মিশকাতুল মাসাবীহের খুতবা
কিছু কথা
শিক্ষকজীবনের শুরু থেকেই সবকের যিম্মাদারী ছাড়াও খারেজী সময়ে তালিবুল ইলমদের সাথে বসা হত। তাদের হালাত নিয়ে কিছু কথাবার্তার সুযোগ ও সৌভাগ্য হত। এসময় তাদের অন্যান্য হালাতের সাথে সাথে তাদের ইস্তেদাদ যাচাইয়ের প্রসঙ্গও আসত। ইস্তেদাদের উন্নতি ও যাচাইয়ের জন্য যারা হেদায়া পড়ত তারা ফাতহুল কাদীর শোনাতে আসত, যারা মেশকাত পড়ত তারা মিরকাত, যারা দাওরা পড়ত তারা ফাতহুল বারী শোনানোর জন্য আসত। এসময় আমাদের প্রথম কথা থাকত, আগে মূল কিতাব ভালোভাবে হল্ ও হৃদয়ঙ্গম করা প্রয়োজন, এরপর শরহ ও ইযাফী কিতাবের স্তর। তাই আমি আগে মূল কিতাব শুনতাম।
মিশকাতের ছাত্রদের বলতাম, প্রথমে মিশকাতের খুতবা পরিপূর্ণরূপে বুঝে পড় এবং আমাকে বুঝিয়ে দাও। এটি যেহেতু মাসাবীহুস সুন্নাহ-এর সাথে সংযোজন করে লেখা হয়েছে, তাই মাসাবীহ আর এর মাঝে কী কী পার্থক্য, এটি লেখার কারণ কী, এটির তাসনীফী মানহাজ কী- এগুলো মিশকাতের মুসান্নিফ তার খুতবায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। তাই খুতবা পড়ে শুধু তরজমা নয়, বরং খুতবার প্রতিটি কথা বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে বুঝিয়ে দেয়া থাকত তাদের প্রথম কাজ। আমি অনেক ছাত্র থেকে মিশকাতের খুতবা শুনেছি। এ পর্যন্ত খুব কম ছাত্রই পেয়েছি, যারা মিশকাতের খুতবা হল্ করে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে বুঝিয়ে দিতে পেরেছে।
সর্বপ্রথম যখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হত যে, মিশকাত লেখার কারণ কী এবং মাসাবীহ ও মিশকাতের মাঝে কী পার্থক্য, তখন প্রায় সব ছাত্রই বলত, মাসাবীহতে হাদীসের শুরুতে সাহাবীর নাম উল্লেখ করা হয়নি এবং শেষে হাদীসের কিতাবের বরাত দেয়া হয়নি। তাই মাসাবীহের উপর আপত্তি তোলা হয়। সেজন্য ছাহেবে মিশকাত ‘মিশকাকতুল মাসাবীহ’ সংকলন করেন এবং শুরুতে সাহাবীর নাম ও শেষে হাদীসের কিতাবের বরাত দিয়ে দেন। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয়, একথা কি মিশকাতের খুতবায় কোথাও আছে? তখন তারা পুনরায় খুতবায় নযর বুলাত; পরিশেষে না পাওয়ার কথা জানাত। আসলে মিশকাতে যা আছে, তা হল-
ولما سلك - رضي الله عنه - طريق الاختصار، وحذف الأسانيد؛ تكلم فيه بعض النقاد.
অর্থাৎ সনদ হযফ করে দেয়ার কারণে মাসাবীহের উপর আপত্তি তোলা হয়। সে আপত্তি থেকে বাঁচার জন্য মিশকাত লেখা হয়।
এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, তাহলে ছাহেবে মিশকাত কি সনদ উল্লেখ করেছেন। আর শুরুতে সনদ হযফ করা কিতাব তো আরো আছে, যেমন মুনযিরীর আততারগীব ওয়াত তারহীব, মাশারিকুল আনওয়ার, আলমাতজার, রিয়াযুস সালিহীন, আলফিয়াতুল হাদীস ইত্যাদি। সেগুলোর উপর তো কেউ প্রশ্ন তোলেনি। তাহলে মাসাবীহের উপর কেন আপত্তি এল এবং সে আপত্তি থেকে বাঁচার জন্য নতুন করে মিশকাত লিখতে হল।
আসলে বিষয়টি হল, তারগীব, রিয়াযুস সালিহীন ইত্যাদিতে যদিও শুরুতে সনদ উল্লেখ নেই, তবে হাদীস উল্লেখ করার পর হাদীসটি কোন্ কিতাবের তা উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। আর সে কিতাবে হাদীসটির সনদ আছে। তাই এগুলো নিয়ে কারো মনে এ প্রশ্ন তৈরি হয়নি যে, এগুলোতে তো সনদ হযফ করে দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে মাসাবীহে হাদীসটি কোন্ কিতাবের তা উল্লেখ করা হয়নি, আবার শুরুতেও সনদ নেই। তাই হাদীসটি-
ليس له خطم ولا أزمة.
