—
اللَّهُمَّ خَالِفْ بَيْنَ كَلِمَتِهِمَ، وَزَلْزِلْ أَقْدَامَهُمْ.
(হে আল্লাহ! তাদের পরস্পরের মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি করে দিন। তাদের পদসমূহ টলিয়ে দিন। —মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৪৯৬৯)
খবরের শিরোনাম শুনে হযরত কিছু সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করে নিলেন। তারপর উঠে গেলেন। গোসলখানায় গিয়ে মিসওয়াক করলেন। ওযু করলেন। চার রাকাত চাশতের নামায পড়লেন। এরপর চিঠির উত্তর লেখার জন্য বসে গেলেন।
প্রথম চিঠির শুরুতেই ছিলেন। হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কি নিয়মিত চিঠির উত্তর প্রদান করেন?’
আমি লজ্জিত হয়ে উত্তর দিলাম, হযরত! এ বিষয়ে আমি খুবই অলস। ইচ্ছা ও নিয়ত করি যে, চিঠির উত্তর খুবই গুরুত্বের সাথে, অনতি বিলম্বে দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে তা আমলে পরিণত হয় না। এমনকি সেসব চিঠিরও উত্তর দেওয়া হয় না, যার উত্তরের সাথে আমার ইলমী বা আর্থিক বিষয় জড়িত।
হযরত বললেন, লাভ-ক্ষতির চিন্তা না হয় না-ই করলেন। লোকেরা আপনাকে চিঠির শুরুতে সালাম দেয় আর সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। সালামের উত্তর দেওয়ার বিষয়টি মাহফিল বা কথাবার্তায় সীমাবদ্ধ নয় বরং তা (অনেকের মতে) চিঠির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
হযরত দু-চারটি চিঠির উত্তর দিলেন। এরই মাঝে মাদরাসাতু আয়েশার গাড়ি এসে পড়ল।
হযরত সপ্তাহে দুই বা তিন বার সেখানে হাদীসের দরসের জন্য তাশরীফ নিতেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই শিক্ষা নিজের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর সামনে ছিল—
بُعِثْتُ مُعَلِّمًا.
(আমাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।)
কুরআন ও হাদীসের প্রতি অগাধ ভালবাসা এবং কুরআন-হাদীসের শিক্ষা ও আলো প্রচারের আগ্রহ হযরতের জন্য এমন ছিল, যেমন আমাদের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস। তাছাড়া হযরত নারীদের দ্বীনী শিক্ষার বিষয়ে অনেক বেশি বলতেন। কারণ, মায়ের কোল সন্তানের প্রথম পাঠশালা।
হযরত ঘরের ভেতরে গেলেন। ঘরের সবাইকে সালাম দিলেন। হযরত গাড়িতে বসতে বসতে আমাকেও সালাম দিলেন। সালামের বিষয়ে হযরতের সাথে জেতা খুবই কঠিন ছিল। হযরত মাদরাসার উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে গেলেন।
আমি বাড়িতে চলে আসি। নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। দুপুর একটা পনের মিনিটের সময় জোহরের নামাযের জন্য মসজিদের দিকে রওয়ানা হলাম। কিছু দূর এগুতেই মাদরাসাতু আয়েশার ভ্যান আমার সামনে এসে থামল। হযরতের আওয়াজ শুনতে পেলাম—
আসসালামু আলাইকুম।
ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু— বলতে বলতে আমি হযরতের পাশে বসে পড়লাম। হযরতের সাথে মুসাফাহা করলাম। হযরত মাদরাসা থেকে সরাসরি মসজিদে চলে আসতেন। ঘরে যাওয়ার সময় থাকত না।
মসজিদে আমি হযরতের সাথে ওজু করলাম। আজকাল আমাদের ঘরগুলোতে সুন্নত তরিকায় বসে ওজু করাও অসম্ভব প্রায়। সত্যি বলতে কী, আমি সুন্নত তরিকায় ওজু করা হযরতের কাছেই শিখেছি। হযরত পকেট থেকে মিসওয়াক বের করে মিসওয়াক করলেন।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ বলে ওজু শুরু করলেন। ওজুর অঙ্গগুলো খুব ভালো করে ধৌত করলেন। ওজু শেষে এই দুআ পড়লেন—
اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَوَّابِيْنَ، واجْعَلْنِيْ مِنَ المُتَطَهِّرِيْنَ، سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أشْهَدُ أنْ لَّا إلهَ إِلَّا أنْتَ، أسْتَغْفِرُكَ وأتُوْبُ إِلَيْكَ.
(হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তভুর্ক্ত করুন। হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই। আপনার কাছেই তওবা করি। —মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ২০; জামে তিরমিযী, হাদীস ৫৫; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৭৩০; আসসুনানুল কুবরা, নাসায়ী, হাদীস ৯৮২৯)
ওজু শেষে আমরা সুন্নত পড়ে নিলাম। এর মধ্যে জামাতের সময় হয়ে গেল। প্রতিদিনের মতই মুজাফফর সাহেব ইকামত দিলেন। হযরত নামায পড়ালেন। নামায শেষে সুন্নত ও নফল আদায় করে কিছু সময় মুরাকাবা করলেন। আমরা মসজিদ থেকে রওয়ানা হলাম। হযরতের বাড়ি আমার বাড়ির আগে ছিল। যখন হযরতের বাড়ির মোড়ে পৌঁছলাম হযরত সালাম দিয়ে মুসাফাহার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমি অভ্যাস অনুযায়ী উত্তর দিলাম, হযরত আমি তো আপনার বাড়ির দরজা পর্যন্ত যাব, এরপর বিদায় নিব।
হযরত বললেন, এটা একটু রসমের মতো হয়ে যায়। এর সাথে ইহতিরামের কোনো সম্পর্ক নেই। ইহতিরামের সম্পর্ক দিলের সাথে।
যাহোক আমি হযরতের বাড়ির দরজায় পৌঁছে তাঁকে সালাম দিয়ে বিদায় নিলাম।
আসরের নামাযের সময় মসজিদে গিয়ে দেখলাম, হযরত মসজিদেই আছেন। এক কোণে বসে ওযীফা আদায় করছেন। সোমবার ও বুধবার হযরত মুহিব্বীনদের নিয়ে যিকিরের হালকা করতেন। এই হালকায় প্রফেসর জলিল রাহ.-ও শরীক হতেন। তিনি ইংরেজির প্রফেসর ছিলেন। হযরত মাওলানা যাকারিয়া রাহ.-এর মুরীদ ছিলেন। তিনি নিজেও ইজাযতপ্রাপ্ত বুযুর্গ ছিলেন। তার পরও হযরতের প্রতি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। আমরা আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত নিচু স্বরে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্র জিকির করতাম। দরূদ পাঠ করতাম। হযরতের কাছ থেকে কুরআনে হাকীমের তাফসীর শুনতাম। কিছু সময় মুরাকাবা করতাম। মুরাকাবা হল, নিরিবিলি পরিবেশে দ্বীনী কোনো বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা, নিজের মুহাসাবা করা, কিয়ামত ও মৃত্যু সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা।
বৃহস্পতিবার দারুল উলূম করাচী ও বানূরী টাউনের উপরের জামাতের তালেবে ইলম অথবা অন্য কোনো শহরের উলামায়ে কেরাম হযরতের কাছ থেকে ইস্তেফাদার জন্য চলে আসতেন। আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব চলত। কখনও মাগরিবের পরও চলত। বেশিরভাগ সময় তালিবে ইলম ও উলামায়ে কেরাম হযরতের সাথে তাঁর বাসায় চলে যেতেন। সেখানে এশা পর্যন্ত দরস ও তাদরীস চলতে থাকত। বাইরে থেকে আগত উলামায়ে কেরাম রাতে হযরতের সাথে সেখানেই থেকে যেতেন। ইসলামী জীবনব্যবস্থা কতই না বরকতময় ও সহজ। হযরতের রুমে কার্পেটের উপর তিনটি তোষক বিছিয়ে দেওয়া হত। মেহমানগণ ইবাদত ও দরস শেষে সেখানেই শুয়ে যেতেন।
যে সন্ধ্যার আলোচনা করছি, তা দরস তাদরীস ও প্রশ্নোত্তরের দিন ছিল। সিন্ধের কোনো এক শহর থেকে মাওলানা আব্দুর রহমান ছাহেব এসেছিলেন। সাত-আটজন তালেবে ইলমও উপস্থিত ছিল। তাদের মাঝে দুইজন তুরস্কের তালেবে ইলমও ছিল। হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান ছাহেবকে নামায পড়াতে বললেন। নামাযের পর হযরত মসজিদের বাইরের অংশে চলে এলেন। কারণ লোক সংখ্যা বেশি ছিল আর গরমও পড়ছিল খুব।
এক তালিবে ইলম জিজ্ঞাসা করলেন, হযরত! বর্তমানে শরীয়ত ও তরীকতের মাঝে অনেক দূরত্ব ও বিরোধ সৃষ্টি হয়ে গেছে। সূফীগণ নামায-রোযা, সাধারণ ইবাদত ও লেনদেনের প্রতি তেমন গুরুত্ব দেন না। প্রত্যেকেই নিজ সিলসিলার ওযীফার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেন। এই বিরোধ কীভাবে দূর করা সম্ভব?
