নারীর চেহারা পর্দার গুরুত্বপূর্ণ অংশ
একটি দালীলিক বিশ্লেষণ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আয়াত : ৩
আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে বলেন-
وَ لَا یَضْرِبْنَ بِاَرْجُلِهِنَّ لِیُعْلَمَ مَا یُخْفِیْنَ مِنْ زِیْنَتِهِنَّ.
মুসলিম নারীদের উচিত ভূমিতে এভাবে পদক্ষেপ না করা, যাতে তাদের গুপ্ত সাজ জানা হয়ে যায়। -সূরা নূর (২৪) : ৩১
এবার চিন্তা করি, যেখানে নূপুর দেখা যেতে পারে বা তার আওয়াজ শোনা যেতে পারে বলে জোরে পা ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে কীভাবে চিন্তা করা যায় যে, আল্লাহ তাআলা নারীদের চেহারা; যা সকল সৌন্দর্যের কেন্দ্র, তা খোলা রাখার বৈধতা দেবেন!
আয়াত : ৪
আল্লাহ তাআলা নবী-পত্নিগণকে বলেন-
یٰنِسَآءَ النَّبِیِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ اِنِ اتَّقَیْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَیَطْمَعَ الَّذِیْ فِیْ قَلْبِهٖ مَرَضٌ وَّ قُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا.
হে নবী-পত্নীগণ, তোমরা সাধারণ নারীদের মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো। সুতরাং তোমরা কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, পাছে অন্তরে ব্যাধি আছে এমন ব্যক্তি লালায়িত হয়ে পড়ে। -সূরা আহযাব (৩৩) : ৩২
তো আল্লাহ তাআলা যেখানে নারীদেরকে পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলার সময় কণ্ঠের কোমলতা বর্জন করতে বলেছেন, সেখানে তাদের সামনে চেহারা খোলা রাখার বৈধতা কীভাবে দেবেন?
আপাতত এ কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হল। এবার আসি হাদীসের প্রসঙ্গে।
পর্দার হাদীস
হাদীসের ভাণ্ডারে প্রচুর হাদীস রয়েছে, যা পাঠ করলে সহজে বোঝা যায় যে, নববী ও সাহাবা যুগে মুমিন নারীগণ কীভাবে এবং কত কঠোরভাবে পরপুরুষ থেকে চেহারা ঢাকতেন। এখানে ষাটেরও অধিক হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে পাঠকের সামনে ঐ যুগে নারীদের চেহারা ঢাকার চিত্র ও বিধানটি সহজে ফুটে ওঠে। আশা করি, পাঠক ধৈর্য সহকারে প্রসঙ্গটি পাঠ করবেন।
আপনি যখন পর্দার বিধানের হাকীকত নিয়ে চিন্তা করবেন তখন এমনিতেই আপনার বুঝে এসে যাবে, মহিলাদের চেহারা পর্দার বিধানের অপরিহার্য অংশ।
পর্দার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়-
১. নারীগণ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবেন না।
২. নারীগণ ঘরের মধ্যেও কোনো গায়রে মাহরামের সামনে যাবেন না এবং কোনো গায়রে মাহরামকে তার সামনে আসার অনুমতি দেবেন না। অর্থাৎ গায়রে মাহরাম থেকে সম্পূর্ণ আড়ালে থাকবেন।
৩. শরীয়ত-স্বীকৃত প্রয়োজনে নারীগণ যখন ঘর থেকে বের হবেন তখন চেহারা ঢেকে বের হবেন। তখন সুগন্ধি ব্যবহার করবেন না এবং সাজসজ্জা গ্রহণ করবেন না। বোরকাও হবে সাদামাটা, কোনো ধরনের আকর্ষণ ও সাজমুক্ত।...
তো আপনি যখন হাদীস, সীরাত ও তারীখ থেকে জানতে পারবেন যে, উম্মাহাতুল মুমিনীন এবং ইসলামের সোনালী যুগের পুরুষ ও নারীগণ এত গুরুত্বের সঙ্গে পর্দার বিধান পালন করতেন, তখন এটাও অনুধাবন করতে পারবেন যে, তাদের কাছে সাধারণভাবেই গায়রে মাহরাম পুরুষ থেকে চেহারা ঢেকে রাখার কত বেশি গুরুত্ব ছিল।
নারীর শরীরের যতটুকু অংশ সতর ততটুকু তো কোনো মাহরামের সামনেও খোলা জায়েয নয়। পর্দার বিধান তো মূলত শরীরের ঐ অংশের জন্য, যা সাধারণ অবস্থায় সতরের মধ্যে দাখিল নয় এবং মাহরামের সামনে তা ঢেকে রাখার প্রয়োজন নেই; তা হল চেহারা ও দুই হাতের কব্জি। এখন যদি চেহারাই পর্দার বিধানের অন্তর্ভুক্ত না হয় তাহলে পর্দা আর কীসের নাম? এই গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত ভূমিকার পর এখন পর্দা বিষয়ক নিম্নোক্ত হাদীস ও আসারগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে পড়–ন-
হাদীস : ১
খায়বার যুদ্ধে যখন দাস-দাসী বণ্টন হয়, তখন সাহাবী দিহইয়া রা.-এর ভাগে এক সুশ্রী নারী আসে। সে ছিল খায়বার গোত্রপতির মেয়ে। নাম হল সাফিয়্যাহ। যেহেতু গোত্রপতির মেয়ে বিজিতদের প্রধানের ঘরে গেলেই তার সম্মান। তাই সাহাবায়ে কেরাম নবীজীকে পরামর্শ দেন, তিনি যেন সে নারীকে দিহইয়া থেকে কিনে নেন। তাই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দিহইয়া থেকে কিনে নিলেন। তখন সাহাবায়ে কেরাম পরস্পর বলতে লাগলেন যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বাঁদি হিসেবে গ্রহণ করবেন, নাকি স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবেন? এরপর নিজেরাই বলতে লাগলেন-
إن حجبها فهي إحدى أمهات المؤمنين، وإن لم يحجبها فهي مما ملكت يمينه.