-এর মতই হল। সেটি কোন্ কিতাবের, তা সহীহ না যয়ীফ- কোনো কিছুই বোঝা যাবে না। এবং তাহকীক করার জন্য মূল কিতাবের উদ্ধৃতিও দেয়া হল না। শুরুতে সনদও নেই আবার শেষে কোনো সনদওয়ালা কিতাবের হাওয়ালাও নেই। তাই যে কোনো পাঠকেরই তো এতে প্রশ্ন ওঠার কথা।
এখন প্রশ্ন হয়, তাহলে ছাহেবে মিশকাত কী করলেন? তিনি কি সনদ উল্লেখ করে দিয়েছেন? উত্তর হল, তিনি সনদ উল্লেখ করেননি, তবে হাদীসটি কোন্ কিতাবের- তা উল্লেখ করে দিয়ে বলে দিয়েছেন, এখন আর আমার সনদ উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই, কেননা সনদ সেসব কিতাবে আছে। তিনি বলেন-
وإني إذا نسبت الحديث إليهم كأني أسندت إلى النبي صلى الله عليه وسلم؛ لأنهم قد فرغوا منه، وأغنونا عنه.
ব্যস, এখন সনদ উল্লেখ করার কাজ শেষ। যে সনদ দেখতে চাইবে সে উদ্ধৃত কিতাবের মুরাজাআত করবে।
যদি বলা হয়, মিশকাতের ওয়াজহে তা’লীফ- রাবী সাহাবী উল্লেখ করা, তাহলে এখানে প্রথম কথা হল ছাহেবে মিশকাত তো ‘ওয়াজহে তা’লীফ’ এভাবে বলেছেন-
ولما سلك - رضي الله عنه - طريق الاختصار، وحذف الأسانيد؛ تكلم فيه.
অর্থাৎ যেহেতু ছাহেবে মাসাবীহ সনদ হযফ করে দিয়েছেন তাই তার উপর আপত্তি তোলা হয়।
তো মিশকাত লেখার কারণ হল, মাসাবীহ-এর সনদ হযফ। আর জানা কথা, শুধু রাবী সাহাবীকে সনদ বলা হয় না। দ্বিতীয় কথা, ছাহেবে মিশকাত ইমাম বাগাবীর সনদ উল্লেখ না করাকে তেমন দোষের মনে করেন না; কারণ তিনি বলেছেন-
وإن كان نقله - وإنه من الثقات – كالإسناد.
তিনি যদিও সনদ উল্লেখ করেননি, তবে তাঁর সনদ ছাড়া হাদীস উল্লেখ করাও সনদের মতো। কেননা তিনি অত্যধিক নির্ভরযোগ্য।
আর সনদ বলতে তো উদ্দেশ্য হল পুরো সনদ, শুধু রাবী সাহাবী নয়।
এরপর ছাহেবে মিশকাত বলেন, যদিও ইমাম বাগাবীর সনদ ছাড়া উল্লেখ করা সনদসহ উল্লেখ করার মতো, কিন্তু-
ليس ما فيه أعلام كالأغفال.
যে ভূমিতে চিহ্ন আছে তা চিহ্নশূন্য ভূমির মত নয়। তাই ছাহেবে মিশকাত চিহ্নশূন্য ভূমিকে চিহ্নযুক্ত করে দিলেন-
فأعلمت ما أغفله.
এই চিহ্ন কী? এক্ষেত্রেও কোনো কোনো সাথী বলেন, রাবী সাহাবীর নাম উল্লেখ করে দেয়া। আমার খেয়াল হল, রাবী সাহাবীর নাম হযফ নিয়ে ছাহেবে মিশকাত পুরো খুতবায় কোনো আপত্তি উল্লেখ করেননি এবং এটিকে তার মিশকাত লেখার কারণও বলেননি। আর সামনে আসছে যে, স্বয়ং ছাহেবে মাসাবীহই প্রায় হাদীসে সাহাবীর নাম উল্লেখ করে দিয়েছেন। বাকি যেগুলো থেকে গেছে, হতে পারে ছাহেবে মিশকাত সেগুলোতে সাহাবীর নাম সংযোজন করে দিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে ছাহেবে মাসাবীহের উপর বড় কোনো আপত্তি ওঠার কথা নয়। যে আপত্তি ছাহেবে মিশকাত তুলে ধরেছেন এবং যেটিকে মিশকাত লেখার কারণ বলেছেন সেটি হল ‘হযফে ইসনাদ’। এবং আপত্তিকারীদের সনদ হযফ করে দেয়ার আপত্তি উল্লেখ করেই বলেন-
لكن ليس ما فيه أعلام كالأغفال.