হযরত বললেন, তরীকত শরীয়ত থেকে ভিন্ন কোনো কিছু না। সূফী বা মুরশিদ সর্বপ্রথম মুরীদের বাহ্যিক সংশোধনের প্রতি গুরুত্ব দেন। তারপর একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতো মুরীদের ব্যক্তিত্বের সংশোধনের প্রতি মনোযোগী হন। তাছাড়া মুরশিদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত যুহদ ও তাকওয়ার পাশাপাশি এটাও দেখা আবশ্যক যে, সে কুরআন ও সুন্নাহর যোগ্য আলেম কি না? যদি সে আল্লাহ তাআলার হুকুম আহকাম ভালোভাবে না জানে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের ব্যাপারে না জানে তাহলে সে অন্যকে কী শিক্ষা দেবে? আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাতে রাসূল সবচেয়ে বিশ্বস্ত সাক্ষী। কারো ব্যাপারে কুরআন সুন্নাহর সাক্ষ্য অনুযায়ীই আস্থা রাখা জরুরি।
এক তালিবে ইলম জিজ্ঞাসা করলেন, হযরত যুলকিফল আলাইহিস সালাম সম্পর্কে কিছু বলুন। হাদীসের কোনো কিতাবে কি তাঁর ব্যাপারে কিছু বর্ণিত হয়েছে?
হযরত বললেন, একটি মূলনীতি স্মরণ রাখবেন। তা হল, কুরআন মাজীদ হেদায়েতের কিতাব। এর উদ্দেশ্য হল চরিত্র গঠন ও দুনিয়া-আখেরাতের বিষয়ে আমাদের পথনির্দেশ করা। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এবং বিষয়গুলো সুস্পষ্ট করার জন্য আল্লাহ তাআলা নবী—রাসূল ও পূর্ববতীর্ উম্মতের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। তবে কুরআন হাকীমকে বিজ্ঞান, ভূগোল ও ইতিহাসের কিতাব মনে করবেন না। ইতিহাস ও ইতিহাসের কোনো ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা আমাদের হেদায়েতের বিষয়টিকে সামনে রেখেছেন। ঘটনার আদ্যোপান্ত উপস্থাপন করেননি। শুধু ঐ অংশের আলোচনা করেছেন, যা আমাদের জন্য জরুরি। উদাহরণ স্বরূপ, আসহাবে কাহফের ঘটনার গুরুত্ব সুস্পষ্ট যে, কীভাবে কয়েকজন যুবক নিজেদের ঈমান হেফাজতের জন্য গুহায় আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এখন এর পেছনে পড়া যাবে না যে, তাদের সংখ্যা কত ছিল। তারা পাঁচজন ছিল, না ছয়জন। এটা জেনে আপনাদের কী লাভ হবে।
যুলকিফল আলাইহিস সালামের নাম কুরআন হাকীমে নবীগণের নামের সঙ্গে দুইবার এসেছে। আল্লাহর কিতাবের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, তিনি ধৈর্যশীল ছিলেন। নেককার ছিলেন। আমার জানা মতে সহীহ হাদীসে এর চেয়ে বেশি কিছু পাওয়া যায় না। আমাদের জন্য এতটুকুই অনেক।
আরেকজন তালিবে ইলম জিজ্ঞাসা করলেন, হযরত! এটা তো জানা আছে যে, সিদ্দীক সত্যবাদীকে বলে। তবে আমাদের উস্তায বলেছেন, এই শব্দের আরো অনেক মর্মগত দিক রয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকর রা.-কে সিদ্দীক সাব্যস্ত করেছেন সব দিক থেকে। আপনি একটু খুলে বলবেন কি— এর অন্যান্য মর্ম ও দিকগুলো কী?
