নবীজীর পদাঙ্ক অনুসরণে একটি দিন
[হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নোমানী রাহ.—এর সুন্নতী জীবনের একটি রূপ]
একজন মুমিনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আল্লাহ তাআলার ইবাদত এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ। অথার্ৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নীতি ও সুন্নাহকে নিজের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা। কালিমায়ে তাওহীদ পাঠের মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়ত ও নবীজীর আদর্শের সত্যতা ও যথার্থতার সাক্ষ্য দেয় এবং মনেপ্রাণে তা গ্রহণ করার ঘোষণা দেয়। তাই একজন মুমিনের জন্য এই আদর্শ ও সুন্নাহর আলোকে নিজের পুরো জীবন ও জীবনের প্রতিটি অঙ্গনকে পরিচালিত করা আবশ্যক। শেষ নবী ও শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ও কর্ম, শিক্ষা ও আদর্শ মানবজাতির জন্য আসমানী নমুনা। যার অনুসরণ-অনুকরণের মধ্যেই মানুষের দোজাহানের মুক্তি ও সাফল্য।
বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে এমনই একজন মনীষীর এক দিনের বিবরণ পেশ করা হয়েছে, যিনি স্বভাব-চরিত্র ও আচার-ব্যবহারে সুন্নতের পাবন্দ ছিলেন। সুন্নাতে নববীর বাস্তব নমুনা ছিলেন। হাদীসে বর্ণিত দুআ ও নববী যিকিরসমূহের প্রতি ছিল তাঁর আন্তরিক আকর্ষণ। স্বভাবে অমুখাপেক্ষিতা ও দুনিয়াবিমুখতা এবং বিনয় ও নম্রতার প্রাধান্য ছিল। আর সময়ের মূল্যায়নের ব্যাপারে তো ছিলেন একজন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি হলেন হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নোমানী রাহ. (১৩৩৩ হি.-১৪২০ হি./১৯১৫ ঈ.-১৯৯৯ ঈ.)।
প্রবন্ধকার ড. সায়্যিদ মুহাম্মাদ আবুল খায়ের কাশফী রাহ. দীর্ঘদিন করাচী ইউনিভার্সিটির উদূর্ বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারম্যান ছিলেন। নোমানী রাহ.-এর সাথে ছিল তাঁর বিশেষ মহব্বতের সম্পর্ক। তিনি লেখেন— ‘হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রশীদ নোমানী আমার ও আমার ঘরের সদস্যদের সাথে প্রায় বিশ বছর ছিলেন। জামিয়া নগর, করাচি ইউনিভার্সিটিতে তিনি আমাদের পাশেই বসবাস করতেন। নামাযের সময় দিনে কয়েকবার তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হত। প্রতিদিন কমবেশি দু-একবার তাঁর ঘরে আমি হাজির হতাম। তিনিও প্রায়ই গরীবালয়ে তাশরীফ আনতেন। আমি তাঁকে সবসময় ও সর্বাবস্থায় দেখেছি। তিনি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি সুন্নাতের উপর আমল করার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। নবীজীর প্রতিটি অভ্যাস অনুসরণের চেষ্টা করতেন। প্রতি সোমবার আমার ঘরে হযরতের হাদীসের দরস হত। সর্বস্তরের লোকজন এখানে উপস্থিত হত এবং সকলেই সমানভাবে উপকৃত হত। তাঁর দরসগুলো ইলমী সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণের জন্য ছিল না; বরং তিনি এতটাই আগ্রহ ও মহব্বতের সাথে এবং এমনভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী আমাদের সামনে পেশ করতেন যে, আমাদের প্রত্যেকে নিজ থেকেই সুন্নাতে নববীর উপর আমল করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করত।’