কিন্তু চিহ্নযুক্ত ভূমি চিহ্নশূন্য ভূমির মত নয়।
তাই তিনি সেই চিহ্নটি লাগিয়ে দেন। তবে তা সনদ উল্লেখ করে নয়; বরং হাদীসটি কোন্ কিতাবে আছে- তা উল্লেখ করে দিয়ে। কারণ সে কিতাবে পূর্ণ সনদ উল্লেখ আছে। তাই মিশকাতে তা উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই।
تكلم فيه بعض النقاد -এর ক্ষেত্রে জিজ্ঞেস করা হয় যে, এ নাকিদীন কারা ও তারা কী নক্দ করেছেন? তখন কোনো কোনো সাথী সিরাজুদ্দীন কাযবীনীর নকদের কথা বলে; অর্থাৎ মাসাবীহের কিছু হাদীসকে সিরাজুদ্দীন কাযবীনী মওযু বলে আপত্তি করেছেন। হাফেয ইবনে হাজার তার খ-ন করেন এবং কাযবীনীর আপত্তিকৃত প্রতিটি হাদীস নিয়ে আলোচনা করে বলেন যে, এগুলোকে মওযু বলা যাবে না। তো কোনো কোনো সাথী এ নকদের কথা বলেন এবং কোনো কোনো শরহ বা হাশিয়ায়ও এটি উল্লেøখ আছে। মাওলানা ইদরীস কান্ধলবী এটিকে শক্তভাবে খ-ন করেছেন। কেননা এ হাদীসগুলোকে যারা মওযু বলেন তাদের নিকট এগুলোর সনদ উল্লেখ করা হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় মওযু। এমন নয় যে, সনদ উল্লেখ না করার কারণে এগুলো মওযু আর সনদ উল্লেখ করে দিলে এগুলো সঠিক হয়ে যাবে।
এরপর ছাহেবে মিশকাত বলেন-
فأودعت كل حديث منه في مقره كما رواه الأئمة المتقنون، والثقات الراسخون.
এখানে সাথীদের জিজ্ঞেস করা হয়, আচ্ছা, চিহ্নহীনকে চিহ্ন দেয়া তো বুঝলাম, কিন্তু ‘প্রত্যেক হাদীসকে তার স্থানে রাখলাম, যেমন ইমামগণ বর্ণনা করেছেন’- এর অর্থ কী? তারা বলে, প্রত্যেক হাদীসকে ছাহেবে মাসাবীহ যেখানে রেখেছেন আমিও সেখানে রেখেছি। তখন প্রশ্ন করা হয়, তাহলে এ কথার সাথে ‘যেমন ইমামগণ বর্ণনা করেছেন’ এ অংশের মিল কী?
আসলে এখানে ছাপার ভুল। সহীহ ইবারত হল-
فأودعت كل حديث منه في مقره، فأعلمت ما أغفله، كما رواه الأئمة المتقنون، والثقات الراسخون.
‘আমি প্রত্যেক হাদীসকে ছাহেবে মাসাবীহ যেখানে রেখেছেন সেখানে রেখেছি। আর ইমামগণ যেভাবে বর্ণনা করেছেন সে অনুসারে মাসাবীহের চিহ্নহীন হাদীসগুলোকে চিহ্ন দিয়েছি। অর্থাৎ যে হাদীস যে ইমাম যে কিতাবে বর্ণনা করেছেন সেভাবে প্রত্যেক হাদীসের সাথে সে কিতাবের নাম উদ্ধৃত করেছি।’ এজন্যই এ আলোচনার পর তিনি সেসব মুসান্নিফের নাম উল্লেখ করেন, যাদের কিতাবের নাম হাদীসের শেষে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তো كما رواه الأئمة المتقنون -এর সম্পর্ক فأعلمت -এর সাথে فأودعت -এর সাথে নয়। ছাহেবে মিরকাত এভাবেই শরাহ করেন এবং শরাহ করতে গিয়ে মিশকাতের ইবারত এভাবে লেখেন।
অনেক ছাত্রের ধারণা, মাসাবীহে শুধু কুতুবে সিত্তার হাদীস রয়েছে। ফছলে আওয়ালে সহীহাইনের, ফছলে সানীতে বাকি চার কিতাবের হাদীস আনা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, ভাই-
مثل أبي عبد الله محمد بن إسماعيل البخاري...
-বলে ছয় কিতাব ছাড়াও তো আরো অনেক ইমামের কিতাবের কথা বলা হল, তা কেন? তখন তারা চুপ হয়ে যায়।
এরপর তাদের জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি যে জানলেন, ফছলে সানীতে কেবল সুনানে আরবাআর হাদীস উল্লেখ করা হয়- এটা মিশকাত বা মাসাবীহের লেখকদ্বয়ের কারো কথায় কি পেয়েছেন? না পেলে কীভাবে বুঝলেন? কেবল অনুমানের ভিত্তিতেই কি আপনি এটা বলছেন? মাসাবীহের ফছলে সানীর বিষয়ে ছাহেবে মাসাবীহ বলেছেন-
وأعني بـ (الحِسان) ما أورده أبو داود سليمان بن الأشعث السجستاني وأبو عيسى محمد بن عيسى [بن سورة] الترمذي وغيرهما من الأئمة في تصانيفهم رحمهم الله.
ফছলে সানীতে আবু দাউদ, তিরমিযী, ও অন্যান্য ইমামগণ যা বর্ণনা করেছেন তা থেকে উদ্ধৃত হবে। তো এ অন্যান্য ইমামগণ বলতে শুধু সুনানে আরবাআ নয়, বরং হাদীসের আরো কিতাব থেকে হাদীস আনবেন। এটাই উদ্দেশ্য আর এটাই বাস্তবতা।
এরপর আছে-
ثم إنك إن فقدت حديثا في باب؛ فذلك عن تكرير أسقطه.