যদি তিনি তাকে পর্দার আড়াল করেন, তাহলে তিনি উম্মুল মুমিনীনদের একজন আর পর্দার আড়াল না করলে দাসী।
কারণ, দাসীদের চেহারার পর্দা আবশ্যক নয়। এরপর যখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় রওয়ানা করেন, তখন তাকে তার বাহনের পিছনে উঠান এবং পর্দা টেনে নেন।
মদীনার কাছাকাছি হলে, তাদের বাহন পা পিছলে পড়ে যায়, তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হযরত সাফিয়্যা রা. উভয়েই পড়ে যান। বর্ণনাকারী সাহাবী আনাস রা. বলেন-
فليس أحد من الناس ينظر إليه ولا إليها.
তখন আমাদের কেউ না নবীজীর দিকে তাকিয়েছে, না সাফিয়্যার দিকে।
পড়ে যাওয়ার পর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত উঠে যান এবং সাফিয়্যাকে ঢেকে দেন। এরপর আমরা নবীজীর কাছে এগিয়ে আসি। তখন তিনি বললেন, না, আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৭১, ৪২১৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৪৯৭, ৩৫০০
এ হাদীসে বর্ণিত ঘটনায় আমরা দেখতে পাই, বাহনে ওঠানোর পর তো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত সাফিয়্যাকে ঢেকে দেন। যখন পড়ে যান তখনও তিনি দ্রুত উঠে গিয়ে সাফিয়্যাকে ঢেকে দেন। এবার চিন্তা করি, পরপুরুষের সামনে নারীদের চেহারা ঢাকার গুরুত্ব ও বিধান কেমন ছিল? দুর্ঘটনার সময়ও নবীজী সর্বপ্রথম স্ত্রীকে পর্দায় আবৃত করে নিলেন। আর সাহাবীরাও উম্মুল মুমিনীনের দিকে তাকাননি।
হাদীস : ২
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকাল হয়ে গেলে আবু বকর রা. আয়েশা রা.-এর ঘরে প্রবেশ করেন। আয়েশা রা.-এর ঘরেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন। এসময় আশেপাশে তাঁর স্ত্রীগণ ছিলেন। আবু বকর রা. প্রবেশ করতে চাইলে আয়েশা রা. ছাড়া সকলে মুখ ঢেকে ফেলেন। বর্ণনাটির আরবী পাঠ-
...فدخل، ورسول الله صلى الله عليه وسلم قد توفي على الفراش والنسوة حوله، فخمرن وجوههن، واستترن من أبي بكر إلا ما كان من عائشة .
-দালায়েলুন নুবুওয়াহ, বায়হাকী ৭/১১৭
হাদীস : ৩
ইফকের ঘটনা কুরআন-হাদীসে প্রসিদ্ধ। বুখারী-মুসলিমসহ হাদীসের বহু কিতাবে তা বর্ণিত হয়েছে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক যুদ্ধে যান। সাথে আয়েশা রা. ছিলেন। যুদ্ধ শেষে মদীনায় ফেরার পথে এক স্থানে যাত্রাবিরতি হয়। আয়েশা রা. বলেন, বিরতির পর নবীজী পুনরায় যাত্রা করার আদেশ দিলেন। এসময় আমি প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে কাফেলা থেকে একটু দূরে যাই। প্রয়োজন সেরে যখন আমি হাওদার কাছে আসি, গলায় হাত দিয়ে দেখি, আমার হার নেই। তা খোঁজার জন্য পুনরায় প্রয়োজন পূরণের স্থানে যাই এবং তা খুঁজতে থাকি। এসময় হাওদা বহনকারীরা আমি ভেতরে আছি ভেবে হাওদা উঠিয়ে নেয়। সেসময় নারীরা হালকা-পাতলা ছিল। তাই হাওদা হালকা হওয়াতেও আমি ভেতরে নেই বলে তাদের কোনো সন্দেহ হয়নি।
এরই মধ্যে হার খুঁজে পাই এবং যাত্রাবিরতির স্থানে ফিরে আসি। এসে দেখি, কেউ নেই। তখন আমি চিন্তা করলাম, আমাকে না পেয়ে নিশ্চয় তারা খুঁজতে আসবে। তাই সেখানে ঘুমিয়ে পড়ি।
এদিকে সাফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল রা.-কে নিযুক্ত করা হয়েছিল সৈন্যদলের পেছনে চলার জন্য, যাতে কিছু পড়ে থাকলে তিনি নিয়ে আসতে পারেন। তিনি সকালে আমাদের যাত্রাবিরতির স্থানে পৌঁছেন। এখানে তিনি একজন ঘুমন্ত মানুষের অবয়ব দেখতে পান।
আয়েশা রা. বলেন-
فأتاني فعرفني حين رآني، وقد كان يراني قبل أن يضرب علي الحجاب.
