কুরআন কারীমের অর্থ ও মর্ম শেখার
গুরুত্বপূর্ণ দুটি কিতাব
الطريق إلى القرآن الكريم ــ الطريق إلى تفسير القرآن الكريم
الحمد لله، وسلام على عباده الذين اصطفى، وأشهد أن لا إله إلا الله، وحده لا شريك له، وأشهد أن محمدا عبده ورسوله.
اللهم اجعل صلواتك، ورحمتك، وبركاتك، على سيد المرسلين، وإمام المتقين، وخاتم النبيين، محمد عبدك ورسولك، إمام الخير، وقائد الخير، ورسول الرحمة، اللهم ابعثه مقاما محمودا يغبطه به الأولون والآخرون، وعلى آله وصحبه أجمعين. أما بعد:
জরুরিয়াতে দ্বীনের ইলম ও ইসলামের সাধারণ বোধ-সমঝ লাভ এবং দ্বীন ও দুনিয়ার বিষয়ে আবশ্যকীয় সচেতনতা অর্জন করা তো প্রত্যেক মুমিনের উপরই ফরজ। তালিবানে ইলমে ওহীর মাকাম আরও ঊর্ধ্বে। তালিবানে ইলমে ওহীর মনযিল তো এগুলোর পর থেকে শুরু হয়।
মাবাদিয়াতের ইলম হাসিল করার পর তালিবে ইলমের মনযিলের সূচনা হল, দ্বীনী ইলমের মূল উৎস কুরআনে কারীম ও সুন্নতে নববীর হেদায়েত ও নসীহত সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ থেকেই বোঝার যোগ্যতা অর্জনের মেহনতে লেগে যাওয়া।
এ লক্ষ্যেই হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রাহ. ও আরো কতক আকাবিরের মশোয়ারা মোতাবেক মাদরাসাগুলোতে তাফসীরের কিতাব পড়ানোর আগে মাতৃভাষায় পুরো কুরআন কারীমের তরজমা দরসে পড়ানোর রীতি চালু হয়। কিন্তু এর জন্য নেসাবে নির্ধারিত কোনো কিতাব ছিল না; বরং কেবল মুসহাফ সামনে রেখে তরজমা পড়ানো হত। সন্দেহ নেই, এ তরীকাতেও ফায়েদা রয়েছে এবং এ পদ্ধতিতে ছাত্রদের জন্য তামরীনের সুযোগও বেশি থাকে। কিন্তু এ সূরতে প্রথমত, কুরআন তরজমা পড়ানোর বিষয়টি কাফিয়া শরহে জামী জামাত পর্যন্ত দেরী করতে হয়। দ্বিতীয়ত, কুরআন তরজমার মত একটি নাযুক বিষয়ের পঠন কোনো কিতাবের সহযোগিতা ছাড়া শুরু করা একদিকে যেমন অনেক বড় চাপের বিষয় তেমনি তা ঝুঁকি ও আশঙ্কামুক্তও নয়। তাই দরসে কুরআন তরজমা পড়ানোর জন্য নেসাবী একটি কিতাবের খুব প্রয়োজন ছিল।
কোনো সন্দেহ নেই, এক্ষেত্রে শূন্যতা ছিল। মনে হয় এ শূন্যতা পূরণের সৌভাগ্য আল্লাহ তাআলা আদীব হুযুর হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুম-এর ভাগ্যে লিখে রেখেছিলেন। তিনি এক বিশেষ আঙ্গিকে এই মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন। তিনি প্রথমে চার খণ্ডে আততরীক ইলাল কুরআনিল কারীম রচনা করেন। এরপর তিন খণ্ডে আত তরীক ইলা তাফসীরিল কুরআনিল কারীম রচনা করেন।
এই উভয় কিতাব মূলত কুরআন কারীমের অর্থ ও মর্ম শেখার উদ্দেশ্যেই রচিত। প্রথম কিতাবটির চার খ-ই ভালোভাবে পড়া হলে কুরআন তরজমার সাথে তালিবে ইলমদের বেশ ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় এবং কুরআন কারীমের নির্বাচিত এক তৃতীয়াংশেরও অধিক আয়াতের তরজমা মাশাআল্লাহ আয়ত্ব হয়ে যায়। এরপর মুসহাফ সামনে রেখে পুরো কুরআনে কারীমের দরস হলে তা হজম করা তালিবে ইলমদের জন্য যেমন সহজ তেমনি এতে কাক্সিক্ষত ফায়দাও অর্জিত হয় পূর্ণরূপে।
সামনে গিয়ে তালিবে ইলম যখন আততরীক ইলা তাফসীরিল কুরআনিল কারীম পড়বে এবং কুরআন কারীমের অর্থ ও মর্মের বিশ্লেষণ সহজ সাবলীল আরবীতে পাবে তখন কুরআন কারীমের সাথে তার সম্পর্ক আরো বাড়তে থাকবে। কুরআনের আয়াতের বার্তা জানতে পেরে সে ভিন্ন এক স্বাদ লাভ করবে; হৃদয়-মনে প্রশান্তি অনুভব করবে। কুরআনের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গতা আরো গভীর ও দৃঢ় হবে। আয়াতের অধীনে উল্লেখিত সংশ্লিষ্ট ফাওয়ায়েদ অবগত হয়ে তার জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত হতে থাকবে। এভাবে ক্রমে তালিবে ইলমের হিম্মত উত্তরোত্তর বৃদ্ধি লাভ করতে থাকবে।
فجزى الله تعالى المصنف الجليل عن طلاب العلم وأهله خير الجزاء وأوفاه في الدنيا والآخرة على هاتين التحفتين الكريمتين الغاليتين، وعلى جميع تحائفه العلمية والدعوية والأدبية، باللغة العربية، والأردية، والبنغالية.