অনেকেই আছেন, যারা সুন্নাতের অনুসরণে জীবন পরিচালনা করতে চান তাদের জন্য এ প্রবন্ধ অনেক উপকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। আশা ও আমলের চেষ্টা করা আমাদের কাজ আর আমলের তাওফীক রাব্বুল আলামীনের দয়ায়ই সম্ভব। লেখক হযরত নোমানী রাহ.-এর দিন তাহাজ্জুদ থেকে শুরু করেছেন। কারণ আহলে দিল ও সুন্নাতের অনুসারীদের দিন তখন থেকেই শুরু হয়। বিভিন্ন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক দুআ পড়তেন। এক্ষেত্রে লেখক সংক্ষিপ্ত দুআগুলো নির্বাচন করেছেন। যেন পাঠকের সহজেই সেগুলো মুখস্থ হয়ে যায়। কিছু বড় দুআ পরিশিষ্টে যুক্ত করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের জীবন সুন্নাতে নববীর মাধ্যমে সুসজ্জিত করার তাওফীক দান করুন। —অনুবাদক
আগস্ট মাস চলছিল। এশার জামাতের সময় রাত নয়টায়। হযরত নোমানী রাহ. মাগরিবের নামায শেষে ঘরে এলেন। নফল নামায আদায় করলেন। এরপর তাসবীহাতে মশগুল হয়ে গেলেন। সাড়ে আটটায় বেলাল ও হারেস দস্তরখান প্রস্তুত করলেন। ঘরের সকলেই রাতের খাবারে হযরতের সাথে শরীক হলেন। হযরত ঝোল দিয়ে দেড়টা চাপাতিরুটি ও দুই চামচ মধু খেলেন। নয়টা বাজার সাত-আট মিনিট পূর্বে আব্দুশ শহীদ মিয়া ও নাতিদের নিয়ে হযরত এশার নামাযের জন্য মসজিদের দিকে রওয়ানা হলেন। নামাযের পর সাড়ে নয়টার মধ্যে সবাই ঘরে চলে এলেন। হযরতের বিছানা প্রস্তুত করা ছিল। হযরত শুয়ে নাতিদেরকে ঐ দিনের সবক সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগলেন। প্রায় সোয়া দশটার দিকে বাচ্চারা বিদায় নিল। কামরার বাতি নিভিয়ে দেওয়া হল। সকলে নিজ নিজ কামরায় চলে গেল।
হযরত সারা দিনের পরিশ্রম ও ইলমি কাজের কারণে কিছুটা ক্লান্ত ছিলেন। ডান হাত ডান চিবুকের নিচে দিয়ে কেবলামুখি হয়ে শুয়ে পড়লেন। শোয়ার সময় দুআ পড়লেন—
اَللّٰهمَّ بِاسْمِكَ أَمُوْتُ وَأَحْيَا.
(হে আল্লাহ! আমি আপনার নামেই মৃত্যুবরণ করব এবং আপনারই নামে জীবিত হব।)
اَللّٰهُمَّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ.
(হে আল্লাহ! আমাকে ঐদিন শাস্তি থেকে রক্ষা করুন, যেদিন আপনার বান্দাদেরকে পুনরায় জীবিত করবেন।)
ঠিক তিনটায় হযরত জেগে উঠলেন। এমন মনে হত যে, তাঁর ভেতরে কোনো ঘড়ি ছিল, যা তাঁকে তাহাজ্জুদের সময় উঠিয়ে দিত। মানুষের ইবাদতের অভ্যাস এমন এক ঘড়ি, যার আওয়াজ মানুষের অন্তর শুনতে পায়। হযরত ঘুম থেকে ওঠার সময় কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করলেন—
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُه.
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।)
এরপর হযরত দুআ পড়লেন—
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَمَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ.
(সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, যিনি আমাদের মৃত্যু দানের পর পুনরায় জীবিত করলেন এবং (মৃত্যুর পর) তাঁরই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন।)
দুআ পড়ে হযরত বিছানা থেকে উঠলেন। বাথরুমের দিকে গেলেন। বাথরুমে প্রবেশের সময় দুআ পড়লেন—
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ.
(হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অনিষ্টকারী নর-নারী জিন শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)
জরুরত শেষে বাথরুম থেকে বের হলেন। দুআ পড়লেন—
غُفْرَانَكَ، اَلْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ أَذْهَبَ عَنِّيْ اَلْأَذٰى وَعَافَانِيْ.
