সৌহার্দ সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের অনুপম চর্চায়
আলোকিত হয়ে উঠুক আমাদের সমাজ
অষ্টম হিজরী সনের কথা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয় করেছেন। মদীনায় ফিরতে ফিরতে আরো দুটি য্দ্ধু সংঘটিত হয়ে যায়। হুনাইন ও তায়েফ যুদ্ধ। হুনাইন যুদ্ধে বিপুল গনীমত মুসলমানদের হস্তগত হয়। মক্কার মুশরিকদের মাঝে কেবলমাত্র যারা মুসলমান হয়েছেন, মূলত ইসলামের শৌর্যবীর্যে প্রভাবিত হয়েই তারা নবীজীর সঙ্গ দেন। ঈমানী তরবিয়ত তখনও ওভাবে হয়ে ওঠার সুযোগ হয়নি তাদের। ইসলামের প্রতি তাদের অন্তর এখনও ওভাবে জমে বসেনি। তাই অন্যান্য যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বণ্টনে নবীজী যেই রীতি রক্ষা করতেন এবার তা থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম করলেন। এসকল নতুন মুসলমান, যারা কিছুক্ষণ পূর্বেও অভিজাত মুশরিক ছিল, তাদের মাঝে নবীজী সেগুলো অধিকহারে বণ্টন করতে থাকলেন। যাতে এ সৌজন্যে মুগ্ধ হয়ে তারা ইসলামের প্রতি আরো আকর্ষণ বোধ করেন।
যেহেতু স্বাভাবিক রীতি বহির্ভূত ছিল এ বণ্টন, তাই মুনাফিক শ্রেণির কেউ কেউ একে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ নেয়। তারা ছড়িয়ে দেয়, এটা তো ইনসাফপূর্ণ বণ্টন হল না। সাধারণ সরল মনের কিছু মানুষও এহেন অপপ্রচারে প্রভাবিত হয়ে পড়েন। নবীজী যখন এ সংবাদ শুনতে পান নিদারুণ মর্মাহত হন। বলেন, আল্লাহর রাসূল যদি ইনসাফ না করেন তবে ইনসাফ আর কে করবে?!
নবীজী সাহাবীদের একত্র করে অত্যন্ত তেজদীপ্ত এবং আবেগঘন বক্তব্য রাখেন। সীরাত ও সুন্নাহ্র কিতাবে তা সংরক্ষিত রয়েছে। সেই বক্তব্যের প্রতিটি শব্দ-বাক্যে রয়েছে উত্তম উপদেশের অপূর্ব দৃষ্টান্ত। সেখানে একটা কথা এমনও ছিল- ‘তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা দুনিয়ার সামান্য উট ছাগল ইত্যাদি নিয়ে বাড়ি যাবে। আর তোমরা আল্লাহর রাসূলকে নিয়ে ঘরে ফিরবে!’
এমনসব কথায় সাহাবীরা সম্বিত ফিরে পান। নিজেদের ভুলের জন্য তারা যারপরনাই অনুশোচিত হন। কেঁদে কেঁদে বুক ভাসান আর মুহুর্মুহু বলতে থাকেন- আমাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সীমাহীন অনুগ্রহ। আমরা আল্লাহর রাসূলকে পেয়েই সন্তুষ্ট। আমাদের আর কিছুর প্রয়োজন নেই।
নবীজীর সে বক্তব্যের একটি অংশ ছিল-
يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ، أَلَمْ أَجِدْكُمْ ضُلَّالًا فَهَدَاكُمُ اللهُ بِي، وَكُنْتُمْ مُتَفَرِّقِينَ فَأَلَّفَكُمُ اللهُ بِي، وَعَالَةً فَأَغْنَاكُمُ اللهُ بِي. كُلَّمَا قَالَ شَيْئًا قَالُوا: اللهُ وَرَسُولُهُ أَمَنُّ.
হে আনসার সম্প্রদায়! তোমরা কি পথহারা ছিলে না, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে সুপথে পরিচালিত করেছেন? তোমরা কি শতধা বিভক্ত ছিলে না, এরপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের মাঝে সৌহার্দ-সম্প্রীতি দান করেছেন? তোমরা কি নিঃস্ব ছিলে না, তারপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের সচ্ছল করেছেন?