সাআদাত লাভের আশায় কিতাবদুটির পরিচিতি সম্পর্কে কিছু কথা আরজ করা মুনাসিব হবে।
আততরীক ইলাল কুরআনিল কারীম
প্রথম কিতাব আততরীক ইলাল কুরআনিল কারীম-এর প্রেক্ষাপট বয়ান করতে গিয়ে কিতাবের প্রথম খণ্ডের ভূমিকায় মুসান্নিফ দামাত বারাকাতুহুম লিখেছেন-
‘আল্লাহর শোকর, আমার যাঁরা আসাতিযায়ে কেরাম, তাঁদেরই ছোহবত থেকে এ দায়িত্ব ও কর্তব্যের চেতনা আমার অন্তরে জাগ্রত হয়েছিল এবং শিক্ষকজীবনের শুরু থেকেই এ চিন্তা আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো যে, তারজামাতুল কোরআনের তা‘লীমকে কীভাবে সর্বস্তরের তালিবানে ইলমের জন্য সহজ ও ফলপ্রসূ করা যায়? তাত্ত্বিক চিন্তার পাশাপাশি প্রায়োগিক ক্ষেত্রেও আমি আমার ছাত্রদের উপর কিছু মেহনত অব্যাহত রেখেছিলাম। কয়েক বছরের চিন্তা ও মেহনতের নতিজা হিসাবে আমার মনে হয়েছে, যদি-
ক. আমাদের নেছাবে তা‘লীমের শুরু থেকে আরবীভাষা শিক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং তালিবে ইলমের মাঝে আরবী ভাষার নূন্যতম একটি যোগ্যতা তৈরি করা সম্ভব হয়।
খ. তারপর কোরআনুল কারীমের সহজ আয়াতগুলো নির্বাচন করে পর্যায়ক্রমে তরজমা শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করা হয় এবং
গ. চূড়ান্ত স্তরে পূর্ণ ইলমী আন্দাযে সমগ্র কোরআনের তরজমার তা‘লীমের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে ইনশাআল্লাহ-
ক. শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই কোরআন ও তারজামাতুল কোরআনের সঙ্গে তালিবে ইলমের মুনাসাবাত ও পরিচয় গড়ে ওঠবে।
খ. ধারাবাহিক তরজমার পরিবর্তে ‘সহজ পর্যায়ক্রম পদ্ধতি’ অনুসরণের ফলে তালিবে ইলমের কাছে তারজামাতুল কোরআন কোন কঠিন বিষয় মনে হবে না, বরং হৃদয় ও আত্মার জন্য প্রশান্তি এবং রূহ ও কলবের জন্য সুকূন ও সাকীনার বিষয় মনে হবে।
গ. তরজমার প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের পর চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বতন্ত্র বিষয় ও ‘ফন’ হিসাবে পূর্ণ তারজামাতুল কোরআন আত্মস্থ করা সহজে সম্ভব হবে। এভাবে তার সামনে খুলে যাবে তাফসীরুল কোরআনের বিশাল জগতে উপনীত হওয়ার ‘প্রবেশপথ’।’ (আততরীক ইলাল কোরআন, ১ম খণ্ড, ভূমিকা, পৃষ্ঠা নং- ح)
তিনি আরো লেখেন-
‘আজমের যে কোন ভাষার মুসলমানের জন্য আল্লাহর কালাম কোরআনুল কারীমের প্রাথমিক তরজমাটুকু বোঝাও খুব সহজ বিষয় নয়। এজন্য প্রথমে অর্জন করতে হয় আরবী ভাষার ব্যাকরণসম্মত বিশুদ্ধ জ্ঞান ও সাহিত্যবোধ। তাই মাদরাসাতুল মাদীনায় ‘মাদানী নিছাব’ নামে নিছাবে তা‘লীমের সংস্কারের যে মেহনত চলছে তাতে প্রথম বর্ষ থেকেই আরবী ভাষা শিক্ষার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ফলে আল্লাহর রহমতে আরবীভাষার উপর এক বছরের মেহনতে -সত্যি সত্যি যদি মেহনত করা হয়- একজন তালিবে ইলমের এই পরিমাণ যোগ্যতা অর্জিত হয় যে, সমগ্র কোরআন থেকে বেশ কিছু আয়াতের তরজমা সে মোটামুটি বুঝতে পারে। সেই নির্বাচিত আয়াতগুলোই তারজামাতুল কোরআনের প্রথম পাঠরূপে মাদানী নিছাবের (দ্বিতীয় বর্ষের দুই পর্বে) এতদিন পড়ানো হচ্ছে এবং সেইসঙ্গে নিছাবী কিতাব তৈরির মেহনতও অব্যাহত রয়েছে। আলহামদু লিল্লাহ! ছুম্মা আলহামদু লিল্লাহ! রাব্বে কারীমের অশেষ মেহেরবানীতে আমাদের টুটা-ফাটা মেহনতের প্রথম ফসলরূপে الطريق إلى القرآن প্রথম খণ্ড এখন আত্মপ্রকাশ করছে। এতে প্রথম পনেরো পারার নির্বাচিত আয়াতগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় পনের পারার নির্বাচিত আয়াতগুলো নিয়ে দ্বিতীয় খ- অচিরেই আত্মপ্রকাশ করবে ইনশাআল্লাহ।