তিনি এগিয়ে আসেন এবং আমাকে দেখেই চিনতে পারেন। কেননা, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে তিনি আমাকে দেখেছেন। আমাকে দেখেই ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়েন। আমি তার ‘ইন্না লিল্লাহ’ শুনে জেগে যাই।
আয়েশা রা. বলেন-
فخمرت وجهي بجلبابي.
অর্থাৎ তাকে দেখামাত্রই আমি জিলবাব দ্বারা আমার চেহারা ঢেকে ফেলি। (দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস ৪১৪১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৭০)
চিন্তা করুন, এত বড় দুর্ঘটনা ও ভীতিকর অবস্থা। এ সময়ও আয়েশা রা. জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে চেহারা ঢেকে নেন।
আরো ভাবনার বিষয় হল, আয়েশা রা. বলেন, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে সে আমাকে দেখেছে, সে হিসেবে আমাকে চিনেছে।
তাহলে স্পষ্ট হয়ে গেল, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর নারীরা পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা রাখত না।
হাদীস : ৪
আব্বাস রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে প্রবেশ করি। এ সময় তাঁর কাছে স্ত্রীগণ ছিলেন। আমি যাওয়ার সাথে সাথে তারা সকলেই আমার থেকে পর্দা করলেন, মায়মূনা রা. ছাড়া। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭৮৪
মায়মূনা রা.-এর সাথে আব্বাস রা.-এর দুধসম্পর্কীয় কোনো বন্ধন ছিল। তাই তিনি পর্দা করেননি। আরেক বর্ণনায় এভাবে আছে, আমার থেকে মায়মূনা ছাড়া সবাই পর্দা করেন। আর মায়মূনার জন্য সেটির অবকাশ ছিল।
আরবী পাঠ-
فَاسْتَتَرْنَ مِنِّي إِلّا مَيْمُونَةَ، قَدْ وسعها ذلك.
-আলমা‘রিফাতু ওয়াত তারীখ, ফাসাবী ১/৫০৯
হাদীস : ৫
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর কুরাইশের ‘আফলাহ’ নামক এক ব্যক্তি আমার ঘরে প্রবেশ করে। আমি সাথে সাথে পর্দার আড়ালে চলে যাই। সে বলল, তুমি আমার থেকে আড়ালে থাকছ, পর্দা করছ! আমি তো তোমার চাচা।
আমি বললাম, কীভাবে?
সে বলল, আমার ভাইয়ের স্ত্রী তোমাকে দুধ পান করিয়েছে।
আমি বললাম, তোমার ভাই আবুল কুআইস তো আমাকে দুধ পান করাননি, দুধ পান করিয়েছে তার স্ত্রী।
এরপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলে আমি তাকে বিষয়টি অবহিত করি। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘না, তুমি তাকে প্রবেশের অনুমতি দাও, কেননা সে তোমার চাচা (দুধচাচা)।
আরবী পাঠ-
عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: دَخَلَ عَلَيَّ أَفْلَحُ بْنُ أَبِي الْقُعَيْسِ فَاسْتَتَرْتُ مِنْهُ، قَالَ: تَسْتَتِرِينَ مِنِّي وَأَنَا عَمُّكِ، قَالَتْ: قُلْتُ: مِنْ أَيْنَ؟ قَالَ: أَرْضَعَتْكِ امْرَأَةُ أَخِي، قَالَتْ: إِنَّمَا أَرْضَعَتْنِي الْمَرْأَةُ وَلَمْ يُرْضِعْنِي الرَّجُلُ، فَدَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَدَّثْتُهُ، فَقَالَ: إِنَّهُ عَمُّكِ فَلْيَلِجْ عَلَيْكِ.
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২০৫৭
হাফেজ ইবনে হাজার রাহ. বলেন-
وفيه وجوب احتجاب المرأة من الرجال الأجانب.
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, নারীরা পরপুরুষ থেকে পর্দা করবে। -ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১৫/৩০১
আল্লামা আইনী রাহ. বলেন-
فِيهِ: ثُبُوت الْمَحْرَمِيّة بَينهَا وَبَين عَمها من الرضَاعَة. وَفِيه: أَنه لَا يجوز للْمَرْأَة أَن تَأذن للرجل الّذِي لَيْسَ بِمحرم لَهَا فِي الدُّخُول عَلَيْهَا، وَيجب عَلَيْهَا الاحتجاب مِنْهُ، وَهُوَ كَذَلِك إِجْمَاعًا بعد أَن نزلت آيَة الْحجاب، وَمَا ورد من بروز النِّسَاء فَإِنّمَا كَانَ قبل نزُول الْحجاب، وَكَانَت قصّة أَفْلح مَعَ عَائِشَة بعد نزُول الْحجاب، كَمَا ثَبت فِي الصّحِيحَيْنِ،. من طَرِيق مَالك أَن ذَلِك كَانَ بعد أَن نزل الْحجاب.
