Muharram 1432   ||   December 2010

শায়খাইন রা. সম্পর্কে হযরত আলী রা.

Ibne Naseeb

১. আলী রা. বলেন, বদর যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ও আবু বকর রা.কে লক্ষ করে বললেন, তোমাদের একজনের সাথে রয়েছেন জিব্রীল অপরজনের সাথে মিকাঈল। আর বড় ফিরেশতা ইসরাফীল  লড়াইয়ে শরীক রয়েছেন। (অথবা বলেছেন) লড়াইয়ের কাতারে রয়েছেন।

মুসনাদে আহমদ ১/১৪৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস : ৩২৬১৭

২. শকীক বলেন, আলী রা.কে বলা হল, আপনার পর কাউকে খলীফা বানিয়ে যাচ্ছেন না কেন? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খলীফা বানিয়ে যাননি। (তিনি যদি খলীফা বানাতেন তাহলে) আমি বানিয়ে যেতাম।            আল্লাহ তাআলা যদি মানুষের কল্যাণের ইচ্ছা করেন তাহলে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তির বিষয়ে সকলকে একমত করে দিবেন, যেভাবে তাঁর নবীর পর সর্বোত্তম ব্যক্তির বিষয়ে সকলকে একমত করেছিলেন।-বাযযার-মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ১৪৩৩৪

৩. হাকীম ইবনে সাদ বলেন, আমি আলী রা.কে কসম করে বলতে শুনেছি, আবু বকর রা.-এর সিদ্দীক উপাধি আল্লাহ তাআলা আসমান থেকে নাযিল করেছেন।-আলমুজামুল কাবীর তবারানী, হাদীস : ১৪

৪. মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ রাহ. বলেন, আমি আমার পিতা (হযরত আলী রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, ‘আবু বকর (রা.)।আমি বললাম, ‘এরপর কে?’ তিনি বললেন, ‘উমার (রা.)।এরপর এই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলে তিনি হয়তো উসমান (রা.)-এর নাম উচ্চারণ করবেন এই আশঙ্কায় আমি বললাম, এরপর তো আপনি? তিনি বললেন, ‘আমি তো একজন সাধারণ মুসলমান।’-সহীহ বুখারী ৭/২৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৬২৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩২৬০৮

৫. আলী রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসা ছিলাম। ইতিমধ্যে আবু বকর (রা.) ও উমার (রা.) এলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে আলী! এ দুজন হলেন নবীগণের পর জান্নাতের মধ্যবয়সী মানুষের নেতা। তবে তাদেরকে একথা বলো না। -মুসনাদে আহমদ ১/৮০

৬. আলী রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর এই উম্মতের সর্বোত্তম ব্যক্তি (হযরত) আবু বকর (রা.)। আর আবু বকরের (রা.) পর ওমর (রা.)। তৃতীয় ব্যক্তি সম্পর্কেও যদি তোমাদেরকে জানাতে চাইতাম তবে তা-ও জানিয়ে দিতাম।’-মুসনাদে আহমদ ১/১০৬, ১১০; আল মুজামুল আওসাত তবারানী, হাদীস : ৯৯৬, ১৯৮০; আরো দেখুন : মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩২৬১৩, ৩২৬২৬

৭. আলী রা. বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন, এরপর আবু বকর (রা.), এরপর উমার (রা.)। এরপর আমরা ফিৎনায় পড়ে গেলাম। এখন আল্লাহ যাকে চান তাকে ক্ষমা করবেন।’-  মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৮৯৫; আলমুজামুল আওসাত তবারানী, হাদীস : ১৬৬১

৮. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, (হযরত) ওমর রা. যখন খাটিয়ার উপর শায়িত ছিলেন এবং লোকেরা তার চারপাশে দাঁড়িয়ে দুআ করছিল তখন আমিও সেখানে ছিলাম। হঠাৎ কাঁধে এক ব্যক্তির স্পর্শ পেয়ে সচকিত হই। তাকিয়ে দেখি, (হযরত) আলী (রা.)। তিনি ওমর রা.-এর জন্য রহমতের দুআ করলেন এবং বললেন, ‘‘আপনার পর তো এমন কেউ কেনই, যার মতো আমলনামা নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়া আমার কাছে অধিক পসন্দের হয়। খোদার কসম! আমার এই ধারণাই ছিল যে, আল্লাহ আপনাকে রাখবেন আপনার দুই সঙ্গীর সাথে। কারণ আমি বহুবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘আমি এবং আবু বকর ও ওমর গিয়েছি।’ ‘আমি এবং আবু বকর ও ওমর প্রবেশ করেছি।’’ ‘আমি এবং আবু বকর ও ওমর বের হয়েছি।তাই আমার ধারণা ছিল, আল্লাহ তাআলা আপনাকে ঐ দুজনের সঙ্গেই রাখবেন।’’-সহীহ বুখারী ৭/৩৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৩৮৯ আরো দেখুন : মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩২৬৮১

৯. সালিম বলেন, নাজরানের অধিবাসীদের সংখ্যা চল্লিশ হাজারে পৌঁছে গিয়েছিল। (হযরত) উমার রা. আশঙ্কা করতেন যে, তারা মুসলমানদের উপর আক্রমণ করতে পারে।  ইতিমধ্যে তাদের নিজেদের মধ্যে     র্ন্তদ্বন্দ দেখা দিল এবং তারা ওমর রা.-এর নিকটে এসে বলল, আমাদের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ দেখা দিয়েছে অতএব আমাদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করুন। অথচ তাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর লিখিত ফরমান ছিল যে, তাদেরকে বহিষ্কার করা যাবে না। (তারা নিজেরাই যখন স্থানান্তরের আবেদন করল তখন) হযরত ওমর রা. এই সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেন এবং তাদেরকে স্থানান্তরিত করে দিলেন। ইতিমধ্যে তারা অনুতপ্ত হল এবং পূর্বোক্ত আরজি প্রত্যাহারের আবেদন করল। ওমর রা. তা অস্বীকার করে দিলেন। হযরত আলী রা.-এর (খিলাফতের সময়) তারা তাঁর নিকটে এল এবং বলল, আমরা আপনার নিজ হাতের লেখা ও আপনার নবীর নিকট আপনার সুপারিশের দোহাই দিয়ে বলি, আমাদের ঐ আরজি প্রত্যাহার করুন। হযরত আলী রা. অস্বীকার করলেন এবং বললেন, ‘দূর হও! নিঃসন্দেহে ওমর সুবিবেচক ছিলেন।

সালিম বলেন, বিজ্ঞজনেরা মনে   করেন, হযরত আলী রা. যদি ওমর রা.কে কোনো বিষয়ে অভিযুক্ত করার ইচ্ছা পোষণ করতেন তাহলে নাজরানবাসীদের বিষয়ে অভিযুক্ত করতেন।-মুসান্নাফে ইবনে          আবী শাইবা, হাদীস : ৩৮১৭২

আরো দেখুন : প্রাগুক্ত, হাদীস : ৩২৬৬৭ 

 

 

advertisement