আলোচ্য কিতাবে তালিবে ইলমের বুঝ ও মেধার স্তর অনুযায়ী প্রত্যেক আয়াতের নিচে প্রয়োজনীয় শব্দবিশ্লেষণ ও বাক্যবিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে সহজে বোঝার জন্য তারকীবভিত্তিক শাব্দিক তরজমা তুলে ধরা হয়েছে। সর্বশেষে প্রতিটি আয়াতের সরল বাংলা তরজমা পেশ করা হয়েছে।
মেহেরবান আল্লাহ যদি ‘যিন্দেগীর চেরাগে রৌশনি’ বহাল রাখেন তাহলে অপেক্ষাকৃত কঠিন আয়াতগুলোর নির্বাচিত অংশ (তৃতীয় বর্ষের জন্য) তৃতীয় ও চতুর্থ খ-রূপে প্রকাশ করার এবং পরবর্তী বর্ষের জন্য পূর্ণাঙ্গ ‘ইলমী তারজামাতুল কোরআন’ প্রকাশ করার নিয়ত রয়েছে।
وما توفيقي إلا بالله.
(আততরীক ইলাল কুরআন, ১ম খণ্ড, ভূমিকা, পৃষ্ঠাط،ي)
আলহামদু লিল্লাহ মুসান্নিফ-এর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে الطريق إلى القرآن الكريم -এর চার খণ্ডই অনেকদিন থেকেই পাঠকের সামনে আছে। মাশাআল্লাহ, এর দ্বারা পাঠক বেশ উপকৃতও হচ্ছেন। কোথাও এ কিতাবকে নেসাবী কিতাবের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কোথাও নেসাবের সহযোগী কিতাব হিসাবে ইসতেফাদা হচ্ছে। এ কিতাবে মুসান্নিফ-এর মানহাজ কী ছিল- তা মুসান্নিফের চেয়ে তাঁর জালীলুল কদর উসতায হযরত মাওলানা সুলতান যাওক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুমের লেখায় আরো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি তার দুআ-বাণী ‘আমার দিলের দুআ’তে বলেন-
‘এ কিতাবে তার কাজের পদ্ধতি এই যে, الطريق إلى العربية সমাপ্তকারী ছাত্রদের আরবী যোগ্যতার স্তর অনুযায়ী কিতাবুল্লাহ থেকে সহজ আয়াতগুলো নির্বাচন করা হয়েছে, তারপর প্রত্যেক আয়াতের প্রয়োজনীয় শব্দবিশ্লেষণ ও বাক্যবিশ্লেষণ পরিবেশন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বেশ অভিনব ও ফলপ্রসূ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। যেমন,
ক. শব্দবিশ্লেষণে অর্থের সঙ্গে তার ব্যবহার নির্দেশ করা হয়েছে, যা আরবী আদবের শিক্ষার্থীর জন্য অতীব জরুরি।
খ. যে শব্দের বিশ্লেষণ পিছনে গিয়েছে, তার হাওয়ালা বারবার দেওয়া হয়েছে, যেন তালিবে ইলম তা দেখে নিতে পারে। এটি শব্দবিশ্লেষণ ইয়াদ রাখার জন্য খুব উপযোগী পদ্ধতি এবং এটি এ কিতাবের এমন বৈশিষ্ট্য, যা আমাদের নিছাবী কিতাবগুলোতে অনুপস্থিত।
গ. বাক্যবিশ্লেষণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নাহবী আলোচনা এমন সহজবোধ্যরূপে পেশ করা হয়েছে, যা আর কোথাও আমার নজরে আসেনি।
ঘ. প্রয়োজনীয় তারকীব যেমন সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে, তেমনি যে সমস্ত তারকীব পিছনে গিয়েছে সেক্ষেত্রে প্রশ্ন আকারে তামরীনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তদুপরি ক্ষেত্রবিশেষে পিছনের হাওয়ালাও দেয়া হয়েছে, যাতে তালিবে ইলম ভুলে যাওয়া বিষয় ইয়াদ করে নিতে পারে।