অর্থাৎ মাসাবীহে হাদীসটি একাধিক জায়গায় আছে, কিন্তু ছাহেবে মিশকাত শুধু এক জায়গায় আনেন এবং তাকরারের কারণে অপর স্থানে (ইসকাত করেন) বাদ দিয়ে দেন।
এখানে সাথীদের একটি প্রশ্ন করা হয়, আচ্ছা, ছাহেবে মাসাবীহ সংক্ষেপণের উদ্দেশ্যে সনদ বরাত এমনকি রাবী সাহাবীর নাম পর্যন্ত হযফ করে দিয়েছেন, তো তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে কেন তাকরার করলেন? তিনি কি জানতেন না যে, হাদীসটি তাকরার হয়ে যাচ্ছে, যা ছাহেবে মিশকাত বুঝেছেন।
ছাহেবে মিশকাত কোথায় কোথায় এমন ইসকাত করেছেন তা সব আমি জমা করিনি ও দেখিনি, তবে কিতাবের একেবারে শুরুতে কিতাবুল ঈমানে এমন একটি ইসকাত করেছেন, তা আমি দেখেছি ও ভেবেছি। কিতাবুল ঈমানের প্রথম ফছলের শেষে ছাহেবে মিশকাত বলেন-
والحديثان المرويان عن أبي هريرة قال: " قال الله تعالى: أنا أغنى الشركاء عن الشرك. والآخر: الكبرياء ردائي. سنذكرهما في باب الرياء والكبر إن شاء الله تعالى.
অর্থাৎ ছাহেবে মাসাবীহ কিতাবুল ঈমানে এ হাদীস দুটি উল্লেখ করেছেন এবং باب الرياء والكبر অধ্যায়েও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ছাহেবে মিশকাত হাদীস দুটিকে এখান থেকে ইসকাত করে দিয়েছেন এরং রিয়া ও কিবরের অধ্যায়ে এগুলো আপন হালতে রেখেছেন।
এখন প্রশ্ন হয়, ছাহেবে মাসাবীহ দুই জায়গায় আনলেন কেন? আর মিশকাতওয়ালা ইসকাত করে কাজটি কেমন করলেন?
আসলে স্বাভাবিকভাবে হাদীসদ্বয় সম্পর্কে যে কেউ বলে দেবে যে, এগুলো রিয়া ও কিবরের অধ্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু হাদীসদ্বয়ের সূক্ষ্ম আরেকটি বিষয় আছে, তা হল ঈমান বলতে খালিস তাওহীদ ও খাঁটি ঈমান, যা রিয়া, শিরক ও কিবরমুক্ত। রিয়া-কিবর ঈমান পরিপন্থী। এ হিসেবে কিতাবুল ঈমানের সাথে হাদীসদ্বয়ের সম্পর্ক খুবই চমৎকার ও তাৎপর্যপূর্ণ। আর এদিকে লক্ষ্য করেই ছাহেবে মাসাবীহ হাদীসদ্বয়কে কিতাবুল ঈমানে এনেছেন। কিন্তু ছাহেবে মিশকাত কেবলমাত্র তাকরারের ওযুহাতে কিতাবুল ঈমান থেকে হাদীসদ্বয়কে ইসকাত করে দিয়েছেন।
এরপর আছে-
وإن وجدت آخر بعضه متروكا على اختصاره، أو مضموما إليه تمامه؛ فعن داعي اهتمام أتركه وألحقه.
এর অর্থ অনেকে এমন করেন, ‘যদি কোনো হাদীসকে মিশকাতে মুখতাসার পাও (অর্থাৎ মাসাবীহে তা দীর্ঘ, কিন্তু মিশকাতে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে) অথবা মিশকাতে দীর্ঘ পাও আর মাসাবীহে তা সংক্ষিপ্ত আছে, তাহলে কোনো বাস্তব কারণেই আমি এমন করে থাকি। মুখতাসার রেখে দেওয়া বা মাহযূফ অংশটি উল্লেখ করে দেওয়া- যেখানে যেমন হওয়া দরকার তাই করি।’ অর্থাৎ প্রথম কথাটি-
وإن وجدت آخر بعضه متروكا على اختصاره.
-এর অর্থ এভাবে করে যে, ‘আমি মাসাবীহের কোনো দীর্ঘ হাদীসকে যদি সংক্ষিপ্ত করি।’ পরে"فعن داعي اهتمام أتركه" এখানে أتركه -এর অর্থ করে, ‘আমি সংক্ষেপ করি।’ এ অর্থটি সঠিক নয়। সঠিক অর্থ হল, ‘মাসাবীহে কোনো হাদীস মুখতাসারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমিও সেটিকে সেভাবে রেখে দিই, (অর্থাৎ ছেড়ে দেয়া অংশটি সংযোজন করি না)’। লক্ষ্য করি, বলা হয়েছে-
متروكا على اختصاره.