(হে আল্লাহ! আপনি আমায় ক্ষমা করুন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, যিনি আমার থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করেছেন এবং প্রশান্তি দান করেছেন।)
হযরত তাঁর বসার স্থানেই জায়নামায বিছিয়ে তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে গেলেন। হযরত কুরআনের হাফেজ তো ছিলেন না তবে কুরআন মাজীদের বড় একটা অংশ তাঁর মুখস্থ ছিল। তাহাজ্জুদে তিনি হালকা আওয়াজে কুরআন পড়তেন; যেন পড়ার আওয়াজ তিনি নিজে শুনতে পান। কুরআন পড়তেন আর আয়াতের বিষয়বস্তুর সাথে সাথে হযরতের অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকত। কখনও তিনি আল্লাহ তাআলার প্রতিশ্রম্নতির কারণে খুশি হতেন। কখনও শাস্তি ও কিয়ামতের ভয়াবহতার বিবরণে তাঁর চোখ বেয়ে অশ্রম্ন গড়িয়ে পড়ত। যে রাতের কথা বলছি, হযরত সে রাতে তাহাজ্জুদে সূরা আলে ইমরান তিলাওয়াত করছিলেন।
মহান রাব্বুল আলামীনের আলোচনার আয়াতগুলোতে হযরতের গলার আওয়াজ কাঁপছিল।
اِنَّ اللهَ لَا یَخْفٰی عَلَیْهِ شَیْءٌ فِی الْاَرْضِ وَلَا فِی السَّمَآءِ،هُوَ الَّذِیْ یُصَوِّرُكُمْ فِی الْاَرْحَامِ كَیْفَ یَشَآءُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ،هُوَ الَّذِیْۤ اَنْزَلَ عَلَیْكَ الْكِتٰبَ مِنْهُ اٰیٰتٌ مُّحْكَمٰتٌ هُنَّ اُمُّ الْكِتٰبِ وَ اُخَرُ مُتَشٰبِهٰتٌ فَاَمَّا الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِهِمْ زَیْغٌ فَیَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَآءَ الْفِتْنَةِ وَ ابْتِغَآءَ تَاْوِیْلِهٖ.
(নিশ্চিত জেনে রেখ, আল্লাহর কাছে কোনো জিনিস গোপন থাকতে পারে না; পৃথিবীতেও নয় এবং আকাশেও নয়।
তিনিই সেই সত্তা, যিনি মায়ের পেটে যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের আকৃতি দান করেন। তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি পরম পরাক্রান্ত এবং সমুচ্চ প্রজ্ঞার অধিকারী।
সে আল্লাহ্ই এমন সত্তা, যিনি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, যার কিছু আয়াত মুহকাম, যার উপর কিতাবের মূল ভিত্তি এবং অপর কিছু আয়াত মুতাশাবিহ। যাদের অন্তরে বক্রতা আছে, তারা সেই মুতাশাবিহ আয়াতসমূহের পেছনে পড়ে থাকে, ... । —সূরা আলে ইমরান (৩) : ৬-৭)
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَیْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ.
(হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের যখন হেদায়েত দান করেছেন তারপর আর আমাদের অন্তরে বক্রতা সৃষ্টি করবেন না এবং একান্তভাবে নিজের পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয়ই আপনিই মহাদাতা। —সূরা আলে ইমরান (৩) : ৮)
হযরত কাঁদছিলেন আর বারবার এই আয়াত পড়ছিলেন। তাহাজ্জুদ নামায শেষে মুনাজাত করলেন। তিনি সর্বদা তাহাজ্জুদ শেষে অশ্রুসিক্ত নয়নে, খুশু-খুজু অন্তরে মুনাজাত করতেন।
اللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ قَيِّمُ السَّمٰوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ مَالِكُ السَّمٰوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ نُوْرُ السَّمٰوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّوْنَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ.
(হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনার। আপনিই আসমান-জমিন এবং এতদুভয়ের সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। সকল প্রশংসা আপনার। আপনিই আসমান-জমিন এবং এতদুভয়ের সব কিছুর অধিপতি। সকল প্রশংসা আপনার। আপনিই আসমান-জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যস্থিত সব কিছুর নূর। সকল প্রশংসা আপনার। আপনিই হক। আপনার প্রতিশ্রম্নতি সত্য। আপনার বাণী সত্য। জান্নাত সত্য। জাহান্নাম সত্য। নবীগণ সত্য। মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য। কিয়ামত সত্য।)
তাহাজ্জুদ নামাযের পর হযরত কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত শুরু করলেন। যখন ফজরের আজানের আওয়াজ উচ্চৈঃস্বরে ধ্বনিত হতে লাগল, হযরত ছেলেদের ও নাতিদের ডাকলেন। কেউ কেউ আগ থেকে জাগ্রত ছিলেন আর কেউ হযরতের ডাক শুনে জাগ্রত হলেন। সকলে অজু করে মসজিদের দিকে রওয়ানা হলেন। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সকলের মুখে এই দুআ ছিল—
بِسْمِ اللهِ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ، لَا حَوْلَ وَلَاقُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ.
(আল্লাহ তাআলার নামে (বের হচ্ছি)। আমি আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করলাম। আল্লাহ তাআলার তাওফীক ছাড়া পাপ পরিহার করা এবং নেক কাজ করার শক্তি নেই।)
মসজিদে যাওয়া পথে হযরতের মুখে দুআ থাকত—
اَللَّهُمَّ اجْعَلْ فِيْ قَلْبِيْ نُوْرًا، وَفِيْ سَمْعِيْ نُوْرًا، وَفِيْ بَصَرِيْ نُوْرًا، وَعَنْ يَمِيْنِيْ نُوْرًا، وَعَنْ يَسَارِيْ نُوْرًا، وَمِنْ فَوْقِيْ نُوْرًا، وَمِنْ تَحْتِيْ نُوْرًا، وَمِنْ بَيْنِ يَدَيَّ نُوْرًا، وَمِنْ خَلْفِيْ نُوْرًا، وَاجْعَلْ لِيْ نُوْرًا.
(ইয়া আল্লাহ! আলো দিন আমার অন্তরে, আলো দিন আমার দৃষ্টিতে, আলো দিন আমার শ্রবণশক্তিতে, আলো দিন আমার ডানে, আলো দিন আমার বামে, আলো দিন আমার পিছনে, আলো দিন আমার সামনে। আমার জন্য আলোর ব্যবস্থা করুন।)
মসজিদে পৌঁছে মসজিদে প্রবেশের সময় আমরা এই দুআ পড়লাম—
بِسْمِ اللهِ، وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ، اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذَنْبِيْ.
(আল্লাহ তাআলার নামে (মসজিদে প্রবেশ করছি) এবং রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর। হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন। হে আল্লাহ! আমার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন।)
জামাতের কিছু সময় বাকি ছিল। হযরত যিকির-আযকারে মশগুল হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর জামাতের সময় হলে হযরতের বড় ছেলে মুহাম্মাদ আব্দুশ শহীদ নোমানীকে নামায পড়াতে বললেন। আমরা সকলে আমাদের রব্বে কারীমের দরবারে দাঁড়িয়ে গেলাম। পরিবেশটাই এমন ছিল আর কিছুটা হযরতের উপস্থিতির কারণেও আমরা সবাই আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে নিজেদের থেকে নিকটবতীর্ অনুভব করছিলাম। জামাত শেষে বেশিরভাগ মুসল্লী মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেলেন। হযরতসহ আরো কয়েকজন মসজিদে বসে নিজেদের আমলে মশগুল ছিলেন। হযরতের বরকতে কিছু তাসবীহাত আমাদের আমলে পরিণত হয়ে গিয়েছিল।
আমরা এক তাসবীহ একশ বার ইস্তেগফার পড়লাম।
কেউ এই তাসবীহ পড়লেন—
أَسْتَغْفِرُ اللهَ رَبِّيْ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ وَّأَتُوْبُ إِلَيْهِ.
