দশদিক
কার্টারের কৌতুক
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের এক সমাবেশে মুসলমান ও ইহুদীদের একসঙ্গে কাজ করে আরব-ইসরাঈল সংঘাত বন্ধে উদ্যোগ নিতে বলেছেন। সংবাদ সংস্থা-এনা কতৃর্ক পরিবেশিত খবরটি দৈনিক যায়যায়দিনের ইন্টারন্যাশনাল পাতায় ছাপা হয়েছে গত ১০মে বৃহস্পতিবার। কার্টার আরো বলেন, আমি ইহুদী এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি গ্রুপ পাঠাতে চাই প্যালেস্টাইনে সরেজমিন প্রকৃত পরিস্থিতি দেখার জন্য। ‘প্যালেস্টাইন পিস নট অ্যাপার্থেইড’ নামের একটি বই লিখে ইহুদীদের রোষানলে পড়ে দুঃখ প্রকাশে বাধ্য হওয়া কার্টার সেই প্রতিনিধি দলের সফর খরচও জোগাড় করতে সম্মত বলে জানান। ৮২ বছর বয়স্ক সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ আহ্বানের খবরটি পড়ে একই সঙ্গে কৌতুক ও দুঃখবোধের ঘটনা ঘটল। ইঙ্গ-মার্কিন মদদে ইহুদী জবরদখলের মধ্য দিয়ে সূচিত দীর্ঘ প্রায় ৪ যুগের একটি সংঘাত নিরসনে ইহুদী মুসলিম মিলে যৌথ সফরের প্রোগ্রাম বানানোর মতো অর্থহীন প্রস্তাবের দ্বারা বোঝা গেল, এ সংঘাত ও রক্তক্ষয় বন্ধে বাস্তব ও ন্যায়ানুগ কোনো কিছু করার ইচ্ছা বা ক্ষমতা তারা রাখেন না। নিছক কৌতুক করার জন্যই একথাটা বলা। কিংবা হতে পারে এমন যে, ইহুদী জবরদখল তো আর উঠানো হবেই না, তবু যদি ইহুদীদের প্রতি মুসলিমদের ক্ষোভ ও দূরত্ব কমিয়ে দিতে তাদেরকে ‘একসঙ্গে কাজ করার’ মতো কিছু প্রোগ্রাম দিয়ে কিছু সুফল পাওয়া যায় তবে আর মন্দ কি! কার্টার সাহেব কি সে দৃষ্টিকোণ থেকেই এই কৌতুকটি করলেন কি না সেটা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।
শিল্প !
ভাত কিছু পঁচলেও খাওয়া যায়। কিন্তু পোলাও যদি পঁচে তাহলে তার গন্ধে টেকাই দায়। মানুষের বিবেক ও রুচি একবার উল্টে গেলে এমনটিই হয়। অন্য জন্তু-জানোয়ারের ক্ষেত্রে যা সম্ভব নয় এবং কল্পনাও করা যায় না—মানুষ তখন তা-ই পারে অনায়াসে এবং সাজিয়ে গুছিয়ে সুসংগঠিতভাবে। খবর গত ৯ মে দৈনিক যায়যায়দিনের। ইন্টারন্যাশনাল পাতার একদম নীচে একটি অস্পষ্ট ছবি। মনে হচ্ছিল একটি চত্বরে মরিচ কিংবা সরিষার দানা শুকাতে দেওয়া হয়েছে। পরে ক্যাপশান পড়ে বোঝা গেল, মেক্সিকো সিটির জোকালো স্কয়ারে গত ৬ মে রোববার আমেরিকান এক ফটোগ্রাফারের সামনে হাজার হাজার লোক পোশাক খুলে পোজ দিয়েছেন। মুদ্রিত ছবিটি নেওয়া হয়েছে দূর থেকে। ক্যাপশান পড়েও অস্পষ্ট ছবিটি বোঝা যায়নি। কিন্তু ব্যাপারটি বুঝতে পেরে থ হয়ে যেতে হল। এ ফটোগ্রাফার নাকি ইতিমধ্যেই ‘নান্দনিক ভঙ্গিতে’ অসংখ্য নগ্ন মানুষের ছবি তোলার জন্য ব্যাপক খ্যাতি কামাই করেছেন। একেতো পোশাকহীন হয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো, তারপর হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে! সেই ছবি আবার দুনিয়া জুড়ে প্রচার! আর এ সবই করা হচ্ছে শিল্প ও রুচির নামে । সতরের ন্যূনতম অনুভূতি থাকলে কোনো জন্তু-জানোয়ারও কি এমন করতে পারত? মনে হয় না। অথচ এটাও এখন শিল্প। হাজার হাজার ‘শিক্ষিত’, ‘সভ্য’ মানুষ নগ্ন হয়ে প্রকাশ্যে একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছেন। এদের কাছে শালীনতা, পর্দা, নারী-পুরুষের সহজাত ব্যবধানের বিষয়গুলো তো কিছুটা পাগলামী ও পশ্চাৎপদতাই মনে হবে। যারা মনে মনে এদেরই মতো, তাদের কাছেও মনে হবে। হচ্ছেও তাই।