হযরত মুচকি হেসে বললেন, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধভাষী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর প্রতিটি কথাই এমন, যার একেকটি শব্দ বা বাক্যাংশে মর্মের পুরো এক ভাণ্ডার নিহিত থাকে। صِدِّيْقُ শব্দটি فِعِّيْلُ ওজনের মুবালাগার সিগাহ। যা আধিক্য বুঝায় অর্থাৎ অধিক সত্যবাদী। ইমাম রাগিব রাহ.—এর বক্তব্য হল, সিদ্দীক তাকে বলা হয়, যার থেকে অধিক পরিমাণে সত্যবাদিতা প্রকাশ পায় এবং সে কখনও মিথ্যা বলে না। অনেক ভাষাবিদের বক্তব্য হল, সিদ্দীক ঐ ব্যক্তি, যিনি কথায় ও বিশ্বাসে সত্যবাদী এবং কর্মের মাধ্যমে নিজের সততার প্রমাণ দেয়। হযরত শাহ ওলীউল্লাহ রাহ. লেখেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা শুনে হযরত আবু বকর রা. কথার মূল প্রতিপাদ্য ও মর্ম অনুধাবন করতে সক্ষম হতেন। আর সিদ্দীক হলেন এমন ব্যক্তি, যিনি রাসূলকে সত্যায়ন করার জন্য মুজিযার মুখাপেক্ষী নন। যিনি রাসূলের মতামতের ব্যাখ্যা প্রদানের পূর্বেই ঐ মতের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন।
হযরত যখন মাকামে সিদ্দীকের ব্যাখ্যা করছিলেন, তখন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর জীবনের বিভিন্ন দিক ও ঘটনা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হল। মাগরিবের নামাযের সময় নিকটবতীর্ ছিল। অন্যান্য মুসল্লিও এসে পড়েছে। কিছু লোক হযরতের কাছে মাসআলা ও দুআ জিজ্ঞাসা করার জন্য এসেছিলেন।
একজন জিজ্ঞাসা করলেন, হযরত! ইসমে আজম সম্পর্কে কিছু বলুন।
হযরত বললেন, ইসমে আজম অনুসন্ধানের বদলে আল্লাহ তাআলার যিকিরকে আমাদের দিনরাতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে অন্তভুর্ক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। তাঁর কাছেই সবকিছু চাইব। সবকিছুর অনিষ্ট থেকে তাঁর কাছেই পানাহ চাইব। ‘আল্লাহ’ মহান রবের সত্তাগত নাম। এটাই সবচেয়ে বড় নাম। ইসমে আজম ও আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামগুলোর ব্যাপারে এটাই বলা হয়েছে যে, তাঁকে এই নামে ডাক। এই নামেই তাঁর কাছে চাও।
হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ রা.-এর রেওয়ায়েত অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এই দুই আয়াতে ইসমে আজম রয়েছে।
وَ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحْمٰنُ الرَّحِیْمُ.
[তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। যিনি অতি দয়াময় ও পরম দয়ালু। —সূরা বাকারা (০১) : ১৩৬]
الٓمَّ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَیُّ الْقَیُّوْمُ.
[আলিফ লাম মীম। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও পরাক্রমশালী। —সূরা আলে ইমরান (০৩) : ১-২] (দ্র. জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪৭৮)
এই দুই আয়াত থেকেও ‘আল্লাহ’ নামটির ইসমে আজম হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। চিন্তা করুন, দুআ করার সময় আল্লাহ তাআলার আসমায়ে হুসনা নিজে নিজেই জবানে এসে যায়—
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ. يَا اَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ.