(আমি আমার রবের নিকট সকল গোনাহ থেকে ক্ষমা চাই। এবং তাঁর কাছে তওবা করি।)
কেউ ইস্তেগফারের এই তাসবীহ পড়লেন—
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِيْ لَا اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الحَيُّ القَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ.
(আমি আল্লাহ তাআলার নিকট ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও পরাক্রমশালী। এবং তাঁর কাছে তওবা করি।)
ইস্তিগফারের পর দরূদ শরীফের এক তাসবীহ পড়লাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তো আমাদের দরূদের প্রয়োজন নেই; কিন্তু আমাদের দরূদ শরীফের প্রয়োজন আছে। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নৈকট্য অর্জন হয়। আল্লাহ তাআলার রহমতের সৌভাগ্য লাভ হয়। নাসায়ী শরীফের এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন—
مَنْ صَلّٰى عَلَيَّ صَلَاةً وَاحِدَةً صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ عَشْرَ صَلَوَاتٍ، وَحُطَّتْ عَنْهُ عَشْرُ خَطِيئَاتٍ، وَرُفِعَتْ لَهُ عَشْرُ دَرَجَاتٍ.
(রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে আমার উপর একবার দরূদ পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। তার দশটি গোনাহ ক্ষমা করা হবে এবং তার দশটি দরজা বুলন্দ করা হবে।)
আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে রাসূলুল্লস্নাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠের আদেশ করেছেন—
اِنَّ اللهَ وَ مَلٰٓىِٕكَتَهٗ یُصَلُّوْنَ عَلَی النَّبِیِّ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَیْهِ وَ سَلِّمُوْا تَسْلِیْمًا.
(নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ পাঠান। হে মুমিনগণ! তোমরাও তার প্রতি দরূদ পাঠাও এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও।)
দরূদে ইবরাহীম, যা আমরা নামাযে পাঠ করি, তা সবচেয়ে উত্তম দরূদ। কিন্তু আমাদেরকে কিছু সংক্ষিপ্ত দরূদও শেখানো হয়েছে; যেগুলো হাদীসের কিতাবে রয়েছে। সেগুলোর যে কোনোটি পাঠ করা যায়। কয়েকটি সংক্ষিপ্ত দরূদ উল্লেখ করা হল—
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدِنِ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ.
(হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর। যিনি উম্মী নবী।)
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّأَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ الْمُقَرَّبَ عِنْدَكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
(হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর। এবং তাঁকে কিয়ামতের দিন আপনার নিকটবতীর্ অবস্থানে অবতীর্ণ করুন।)
صَلّٰى اللهُ عَلَى النَّبِيِّ الأُمِّيِّ.
(হে আল্লাহ! আপনি উম্মী নবীর উপর রহমত বর্ষণ করুন।)
তাসবীহাত আদায় শেষে যারা মসজিদে উপস্থিত ছিলেন হযরত তাদের দিকে ফিরে বসলেন। প্রতিদিনই তারা মসজিদে অবস্থান করতেন। হযরত ফজরের নামাযের পর তাসবীহাত শেষে সূযোর্দয় পর্যন্ত প্রশ্নের উত্তর দিতেন বা কথাবাতার্ বলতেন। চৌধুরী সাহেবের নিকট হযরত তার ছেলের হালপুরসি করলেন। সে দুই-তিন দিন যাবৎ অসুস্থ।
হযরত মৃদু আওয়াজে ধীরস্থিরভাবে আলোচনা করতেন, যেন সকলেই সহজে বুঝতে পারে। প্রতিটি শব্দ সুস্পষ্ট। প্রতিটি বাক্য পরিপূর্ণ। নাতিদীর্ঘ ও অনাড়ম্বর। হযরত কথা বলার ক্ষেত্রেও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ করতেন। কথা বলার সময় চেহারায় মুচকি হাসির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেত। তাঁকে কখনও অট্টহাসি দিতে দেখিনি।
একজন জিজ্ঞাসা করলেন, হযরত! কথাবার্তায় রসিকতার অনুমতি আছে কি? যদি থাকে তাহলে কী পরিমাণ?