নবীজীর এসব প্রশ্নের উত্তরে তারা একটি বাক্যই বলে যাচ্ছিলেন- আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের প্রতি সর্বাধিক অনুগ্রহশীল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৩৩০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৬১ (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, বাবু মা জাআ ফী গযওয়াতি তায়েফ; ফাতহুল বারী)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, নবীজী সাহাবীদেরকে তিনটি বিশেষ অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
এক. তৎকালীন সমাজ বিপথে পরিচালিত ছিল। ছিল কুফর শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত এবং জাহেলী রুসুমাতে জর্জরিত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে পৃথিবীবাসীকে হেদায়েত ও সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। নবীজীর দাওয়াত কবুল করার মাধ্যমে আজ তারা সিরাতে মুসতাকীম-সঠিক পথের দিশা পেয়েছেন।
দুই. তৎকালীন সমাজ-ব্যবস্থা ছিল সৌহার্দ সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব বিবর্জিত রীতিনীতিতে পিষ্ট। সেখানে ন্যায় ও ইনসাফ, সাম্য ও অধিকার, নীতি ও নৈতিকতা ভূলুণ্ঠিত ছিল। ছিল জুলুম শোষণ অত্যাচার অবিচার ও অনৈতিকতার অবাধ চর্চা। ফলে গোত্রে গোত্রে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইত্যাদি নানাবিধ জাহেলী সহিংসতায় সমাজ চূর্ণ বিচূর্ণ ছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীন ও ঈমান, তাওহীদ ও তাকওয়া এবং ন্যায় ও ইনসাফের সূত্রে জাহিলিয়াতের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে গোটা আরবকে একত্র করেন। প্রতিষ্ঠা করেন ঐক্য সাম্য ন্যায় ও ভ্রাতৃত্ববোধ।
তিন. সমাজে তখন ছিল অভাব অনটন ও দুর্ভিক্ষ দুর্দশা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওহী-ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, ভারসাম্যপূর্ণ অর্থব্যবস্থা এবং ইনসাফপূর্ণ সমাজব্যবস্থা কার্যকরী হওয়ার কারণে সমাজ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। উপরন্তু জিহাদের মাধ্যমে গনীমত লাভের দ্বারা তাদের জীবনে কিছুটা সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
এ সবই ছিল উম্মতের প্রতি প্রিয় নবীর অপার অনুগ্রহ। আজও মুসলিম উম্মাহ যদি সমাজে সৌহার্দ সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় তবে নববী আদর্শই হতে পারে তার একমাত্র মাধ্যম।
ইসলামপূর্ব আরব সমাজে কত ভয়াবহ জাহিলিয়াত বিরাজ করছিল এবং সমাজ-ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর ছিল তা চিত্রায়িত হয়েছে হযরত জাফর ইবনে আবি তালেব রা.-এর সেই ঐতিহাসিক বক্তব্যে, যা তিনি অত্যন্ত বলিষ্ঠতার সাথে উপস্থাপন করেছিলেন তৎকালীন আবিসিনীয়ার বাদশা নাজাশীর রাজদরবারে। (দ্রষ্টব্য : সীরাতে ইবনে হিশাম ১/৩৩৬)
তখন সমাজে দুর্বলের উপর সবল চড়াও হত। অত্যাচার ও দুর্ব্যবহারের জয়জয়কার ছিল। সমাজ জর্জরিত ছিল অন্যায়, অবিচার, রক্তপাত, হানাহানি, সংঘাত ইত্যাদি নানাবিধ বিশৃঙ্খলায়। সীরাত ও ইতিহাসের একজন সাধারণ পাঠকেরও বিষয়গুলো অজানা নয়। এমন মুহূর্তে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাজকে যেভাবে ঢেলে সাজিয়েছেন ইতিহাসে এমন নজির দ্বিতীয়টি পাওয়া যায় না। নবীজীর এই বিপ্লব কেবল আরবের নির্দিষ্ট কিছু ভূখ-ের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এর আভা বিকরিত হয়েছে গোটা বিশ^জুড়ে। তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে তাদেরকে বললেন- ‘তোমরা কি শতধা বিভক্ত ছিলে না, এরপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের মাঝে সৌহার্দ-সম্প্রীতি তৈরি করেছেন?’ জীবনের পরতে পরতে সাহাবায়ে কেরাম বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল জাহিলিয়াত গোড়া থেকে নির্মূল করেন। বিদায় হজ্বের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ, যেখানে নবীজী পরিষ্কার ঘোঘণা করেন-
أَلَا كُلُّ شَيْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَيَّ مَوْضُوعٌ.