-উমদাতুল কারী ১৩/২০৪
এ হাদীস এটাও প্রমাণ করে যে, কোনো নারী পরপুরুষকে তার সামনে আসার অনুমতি দেবে না এবং নারীদের জন্য পরপুরুষ থেকে পর্দা করা ওয়াজিব। সকল উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত।
হাদীস : ৬
যায়নাব আলআসাদিয়্যাহ রা. বলেন, আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, আমার পিতা মারা যান এবং একটি দাসী রেখে যান। কিছুদিন পর সে দাসী একটি সন্তান জন্ম দেয়। এক্ষেত্রে আমরা তাকে সন্দেহ করি। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে নিয়ে আসো। তাকে আনা হল। তিনি দেখে বললেন, এ সন্তান তোমার পিতা থেকে মিরাস পাবে। তবে তুমি তার থেকে পর্দা কর।
অর্থাৎ, এ বাঁদি যে ব্যভিচার করেছে তার কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই; আর সে-ও স্বীকার করছে না। তাই ধরে নিতে হবে, এ সন্তান তার মুনিবেরই। সুতরাং পুত্র হিসেবে সে মীরাস পাবে। তবে তার চেহারা ও অবয়ব দেখে মনে হচ্ছে, এটি মুনিব ছাড়া অন্যের সন্তান, তাই মুনিবের মেয়ে যায়নাবকে বলেছেন, তার থেকে পর্দা করতে। -আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২৪/২৮৮
হাদীস : ৭
সাহাবী আবু মূসা আশআরী রা. বলেন, একদা আমরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। তিনি তখন জির্ইরানায় অবতরণ করলেন। এসময় এক বেদুঈন এসে তাকে বলল, আপনি যা দেয়ার ওয়াদা করেছিলেন তা দেন না কেন?
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, ‘আবশির’ সুসংবাদ গ্রহণ কর।
সে বলল, আপনি একথা অনেকবার বলেছেন।
তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে আবু মূসা ও বিলালের অভিমুখী হয়ে বললেন, তার সুসংবাদ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে, তোমরা গ্রহণ করো।
তখন তারা উভয়ে বললেন, আমরা গ্রহণ করলাম।
তখন তিনি এক পেয়ালা পানি আনতে বললেন। তা দ্বারা হাত ও মুখমণ্ডল ধৌত করলেন এবং পাত্রে কুলি করলেন। অতঃপর বললেন, তোমরা উভয়ে পান কর এবং মুখমণ্ডল ও গণ্ডদেশে ঢেলে দাও। এরপর সুসংবাদ গ্রহণ কর। তারা উভয়ে পেয়ালা নিয়ে এমনটি করলেন। তখন উম্মে সালামা রা. পর্দার ওপাশ থেকে তাদের উদ্দেশে বললেন-
أفضلا لأمكما.
তোমাদের মায়ের জন্যও কিছু রেখো। -সহীস বুখারী, হাদীস ৪৩২৮
হাদীস : ৮
উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুশয্যায় একদিন উপস্থিত সাহাবীদের বললেন, কাগজ আর দোয়াত নিয়ে আসো; আমি তোমাদের জন্য এমন কিছু লিখে দিব, যা থাকলে তোমরা আর গোমরাহ হবে না। তখন আমরা বলি, কুরআনে তো সব আছেই। সুতরাং তাকে এখন কষ্ট দেয়ার কোনো মানে হয় না। তিনি পুনরায় কাগজ কলম চান।
فقال النسوة من وراء الستر ألا تسمعون ما يقول رسول الله صلى الله عليه وسلم؟
তখন মহিলাগণ পর্দার ওপাশ থেকে বলে উঠলেন, আরে, তোমরা কি শুনছ না- নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলছেন...! -আলমুজামুল আওসাত, তবারানী হাদীস ৫৩৩৪
হাদীস : ৯
আয়েশা রা. বলেন, মুমিন নারীগণ নবীজীর সাথে ফজরের নামাযে উপস্থিত হতেন। অতঃপর তারা নামায শেষে চাদরে আবৃত হয়ে এমন সময় বাড়ি ফিরতেন যে, অন্ধকারে তাদের চেনা যেত না।
আরবী পাঠ-
كن نساء المؤمنات يشهدن مع رسول الله صلى الله عليه وسلم صلاة الفجر متلفعات بمروطهن ثم ينقلبن إلى بيوتهن حين يقضين الصلاة لا يعرفهن أحد من الغلس.
