প্রশ্নোত্তর
[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম প্রশ্নোত্তর। এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]
প্রশ্ন ৬৩ : মাসিক আলকাউসারের গত দুই সংখ্যা আগে আনওয়ারুল কুরআনের প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নের উত্তরে ‘ইরাবুল কুরআনি ওয়া বায়ানুহূ’ নামে একটি কিতাবের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। এই কিতাবটি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
উত্তর : কিতাবটির নাম اعراب القرآن الكريم وبيانه (ইরাবুল কুরআনিল কারীমি ওয়া বায়ানুহূ)। মুসান্নিফ : মুহিউদ্দীন ইবনে আহমদ ইবনে মুসতাফা আদ—দারবিশ, মৃত্যু : ১৪০৩হিজরী, ১৯৮২ ঈসায়ী। তিনি সিরিয়ার অধিবাসী ছিলেন। তার ইরাবুল কুরআন কিতাবটি দারুল ইয়ামামা, বৈরূত থেকে ৯ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এটি এ শাস্ত্রে সমকালে লেখা একটি ভালো কিতাব।
প্রশ্ন ৬৪ : সূরা ফাজরের শুরুতে যে দশ রাতের কসম করা হয়েছে, সেটা কোন দশ রাত? সে দশ রাতের কি বিশেষ কোনো ফযীলত রয়েছে?
উত্তর : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহুসহ আরও অনেকের মতে এ দশ রাত হল যিলহজের প্রথম দশ রাত। এ রাতসমূহকে আল্লাহ তাআলা বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। এ রাতগুলোতে ইবাদত-বন্দেগী করলে অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيهَا أَحَبُّ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ — يَعْنِي أَيَّامَ الْعَشْرِ — قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَلا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ؟ قَالَ: وَلا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ، إِلا رَجُلًا خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ، ثُمَّ لَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْءٍ.
অর্থাৎ এমন কোনো আমল নেই, যা আল্লাহর কাছে এ দশদিনের আমলের চেয়েও বেশি প্রিয়। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও নয়?
তিনি বললেন, না, জিহাদও নয়। তবে কেউ যদি তার জান মাল নিয়ে বের হয়ে আর ফিরে না আসে। —সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৬৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৯৬৮।
আরও দ্রষ্টব্য, তাফসীরে তবারী ২৪/৩৪৫-২৪৮; তাফসীরে কুরতুবী ২০/৩৯; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৭৯৮-৭৯৯।
প্রশ্ন ৬৫ : সূরা আম্বিয়ার ১০৪ নম্বর আয়াতে আছে—
یَوْمَ نَطْوِی السَّمَآءَ كَطَیِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِ كَمَا بَدَاْنَاۤ اَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِیْدُهٗ وَعْدًا عَلَیْنَا اِنَّا كُنَّا فٰعِلِیْنَ.
সেই দিনকে স্মরণ রাখ, যখন আমি আকাশমণ্ডলীকে গুটিয়ে ফেলব, যেমন কাগজপত্র লেখাসহ গুটিয়ে ফেলা হয়। আমি পুনরায় তাকে সৃষ্টি করব, যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম। এটা এক প্রতিশ্রম্নতি, যা পূরণ করার দায় আমার। আমি তা অবশ্যই করব।
এ আয়াতের السِّجِلّ -এর অর্থ এবং আকাশ গুটিয়ে ফেলার ব্যাখ্যা কী?
উত্তর : سِجِلّ অর্থ পুস্তিকা, কাগজের বাণ্ডিল বা নথিপত্র। আবার যে নথিপত্র লেখে তাকেও سِجِلّ বলে।
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি কিয়ামতের সময় আকাশকে গুটিয়ে ভাঁজ করে ফেলব। যেভাবে কাগজপত্র গুটিয়ে ভাঁজ করে ফেলা হয়। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে—
وَ مَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهٖ وَ الْاَرْضُ جَمِیْعًا قَبْضَتُهٗ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ وَ السَّمٰوٰتُ مَطْوِیّٰتٌۢ بِیَمِیْنِهٖ سُبْحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشْرِكُوْنَ.
তারা আল্লাহকে মর্যাদা দেয়নি তাঁর যথোচিত মর্যাদা, অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তার মুঠোর ভেতর এবং আকাশমণ্ডলী গুটানো অবস্থায় থাকবে তার ডান হাতে। তিনি পবিত্র এবং তারা যে শিরক করে তা থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে। —সূরা যুমার (৩৯) : ৬৭।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إِنَّ اللهَ يَقْبِضُ يَوْمَ القِيَامَةِ الأَرْضَ، وَتَكُونُ السَّمَوَاتُ بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يَقُولُ: أَنَا المَلِكُ.
কিয়ামতের দিন ভূমণ্ডল থাকবে আল্লাহর কব্জায় এবং আকাশমণ্ডলী থাকবে তাঁর ডান হাতে। তারপর তিনি বলবেন, আমিই একমাত্র মালিক। —সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৪১২।
স্মর্তব্য, আয়াত ও হাদীসের ভাষ্য— আকাশমণ্ডলী আল্লাহ তাআলার হাতে গুটানো অবস্থায় থাকবেÑ এর বাহ্যিক অবস্থা কী হবে, তা কেবল আল্লাহ তাআলাই জানেন।
তাছাড়া قبض ও يمين শব্দদুটি কতৃর্ত্ব ও মালিকানা বোঝাতেও ব্যবহার হয়।
আরও দ্রষ্টব্য : তাফসীরে তবারী ১৬/৪২৫, ২০/ ২৪৬-২৫৩; তাফসীরে কুরতুবী ১১/৩৪৭, ১৫/২৭৮; তাফসীরে কাবীর ৯/৪৭৪-৪৭৫; ফাতহুল বারী ১৩/৫১৯-৫২০।
প্রশ্ন ৬৬ : বনী ইসরাইল জাতি কারা?
উত্তর : বনী ইসরাঈল অর্থ ইসরাঈলের বংশধর। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পুত্র ইসহাক আলাইহিস সালাম, তার পুত্র ইয়াকূব আলাইহিস সালাম। হযরত ইয়াকূব আলাইহিস সালামের আরেক নাম ইসরাঈল। তাঁর বারোজন সন্তান ছিল। হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামও সে বারোজনের একজন। হযরত ইয়াকূব বা ইসরাঈল আলাইহিস সালামের বংশধররাই বনী ইসরাঈল। (আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ১/২৮১, ২৮৫, ২৮৭)