একটি ভিত্তিহীন কাহিনী
যামানার সবচে বড় নাফরমান, যামানার সবচে বড় ওলী
মূসা আ.-কে কেন্দ্র করে লোকমুখে বহু কাহিনী প্রচলিত আছে। অসতর্ক বক্তাদের মুখে এগুলো বেশি শোনা যায়। সমাজে প্রচলিত তেমনই একটি কাহিনী-
একবার মূসা আ. আল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ! এ যামানার সবচে বড় নাফরমান কে- আমি তাকে একটু দেখতে চাই।
আল্লাহ বললেন, অমুক তিন রাস্তার মোড়ে গিয়ে দাঁড়াও। সেখানে গিয়ে মূসা আ. এক লোককে দেখতে পেলেন। তার কোলে একটি শিশু। সে একটি পাহাড়ের দিকে যাচ্ছে। তাকে দেখে মূসা আ. বুঝতে পারলেন- এ-ই হল যামানার সবচে বড় নাফরমান।
লোকটি শিশুসন্তান নিয়ে পাহাড়ে উঠছে তখন শিশুটি বলল, বাবা! পাহাড় এত বড়; পাহাড়ের চেয়ে বড় কিছু আছে কি?
বাবা বলল, পাহাড়ের চেয়ে বড় হল, আসমান।
শিশুটি বলল, আসমানের চেয়ে বড় কিছু আছে কি?
বাবা বলল, তোমার বাবার গোনাহ।
শিশুটি বলল, বাবা! তোমার পাপ থেকে বড় কি কোনো কিছু নেই?
তখন বাবা চিৎকার দিয়ে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমার পাপ থেকেও অনেক অনেক বড় আমার আল্লাহর রহমত!
আসলে লোকটি নিজ গোনাহ থেকে তওবা করার জন্য পাহাড়ে গিয়েছিল। সে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে তওবা করছিল আর তার শিশুসন্তান আমীন বলছিল। আল্লাহ তার তওবা কবুল করলেন এবং তাকে নিজ ওলী হিসেবে গ্রহণ করলেন।
এদিকে মূসা আ. আল্লাহকে আবার আবেনদ জানালেন, আল্লাহ! এ যামানার সবচে বড় ওলী কে- তাকে আমি একনযর দেখতে চাই।
আল্লাহ বললেন, তিন রাস্তার মোড়ে গিয়ে দাঁড়াও।
মূসা আ. দেখলেন, সকালের ঐ ব্যক্তিই পাহাড় থেকে নামছে, যাকে সবচে বড় নাফরমান বলা হয়েছিল।
মূসা আ. বিষয়টি নিয়ে পেরেশান হলেন, যাকে সকালে যামানার সবচে বড় নাফরমান বলা হল, বিকেলে তাকেই সবচে বড় ওলী বলা হচ্ছে!
মূসা আ. আল্লাহকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে আল্লাহ বলেন, ঐ ব্যক্তি পাহাড়ে গিয়ে এমন তওবা করেছে যে, আমি তার গোনাহ মাফ করে আমার শ্রেষ্ঠ ওলী হিসেবে তাকে গ্রহণ করেছি। (কেউ কেউ একটু ভিন্নভাবেও বলে।)
এটি একটি বানোয়াট কিসসা। নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে তা পাওয়া যায় না। এগুলো কিসসাকারদের আবিষ্কৃত কাহিনী।
তওবার মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে এ কাহিনীটি বলা হয়েছে। অথচ সহীহ হাদীসে তওবা কেন্দ্রিক কত সুন্দর ঘটনা রয়েছে।
বনী ইসরাঈলের নিরানব্বই হত্যাকারীর ঘটনা অনেকেরই জানা। একপর্যায়ে সে তওবা করে ফিরে এল এবং নেককারদের এলাকার দিকে রওয়ানা হল। পথিমধ্যে যখন তার মৃত্যুক্ষণ ঘনিয়ে এল তখন রহমত ও আযাবের ফিরিশতা এল এবং প্রত্যেকে তার জান কবয করতে চাইল। একপর্যায়ে ফয়সালা হল, সে যদি নেককারদের এলাকার কাছাকাছি হয় রহমতের ফিরিশতারা তাকে নিয়ে যাবে, অন্যথায়...।
তখন আল্লাহ নেককার লোকদের ভূমিকে বললেন, তুমি নিকটবর্তী হও। আর অপর ভূমিকে বললেন, তুমি দূরবর্তী হও। তারপর যখন ভূমির দূরত্ব মাপা হল, দেখা গেল সে নেককারদের এলাকার দিকে এক বিঘত এগিয়ে রয়েছে। তখন তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল (এবং রহমতের ফিরিশতা তার জান কবয করল)। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৪৭০)
তওবা কেন্দ্রিক এমন আরো বর্ননা নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়। মানুষকে তওবার মাহাত্ম্য ও ফযীলত বোঝাতে সেগুলোই বলা দরকার।