মনে রাখবে, জাহেলী সকল রীতি নীতি আমার পদতলে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২১৮
নবীজী আরো মনে করিয়ে দিয়ে বলেন-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ، أَلَا إِنَّ رَبَّكُمْ وَاحِدٌ، وَإِنَّ أَبَاكُمْ وَاحِدٌ، أَلَا لَا فَضْلَ لِعَرَبِيٍّ عَلَى عَجَمِيٍّ، وَلَا لِعَجَمِيٍّ عَلَى عَرَبِيٍّ، وَلَا أَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ، وَلَا أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ، إِلَّا بِالتَّقْوَى.
হে লোকসকল, স্মরণ রাখবে, তোমাদের প্রতিপালক এক। তোমাদের বাবাও এক। (তিনি হযরত আদম আ.)। অতএব মনে রাখবে, কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই কোনো অনারবের উপর। তেমনি নেই কোনো শ্রেষ্ঠত্ব কোনো অনারবের কোনো আরবের উপর। কোনো লাল মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নেই কালো মানুষের উপর, তেমনি কালো মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নেই কোনো লাল মানুষের উপর। শ্রেষ্ঠত্বের মানদ- কেবলই তাকওয়া। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৪৮৯
এক রবের বান্দা হিসাবে এবং এক মা বাবার সন্তান হওয়ার সুবাদে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোটা মানব জাতিকে এক কাতারে নিয়ে আসেন। এভাবে নবীজী সমাজ থেকে উৎখাত করেন শ্রেণি বৈষম্যের অভিশাপ। আরব আজম বলে অঞ্চলভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটান। লাল-কালোর বিভাজন তুলে দিয়ে মানব সমাজকে মুক্ত করেন বর্ণবাদ ও জাতীয়তাবাদের জিঞ্জির থেকে। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিটি মানব সন্তান এক সমান। ভাষা বর্ণ অঞ্চল ভূখ- ইত্যাদির বিচারে বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে জাহিলিয়াত। সমাজের ব্যবস্থাপনা সুরক্ষার সুবাদে কর্মবণ্টন অবশ্যই থাকবে। কিন্তু তাই বলে এর ভিত্তিতে বিভাজন সৃষ্টি করা, শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণয় করা এবং আরো আগে বেড়ে বৈষম্য তৈরি করা ইসলাম সমর্থন করে না। ইনসাফ ও অধিকার প্রাপ্তিতে কোনো ভেদাভেদ নেই। এখানে সকল বনী আদম এক সমান। শ্রেষ্ঠ তো সে ব্যক্তিই, যে আমল তথা কর্ম ও আচরণ ভালো ও সুন্দর করতে পারল, যে বেশি তাকওয়া হাছিল করতে পারল।
আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত চমৎকার ভঙ্গিমায় বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছেন-
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقْنٰكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَّ اُنْثٰی وَ جَعَلْنٰكُمْ شُعُوْبًا وَّ قَبَآىِٕلَ لِتَعَارَفُوْا اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ اَتْقٰىكُمْ اِنَّ اللهَ عَلِیْمٌ خَبِیْرٌ.
হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অন্যকে চিনতে পার। প্রকৃতপক্ষে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি মর্যাদাবান সেই, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সবকিছু সম্পর্কে সম্মক অবগত। -সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১৩
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ إِلى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ، وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ .
আল্লাহ তোমাদের চেহারা অবয়ব এবং ধন সম্পদ দেখেন না। তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমল। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৬৪
অর্থাৎ কে কত ধনী, কে কত ক্ষমতাবান, কে কোন্ বংশের সন্তান, কে কোন্ অঞ্চলের বাসিন্দা, কে কোন্ ভাষাভাষী ইত্যাদি এগুলো আল্লাহর কাছে বিবেচ্য নয়। আল্লাহ তাআলা তো কেবল বান্দার দিলের হালত এবং তার কর্মের মূল্যায়ন করবেন।
মোটকথা, ইসলাম এভাবে সকল ভেদাভেদ তুলে দিয়ে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে। আর শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি নির্ধারণ করেছে দ্বীন, ঈমান, তাকওয়া ও খোদাভীতিকে। যা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই বিচার করবেন। বাবা মায়ের কাছে যেভাবে দুই পুত্র সমান। তেমনি এক বাবা আদম আ. ও এক মা হাওয়া আ. থেকে সৃষ্ট মানবকুল সমান মর্যাদার অধিকারী। ইসলাম গোটা মুসলিম উম্মাহকে এক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। পাশাপাশি এ ভ্রাতৃত্বের হক ও অধিকারগুলোও সুসংহত ও সুসাব্যস্ত করেছে। সূরা হুজুরাতের নিম্নোক্ত আয়াতগুলো লক্ষ করুন।
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ فَاَصْلِحُوْا بَیْنَ اَخَوَیْكُمْ وَ اتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ۠،یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا یَسْخَرْ قَوْمٌ مِّنْ قَوْمٍ عَسٰۤی اَنْ یَّكُوْنُوْا خَیْرًا مِّنْهُمْ وَ لَا نِسَآءٌ مِّنْ نِّسَآءٍ عَسٰۤی اَنْ یَّكُنَّ خَیْرًا مِّنْهُنَّ وَ لَا تَلْمِزُوْۤا اَنْفُسَكُمْ وَ لَا تَنَابَزُوْا بِالْاَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْاِیْمَانِ وَ مَنْ لَّمْ یَتُبْ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ،یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اجْتَنِبُوْا كَثِیْرًا مِّنَ الظَّنِّ ؗ اِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ اِثْمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوْا وَ لَا یَغْتَبْ بَّعْضُكُمْ بَعْضًا اَیُحِبُّ اَحَدُكُمْ اَنْ یَّاْكُلَ لَحْمَ اَخِیْهِ مَیْتًا فَكَرِهْتُمُوْهُ وَ اتَّقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ تَوَّابٌ رَّحِیْمٌ.
প্রকৃতপক্ষে সমস্ত মুমিন ভাই-ভাই। সুতরাং তোমরা (ভ্রাতৃত্বের দাবি রক্ষা কর এবং বিবাদের মুহূর্তে) তোমাদের দু’ ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত করা হয়।
(আর এ ঈমানী ভ্রাতৃত্ব রক্ষার অনিবার্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি হচ্ছে) হে মুমিনগণ! পুরুষগণ যেন অপর পুরুষদের উপহাস না করে। হতে পারে তারা (অর্থাৎ যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে) তাদের (উপহাসকারীদের) চেয়ে উত্তম। এবং নারীগণও যেন অপর নারীদের উপহাস না করে। হতে পারে তারা (অর্থাৎ যে নারীদেরকে উপহাস করা হচ্ছে) তাদের (উপহাসকারীদের) চেয়ে উত্তম।
তোমরা একে-অন্যকে দোষারোপ করো না এবং একে-অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না। ঈমানের পর গোনাহের নাম যুক্ত হওয়া বড় খারাপ কথা। (অর্থাৎ যে এমনটি করে সে ফাসেক এবং গোনাহগার বিবেচিত হয়। ঈমান আনার পর কোনো মুসলিমের জন্য ফাসেক নামে অভিহিত হওয়াটা খুবই খারাপ কথা। এর ফল দাঁড়াবে এই যে, তুমি তো অন্যকে মন্দ নাম দিচ্ছিলে অথচ নিজেই একটা মন্দ নামে অভিহিত হয়ে গেলে! নাউযুবিল্লাহ) যারা এসব থেকে বিরত না হবে তারাই জালেম।