ঙ. তারকীবী আলোচনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাক্যটির আরবী তারকীব বোঝার উপযোগী করে শাব্দিক তরজমা পেশ করা হয়েছে, যাতে তরজমার উপর বাছিরত ও শরহে ছদর হাসিল হয়েছে।
চ. সব শেষে সহজ-সরল ও সুন্দর বাংলা তরজমা পেশ করা হয়েছে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তালিবে ইলম শব্দ ও বাক্যবিশ্লেষণের সাহায্যে আয়াতের তরজমা নিজেই বুঝতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস, তবে মানসম্মত বাংলা তরজমা ইস্তি‘দাদ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে- ইনশাআল্লাহ।
ছ. লেখক বলেছেন, তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ডে তারকীব আরবীতে দেয়া হবে, যাতে এ বিষয়ে আরবী مصادر علمية থেকে ইসতিফাদা করার যোগ্যতা তালিবে ইলমের মাঝে পয়দা হয়ে যায়। এটি অবশ্যই একজন শিক্ষকের সুদীর্ঘ তা‘লীমী তাজরাবা ও গভীর প্রজ্ঞার প্রমাণ।
জ. লেখক আরো জানিয়েছেন যে, তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ডে তরজমা পর্যালোচনা নামে একটি বিষয় যুক্ত করা হবে, যাতে তরজমার উপর ‘তানকীদী বাছীরত’ বা সমালোচনাজ্ঞান অর্জিত হয়- এটিও লেখকের অভিনব চিন্তা। দ্বিতীয় খণ্ডে কিছু নমুনা দেয়া হয়েছে। যেমন সাধারণভাবে-
وَ اُلْقِیَ السَّحَرَةُ سٰجِدِیْنَ.
-এর তরজমা করা হয়, ‘আর যাদুগরেরা সিজদায় লুটিয়ে পড়লো।’ কিন্তু লেখক তরজমা করেছেন, ‘আর জাদুগরেরা সিজদায় নিক্ষিপ্ত হল।’
তারপর তিনি পর্যালোচনা পেশ করেছেন, ‘এখানে وقع -এর পরিবর্তে ألقي ব্যবহার করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, একটি গায়বী কুদরত এখানে কাজ করেছে। এই গভীর তাৎপর্য তুলে ধরার জন্য ألقي -এর তরজমা করা হয়েছে ‘নিক্ষিপ্ত হল।’ ‘সিজদায় লুটিয়ে পড়লো’ তরজমায় এ তাৎপর্য প্রকাশ পায় না।’
আমি মনে করি, এই পর্যালোচনা পদ্ধতি তারজামাতুল কোরআনের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লবী চিন্তা, যা শিক্ষার্থীদের বিরাট উপকারে আসবে, ইনশাআল্লাহ। (দু‘আ করি, আল্লাহ তা‘আলা লেখকের ইলম ও আমল আরো বাড়িয়ে দিন! তাঁর তাওফীক দ্বারাই সবকিছু হয়, নিজের যোগ্যতা দ্বারা কিছুই হয় না, এটা সবাইকে সবসময় মনে রাখার তাওফীক যেন আল্লাহ দান করেন, আমীন)।
মোটকথা, ترجمة معاني القرآن الكريم শিক্ষাদানের কোন নিছাবী কিতাব এতদিন আমাদের দেশে তো বটেই, পাক-ভারত উপমহাদেশেও ছিলো না, অথচ এর প্রয়োজন ছিলো। আলোচ্য কিতাব এ ক্ষেত্রে এক বিরাট শূন্যতা পূরণ করবে বলে আমি আশা করি। আমার জন্য পরম আনন্দের বিষয় যে, এ মহান খেদমতের জন্য আল্লাহ তা‘আলা আমার ‘প্রিয় পুত্র’ আবু তাহের মিছবাহকে নির্বাচন করেছেন। আল্লাহর দরবারে অন্তর দিয়ে দু‘আ করি, পুরো কাজটি সর্বাঙ্গ সুন্দররূপে পূর্ণ করার তাওফীক তাকে দান করুন। তার সমস্ত মিহনতকে কামিয়াব করুন, কবূল ও মকবূল করুন, আমীন।’ (আততরীক ইলাল কুরআন, ২য় খণ্ড, ভূমিকা (আমার দিলের দু’আ), পৃষ্ঠা- ھ،و)
মুসান্নিফ চতুর্থ খণ্ডের ভূমিকায় কুরআনুল কারীমের অনুবাদ চার প্রকার হতে পারে- এ বিষয়ে আলোচনার পর লেখেন-