আরবীতে تركته على حاله অর্থ হল, তাকে তার আপন অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তেমনি متروكا على اختصاره -এর অর্থও হাদীসকে সংক্ষিপ্ত অবস্থায়ই ছেড়ে দেয়া হয়েছে বা রেখে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ইমাম বাগাবী হাদীসটি সংক্ষিপ্তভাবে এনেছেন, আমিও সেটিকে সংক্ষিপ্ত রেখে দিয়েছি, محذوف কোনো অংশ সংযোজন করিনি। তখন পরের কথা"أتركه" -এর অর্থ সংক্ষেপণ করা নয়, বরং রেখে দেয়া। আল্লামা তীবী রাহ., হাইতামী রাহ., শায়েখ আব্দুল হক দেহলবী রাহ., ইদরীস কান্ধলবী রাহ. প্রমুখ এ অর্থটিই করেছেন।
আল্লামা তীবী রাহ. বলেন-
قوله: (بعضه) هو بدل البعض من آخر ومتروكاً حاله.
قوله: (على اختصاره) أي اختصار محي السنة.
قوله: (فعن داعي اهتمام أتركه) وذلك لأن تلك الرواية كانت مختصرة عن حديث طويل جداً، فأتركه اختصاراً، أو كان حديثاً يشتمل على معان جمة، يقتضى كل باب معنى من معناه، وأورد الشيخ كلا في بابه- فاقتفينا أثره فى الإيراد.
শায়েখ আব্দুল হক দেহলবী রাহ. বলেন-
وقد يكون حديث اختصره الشيخ فأتركه أنا أيضا على اختصاره، وقد أضم إليه في بعض المواضع بقية الحديث، وذلك لشيء يدعوني، إما إلى تركه على اختصاره أو إلى ضم بقيته إليه.
এরপর ছাহেবে মিশকাত বলেন-
وإن عثرت على اختلاف في الفصلين من ذكر غير الشيخين في الأول، وذكرهما في الثاني؛ فاعلم أني بعد تتبعي كتابي "الجمع بين الصحيحين" للحميدي، و "جامع الأصول"؛ اعتمدت على صحيحي الشيخين ومتنيهما.
অর্থাৎ ‘যদি তুমি, এমন দেখ যে, প্রথম ফছলে সহীহাইন ছাড়া অন্য কিতাবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় ফছলে সহীহাইনের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে...।’
অনেকে এর অর্থ করে এভাবে যে, প্রথম ফছলে গাইরে সহীহাইনের হাদীস আনা হয়েছে, আর ফছলে সানীতে সহীহাইনের হাদীস আনা হয়েছে। এটি সঠিক অর্থ নয়। ছাহেবে মিশকাত তো মাসাবীহের কোনো হাদীস তার আপন স্থান বা ফছল থেকে সরাননি। আর প্রথম দুই ফছলে কোনো হাদীস সংযোজনও করেননি; যেমন তিনি পূর্বেই বলেছেন-
فأودعت كل حديث منه في مقره.
তাহলে তিনি প্রথম ফছলে গাইরে সহীহাইনের হাদীস আনবেন কীভাবে? আর দ্বিতীয় ফছলে সহীহাইনের হাদীস আনবেন কীভাবে?
এখানে কথা হল, ছাহেবে মাসাবীহ প্রথম ফছলে শুধু সহীহাইনের হাদীস আনবেন এবং দ্বিতীয় ফছলে গাইরে সহীহাইনের হাদীস। আর ছাহেবে মিশকাত মাসাবীহের দুই ফছলের প্রত্যেক হাদীসকে আপন স্থানে রেখেছেন। কোনো হাদীস এক ফছল থেকে অন্য ফছলে নেননি। শুধু হাদীসের শেষে কিতাবের বরাত দিয়ে দিয়েছেন। সে হিসেবে মিশকাতের প্রথম ফছলে সহীহাইন ছাড়া অন্য কিতাবের হাওয়ালা আসার কথা নয়, তেমনি দ্বিতীয় ফছলে সহীহাইনের হাওয়ালা আসার কথা নয়। কেননা ছাহেবে মাসাবীহ দ্বিতীয় ফছলে সহীহাইনের হাদীস উল্লেখ করেননি। কিন্তু তার পরও যদি প্রথম ফছলে গাইরে সহীহাইনের বরাত উল্লেখ করা হয় আর দ্বিতীয় ফছলে সহীহাইনের বরাত উল্লেখ করা হয়, তাহলে সেটি কেন করা হয়েছে- ছাহেবে মিশকাত তা বলেছেন-
وإن عثرت على اختلاف في الفصلين من ذكر غير الشيخين في الأول، وذكرهما في الثاني؛ فاعلم أني بعد تتبعي كتابي "الجمع بين الصحيحين" للحميدي، و"جامع الأصول"؛ اعتمدت على صحيحي الشيخين ومتنيهما.