হে মুমিনগণ! অনেক রকম অনুমান থেকে বেঁচে থাক। কোনো কোনো অনুমান গোনাহ। (অর্থাৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং দলীল-প্রমাণ ব্যতীত কারও সম্পর্কে কুধারণা পোষণ করা কবীরা গোনাহ।)
আর তোমরা কারও গোপন ত্রুটির অনুসন্ধানে পড়ো না (অর্থাৎ অন্যের ছিদ্রানে¦ষণ করা ও তার গোপন দোষ খুঁজে বেড়ানোও একটা গোনাহের কাজ।)
এবং তোমরা একে-অন্যের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? এটাকে তো তোমরা ঘৃণা করে থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। (এবং ভ্রাতৃত্বের দাবি রক্ষার্থে এহেন আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাক। আর পূর্বের অন্যায় ও অপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হও।) নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। -সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১০-১২
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাআলা সকল মুমিনকে ভ্রাতৃত্বের এক গাঁথুনীতে আবদ্ধ করে এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু দাবি জানিয়ে দিয়েছেন। ঈমানী ভ্রাতৃত্ব তখনই সার্থক ও ফলপ্রসূ হবে যখন এই নীতি ও আদর্শের উপর সৌহার্দ সম্প্রীতি ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।
সমাজে যখন ঈমানের সূত্রে সম্পর্ক স্থাপিত হবে তখন এক ভাই অপর ভাইয়ের সুবিধা অসুবিধা দেখবে। বিপদে আপদে ভাইকে সঙ্গ দেবে। তার প্রতি সাহায্য সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করবে। তাকে জুলুম অত্যাচার থেকে রক্ষা করবে। দুঃখ দুর্দশায় তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে। সর্বোপরি তার জান-মালের হেফাজত করবে এবং তার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করবে।
একে-অপরকে হিংসা করবে না। কলহে লিপ্ত হবে না। রক্তপাত করবে না। কষ্ট দেবে না। মুসলিম ভাইকে শত্রুর হাতে ছেড়ে দেবে না। লাঞ্ছিত অপদস্থ করবে না। তার প্রতি আক্রোশ রাখবে না। তার সাথে মিথ্যা ও প্রতারণাপূর্ণ আচরণ করবে না।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كرَبِ الدُّنْيَا، نَفَّسَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ، يَسَّرَ اللهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا، سَتَرَهُ اللهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَاللّٰهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ .
যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কোনো সংকট মোচন করে দেবে, আল্লাহ তাআলা তার আখেরাতের সংকট মোচন করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তাআলা তার দুনিয়া ও আখেরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন করে রাখবেন। (এভাবে) আল্লাহ বান্দার সাহায্য করতে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৯৯
নবীজী আরো বলেন-
لاَ تَحَاسَدُوا وَلاَ تَنَاجَشُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا وَلاَ تَدَابَرُوا، وَلاَ يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا. الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يَخْذُلُهُ وَلاَ يَحْقِرُهُ، التَّقْوَى هَا هُنَا، وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ، بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ. كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ.
তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষে লিপ্ত হয়ো না। একজনের বেচা কেনায় গিয়ে বিনা কারণে দাম বাড়িয়ে দিয়ো না। একজন অপরজনের প্রতি আক্রোশ রেখো না। সম্পর্ক ছিন্ন কর না। একজনের বিক্রিতে আরেকজন আগ বাড়িয়ে বিক্রি করতে যেয়ো না। আল্লাহর বান্দারা তোমরা সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও।
মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তাকে জুলুম করতে পারে না। তাকে অসহায় ছেড়ে দিতে পারে না। তাকে অপদস্থ ও তাচ্ছিল্য করতে পারে না। তাকওয়া তো এখানে। নবীজী নিজ বক্ষের দিকে ইঙ্গিত করে তিনবার বলেন, তাকওয়া এখানে। তাকওয়া এখানে। তাকওয়া এখানে।
এরপর নবীজী বলেন, একজন ব্যক্তির অন্যায় ও অনিষ্ট হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় ও অপদস্থ করে। প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে অপর মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও সম্ভ্রম (বিনষ্ট করা) হারাম! -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৬৪
কুরআন-সুন্নাহ্য় রয়েছে এরকম আরো অসংখ্য হক ও অধিকারের কথা। সীরাতে রাসূল এবং সাহাবা জীবনেও রয়েছে এর বহু দৃষ্টান্ত। মুমিনের কর্তব্য হচ্ছে- সে এ শিক্ষাগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করায় নিবেদিত হবে এবং নিজ সমাজ ও পরিবেশে প্রীতি ও সদ্ভাব রক্ষায় আত্মনিয়োগ করবে।
সমাজ জীবনে এভাবে সবাই মিলেমিশে চলতে গিয়ে যদি মানবীয় দুর্বলতার কারণে কখনো কোনো বিবাদ বিসংবাদ দেখা দেয় তখন তাদের মাঝে একতা ও সংহতি স্থাপনে এগিয়ে আসাও সেই ভ্রাতৃত্বেরই দাবি। ‘তোমরা (ভ্রাতৃত্বের দাবি রক্ষা কর এবং বিবাদের মুহূর্তে) তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও’ বলে আল্লাহ তাআলা সেই শিক্ষাই দিয়েছেন। আর এ বিষয়টির প্রতি লক্ষ রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তো নবীজীর এ হাদীস থেকেও খুব সুন্দর বুঝে আসে। হযরত আবুদ দারদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ألا أخبِرُكُم بأفضَلَ من درجةِ الصِّيامِ والصَّلاةِ والصَّدَقَة؟ قالوا: بَلٰى يا رسولَ الله. قال : إصلاحُ ذاتِ البَينِ، وفسادُ ذات البين الحالِقَة.
আমি কি তোমাদেরকে সেই আমল সম্পর্কে অবহিত করব, যা সাধারণ নামায রোযা এবং সদাকা থেকেও উত্তম? সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অবশ্যই বলুন। নবীজী বললেন- তা হচ্ছে পরস্পরের মাঝে সম্প্রীতি ও সদ্ভাব স্থাপন করা। আর মানুষের মাঝে ফেতনা ও দ্বন্দ্ব ছড়ানো, এটা তো সবকিছু ধ্বংস করে দেয়।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে- তা তোমার দ্বীনের সব বরবাদ করে দেয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯১৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫০৯
বস্তুত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোটা জীবনের একটি বড় মিশন ছিল- সমাজে অরাজকতা দূর করে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। হিংসা বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করে সৌহার্দ সম্প্রীতি প্রতিস্থাপন করা। বিবাদ বিসংবাদের অবসান ঘটিয়ে ঐক্য ও সংহতি কায়েম করা। জুলুম শোষণ উৎখাত করে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব রক্ষা করা। নবীজী গোটা জীবনে, বিশেষ করে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে সর্বপ্রথম যে কাজগুলো করেছেন তার অন্যতম ছিল এই ভ্রাতৃপ্রতিম একতা প্রতিষ্ঠা। বহুকাল থেকে চলে আসা গোত্রে গোত্রে পারস্পরিক দ্বন্দ্বগুলো তিনি নিরসন করেন। আর আনসার ও মুহাজিরদের মাঝে স্থাপন করে দেন ঈমানী ভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধন। মূলত এটি সম্ভব হয়েছে মহান রাব্বুল আলামীনের অপার অনুগ্রহের বদৌলতে এবং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খোদাপ্রদত্ত নববী অবদানের মাধ্যমে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে সেই কথাটি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন-
وَ اذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَیْكُمْ اِذْ كُنْتُمْ اَعْدَآءً فَاَلَّفَ بَیْنَ قُلُوْبِكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهٖۤ اِخْوَانًا وَ كُنْتُمْ عَلٰی شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنْقَذَكُمْ مِّنْهَا .