‘الطريق إلى القرآن -এর উদ্দেশ্য যেহেতু তারজামাতুল কোরআনের শাস্ত্রীয় অধ্যয়ন, সেহেতু তাতে তৃতীয় প্রকারের তারজামাটিই (علمى ترجمه) করার চেষ্টা করা হয়েছে। অর্থাৎ শব্দের নিকটতম প্রতিশব্দ যেমন চয়ন করা হয়েছে, তেমনি আয়াতের তারকীবি কাঠামোও যথাসম্ভব অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। সর্বোপরি, আয়াতের শব্দসমষ্টির তারতীব ও বিন্যাসও রক্ষা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। ভিন্ন ভাষার আবেদন রক্ষা করা যেখানে অনিবার্য সেখানেই শুধু বিন্যাস থেকে প্রয়োজন পরিমাণ সরে আসা হয়েছে। যেমন ইযাফত ও ছিফাতের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে। তবে তরজমা পর্যালোচনায় অতি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সরল তরজমারও নমুনা দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় এভাবে কোরআনুল কারীমের পূর্ণ তরজমা অধ্যয়ন করার পর একজন তালিবের মধ্যে সরল তরজমা করার যোগ্যতাও অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ।’ [আততরীক ইলাল কুরআনিল কারীম, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা- ঢ (ভূমিকা)]
আততরীক ইলা তাফসীরিল কুরআনিল কারীম-এর ভূমিকায় আততরীক ইলাল কুরআনিল কারীম সম্পর্কে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ নোটটিও লিখেছেন-
‘প্রথম বর্ষের প্রথম কিতাব الطريق إلى العربية -এর তৃতীয় খণ্ডের শেষ অধ্যায়টি হচ্ছে নির্বাচিত আয়াত ও নির্বাচিত হাদীছ। কিতাবটির তিন খ- অধ্যয়নের পর (সঙ্গে التمرين الكتابي) তালিবে ইলমের যে আরবীজ্ঞান তৈরি হয় তার আলোকে ঐসকল আয়াত ও হাদীছ (পূর্ণ বা খণ্ডাংশ) নির্বাচন করা হয়েছে যা সে সহজে বুঝতে পারে। ফলে শিক্ষাজীবনের প্রথম বর্ষেই তালিবে ইলম কোরআন ও সুন্নাহর বরকতপূর্ণ সান্নিধ্যে এসে যায়, যা তার অন্তরে অত্যন্ত রূহানী সুকূন ও সাকীনা দান করে, আলহামদু লিল্লাহ। দ্বিতীয় বর্ষের উভয় পর্বের জন্যالطريق إلى القرآن الكريم নামে রয়েছে দুই খণ্ডের কিতাব। প্রথম খণ্ডে প্রথম পনের পারা থেকে ঐ সকল আয়াত নির্বাচন করা হয়েছে, যা ঐ স্তরের তালিবে ইলম সামান্য মেহনতেই আত্মস্থ করতে পারে। দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে দ্বিতীয় পনের পারা থেকে নির্বাচিত আয়াতসমূহ। এভাবে তালিবে ইলম আল্লাহ তাআলার পবিত্র কালামের আরো নিকট-সান্নিধ্যে আসতে পারে, যা আল্লাহর ইচ্ছায় তালিবে ইলমের ইলমি, আখলাকি ও ফিকরি তারবিয়াতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তৃতীয় বর্ষের উভয় পর্বের জন্য একই পদ্ধতিতে তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ড তৈরি করা হয়েছে। পার্থক্য এই যে, প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডে আয়াতগুলো হচ্ছে সহজ, আর শব্দ-বিশ্লেষণ ও বাক্যবিশ্লেষণ হচ্ছে বাংলায়; পক্ষান্তরে তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ডে আয়াতগুলো অপেক্ষাকৃত কঠিন, আর بيان اللغة ও بيان الإعراب হচ্ছে আরবীতে, যা কিছুটা কষ্টসাধ্য হলেও তালিবে ইলম মেহনত করে আয়ত্ত করতে পারে এবং তার علمى استعداد যথেষ্ট উৎকর্ষ লাভ করে। এ খণ্ডদুটিতে তরজমা-এর সঙ্গে ملاحظات حول الترجمة শিরোনামে রয়েছে প্রয়োজনীয় তরজমা পর্যালোচনা। এভাবে তৃতীয় বর্ষে তালিবে ইলম কোরআনের মোটামুটি অর্ধেক পরিমাণ আত্মস্থ করতে সক্ষম হয়। চতুর্থ বর্ষে এসে তালিবে ইলম মোকাম্মাল তরজমা আত্মস্থ করতে পারে। এই ধীর পর্যায়ক্রম অবলম্বনের একটি বড় ফায়দা এই যে, পুরো কোরআনের তরজমা হৃদয়ঙ্গম করতে তালিবে ইলমকে কঠিন কোন জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় না, বরং রূহানী স্বাদ ও শান্তির সঙ্গে সে আল্লাহর কালামের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে থাকে। এটা আমার নিছক তাত্ত্বিক বক্তব্য নয়, বেশ কয়েক বছরের বাস্তব-অভিজ্ঞতাও। আল্লাহ কবুল করুন, আমীন।’ [আততরীক ইলা তাফসীরিল কুরআনিল কারীম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬ (ভূমিকা)]