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৮
‘চাদর আবৃত হয়ে’ কথাটিকে হাদীসে التلفع দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে। যার অর্থ পুরো শরীর ঢেকে নেয়া। অনেকে তো এর অর্থ করার সময় চেহারা ঢাকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
আরবী ভাষাবিদ ইমাম আযহারী বলেন-
اللِّفاع : ثوب يُجَلَّل به الجسَد كلُّه.
তালাফ্ফু‘ লিফা‘ থেকে নির্গত। আর লিফা‘ হচ্ছে এমন কাপড়, যা দ্বারা পুরো শরীর আবৃত করা হয়। -লিসানুল আরব ৫/৪০৫৪
ইবনুল আসীর রাহ. বলেন-
اللِّفاع : ثوب يُجَلّل به الجسَد كلّه كِساءً كان أو غيره.
লিফা‘ এমন কাপড়, যার দ্বারা পুরো শরীর আবৃত করা হয়। -আননিহায়া, পৃ. ১০৯৯
প্রসিদ্ধ হাদীস ব্যাখ্যাতা ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রাহ. বলেন-
وهو ما يغطي الوجه.
তালাফ্ফু‘ হচ্ছে যা চেহারাকে ঢেকে নেয়।
ইবনে বাত্তাল রাহ.-ও এমনই বলেন। -উমদাতুল কারী ৪/৮৯; আলকাওয়াকিবুদ দারারী, খ. ০৪, পৃ. ২১৮
আবু মানসুর আলহারাবী বলেন-
فالمتلفعات: النساء اللاتي قد اشتملن بجلابيبهن، حتى لا يظهر منهن شيء غير عيونهن.
‘মুতালাফ্ফিআত’ (লিফা‘ দ্বারা আবৃত নারী) ঐ নারীদের বলে, যারা চাদর দিয়ে নিজেদেরকে এমনভাবে ঢেকে নেয় যে, তাদের চোখ ছাড়া অন্য কিছুই দেখা যায় না। -আযযাহির ১/৫২
কাযী ইয়ায রাহ., নববী রাহ. ও হাফেয ইবনে হাজার রাহ.-এর ব্যাখ্যা থেকেও স্পষ্ট হয় যে, তালাফ্ফু‘ অর্থ চেহারাসহ আবৃত হওয়া।
দেখুন, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৫৬; আলমিনহাজ, নববী ২/৪৬০
আরো দেখুন, আওনুল মা‘বুদ, আযীমাবাদী ২/৬৫; ফাতহুল বারী, ইবনে রজব ২/১৫৬, ২/১০৭
হাদীস : ১০
সাহাবী বাক্র ইবনে শাদ্দাখ থেকে বর্ণিত, তিনি নাবালেগ অবস্থায় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমত করতেন। যখন বালেগ হন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যখন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলাম তখন আপনার ঘরে প্রবেশ করতাম, এখন আমি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গিয়েছি।
আরবী পাঠ-
أخرج ابن منده، وأبو نعيم عن عبد الملك بن يعلى الليثي، أن بكر بن شداخ الليثي رضي الله عنه - وكان ممن يخدم النبي صلى الله عليه وسلم وهو غلام - فلما احتلم، جاء إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول الله! إني كنت أدخل على أهلك، وقد بلغت مبلغ الرجال.
-মারিফাতুস সাহাবা, ইবনে মান্দাহ, হায়াতুস সাহাবা ২/১৫৫
হাদীস : ১১
عن أبي سلمة بن عبد الرحمن قال: قلت لعائشة: إنما فاقنا عروة بدخوله عليكِ كلما أراد. قالت: وأنت إذا أردت فاجلس من وراء الحجاب، فسلني عما أحببت.
তাবেয়ী আবু সালামা বলেন, আমি আয়েশা রা.-কে বললাম, আপনার ভাগিনা উরওয়া আপনার থেকে ইলম অর্জনে আমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে যাচ্ছে। কারণ সে যখনই চায় আপনার কাছে যেতে পারে এবং জিজ্ঞাসা করতে পারে।
জবাবে আয়েশা রা. বলেন, তুমিও যদি জিজ্ঞাসা করতে চাও, তাহলে পর্দার ওপারে বসবে, এরপর যা চাও জিজ্ঞাসা করবে। -তবাকাতে ইবনে সা‘দ ১০/২০০
হাদীস : ১২
সাহাবী আবু হুমাইদ থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إذا خطب أحدكم امرأة، فلا جناح عليه أن ينظر إليها، إذا كان إنما ينظر إليها لخطبته، وإن كانت لا تعلم.