স্মরণ কর ওই সময়ের কথা যখন আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আর তা এভাবে যে, একটা সময় ছিল, যখন তোমরা একে-অন্যের শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহকে একে-অপরের সাথে জুড়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গিয়েছ। তোমরা ছিলে অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে। আল্লাহ তোমাদেরকে (ইসলামের মাধ্যমে) সেখান থেকে মুক্তি দিয়েছেন। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১০৩
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-
وَ اَلَّفَ بَیْنَ قُلُوْبِهِمْ لَوْ اَنْفَقْتَ مَا فِی الْاَرْضِ جَمِیْعًا مَّاۤ اَلَّفْتَ بَیْنَ قُلُوْبِهِمْ وَ لٰكِنَّ اللهَ اَلَّفَ بَیْنَهُمْ اِنَّهٗ عَزِیْزٌ حَكِیْمٌ.
আর তিনি তাদের (মুমিনদের) হৃদয়ে পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতি সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আপনি যদি পৃথিবীর সবকিছু (এ উদ্দেশ্যে) ব্যয় করে ফেলতেন, তবে তাদের হৃদয়ে সম্প্রীতি সৃষ্টি করতে পারতেন না। কিন্তু তিনি তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। -সূরা আনফাল (৮) : ৬৩
প্রিয় পাঠক, সাহাবায়ে কেরামের হৃদয়ে এই উপলব্ধি জাগরূক ছিল। আর তাই নবীজী যখন তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন- ‘তোমরা কি শতধা বিভক্তিতে জর্জরিত ছিলে না, এরপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের মাঝে সখ্য তৈরি করেছেন?’
তারা উত্তরে বলেছিলেন-
اللهُ وَرَسُولُهُ أَمَنُّ.
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের প্রতি সর্বাধিক অনুগ্রহশীল।
এটা যেমন তাদের মুখের স্বীকারোক্তি ছিল তেমনি তা বাস্তবায়ন করতেন তারা কর্মের মাধ্যমে। ফলে জাহেলী সাম্প্রদায়িকতা উপেক্ষা করে ভ্রাতৃত্ব চর্চার অপূর্ব দৃষ্টান্ত তারা পৃথিবীর সামনে রেখে গিয়েছেন। ইতিহাসে যার নজির দ্বিতীয়টি মেলে না।
প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে এই ঐক্য ও সংহতি অর্জিত হবে কীভাবে এবং তা টেকসই হওয়ার উপায়ই বা কী? এর সুন্দর সামাধান রাব্বুল আলামীন অত্যন্ত চমৎকার ভাষায় দিয়ে দিয়েছেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَ لَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ. وَ اعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِیْعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوْا وَ اذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَیْكُمْ اِذْ كُنْتُمْ اَعْدَآءً فَاَلَّفَ بَیْنَ قُلُوْبِكُمْ فَاَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهٖۤ اِخْوَانًا وَ كُنْتُمْ عَلٰی شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنْقَذَكُمْ مِّنْهَا كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰیٰتِهٖ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ.
হে মুমিনগণ! অন্তরে আল্লাহকে সেইভাবে ভয় কর, যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত। (সাবধান! কোনো অবস্থায়ই যেন) তোমাদের মৃত্যু (না আসে, বরং) এই অবস্থায়ই যেন আসে যে, তোমরা মুসলিম।
আল্লাহর রশিকে (অর্থাৎ তাঁর দ্বীন ও কিতাবকে) দৃঢ়ভাবে ধরে রাখ এবং পরস্পরে বিভেদ করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন তা স্মরণ রাখ। একটা সময় ছিল, যখন তোমরা একে অন্যের শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহকে জুড়ে দিলেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিলে। আল্লাহ তোমাদেরকে (ইসলামের মাধ্যমে) সেখান থেকে মুক্তি দিলেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা সঠিক পথে চলে আস। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১০২, ১০৩
অর্থাৎ দিলের গভীরে আল্লাহর ভয় এবং আল্লাহর বিধানকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার সূত্রে যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় তাই মূলত কার্যকর ফলপ্রসূ এবং টেকসই হয়ে থাকে। এমন সম্পর্কই ধ্বংসের খাদ থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করতে পারে।
আমাদের সমাজ ও চারপাশ ঈমানী ভ্রাতৃত্ব চর্চায় আলোকিত হয়ে উঠুক, মহান রবের দরবারে সকাতর এই মিনতি।