এ কিতাবের উপকারিতা তার পরিচিতি থেকেই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়। ভিন্ন করে কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। তদুপরি প্রথম খণ্ডের শুরুতে হযরত পাহাড়পুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং দ্বিতীয় খণ্ডের শুরুতে হযরত সুলতান যাওক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম তাঁদের দুআ-বাণীতে যা লিখেছেন তারপর আর কিছু লেখার দরকার পড়ে না।
কিতাব রচনায় মাশাআল্লাহ যথেষ্ট মেহনত হয়েছে। তবে মুসান্নিফ দামাত বারাকাতুহুম কাজটি যে কত নাযুক সে ব্যাপারে পুরো বাখবর ছিলেন। তিনি লিখেছেন-
‘কাজটি এখনো পরিপূর্ণ রূপ থেকে অনেক দূরে। তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘প্রস্তুতিমূলক প্রকাশনা’, যদিও কিতাবের ক্ষেত্রে এরূপ শিরোনামের প্রচলন নেই। ইনশাআল্লাহ পরিপূর্ণতার পথে আমাদের যাত্রা অব্যাহত থাকবে। যিনি কাজ শুরু করিয়েছেন তিনিই পূর্ণতা দান করবেন-
وَمَا ذٰلِكَ عَلَی اللهِ بِعَزِیْزٍ.
[আততরীক ইলাল কুরআনিল কারীম, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা - ণ (ভূমিকা)]
শেষে তিনি এও লিখেছেন-
‘আমার পেয়ারা ভাইদের খিদমতে শুধু এই নিবেদন, যা কিছু অপূর্ণতা, অসম্পূর্ণতা, ত্রুটি, বিচ্যুতি ও ভ্রান্তি নযরে আসবে, আল্লাহর কালামের খেদমত মনে করে এবং শুধু আল্লাহর কাছে আজর পাওয়ার আশা করে তারা যেন প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ অধমকে অবহিত করেন। ইনশাআল্লাহ পূর্ণ শোকরগুজারির সঙ্গে তা থেকে ‘ইস্তিফাদাহ’ করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবার সমস্ত নেক আমল, নাকায়েছ থেকে পাকছাফ করে কবুল করুন এবং উত্তম থেকে উত্তম বিনিময় দান করুন, আমীন।’ [আততরীক ইলাল কুরআনিল কারীম, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা - ণ (ভূমিকা)]
আল্লাহ মুসান্নিফের হায়াত ও সিহহতে খুব বরকত দান করুন। আর কিতাবটিকে কাক্সিক্ষত মনযিল পর্যন্ত পৌঁছানোর তাওফীক দান করুন।
আততরীক ইলা তাফসীরিল কুরআনিল কারীম
এই আযীমুশ শান কিতাবখানা তিন খণ্ডে রচিত। এটি মূলত তরজমা ও তাফসীরের মাঝে সুন্দর একটি সেতুবন্ধন তৈরির উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে। অথবা এভাবে বলা যায়, এটি আরবীতে কুরআনে কারীমের বিস্তারিত অনুবাদ; যেমনিভাবে তাফসীরে জালালাইন হল আরবীতে কুরআনে কারীমের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ। বলা যায়, তাফসীরে জালালাইনের মাকাসেদে হাসানাহ এ যমানার তালিবে ইলমদের যোগ্যতা ও রুচি অনুযায়ী ‘ফি সাওবিন জাদীদ’ পেশ করার অভিপ্রায়ে এ কিতাব রচিত হয়েছে। কিতাবের ভাষা সহজ, সাবলীল, প্রাঞ্জল ও হৃদয়গ্রাহী। একেবারে-
عذبا فراتا مصفى سائغا للشاربين.