হযরত বললেন, একটি আরবী প্রবাদ অনুযায়ী রসিকতা হল লবণের মত। অর্থাৎ পরিমিত ব্যবহার আবশ্যক। লবণ না হলে খাবার স্বাদ হয় না, আবার বেশি হলে খাওয়া সম্ভব হয় না। শালীনতা বজায় রেখে রসিকতার অনুমতি আছে। এমন রসিকতা করবে না, যার মাধ্যমে অন্য কারো ঠাট্টা করা হয় বা কোনো দোষের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়। সব সময় রসিকতা করলে কথাবার্তায় গাম্ভীর্য থাকে না। এমন ব্যক্তিদের আলোচনা কেউ মনোযোগ দিয়ে শোনে না। রসিকতার ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও লক্ষ্য রাখবে, যেন কোনো মিথ্যা কথা বলা না হয়। হাস্যরসের মিথ্যাও কিন্তু মিথ্যা।
আরেকজন জিজ্ঞাসা করলেন, কবিতা ও কাব্য চর্চার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা কী ছিল? আজকাল তো অনেকে সারা রাত কাব্য চর্চায় ব্যয় করে। এমনকি ফজরের নামাযও কাযা হয়ে যায়।
হযরত বললেন, মুশরিকরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাদুকর ও কবি বলত। কাব্য চর্চা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মযার্দার জন্য শোভনীয় ছিল না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
وَ مَا عَلَّمْنٰهُ الشِّعْرَ وَ مَا یَنْۢبَغِیْ لَهٗ.
(আমি তাকে (রাসূলকে) কাব্যচর্চা করতে শিখাইনি এবং তা তার পক্ষে শোভনীয়ও নয়। —সূরা ইয়াসিন (৩৬) : ৬৯)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, যদি কবিতার মর্ম ভালো হয় তাহলে কবিতা ভালো। এমন কবিতা, যাতে নেক আমলের কথা আছে, গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার উৎসাহ আছে। যদি কবিতার বিষয়ই মন্দ হয় তাহলে কবিতাও মন্দ। সাহিত্যের দিক থেকে এ বিষয়টিও জরুরি যে, কবিতার উপস্থাপন যেন সুন্দর হয়। কবিতায় যেন অন্তর ছুঁয়ে যাওয়ার শক্তি থাকে। ভালো কবিতায় জাদুর শক্তি রয়েছে।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও কবিতা পাঠ করতেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহু আনহুমকে শোনাতেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা ও হযরত লাবীদ ইবনে রবীআ রা.—এর কবিতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পছন্দনীয় ছিল। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কবিতা বলেছিলেন। এ বিষয়টিকে এভাবে বলা সমীচীন যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগ্রহ উদ্দীপনা ও সততা কবিতার শব্দে নিজে নিজেই মুখে এসে গেছে। হুনাইন যুদ্ধে যখন মুসলমানদের উপর কাফেররা প্রচণ্ড আক্রমণ করে তখন মুসলমানদের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যায় এবং তারা ময়দানের এদিক-সেদিক ছুটতে শুরু করে।
তখন উচ্চৈঃস্বরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়—
أَنَا النَّبِيُّ لاَ كَذِب + أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِب
(নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহর নবী। এবং আমি আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান।)
এর মাঝেই ইশরাকের নামাযের সময় হয়ে গেল। সবাই ইশরাকের নফল নামায আদায় করলেন। একে-অপরকে সালাম বিনিময় করে উঠে গেলেন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় সকলের মুখে একই দুআ ছিল—
بِسْمِ اللهِ، وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ، اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ.
[আল্লাহ তাআলার নামে (মসজিদে প্রবেশ করছি) এবং রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আপনারই অনুগ্রহ কামনা করছি।]
আমি হযরতকে জিজ্ঞাসা করলাম, এই দুআয় فَضْلٌ -এর অর্থ কী?