বিষয়টি হল, ছাহেবে মিশকাত মাসাবীহের প্রত্যেক ফছলের হাদীস স্ব স্ব ফছলে লিখেছেন। বাকি তিনি কোন্ হাদীস কোন্ কিতাবের- তার বরাত উল্লেখ করার জন্য প্রতিটি হাদীস হাদীসের কিতাবে তালাশ করেন ও নিরীক্ষণ করেন। এভাবে নিরীক্ষণ করতে করতে দেখা গেল কোনো কোনো হাদীস যদিও ছাহেবে মাসাবীহ সহীহাইনের হাদীস মনে করে ফছলে আওয়ালে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ছাহেবে মিশকাত তা খুঁজে সহীহাইনে পাননি। তেমনিভাবে ছাহেবে মিশকাত ফছলে সানীর প্রত্যেকটি হাদীস যাচাই করতে করতে দেখেন, কিছু হাদীস সহীহাইনেও আছে। এ যাচাই ও নিরীক্ষণের জন্য তিনি প্রথমে ইবনুল আছিরের জামিউল উসূল এবং হুমাইদীর আলজামউ বাইনাস সহীহাইন-এর সহযোগিতা নেন। জামিউল উসূলে সহীহাইনসহ মুয়াত্তা ইমাম মালেক, সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী ও তিরমিযীর হাদীস জমা করা হয়। আর হুমাইদীর কিতাবে শুধু সহীহাইনের হাদীস জমা করা হয়। তো তিনি যখন ফছলে আওয়ালের কোনো হাদীস হুমাইদীর কিতাবে না পান এবং জামিউল উসূলেও সহীহাইনের বরাতে না পান তখন বুঝে নেন- এটি সহীহাইনের হাদীস নয়। এরপর আরো তাহকীক ও নিশ্চয়তার জন্য বুখারী-মুসলিমের মূল কিতাব দেখেন। সেখানেও যখন হাদীসটি না পান তখন তিনি হাদীসটিকে ফছলে আওয়ালে রেখেই হাদীসটি যে কিতাবের সে কিতাবের হাওয়ালা দিয়ে দেন; এভাবেই প্রথম ফছলে সহীহাইন ছাড়া অন্য কিতাবের বরাত এসে যায়। তেমনিভাবে দ্বিতীয় ফছলের কোনো হাদীস যদি তিনি হুমাইদীর কিতাবে পেয়ে যান এবং জামিউল উসূলে হাদীসটিকে সহীহাইনের বরাতে উল্লেখ করা হয় তখন তিনি বুঝে নেন- এটি সহীহাইনের হাদীস। এরপর আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য সরাসরি বুখারী, মুসলিম-এর মূল কিতাব দেখেন। যখন এগুলোতেও হাদীসটি পেয়ে যান তখন হাদীসটিকে ফছলে ছানীতে রেখেই তাতে সহীহাইনের বরাত উল্লেখ করে দেন। এভাবে ফছলে সানীতে সহীহাইনের বরাত এসে যায়। ইদরীস কান্ধলবী রাহ. আততা‘লীকুস সবীহ-এ লেখেন-
وقد يذكر الشيخ حديثا في الأول ونسبته أنا إلى غير الشيخين ، وذلك مذكور في مواضع كما في الفصل الأول من باب سنن الوضوء، ومن باب فضائل القرآن وغيرهما، ونسبت بعض أحاديث القسم الثاني إلى الشيخين كما في الفصل الثاني من باب ما يقرأ بعد التكبير وباب الموقف وغيرهما.
فاعلم أن عذري في ذلك ودليلي عليه أني تتبعت كتابين جمع فيه أحاديث الشيخين، أحدهما: كتاب الجمع بين الصحيحين للحميدي، والثاني: جامع الأصول لابن الأثير الجزري، ولم أقتصر في معرفة أحاديث الشيخين على تتبع هذين الكتابين، بل اعتمدت على صحيحي الشيخين ومتنيهما أي أصل كتابيهما ونفسيهما دون "الجمع بين الصحيحين" و"جامع الأصول" المشتملين عليهما المعايرين لهما كالشرحين لهما، فما وجدت من الأحاديث للشيخين في الكتابين المذكورين وفي أصلي صحيحيهما نسبتهما إليهما، وما لم أجد لم أنسب إليهما وإن كان مخالفا لما ذكره الشيخ محي السنة رحمه الله.