কেউ যদি কোনো নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তাহলে তাকে দেখতে কোনো গোনাহ নেই। কেননা সে তো বিবাহের প্রস্তাবের কারণেই দেখবে; যদিও সে নারী তা না জানে। -মুসনাদে আহমাদ ৫/৪২৪
লক্ষ্য করি, হাদীসে বলা হয়েছে, বিবাহের প্রস্তাব দিলে দেখতে কোনো গোনাহ নেই, তাহলে বোঝা যায়, অন্য সময় দেখলে গোনাহ হয়। এরপর বলা হয়েছে, সে তো বিবাহের কারণেই দেখবে। তাহলে আরো দৃঢ় হয় যে, বিবাহ বা এজাতীয় শরীয়ত স্বীকৃত কারণ ছাড়া পরনারীকে দেখা জায়েয নেই।
হাদীসের শেষে বলা হয়েছে, যদিও সে নারী তা না জানে। এ থেকে বোঝা যায়, সে যুগে নারীরা পুরুষ থেকে আড়ালেই থাকত। কেননা তারা পুরুষদের সম্মুখে খোলামেলা চলাফেরা করলে পুরুষরা তো তাদেরকে এমনিতেই দেখে ফেলতে পারবে। তাহলে এভাবে বলার কী দরকার যে, যদিও সে নারী না জানে।
হাদীস : ১৩
উম্মে ছালজা বলেন, আমি আয়েশা রা.-এর ঘরে প্রবেশ করলাম। এ সময় এক লোক পর্দার ওপাশ থেকে ডাক দেয় এবং নাবীয সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে।
আরবী পাঠ-
عن أم ثلجة قالت: دخلت على عائشة فناداها رجل من وراء الحجاب، فسألها عن النبيذ، فقالت: نهى رسول الله صلى الله عليه و سلم عن الدباء والمزفت.
-আল মুজামুল আওসাত, তবারানী ৫/৩৭৩
হাদীস : ১৪
শাহর রাহ. বলেন, আমি উম্মে সালামা রা.-এর কাছে গেলাম পর্দার আড়াল থেকে তাঁকে বলতে শুনলাম- নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ বেশি বেশি পড়তেন-
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ، ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِيْنِكَ.
হাদীসটির আরবী পাঠ এই-
قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ بِالْمَدِينَةِ، وَبَيْنِي وَبَيْنَهَا حِجَابٌ، فَسَمِعْتُهَا تَقُولُ: كَانَ أَكْثَرُ دُعَاءِ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ، ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ.
-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী ৩/১৯৫
হাদীস : ১৫
আবু সাঈদ রাকাশী বলেন, আমি আয়েশা রা.-কে পর্দার আড়াল থেকে বলতে শুনেছি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো, খেজুরের এক ফালি দিয়ে হলেও।
আরবী পাঠ-
عن أبي سعيد الرقاشي، قال : سمعت عائشة من وراء الحجاب تقول: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: اتقوا النار ولو بشق تمرة.
-তবাকাতুল মুহাদ্দিসীন, আবুশ শায়খ আসবাহানী ৩/৪০২
হাদীস : ১৬
আবদুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ বলেন, আমার পিতা আমাকে আয়েশা রা.-এর কাছে মাসআলা জিজ্ঞাসা করার জন্য পাঠাতেন। (তিনি ছোট হওয়াতে সরাসরি আয়েশা রা.-এর সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেন)। যে বছর আমি প্রাপ্তবয়স্ক হই ঐ বছর আমি পর্দার আড়াল থেকে তাকে জিজ্ঞেস করি, উম্মুল মুমিনীন! বাবা জানতে চেয়েছেন কীভাবে গোসল ফরয হয়?
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْأَسْوَدِ، قَالَ: بَعَثَنِي أَبِي إِلَى عَائِشَةَ أَسْأَلُهَا سَنَةَ احْتَلَمْتُ، فَأَتَيْتُهَا فَنَادَيْتُهَا مِنْ وَرَاءِ الْحِجَابِ فَقَالَتْ: أَفَعَلْتَهَا أَيْ لُكَعُ. قُلْتُ: قَالَ أَبِي: مَا يُوجِبُ الْغُسْلَ؟...
-তবাকাতে ইবনে সা‘দ ৮/৪০৬
হাদীস : ১৭
মাসরুক বলেন, আয়েশা রা.-কে আমি হজে¦র একটি মাসআলা জিজ্ঞাসা করি। তখন পর্দার ওপাশ থেকে তার হাতের তালুর আওয়াজ শুনি। তিনি আমাকে প্রশ্নের জবাব দেন।
عَنْ مَسْرُوقٍ: أَنّهُ أَتَى عَائِشَةَ، فَقَالَ لَهَا: يَا أُمّ المُؤْمِنِينَ، إِنّ رَجُلًا يَبْعَثُ بِالهَدْيِ إِلَى الكَعْبَةِ وَيَجْلِسُ فِي المِصْرِ، فَيُوصِي أَنْ تُقَلّدَ بَدَنَتُهُ، فَلاَ يَزَالُ مِنْ ذَلِكِ اليَوْمِ مُحْرِمًا حَتّى يَحِلّ النّاسُ، قَالَ: فَسَمِعْتُ تَصْفِيقَهَا مِنْ وَرَاءِ الحِجَابِ، فَقَالَتْ: لَقَدْ كُنْتُ أَفْتِلُ قَلاَئِدَ هَدْيِ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَيَبْعَثُ هَدْيَهُ إِلَى الكَعْبَةِ، فَمَا يَحْرُمُ عَلَيْهِ مِمّا حَلّ لِلرِّجَالِ مِنْ أَهْلِهِ، حَتّى يَرْجِعَ النّاسُ.