তিনি বললেন, আল্লাহ আমাদেরকে যা কিছু দান করেন তা তাঁর অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এই দুআয় ‘ফযল’-এর অর্থ রিযিক। পবিত্র রিযিক আল্লাহর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ। যদি আমাদের উপার্জন পবিত্র না হয় তাহলে আমাদের জীবন ও ইবাদত কিভাবে গ্রহণযোগ্য ও পবিত্র হবে। এটাও ইসলামের অনুগ্রহ যে, আমাদের জীবিকা উপার্জনের কাজ-কর্মগুলোও নেক আমলের অন্তভুর্ক্ত। সূরা জুমায় ঈমানদারদের প্রতি ইরশাদ হয়েছে, যখন তোমাদেরকে জুমার নামাযের জন্য আহ্বান করা হয় অথার্ৎ জুমার আযান শুনতে পাও কাজ-কর্ম বন্ধ করে দাও এবং আল্লাহর যিকিরের দিকে দৌড়ে যাও। এখানে আল্লাহর যিকিরের উদ্দেশ্য হল জুমুআর নামায। এরপর আল্লাহ তাআলা বলেন—
فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوةُ فَانْتَشِرُوْا فِی الْاَرْضِ وَ ابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ.
(অতঃপর নামায শেষ হয়ে গেলে তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর।)
হযরত কথা বলতে বলতে পায়ে হেঁটেই বাড়ির পথে রাওয়ানা হলেন। মুহাম্মাদ আব্দুশ শহীদ নোমানী তার সবচেয়ে ছোট ছেলে আনাসকে নিয়ে মোটর সাইকেলে চলে গেলেন। হযরতের বড় নাতি নাবীল, বেলাল ও হারেস আমাদের সাথেই চলল।
নাবীল হাঁচি দিল। আমরা হাঁটছিলাম। হযরত বললেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুগ্রহ উম্মতের উপর অগণিত। খুশির বিষয় হল, এই অনুগ্রহগুলো চলমান এবং এগুলোর সম্পর্ক সকল মুসলমানের সাথে। এই অনুগ্রহগুলোর একটি হল সেসকল দুআ, যা তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। একটু আগে নাবীলের হাঁচি আসল আর সে اَلْحَمْدُ لِلهِ বলেনি।
اَلْحَمْدُ لِلهِ -এর উত্তরে শ্রবণকারীদের বলা উচিত—
يَرْحَمُكَ اللهُ.
‘আল্লাহ আপনার উপর রহমত বর্ষণ করুন।’
হযরত পেছনে ফিরে নাবীলকে জিজ্ঞাসা করলেন, এর উত্তরে হাঁচিদাতার কী বলা উচিত?
নাবীল লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, আমার জানা আছে। তবে এবার ভুল হয়ে গেছে। يَرْحَمُكَ اللهُ -এর উত্তরে বলতে হয়—
يَهْدِيْكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ.
(আল্লাহ আপনাকে পথ প্রদর্শন করুন এবং আপনার অবস্থা ভালো করুন।)
আমরা হযরতের বাড়িতে পৌঁছে দেখলাম আনাস তার সমবয়সীর সাথে বাইরে ঘাসের উপর খেলা করছিল। হযরত বাচ্চাদেরকে সালাম করলেন।
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ.
(আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।)
সালামের বিষয়টিকে হযরত অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। সালাম মূলত সমাজে শান্তি, বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে মুসলমানদের ক্রমাগত ইচ্ছা ও আশার বহিঃপ্রকাশ। আমরা যখনই হযরতের খেদমতে উপস্থিত হতাম হযরত সালাম দিতেন। তাছাড়া হযরত কিছুক্ষণের জন্যও যদি কোনো প্রয়োজনে ঘরের ভেতরে যেতেন ফিরে এসে অবশ্যই সালাম দিতেন।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
অনুবাদ : মুনশী মুহাম্মদ মহিউদ্দিন