وهذا ادعاء منه كمال التتبع والتصفح لأحاديث الشيخين يعني لو اقتصرت على تتبع الكتابين وقلت: ليس هذا الحديث للشيخين، لكان لقائل أن يقول: لعله يكون في متني صحيحيهما
ولو اقتصرت على متني صحيحيهما يقال: لعله يوجد في كتابي الجمع بين الصحيحين و جامع الأصول، فتتبعت الكل ليحصل الوثوق والاعتماد في هذه النسبة على وجه الكمال، ولا يبقى لأحد مجال المقال . والله أعلم
রাবী সাহাবী প্রসঙ্গ
মিশকাতের ছাত্রদের প্রায় সবার কাছেই এটা প্রসিদ্ধ যে, মিশকাত লেখার কারণ হল, ছাহেবে মাসাবীহ হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীর নাম উল্লেখ করেননি। ছাহেবে মিশকাত প্রত্যেক হাদীসের শুরুতে সেই বর্ণনাকারী সাহাবীর নাম উল্লেখ করে দিয়েছেন, যার মাধ্যমে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।
এক্ষেত্রে প্রথম কথা হল, ছাহেবে মাসাবীহ যে সাহাবীর নাম উল্লেখ করেননি, আমরা তা কীভাবে জানলাম? আমরা কি মাসাবীহ খুলে দেখেছি? মাসাবীহ-এর খুতবা পড়েছি? আমার কথার উদ্দেশ্য এই নয় যে, আমি বিষয়টি অস্বীকার করছি; উদ্দেশ্য হল, আমাদের বুঝেশুনে পড়তে হবে, মূল কিতাবের মুরাজাআত করতে হবে। একথা তো ঠিক- ছাহেবে মাসাবীহ নিজেই বলেছেন, তিনি খুব কমই রাবী সাহাবীর নাম উল্লেখ করবেন। তার বক্তব্য-
وربّما سمّيت في بعضها الصحابي الذي يرويه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم لمعنى دعا إليه.
দ্বিতীয় কথা হল, এমন অনেক হাদীস আছে, যেগুলোতে সাহাবীর নাম উল্লেখ করা ছাড়া উপস্থাপিত বিষয়টি বোঝা যাবে না। যেমন, একেবারে প্রথম হাদীসটি ধরি। হাদীসে জিবরীল, যেটি শুরু হয়েছে এভাবে-
بينا نحن عند رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يوم.
(অর্থাৎ একদিন আমরা নবীজীর কাছে ছিলাম। এমন সময়...)
তো এখানে রাবী সাহাবীর নাম উল্লেখ না করলে কথাটি বোঝা যাবে না। তেমনিভাবে কিতাবুল ঈমানের প্রসিদ্ধ হাদীস হযরত মুআযের হাদীস-
كنت رِدْفَ النبيِّ صلى الله عليه وسلم على حمارٍ.
(আমি বাহনে নবীজীর পেছনে বসা ছিলাম।)
এটি রাবী সাহাবীর নাম উল্লেখ করা ছাড়া বোঝা যাবে না। এধরনের আরো অনেক হাদীস আছে। তো এক্ষেত্রে ছাহেবে মাসাবীহ কী করেছেন?
তৃতীয় প্রশ্ন হল, হাদীস উল্লেখ করলে সাহাবীর নামসহই তো উল্লেখ করা স্বাভাবিক। ছাহেবে মাসাবীহ তা পরিহার করলেন কেন?
আসলে ছাহেবে মাসাবীহ এ কিতাব সংকলন করেছেন আবিদ-যাহিদদের জন্য। তাদের আমলী জরুরত সামনে রেখে, কোনো ইলমী অঙ্গনের জন্য নয়। তিনি বলেন-
جمعتها للمنقطعين إلى العبادة، لتكون لهم بعد كتاب الله تعالى حظًا من السنن، وعونًا على ما هم فيه من الطاعة.
আর আবিদ-যাহিদদের আমলের জন্য যত সহজ ও সংক্ষেপ করা যায় ততই ভালো। তাই তিনি সব হাদীসে রাবী সাহাবীর নামও উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করেননি, তবে এমনটি করেছেন শুধু সেসব হাদীসের ক্ষেত্রে, যেখানে রাবী সাহাবীর নাম উল্লেখ না করলেও চলে। যেমন,
"المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده."
ইত্যাদি। কিন্তু যেসব হাদীস কোনো ঘটনা কেন্দ্রিক, ফলে তাতে সাহাবীর সংশ্লিষ্টতা আছে; সেখানে সাহাবীর নাম উল্লেখ না করলে বিষয়টি বুঝে আসবে না, সেসব হাদীসের বেলায় তিনি রাবী সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও আরো বিভিন্ন সূত্রে বহু হাদীসের শুরুতে তিনি নিজেই রাবী সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন।
একবার এক তালিবুল ইলম কিতাব শোনানোর সময় আমার মনে হল, রাবী সাহাবীর ক্ষেত্রে ছাহেবে মাসাবীহ কী করেছেন- এটা মাসাবীহে একটু দেখি। আমার কাছে মাসাবীহ নেই, তাই শামেলার নুসখা দেখলাম। তাতে দেখি, প্রায় হাদীসেরই শুরু বা শেষে সাহাবীর নাম উল্লেখ আছে। তখন ভাবনায় পড়ে যাই এবং মাসাবীহের শরাহগুলো দেখতে থাকি। মাসাবীহের শারেহগণ বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়েছেন। তাদের কথা হল, স্বয়ং ছাহেবে মাসাবীহই অনেক হাদীসের শুরুতে রাবী সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন আর অনেক হাদীসের রাবী সাহাবীর নাম হাশিয়াতে উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীতে নাসেখগণ সেগুলোকে মূল কিতাবে নিয়ে এসেছেন।
আল্লামা ফযলুল্লাহ তুরবিশতী মাসাবীহের শরাহ-এ লেখেন-
فالظاهر أنه أثبت على حاشية الكتاب فألحق بالأصل.