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৬৬
হাদীস : ১৮
মারওয়ান হিজাযের গভর্নর ছিল। মুআবিয়া রা. তাকে হিজাযের গভর্নর বানান। সে একদিন খুতবায় ইয়াযীদের কথা তুলল, যাতে মুআবিয়া রা.-এর পর মানুষ তার হাতে বায়আত গ্রহণ করে। তখন আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর এ বিষয়ে কিছু একটা বলে ওঠেন। তখন মারওয়ান বলে, একে ধরো। আবদুর রহমান আয়েশা রা.-এর ঘরে ঢুকে যান, তাই তাকে আর ধরতে পারল না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৮২৭
হাদীস : ১৯
আবু নওফেল বলেন, তিনি যখন বনী হারেছার গোলাম ছিলেন, তখন নবী পত্নীগণকে দেখেছেন এবং যখন তিনি আযাদ হন তখন তাঁরা সকলে তার থেকে পর্দা করেন।
أَخبرني نافع أَبو نَوفل، أَنه رأَى أزواج النّبيِّ صَلى اللهُ عَلَيه وسَلم، وهو مملوك لِبَنِي حارثة، فلما عُتِقَ جاء ليدخل، فاحتَجَبنَ منه.
-আততারীখুল কাবীর, বুখারী ৮/৩২
হাদীস : ২০
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তার একজন ‘মুকাতাব’ ছিল। অর্থাৎ যে গোলামের সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে আযাদ হওয়ার চুক্তি হয়। যে কয়দিন পূর্ণ অর্থ আদায় করতে পারেনি, সে আয়েশার ঘরে প্রবেশ করত, অর্থাৎ তার সাথে দেখা দিত। যখন চুক্তিকৃত অর্থ আদায় হয়ে যায় তখন থেকে আয়েশা রা. তার সাথে পর্দা করেন।
عن أبي حنيفة، عن الهيثم، عن رجل، عن عائشة رضي الله عنها، أنه كان لها مكاتب، عليه شيء من مكاتبته يدخل عليها، فبلغه قول زيد فقال: يريد أن يسترقني، فأدى إليها فاحتجبت عنه.
-কিতাবুল আছার, আবু ইউসুফের বর্ণনা, হাদীস ৮৬৫
হাদীস : ২১
উম্মে সালামা রা.-এর গোলাম নাবহান থেকে বর্ণিত, উম্মে সালামা রা. তার সাথে কিতাবাতের চুক্তি করেন, (অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায়ে আযাদ হওয়ার চুক্তি করেন)। নাবহান তা আদায় করতে করতে আর দুই হাজার দিরহাম বাকি থাকে। নাবহান বলেন, আমি তা আদায় করি না, যাতে আমি হযরত উম্মে সালামাকে দেখতে পারি, তার কাছে যেতে পারি। একবার আমি হজে¦ যাই, তখন উম্মে সালামাকে বাইদা নামক স্থানে দেখি। তিনি বলেন, কে তুমি?
আমি বললাম, আমি আবু ইয়াহইয়া।
তিনি তখন বললেন, হে বৎস, আমার ভাতিজা মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহকে ডাকো এবং তোমার কাছে যে টাকা পাব তা তাকে দাও।
আমি কাঁদতে থাকি এবং চিৎকার করে কাঁদতে থাকি। আর বলি, আল্লাহর শপথ, আমি কখনোই তা আদায় করব না। (কেননা, আদায় করলে স্বাধীন হয়ে যাবে। তখন উম্মে সালামার সাথে আর দেখা দিতে পারবে না)
তখন তিনি বললেন, হে বৎস! আমি নবীজীকে বলতে শুনেছি, যখন তোমাদের কারো মুকাতাব-এর কাছে এ পরিমাণ অর্থ থাকে, যা দ্বারা তার চুক্তিকৃত অর্থ আদায় হয়ে যায়, তাহলে আদায় না করলেও (শুধু তার নিকট থাকার কারণে) সে স্বাধীন, তার থেকে পর্দা করবে। সুতরাং আল্লাহর শপথ, তুমি আর আমাকে দেখতে পারবে না; হাঁ, যদি আখেরাতে দেখো।
হাদীসটির আরবী পাঠ এই-
حَدّثَنِي نَبْهَانُ مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ أَنّ أُمّ سَلَمَةَ كَاتَبَتْهُ، فَبَقِيَ مِنْ كِتَابَتِهِ أَلْفَا دِرْهَمٍ. قَالَ نَبْهَانُ: كُنْتُ أمْسِكُهَا لِكَيْ لَا تَحْتَجِبَ عَنِّي أُمّ سَلَمَةَ، قَالَ: فَحَجَجْتُ، فَرَأَيْتُهَا بِالْبَيْدَاءِ، فَقَالَتْ لِي: مَنْ ذَا؟ فَقُلْتُ: أَنَا أَبُو يَحْيَى: فَقَالَتْ لِي: أَيْ بُنَيّ، تَدْعُو إِلَيّ ابْنَ أَخِي مُحَمّدَ بْنَ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي أُمَيّةَ، وَتُعْطِي فِي نِكَاحِهِ الّذِي لِي عَلَيْكَ، وَأَنَا أَقْرَأُ عَلَيْكَ السّلَامَ. قَالَ: فَبَكَيْتُ وَصِحْتُ، وَقُلْتُ: وَاللهِ لَا أَدْفَعُهَا إِلَيْهِ أَبَدًا، فَقَالَتْ: أَيْ بُنَيّ، إِنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ: إِذَا كَانَ عِنْدَ مُكَاتَبِ إِحْدَاكُنّ مَا يَقْضِي عَنْهُ، فَاحْتَجِبِي، فَوَاللهِ لَا تراني إلا أن تراني في الآخرة.