এরপর প্রশ্ন করলেন ডাক্তার নাদীম। তিনি নওজোয়ান ডাক্তার। আমরা তাকে শৈশব থেকে দেখে আসছি। মাশাআল্লাহ খুবই দ্বীনদার ও সৌভাগ্যবান। ইসলামের সাথে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক। তিনি হযরতকে বললেন, আমি প্রতিদিন আমার ওয়ার্ড পরিদর্শন করি। পেশেন্টদের দেখতে গেলে আমার এই ভাবনা আসে যে, ডাক্তার হিসেবে রোগীকে দেখার পাশাপাশি মুসলিম হিসেবে তাদের ইয়াদতও করি। এভাবে আল্লাহ তাআলা আমাকে একটি সুন্নত আদায় করারও তাওফীক দান করবেন। আপনি আমাকে ইয়াদতের মাসনূন দুআগুলো বলে দিন, বরং লিখে দিন।
হযরত খুব খুশি হলেন। তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দুআ করলেন। হযরত বললেন, বুখারী শরীফে আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
أَطْعِمُوا الجَائِعَ، وَعُودُوا المَرِيضَ، وَفُكُّوا العَانِيَ.
(তোমরা ক্ষুধার্তকে আহার করাও। অসুস্থ ব্যক্তির শুশ্রƒষা কর এবং বন্দিকে মুক্ত কর। —সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬৪৯)
তিরমিযী শরীফে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
مَنْ عَادَ مَرِيضًا أَوْ زَارَ أَخًا لَهُ فِي اللهِ نَادَاهُ مُنَادٍ أَنْ طِبْتَ وَطَابَ مَمْشَاكَ وَتَبَوَّأْتَ مِنَ الجَنَّةِ مَنْزِلًا.
(যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তির ইয়াদত করে বা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে, আসমানে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করে, তুমি ধন্য! তোমার পথ চলা মসৃণ হোক! তুমি জান্নাতে ঠিকানা বানিয়ে নিয়েছ। —জামে তিরমিযী, হাদীস ২০০৮)
হযরত বললেন, আপনি সকল রোগীকে সালাম করবেন। তাদের সাথে এমন কথা বললেন, যেন তাদের হিম্মত বাড়ে। সুস্থতার যে দুআ আপনার মুখস্থ আছে তা পড়ে রোগীকে দম করবেন।
রোগীর উদ্দেশে এই দুআ পড়বেন—
لَا بَأْسَ طَهُوْرٌ إِنْ شَاءَ اللهُ.
(চিন্তার কারণ নেই। ইনশাআল্লাহ এ অসুস্থতা গোনাহমাফীর কারণ হবে। —সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬৫৬)
অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থতার জন্য এটি একটি পূর্ণাঙ্গ দুআ—
أَذْهِبِ البَاسَ رَبَّ النَّاسِ، وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لا شِفَاءَ إلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لا يُغَادِرُ سَقَمًا.