ومن الدليل على هذا أنا لا نجد أكثر النسخ في ذكر الصحابي على وتيرة واحدة، وأن أكثر أحاديث هذا الكتاب مقترن بذكر الصحابي الذي يرويه. والمؤلف أشار بحرف التقليل إلى ما هو دون ذلك فقال (وربما سميت) والله أعلم.
হুবহু একই কথা মাসাবীহের আরেক শারেহ মুযহিরুদ্দীন রাহ.-ও বলেছেন-
"وربما سميتُ في بعضها الصحابي الذي يرويه عن رسول الله عليه السلام".
(ربما): كلمة التقليل، كما أن (كم) كلمة التكثير، فهذا اللفظ يدلُّ على أن أكثرَ أحاديث هذا الكتاب لم يورد المصنف الصحابي الذي يرويها، وأقلَّها أورد الصحابي الذي رواها عن رسول الله عليه السلام، ونحن نجدُ بخلاف ذلك؛ لأنا نجد أكثرَ أحاديثه مذكورًا فيه الصحابي وأقلَّها لم يكن الصحابي فيها مذكورًا، ولعل المصنفَ ذكر قليلًا من الصحابة في متن الكتاب، وكتب بعضًا من الرواة عن رسول الله عليه السلام في الحواشي، فكتب النساخون في المتن ما كتبه المصنف في الحواشي، فصار الرواة المذكورون في متن الكتاب كثيرًا، والمتروكون ذكرهم قليلًا
(দ্র. আলমাফাতীহ)
তাহলে বোঝা যায় স্বয়ং মাসাবীহ-এর মধ্যেই অধিকাংশ হাদীসে রাবী সাহাবীর নাম উল্লেখ রয়েছে। তাহলে এখন রাবী সাহাবীর নাম উল্লেখ না করা বড় কোনো প্রসঙ্গই থাকল না।
আমরা যারা মিশকাত পড়ি, পুরো বছর পড়ি, এরপর পড়াতে যাব এবং বছরের পর বছর পড়াব; একবারও কি কৌতূহল জাগে না যে, এটির মূল যেহেতু মাসাবীহ তাই মাসাবীহটি একটু খুলে দেখি, তার খুতবাটি পড়ে দেখি, কিতাবে প্রবেশ করে দেখি- রাবী সাহাবীর নাম আছে কি না। বর্তমানে মাসাবীহের ছাপা নুসখাগুলো রাবী সাহাবীদের নামসহ দেয়া। হয়ত হাদীসের শুরুতে না হয় শেষে। এতেও প্রশ্ন জাগত যে, আমরা সবাই জানি, মাসাবীহতে রাবী সাহাবীর নাম উল্লেখ নেই। কিন্তু ছাপাতে দেখি কেন? এটি কে করেছেন? তেমনিভাবে ছাহেবে মিশকাত-
مثل أبي عبد الله محمد بن إسماعيل البخاري...
-বলে শেষ পর্যন্ত কত মুহাদ্দিস ও তাদের কিতাবের কথা উল্লেখ করেছেন।
আহ, যদি আমরা মিশকাতের খুতবা হল্ করার পর খারেজী সময়ে, আছরের পরে, বৃহস্পতি-জুমাবারে এসব ইমামদের মৃত্যুসনসহ সংক্ষিপ্তভাবে হলেও পরিচয় জেনে নিতাম। তাদের কিতাবগুলোর সাথে পরিচিত হতাম। কিতাবগুলো খুলে খুলে দেখতাম, তাহলে এ এক খুতবা দ্বারাই তো আমার ইলম কত সমৃদ্ধ হতো।
মিশকাতে সারা বছর মুসনাদে আহমাদের কথা যায়, বায়হাকীর শুআবুল ঈমানের হাওয়ালা আসে; কখনো কি কৌতূহল জাগে না যে, এ কিতাবগুলো একটু খুলে দেখি! আজ জুমাবার, দরসের চাপ নেই, আজ একটু এ কিতাবগুলো খুলে দেখি। যদি এভাবে মিশকাতে উল্লেখিত কিতাবগুলো একটু খুলে দেখতাম তাহলে আমার ইলম কত সমৃদ্ধ হত।
তেমনিভাবে জামিউল উসূল ও হুমাইদীর কিতাবের কথা মিশকাতের খুতবায় আছে, এ কিতাবদুটি সম্পর্কে ভালোভাবে না জানলে খুতবার ঐ কথাটিও তো পূর্ণাঙ্গভাবে বোঝা যাবে না। কিন্তু সেগুলো কি কখনো খুলে দেখা হয়।
শুধু মিশকাত নয়, পুরো জীবন চলে যায় এসব কিতাব খুলে বা ছুঁয়েও দেখা হয় না; বরং প্রয়োজনটুকুও অনুভব হয় না। তাই ঐ বুঝ অসম্পূর্ণই থেকে যায়।
আল্লাহ তাআলা রহম করুন। তালিবুল ইলম ভাইদের হিম্মত বাড়িয়ে দিন- আমীন।