ফাসাহাত বালাগাত তো আছেই, সাথে কোথাও কোথাও ইলমী উসলুবও গ্রহণ করা হয়েছে। যেন এ কিতাব তাফসীরের ইলমী কিতাবাদীর মুতালাআ ও দরসের ভুবনের সোপান হতে পারে।
আল্লাহ তাআলার শোকর আততরীক ইলাল কুরআনিল কারীমের মতো এ কিতাবও ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। কোথাও নেসাবে অন্তর্ভুক্ত আছে আবার কোথাও তাফসীরে জালালাইনের সঙ্গে মুআবিনে নেসাব হিসেবে মুতালাআয় থাকে।
মুসান্নিফ দামাত বারাকাতুহুম কিতাবের পরিচয় করাতে গিয়ে ভূমিকাতে লিখেছেন-
‘আলোচ্য কিতাবটির মূল ভিত্তি হল تفسير الجلالين এবং صفوة التفاسير কিতাবদুটি। অন্যান্য কিতাব থেকেও প্রয়োজনীয় সাহায্য গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে তাফসীরের কাদীম ও জাদীদ অন্যান্য কিতাব থেকেও পরিপূর্ণ সাহায্য গ্রহণ করা হবে ইনশাআল্লাহ, যাতে কিতাবটি পুরো তাফসীর-গ্রন্থাগারের প্রাথমিক প্রতিনিধিত্বের ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ যদি সহজ করে দেন তাহলে কঠিন থেকে কঠিন কাজও সহজ হতে পারে।
এ কিতাবে যে রূপরেখা অনুসরণ করা হয়েছে তা মোটামুটি এই-
(ক) প্রথমে আয়াতে কোরআনিয়া।
(খ) অতি প্রয়োজনীয় بيان اللغة ও بيان الإعراب ।
(গ) الفوائد শিরোনামে সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহের তাফসীর-বিষয়ক প্রয়োজনীয় আলোচনা, শানে নুযূল, বালাগাত, আহকাম, মুফাস্সিরীনে কেরামের মতামত ইত্যাদি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন কিরাতও উল্লেখ করা হয়েছে, তবে তা ব্যাপকভাবে নয়। টীকা আকারেও কিছু কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
(ঘ) توضيح المعنى শিরোনামে আয়াতের মর্মার্থ, তথা কোরআন তার অনুসারীর কাছে যে বার্তাটি পৌঁছাতে চায়, বন্ধনীর মাঝে ব্যাখ্যামূলক শব্দ বা বাক্য যোগ করে তা পেশ করা হয়েছে, যাতে আয়াতের মর্ম অনুধাবন করা সহজ হয় এবং আয়াতের আবেদন অন্তরকে স্পর্শ করে। এক্ষেত্রে কোরআনি আয়াতের নিজস্ব আবহটি অক্ষুণ্ন রাখার পূর্ণ চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে কোরআন ও তার শ্রোতার মাঝখানে তৃতীয় কোন বক্তা ও বক্তব্যের উপস্থিতি কোরআনি বক্তব্যের আবেদনকে ক্ষুণ্ন না করে। একটি উদাহরণ দেখুন; আল্লাহ আমাদের সম্বোধন করে বলছেন-
مَا یَفْعَلُ اللهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ وَ اٰمَنْتُمْ وَ كَانَ اللهُ شَاكِرًا عَلِیْمًا.
জালালাইন শরীফে তাফসীর করা হয়েছে এভাবে-
(مَا یَفْعَلُ اللهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ) نعمه (وَ اٰمَنْتُمْ) به، والاستفهام بمعنى النفي، أي لا يعذبكم.
তো এখানে نعمه আয়াতের বক্তব্যকে স্পষ্ট করছে। মনে হচ্ছে না যে, শব্দটি তৃতীয় কোন পক্ষের; বরং এটা যেন আয়াতেরই মর্মাংশ, কিন্তু الاستفهام بمعنى النفي এটি জরুরি আলোচনা হলেও পরিষ্কার বোঝা যায়, এটি আয়াতের বক্তব্যের অংশ নয়, বরং তৃতীয় ব্যক্তির মন্তব্য। এতে বান্দার প্রতি আল্লাহর সম্বোধনের যে আবেদনময়তা, তা ক্ষুণ্ন হয়ে যায়। পক্ষান্তরে এ মন্তব্যটি যদি আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হয়, তাহলে জরুরি বিষয়টিও জানা হয়, আবার আয়াতের মূল আবেদনটিও অক্ষুণ্ন থাকে। বিষয়টি আরো স্পষ্টরূপে অনুধাবনের জন্য জালালাইন ও الطريق إلى تفسير القرآن الكريم -এর সূরাতুল ফাতিহার তাফসীর অংশটি একত্রে পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে। যাই হোক, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খ-টিও একই ধারায় তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ। এবং পরবর্তী পর্যায়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার আলোকে কিতাবটির পূর্ণাঙ্গ কাঠামোটি গড়ে তোলার দৃঢ় ইচ্ছা রয়েছে, আল্লাহ যেন ভরপুর তাওফীক দান করেন, আমীন।’ [আততরীক ইলা তাফসীরিল কুরআনিল কারীম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৭ ও ৮ (ভূমিকা)]
এই কিতাবের বিষয়েও মুসান্নিফ দামাত বারাকাতুহুম যথারীতি তাঁর সতর্ক মনোবৃত্তির স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন-
‘الطريق إلى تفسير القرآن الكريم -এর প্রথম খণ্ডের এটি হচ্ছে প্রস্তুতিমূলক প্রকাশনা। কারণ গুণ, মান ও কাঠামো, তিনটি দিক থেকেই এটি এখন প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। ধীরে ধীরে এটিকে পূর্ণাঙ্গতার স্তরে উপনীত করার চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে আল্লাহর রহমতে বর্তমান অবস্থায়ও এটি আমাদের নিছাবী প্রয়োজন মোটামুটি সন্তোষজনকভাবেই পূর্ণ করতে পারবে বলে আশা করি।’ [আততরীক ইলা তাফসীরিল কুরআনিল কারীম, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৫ (ভূমিকা)]
আমি ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি মুসান্নিফের কাছ থেকে শুনেছি, এ কিতাব যে মানে উত্তীর্ণ করার কথা তিনি ভেবে রেখেছেন কিংবা কিতাবের যে পূর্ণাঙ্গ কাঠামো তার যেহেনে আছে তার জন্য আরো সত্তর ভাগ কাজ করতে হবে!!
