প্রশ্নোত্তর
[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম প্রশ্নোত্তর। এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]
প্রশ্ন ৫৫ : সূরা বনী ইসরাঈলের ৭৭ নং আয়াতে রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে মাকামে মাহমূদে পৌঁছানোর কথা বলা হয়েছে এবং আযানের পরের দুআর মধ্যেও এই মাকামে মাহমূদের কথা রয়েছে, সেটা কী?
উত্তর : مَقَامًا مَّحْمُوْدًا (মাকামে মাহমূদ)-এর শাব্দিক অর্থ ‘প্রশংসনীয় স্থান’। এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই বিশেষ মর্যাদা বোঝানো উদ্দেশ্য, যে মর্যাদার কারণে তাঁকে হাশরের দিন শাফাআত করার অধিকার দেওয়া হবে, যখন আর কারও শাফাআত করার সুযোগ থাকবে না। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মাকামে মাহমূদ’ সম্পর্কে বলেছেন-
هُوَ الْمَقَامُ الَّذِي أَشْفَعُ لِأُمَّتِي فِيهِ.
অর্থাৎ এটা এমন এক মর্যাদা, যার ফলে আমি আমার উম্মতের জন্য শাফাআত করব। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৬৮৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩১৩৭
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন-
إِنَّ النَّاسَ يَصِيرُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ جُثًا، كُلُّ أُمَّةٍ تَتْبَعُ نَبِيَّهَا يَقُولُونَ: يَا فُلاَنُ اشْفَعْ، يَا فُلاَنُ اشْفَعْ، حَتَّى تَنْتَهِيَ الشَّفَاعَةُ إِلَى النَّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَلِكَ يَوْمَ يَبْعَثُهُ اللهُ المَقَامَ المَحْمُود.
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন সবাই নতজানু হয়ে বসে থাকবে। প্রত্যেক উম্মত তাদের নবীকে বলবে, আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। (অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, নবীগণ সুপারিশ করতে নিজেদের অপারগতা প্রকাশ করবেন।) অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুপারিশ করার অনুরোধ জানানো হবে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে কিয়ামতের দিন মাকামে মাহমূদে পৌঁছানোর যে ওয়াদা করেছেন, এটাই হল সেই বিষয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৭১৮
আরও দ্র. তাফসীরে তবারী ১৫/৪৩-৪৭, তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৯০-৯৭; ফাতহুল বারী ২/৯৫।
প্রশ্ন ৫৬ : সূরা বাকারার ২৩৩ নং আয়াতে আছে-
وَ عَلَی الْمَوْلُوْدِ لَهٗ رِزْقُهُنَّ وَ كِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ .
(সন্তান যার, তার কর্তব্য- ন্যায়সম্মতভাবে মায়েদের খোরপোষের ভার বহন করা।)
এখানে সরাসরি على الْوالدِ (পিতার কর্তব্য) না বলে عَلَی الْمَوْلُوْدِ لَهٗ (সন্তান যার, তার কর্তব্য) এভাবে বলার কী হেকমত?
উত্তর : সূরা বাকারার উক্ত আয়াতে দুই বার এর পুনরাবৃত্তি হয়েছে, অর্থাৎ على الْوالدِ (পিতার কর্তব্য) না বলে দুই বারই عَلَی الْمَوْلُوْدِ لَهٗ (সন্তান যার, তার কর্তব্য) বলা হয়েছে। এর একটি হেকমত হল, কুরআন কারীম বিধানাবলি এমন পন্থায় বর্ণনা করে, যাতে মানুষ তা অন্তর থেকে গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়। এখানে যেহেতু পিতার ওপর সন্তানের মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব অর্পণ করা হচ্ছে, এ বিধান কোনো পিতার জন্য চাপ ও মনোকষ্টের কারণ হতে পারত, এজন্য عَلَی الْمَوْلُوْدِ لَهٗ (সন্তান যার, তার কর্তব্য) বলা হয়েছে, যেন তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, সন্তান তো তারই এবং তার সন্তানের খাতিরেই এ ভরণপোষণের দায়িত্ব তার উপর অর্পিত হয়েছে। এতে বিধানটি গ্রহণ করা তার পক্ষে সহজ হবে। তাছাড়া عَلَی الْمَوْلُوْدِ لَهٗ বলার দ্বারা এদিকেও ইশারা হয়ে যায় যে, সন্তান যদিও মা-বাবা উভয়েরই, কিন্তু যেহেতু পিতার ঔরস থেকে সন্তানের জন্ম, তাই সন্তানের বংশ পিতার দিকেই সম্বন্ধযুক্ত। (তাফসীরে কাবীর ২/৪৬০; কাশ্শাফ ১/২৩৩; রূহুল মাআনী ৩/১৪৬; মাআরিফুল কুরআন, মুফতী শফী রাহ. ১/৫৮০)
প্রশ্ন ৫৭ : আমি একজন মাদরাসার ছাত্র। আমার একটা প্রশ্ন হল, সূরা বাকারার ২৭২ নং আয়াতে আছে-
وَ مَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَیْرٍ فَلِاَنْفُسِكُمْ ؕ وَ مَا تُنْفِقُوْنَ اِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللهِ وَ مَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَیْرٍ یُّوَفَّ اِلَیْكُمْ وَ اَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ.
এখানে প্রথম ও তৃতীয় বাক্যে وَ مَا تُنْفِقُوْا আর দ্বিতীয় বাক্যে وَ مَا تُنْفِقُوْنَ। প্রথম ও তৃতীয় বাক্যে تُنْفِقُوْنَ -এর ن হযফ হল কেন?
উত্তর : এখানে প্রথম ও তৃতীয় বাক্যে وَ مَا تُنْفِقُوْا -এর مَا -টা شرطية যা فعل مضارع -এর শুরুতে এসে তাকে جزم দিয়েছে। আপনার হয়ত জানা আছে যে, ما الشرطية টা عامل হয়ে থাকে। আর মাঝখানের বাক্যে وَ مَا تُنْفِقُوْنَ -এর مَا -টা شرطية নয়, বরং ما النافية যা عامل হয় না। (তাফসীরে আবুস সাঊদ ১/৩১৪; রূহুল মাআনী ৪/৪৫; ই‘রাবুল কুরআনী ওয়া বায়ানুহূ, দরবেশ ২/৬৫)
প্রশ্ন ৫৮ : সূরা আহযাবের ৩৭ নং আয়াতে যায়েদ রা. সম্পর্কে বলা হয়েছে, তাঁর প্রতি আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অনুগ্রহ করেছেন। এখানে যায়েদ রা.-এর প্রতি নবীজীর কোন্ অনুগ্রহ বোঝানো উদ্দেশ্য?
উত্তর : যায়েদ ইবনে হারেছা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোলাম ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আযাদ করেছিলেন এবং নিজের পোষ্যপুত্র বানিয়েছিলেন। সেই অনুগ্রহের কথাই এখানে বোঝানো উদ্দেশ্য। (তাফসীরে তবারী ১৯/১১৫; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৭৮১)