অবশেষে না
সুসময় মনে করে রাজনীতিতে নামতে তড়িঘড়ি আয়োজন ও মরিয়া চেষ্টা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ক্ষ্যান্ত দিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নোবেল পাওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই দেশে জরুরি অবস্থা জারি এবং প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল ও ধারার মাঝে ‘ঝড়ের দিন’ দেখে তিনি ‘সুখের আম কুড়ানোর’ প্রস্তুতি ঘোষণা করেছিলেন। মাঝে কিছুদিন চুপচাপ থেকে গত মে মাসের শুরুতেই শেষমেশ তিনি জানালেন, রাজনীতির ময়দানে আর নামছেন না। এদেশে এনজিও সাম্রাজ্যের কর্ণধার ক্ষুদ্রঋণের নামে গরীবদের মাঝে চড়া সুদে লেনদেনের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তা ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণকারী টাকালগ্নির এ নায়ক রাজনীতিতে নামতে চেয়ে ইতিপূর্বে বলেছিলেন, নোবেল পুরস্কার ধুয়ে ধুয়ে কি পানি খাব, দেশের প্রয়োজনে রাজনীতিতে নামার এখনই সুসময়।’ ‘পত্ররাজনীতির’ ব্যর্থ কৌশল প্রয়োগ করে শেষ পর্যন্ত পত্র দিয়েই বিদায় নিলেন তিনি। তার অভিযোগ ও অভিমান, যারা তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন তারা তার সঙ্গে আর আসতে চাইছেন না। উৎসাহ ও পরামর্শদাতারাও দূরে সরে থাকছেন। এ অবস্থায় নতুন দল গঠন করার ঝুঁকি তিনি নিতে চান না।
রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের এই যুগে তার মতো পশ্চিমা-পছন্দ লোক ময়দানে নামলে জনগণের না হোক, তার কিছু একটা হয়তো হত। দুবৃর্ত্তের পরিচিত পোশাক বদলে নতুন পোশাকে কেউ এলে বাজারে নতুন পণ্যের প্রতি উৎসুক ক্রেতাদের আগ্রহের মতো তার প্রতিও আগ্রহ ও সুযোগ সন্ধানের প্রকাশ হয়তো ঘটত। কিন্তু এতে তরী উৎরানোর ঘটনা ঘটত বলে মনে হয় না। মাঝ দরিয়ার ডুবো চরে ডিঙ্গি আটকে যেত। তিনি এটা বুঝে ফেলেছেন। বুঝে ভালোই করেছেন। নিজেও বাঁচলেন, আমাদেরও ছাড়লেন।
দিবসের মা
গত ১৩ মে ’০৭ ইং বহু উদ্যোগ আয়োজন করে পালিত হল ‘মা দিবস’। সন্তানের জন্য মায়ের মমতা ও দরদ নিয়ে আয়োজন ও হইচই হল বহু। কিন্তু বিভ্রান্ত সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠা কোনো কোনো মায়ের দরদ(?) এ দিবসটিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিল। ১৪ মে প্রায় সব জাতীয় সংবাপত্রে একটি হৃদয় বিদারক খবর দেখা গিয়েছিল। ‘মা দিবসে’র দিন দুপর দেড়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফুটপাথে কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় একদিনের এক নবজাতককে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তার মা নিরুদ্দেশ। কেন তার নবজাতক সন্তানকে একজন মায়ের পথে ফেলে যেত হল, সে কারণটি নিয়ে দিবস নিয়ে মাতামাতি করা সমাজটার একটু ভেবে দেখা দরকার। মায়ের দরদ তো আর দিবস করে পাওয়া যায় না।
-আবু তাশরীফ