-সহীহ ইবনে হিব্বান ১০/১৬৩
হাদীস : ২২
তাবেয়ী আতা রাহ. বলেন, আমি ও উবায়েদ ইবনে উমায়ের আয়েশা রা.-এর কাছে (ইলম অর্জনের জন্য) যাতায়াত করতাম, তিনি তখন হজে¦র সফরে ছুআয়র কূপের পাশে অবস্থান করছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তার হিজাব বা পর্দা কী ছিল? জবাবে তিনি বলেন, তিনি একটি তুর্কি তাবুতে ছিলেন, ভেতরে মোটা পর্দা ছিল, আমাদের মাঝে ও তার মাঝে এটাই পর্দা ছিল। হাদীসটির আরবী পাঠ এই-
كُنْتُ آتِي عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَا وَعُبَيْدٌ وَهِيَ مُجَاوِرَةٌ فِي جَوْفِ ثَبِيرٍ فَقُلْتُ: وَمَا حِجَابُهَا؟ قَالَ: هِيَ فِي قُبّةٍ تُرْكِيّةٍ لَهَا غِشَاءٌ وَمَا بَيْنَنَا وَبَيْنَهَا غَيْرُ ذَلِكَ، وَرَأَيْتُ عَلَيْهَا دِرْعًا مُوَرّدًا. أَخْرَجَهُ الْبُخَارِيّ فِي الصّحِيحِ هَكَذَا.
-সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৫/৭৮
হাদীস : ২৩
আবু আবদুল্লাহ আলজুশামী বলেন, আমি একবার আয়েশা রা.-এর ঘরে যাই। তাঁর কাছে হাফসা রা.-ও ছিলেন। আমাদের মাঝে ও তাঁদের মাঝে ছিল পর্দা।
دخلت على عائشة وعندها حفصة، رضي الله عنهما، قال: وبيني وبينها حجاب.
-ইতহাফুল খিয়ারাহ ৭/১৭৭
হাদীস : ২৪
আবু সাঈদ রাকাশী রাহ. বলেন- আমি একবার আয়েশা রা.-কে কলসির নাবীয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তখন তিনি পর্দার ওপাশ থেকে একটি কলসী ঠেলে দেন এবং বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতে বানানো নাবীয অপছন্দ করতেন।
عن أَبي سَعِيدٍ الرّقَاشِيّ، يَقُولُ: سَأَلْتُ عَائِشَةَ عَنْ نَبِيذِ الْجَرِّ فَأَخْرَجَتْ إِلَيّ جَرّةً مِنْ وَرَاءِ الْحِجَابِ فَقَالَتْ: إِنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يَكْرَهُ مَا يُصْنَعُ فِي هَذِهِ.
-মুসনাদে আহমাদ ৬/২৫২
হাদীস : ২৫
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, এক লোক নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসেছে মাসআলা জানতে, আর আমি পর্দার আড়াল থেকে শুনছি।
عن عائشة أن رجلا جاء إلى النبي - صلى الله عليه وسلم - يستفتيه وهي تسمع من وراء الحجاب.
-সহীহ মুলিসম, হাদীস ১১১০
হাদীস : ২৬
আলী রা. আততায়ীর আঘাতে আহত হলে তাকে ঘরে নেয়া হল। আমর বলেন, এ সময় আমি তার ঘরে প্রবেশ করে বলি, হে আমিরুল মুমিনীন, আপনার আঘাতটি দেখান।
তিনি দেখালে আমি বলি, এ তেমন কিছু না, সামান্য আঁচড় মাত্র।
তিনি বললেন, না, আমি তোমাদের ছেড়ে যাব।
তখন তার মেয়ে উম্মে কুলসুম পর্দার ওপাশ থেকে কেঁদে উঠলেন। আরবী পাঠ-
عَنْ عَمْرٍو ذِي مُرٍّ قَالَ: لَمّا أُصِيبَ عَلِيّ بِالضّرْبَةِ، دَخَلْتُ عَلَيْهِ وَقَدْ عَصَبَ رَأْسَهُ، قَالَ قُلْتُ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، أَرِنِي ضَرْبَتَكَ. قَالَ: فَحَلّهَا، فَقُلْتُ: خَدْشٌ وَلَيْسَ بِشَيْءٍ. قَالَ: إِنِّي مُفَارِقُكُمْ. فَبَكَتْ أُمّ كُلْثُومٍ مِنْ وَرَاءِ الْحِجَابِ.
-উসদুল গাবাহ, ইবনুল আছীর ৪/১০২
(চলবে ইনশাআল্লাহ)