(হে মানবজাতির প্রভু! কষ্ট দূর করে দিন। সুস্থ করে দিন, কেবল আপনিই রোগ মুক্তিদাতা। আপনার আরোগ্য দান ব্যতীত কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দিন, যেন আর কোনো রোগ না থাকে। —সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৫০)
ডাক্তার নাদীম অনেক আনন্দিত হলেন। বললেন, হযরত! এই দুআ তো আমার মুখস্থ আছে। তবে প্রথম দুআটি আবার দু-এক বার বলুন। খুবই সংক্ষিপ্ত দুআ। ইনশাআল্লাহ মুখস্থ হয়ে যাবে।
নাদীম দুআটি এক-দুই বার শুনে মুখস্থ করে নিলেন।
এরই মাঝে মাগরিবের সময় হয়ে গেল। সকলে কাতারে বসে গেল। কিছুক্ষণ পর আজান হল। হযরত নিজেই মাগরিবের নামায পড়ালেন। হযরতের তিলাওয়াত এতটাই হৃদয়গ্রাহী ও মর্মস্পশীর্ ছিল যে, মনে হচ্ছিল কুরআন মাজীদের শব্দগুলো মুসল্লিদের দিল স্পর্শ করল। তৃতীয় রাকাতে হযরত কুনূতে নাযেলা পাঠ করলেন। হযরত বেশিরভাগ সময়ই এ দুআ আফগানিস্তান, কাশ্মীর ও চেচনিয়ার মুজাহিদীনের জন্য ফজর ও মাগরিবের নামাযে পড়তেন। বিশেষ করে ফজরের নামাযে।
মাগরিবের নামাযের পর হযরত প্রায় বিশ মিনিট মামুলাত আদায়ে মগ্ন ছিলেন। তিনি নিচুস্বরেই জিকির করতেন। কিন্তু কখনও কোনো কোনো শব্দ উঁচু আওয়াজেও বলতেন। বেশিরভাগ তালিবে ইলম চলে গেলেন। কয়েকজন ছিলেন। হযরত মামুলাত শেষে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দিলে তারাও সাথে এলেন। হযরত তাদের কথা খেয়াল করেই আব্দুশ শহীদ ছাহেবের সাথে মোটর সাইকেলে যাননি; বরং সকলের সাথে হেঁটে চললেন। রাস্তায় কিছু দ্বীনী কথা হল। কয়েকজনের সাথে তাদের ব্যক্তিগত কথা বললেন। মানুষের মন জয় করা হযরতের বিশেষ অভ্যাস ছিল।
হযরত বাড়িতে পৌঁছে সালাম করলেন। তারপর আমাদের সাথে মেহমানখানায় গেলেন। হযরতের বড় নাতি নাবীল ও বেলাল মেহমানদের জন্য আইসক্রিম নিয়ে এল। মেহমানগণ আইসক্রিম খেয়ে বিদায় নিলেন। আর হযরত হাদীস মুতালাআয় মগ্ন হয়ে গেলেন। আমরা একপাশে কথাবার্তা বলছিলাম। একেবারেই আস্তে আস্তে, যেন হযরতের মুতালাআয় ব্যাঘাত না ঘটে। এরই মাঝে হযরতের নাতি হারেস হযরতের জন্য তালবিনা (যব, দুধ ও মধু ইত্যাদির সহযোগে তৈরি এক প্রকার জাউ), আপেল ও মধু নিয়ে এল। হযরত আমাদেরকেও খাবারে শরীক হওয়ার দাওয়াত দিলেন। আমরা বললাম, আপনি কষ্ট করবেন না। আমরা এশার পর খাবারে অভ্যস্ত।
হযরত বললেন, উত্তম হল মাগরিবের পর এশার পূর্বে খাবার খেয়ে নেওয়া।
হযরত জোর করে আমাদেরকে আপেলের টুকরা দিলেন এবং খাবার শুরু করলেন। খাবারের মাঝেই হযরত শক্ত আওয়াজে বললেন, ‘নবীজীর ঘরে কয়েকদিন চুলা জ্বলত না। আর আজ এমন কোনো নিআমত নেই, যা উম্মতে মুহাম্মাদীর নেই। আহ! আমাদের যদি প্রিয় নবীজীর সবর ও শোকরের অভ্যাস বোঝার ও এর উপর আমাল করার তাওফীক হত! আমাদের জন্য ভালো ও মন্দের মাপকাঠি তো সেটাই, যা আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান রবের কাছে প্রার্থনা করেছেন এবং যা থেকে তিনি পানাহ চেয়েছেন। এ সম্পর্কে একটি দুআ খাবারের পর বলব।’
হযরত আহার শেষ করলেন। আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করলেন। মাসনূন দুআ পড়লেন। হাত ধুয়ে এসে বললেন, এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখিয়ে দেওয়া একটি চমৎকার দুআ—
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا اسْتَعَاذَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَنْتَ الْمُسْتَعَانُ، وَعَلَيْكَ الْبَلَاغُ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلّا بِاللهِ.
(হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সেসব কল্যাণ প্রার্থনা করছি, যা আপনার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার কাছে প্রার্থনা করেছেন। আর আমরা আপনার কাছে সেসব অকল্যাণ থেকে পানাহ চাচ্ছি, যা থেকে আপনার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানাহ চেয়েছেন। কেবল আপনার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করা যায়। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া আপনারই দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলার সাহায্য ছাড়া আমাদের কোনো সাধ্য নেই সৎকাজ সম্পাদন করার এবং অসৎকাজ থেকে বেঁচে থাকার । —জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫২১)
এশার আজানের আওয়াজ আসতে লাগল। আমরা মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। রাস্তায় মসজিদের কাছে হাজ্বী রফীউদ্দীন সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ হল। তিনিও মসজিদে যাচ্ছিলেন। হাজ্বী সাহেবের বয়স এক শ বছরের উপরে। তিনি প্রতি ওয়াক্ত নামায মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করেন। এক নামায শেষে মসজিদ থেকে ফেরেন তো আরেক নামাযের জন্য অস্থির হয়ে যান। হাজ্বী সাহেবের অন্তর মসজিদেই পড়ে থাকে। হযরত বলতেন, এমন ব্যক্তি হাদীসের ভাষ্য মোতাবেক ঐ মুজাহিদের মতো, যিনি মুসলিম রাষ্ট্রের হেফাজতের জন্য লাগাতার সীমান্তে থাকে।
আমরা মসজিদে পৌঁছে দেখলাম সেখানে একটি জানাযা উপস্থিত। জানা গেল ইউনিভার্সিটির পিয়নের ইন্তেকাল হয়েছে। হযরত إِنَّا لِلهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ পড়লেন। মৃত ব্যক্তির সন্তান মসজিদে উপস্থিত ছিলেন। হযরত তাকে সমবেদনা জানালেন এবং মসজিদে থাকা লোকদের উদ্দেশে বললেন, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহর রেওয়ায়েত অনুযায়ী তাযিয়াতকারী ততটুকু সাওয়াবের অধিকারী হয়, যতটুকু সাওয়াব বিপদগ্রস্তের হয়। জানাযার নামাযে উপস্থিত হওয়া এবং জানাযার সাথে কবরস্থান পর্যন্ত যাওয়া একজন মুসলমানের জিম্মায় অপর মুসলানের জন্য সর্বশেষ দায়িত্ব। তারপর হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদীস বললেন, যা বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে—
مَنِ اتَّبَعَ جَنَازَةَ مُسْلِمٍ، إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، وَكَانَ مَعَهُ حَتَّى يُصَلَّى عَلَيْهَا وَيَفْرُغَ مِنْ دَفْنِهَا، فَإِنَّهُ يَرْجِعُ مِنَ الأَجْرِ بِقِيرَاطَيْنِ، كُلُّ قِيرَاطٍ مِثْلُ أُحُدٍ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيْهَا ثُمَّ رَجَعَ قَبْلَ أَنْ تُدْفَنَ، فَإِنَّهُ يَرْجِعُ بِقِيرَاطٍ.
(যে ব্যাক্তি কোনো মুসলিমের জানাযায় ঈমান সহকারে ও সওয়াবের আশায় শরীক হয়, জানাযার নামায আদায় করে এবং দাফনে শরীক হয়, সে দুই কীরাত নেকী পাবে। এক কীরাত উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ। আর যে জানাযার নামায আদায় করে, কিন্তু দাফনের আগেই চলে আসে সে পাবে এক কীরাত। —সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৪৫)
জামাতের সময় হওয়ার পর সকলেই এশার জামাতে শরীক হলেন। নামাযের পর হযরত জানাযার নামায পড়ালেন। যখন সবাই কবরস্থানের দিকে মায়্যেতকে নিয়ে যাচ্ছিলেন হযরতকে লোকেরা বললেন, সারাদিনের মেহনতের ফলে আপনি হয়ত ক্লান্ত; আপনি বিশ্রাম করুন। হযরত মুচকি হেসে বললেন, আপনারা কেন আমাকে সাওয়াব থেকে বঞ্চিত করছেন। কবরস্থান তো কাছেই।
হযরত কবরস্থানে উপস্থিত হলেন। দাফনে শরীক হলেন। এরপর ফিরে এলেন।
এই ছিল একজন ঈমানদারের জীবনের একটি দিন; আল্লাহ আমাদেরকে যাঁর সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভের সৌভাগ্য দান করেছিলেন।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
অনুবাদ : মুনশী মুহাম্মদ মহিউদ্দিন