আমি তো একজন ক্ষুদ্র তালিবে ইলম। এটা বড়দের বলার বিষয় যে, الطريق إلى القرآن الكريم কিতাবটির মাধ্যমে মুসান্নিফ আহলে মাদারিস ও মাদারিসের তালাবার প্রতি বড় ইহসান করেছেন। তাঁর الطريق إلى العربية ও الطريق إلى القرآن الكريم হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর তাজদীদী কিতাবসমূহের শীর্ষে।
نحسبه، والله حسيبه، ولا نزكي على الله أحدا.
মুসান্নিফ তার এ অমূল্য কীর্তিগুলোর জন্য ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে শোকর ও মোবারকবাদ পাওয়ার হক রাখেন। কোনো আলেম বা মুদাররিস যদি এ কিতাবগুলো মন দিয়ে নজর বুলিয়ে দেখেন, তাহলে কোনো সন্দেহ নেই তিনি অবশ্যই মুসান্নিফের শোকর আদায় করবেন। আমি তো শুধু ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি- আমি এ কিতাবগুলোর প্রতি অন্যরকম আকর্ষণ অনুভব করি। আলোচ্য কিতাবদ্বয়ের সৌন্দর্য ও উপকারিতা নিয়ে ভাবলে হৃদয় কৃতজ্ঞতার আবেগ-অনুভূতিতে উদ্বেলিত হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় কিতাবটির তাওযীহুল মা‘না শিরোনামের অধীনের আলোচনাগুলো খুবই চমৎকার ও গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লে ইনশাআল্লাহ তালিবে ইলমদের মাঝে কুরআনে কারীমের মহব্বত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। কুরআন তাদের কী বলতে চায় তা সহজে উপলব্ধি করতে পারবে। যদিও বান্দার ক্ষুদ্র খেয়াল হল, যদি ভিন্ন শিরোনাম দিয়ে আয়াতের বার্তা আলোচনা করা হতো তাহলে আমাদের অনেকের জন্য হয়তো আরো বেশি উপকারী হতো। হতে পারে, যেই সত্তর ভাগ কাজ এখনো বাকি আছে, তার মধ্যে তাহকীক ও ইতকানের প্রতি আরো গুরুত্বারোপের পাশাপাশি উপরোক্ত বিষয় এবং এ ধরনের আরো কিছু মুফীদ বিষয়ের কথা মুসান্নিফের যেহেনে থেকে থাকবে।
আল্লাহ তাআলা আফিয়াত, সালামাত, সিহহত ও কুওয়্যতের সাথে তাঁর হায়াতে বরকত দান করুন। তাঁর স্বপ্নগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করুন।
দারুল কলম আশরাফাবাদ ও সাবআ সানাবিল বাংলাবাজার ঢাকা আমাদের শুকরিয়া পাওয়ার হকদার। দারুল কলম এ মহান তুহফাগুলো প্রকাশনার দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছে। দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানটি সেগুলো বিতরণের কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে । আল্লাহ তাআলা এ প্রতিষ্ঠানদ্বয়ে আপন শান মোতাবেক বরকত দান করুন। এগুলোর দায়িত্বশীলদের আমাদের পক্ষ থেকে জাযায়ে খায়ের দান করুন- আমীন।
هذا، وصلى الله تعالى وبارك وسلم على سيدنا ومولانا محمد خاتم النبيين، وعلى آله وصحبه أجمعين، والحمد لله رب العالمين.
আরযগুযার
মুহাম্মাদ আবদুল মালেক উফিয়া আনহু
১০-০৩-১৪৪৪ হি.
জুমাবার