কুরআনের ডাক
মুমিনদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের নির্দেশ
কুরআন কারীমে মুমিনদেরকে লক্ষ করে বলা হয়েছে—
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَطِیْعُوا اللهَ وَ رَسُوْلَهٗ وَ لَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَ اَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ، وَ لَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِیْنَ قَالُوْا سَمِعْنَا وَ هُمْ لَا یَسْمَعُوْنَ.
হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং এর থেকে (অর্থাৎ আনুগত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না, যখন তোমরা (আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশাবলি) শুনছ। তাদের মতো হয়ো না, যারা বলে, আমরা শুনলাম; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা শোনে না। —সূরা আনফাল (৮) : ২০
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন কারীমে ও হাদীসে যা হারাম করেছেন, তা থেকে বিরত থাকা; যা হালাল করেছেন, তা মেনে চলা। যেসব বিষয়ে সতর্ক করেছেন, সেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা। যে পথে এবং যেভাবে চলতে আদেশ করেছেন, সেভাবে জীবন যাপন করা। আল্লাহ তাআলার সকল বিধিবিধান জানা ও বোঝা সত্ত্বেও অবাধ্যতা না করা এবং আল্লাহর পথ থেকে সরে না যাওয়া।
সেই সঙ্গে আল্লাহ তাআলা একথাও বলেছেন, তাদের মতো হয়ো না, যারা প্রকৃত শোনার মতো শোনে না। এটা কাফের ও মুনাফিকদের স্বভাব। তারা কেবলই কান দিয়ে শোনে, কিন্তু তা মানে না। বরং আল্লাহর হুকুম-আহকাম শোনার পরেও তাঁর অবাধ্যতা করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়। সব জেনেবুঝেও আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্যতা করে। উক্ত আয়াতে তাদের মতো হতে মুমিনদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং যদি আমরা শরীয়তের বিধান মেনে না চলি, তাহলে আমাদের স্বভাব মুনাফিকদের মতো হয়ে যাবে।
এব্যাপারে অন্যত্র মুমিনদেরকে আরও বলা হয়েছে—
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَطِیْعُوا اللهَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ وَ لَا تُبْطِلُوْۤا اَعْمَالَكُمْ.
হে মুমিনগণ! আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বরবাদ করো না। —সূরা মুহাম্মাদ (৪৭) : ৩৩
এ আয়াতে মুমিনদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি আরও বলা হয়েছে, তোমরা তোমাদের আমলকে বরবাদ করো না। অর্থাৎ একদিকে কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করা আর অপরদিকে কবিরা গুনাহ করা, আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্য হওয়া। কোনো ভালো কাজ করার পরে আবার এমন কাজে লিপ্ত হওয়া, যা সেই ভালো কাজকে নষ্ট করে দেয়। অথবা কোনো নেক কাজ এমনভাবে করা, যার ফলে সওয়াব তো হয়ই না; বরং গোনাহের আশঙ্কা রয়ে যায়।
আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করতে হবে এমনভাবে, যা সবধরনের শিরক, নেফাক এবং রিয়া (লোক দেখানো ও সুনাম কুড়ানোর উদ্দেশ্য) থেকে মুক্ত। কোনো ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস লালন করা যাবে না। সবসময় নেক কাজ করতে হবে এবং রাসূলের দেখানো পন্থায়ই করতে হবে। আবার নেক কাজ করার পর এমন কিছু করা যাবে না, যা সেই নেক কাজকে বরবাদ করে দেয়। যেমন, দান-সদকা করার পর তা নিয়ে খোঁটা দেওয়া যাবে না। এসব করলে সেই ভালো কাজ বরবাদ হয়ে যাবে।
যারা এভাবে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যে ও অনুসরণে জীবন কাটাবে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে কী প্রতিদান দেবেন? কুরআন কারীমে এব্যাপারে বলা হয়েছে—
وَ مَنْ یُّطِعِ اللهَ وَ الرَّسُوْلَ فَاُولٰٓىِٕكَ مَعَ الَّذِیْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَیْهِمْ مِّنَ النَّبِیّٖنَ وَ الصِّدِّیْقِیْنَ وَ الشُّهَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیْنَ ۚ وَ حَسُنَ اُولٰٓىِٕكَ رَفِیْقًا،ذٰلِكَ الْفَضْلُ مِنَ اللهِ وَ كَفٰی بِاللهِ عَلِیْمًا.
যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে, তারা সেইসকল লোকের সঙ্গে থাকবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সালিহগণের সঙ্গে। কতই না উত্তম সঙ্গী তারা! এটা কেবলই আল্লাহপ্রদত্ত শ্রেষ্ঠত্ব। আর (মানুষের অবস্থাদি সম্পর্কে) পরিপূর্ণ ওয়াকিবহাল হওয়ার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট। —সূরা নিসা (৪) : ৬৯-৭০
আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যে ও অনুসরণে যারা জীবন কাটাবে, তারা আখেরাতে নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সালিহগণের সাথে থাকবে। জান্নাতে তাদের সঙ্গ লাভ করবে।
জান্নাতে যদি রাসূলের কাছাকাছি থাকা যায়, তাহলে তা কতই না ভালো! কোনো কোনো সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন, পৃথিবীতে আমরা যেমন আপনাকে কাছে পাই, জান্নাতে তো এমন পাব না, কারণ আপনি নবী হিসেবে সর্বোচ্চ স্তরের জান্নাতে থাকবেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে, রাসূলের আনুগত্যে জীবন কাটালে জান্নাতেও রাসূলের কাছাকাছি থাকা যাবে।
আমরাও যদি নবীজীর আনুগত্যে জীবন কাটাই, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকেও জান্নাতে তাঁর কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য দান করবেন।