Rabiul Akhir 1444   ||   November 2022

প্রসঙ্গ মাদরাসা
দ্বীনী ইলমের চর্চা ও বিস্তারে ইতিবাচক হোন

দ্বীন ও ইলমে দ্বীনের চর্চা সমাজে থাকতে হবে। এছাড়া আমাদের কল্যাণের কোনো পথ নেই। ঈমান নিয়ে বাঁচতে হলে এবং ঈমানের সাথে এই পৃথিবী থেকে যেতে হলে ইলমে দ্বীন ছাড়া উপায় নেই। মানুষ হিসেবে বাঁচার জন্য ও মনুষ্যত্বের গুণাবলি অর্জন করার জন্য ইলমে দ্বীন এক বিকল্পহীন বিষয়। দ্বীনের ইলম আমাদের জানায়- প্রকৃত মানুষ কাকে বলে, মানুষের গুণাবলি কী। মানবজীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী, কর্তব্য ও দায়-দায়িত্ব কী, আর কীভাবে তা পালন করতে হয়। ইলমে দ্বীন আরো জানায়- জীবনের গন্তব্য ও পরিণাম কী, আর সেই পরিণামের ভালো-মন্দ কীসের উপর নির্ভর করে। জীবনের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর  স্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন, ও যথার্থ জবাব শুধু কুরআন-সুন্নাহতেই আছে। জ্ঞানের এই সূত্র নিশ্চিত ও অভ্রান্ত।
কাজেই মনুষ্যত্বের সঠিক বিকাশ ও মানবীয় সকল যোগ্যতার সঠিক ও যথার্থ ব্যবহারের জন্য, ইহকাল-পরকালের শান্তি, স্বস্তি, মুক্তি ও সাফল্যের জন্য ইলমে দ্বীনের চর্চা আমাদের করে যেতেই হবে। এই বিষয়ে দ্বিধা-সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। প্রত্যেকেই আমরা নিজেকে প্রশ্ন করতে পারি- এক্ষেত্রে আমি কতটুকু সচেতন কতটা মনোযোগী। 
এখন মুসলিম-সমাজের সাধারণ অবস্থা হচ্ছে, পার্থিব ছোট-ছোট বিষয়েও যে পরিমাণ যত্ন ও সচেতনতা আছে, দ্বীনের বড় বড় বিষয়েও তা নেই। দ্বীনের অনেক কিছুকেই আমরা কোনো রকম দায়সারাভাবে সম্পন্ন করতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। অত্যন্ত তিক্ত হলেও সত্য যে, বর্তমান সময়ের বহু মুসলিম ঈমানের কালেমাটিও বিশুদ্ধ উচ্চারণে পাঠ করতে পারে না। বহু মুসলিম কুরআন পড়তে পারে না। অনেকে সূরা ফাতিহাও অশুদ্ধ উচ্চারণে পড়ে, অন্যান্য সূরার কথা তো বলাই বাহুল্য। ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোকন নামায; অথচ জীবনভর তারা তা আদায় করছেন অশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়েই। ভেবে দেখুন, দ্বীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কীভাবে অযত্ন-অবহেলার সাথে পালন করতে আমরা অভ্যস্ত।
নামাযেরই যখন এই অবস্থা তখন অন্যান্য ইবাদত ও বিধি-বিধানের কথা তো বলাই বাহুল্য। গোটা মুসলিম সমাজে দ্বীনের বিষয়ে এক ভয়াবহ উদাসীনতা বিরাজ করছে।
এই উদাসীনতা যেমন ব্যক্তিজীবনে ধর্মপালনের ক্ষেত্রে রয়েছে তেমনি দ্বীনী ইলমের পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রেও রয়েছে। দ্বীনী ইলমের চর্চা ও বিস্তারের দায়িত্ব শুধু মুসলিমসমাজের বিশেষ একটি শ্রেণি- অর্থাৎ শুধু আলেম-উলামার নয়; এ দায়িত্ব গোটা মুসলিমসমাজের। মুসলিমসমাজে শক্তিশালী ও মানসম্পন্ন দ্বীনী ইলমের কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা, বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোর সংরক্ষণ ও মানোন্নয়নে স্ব স্ব জায়গায় থেকে সঠিক পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করা আমাদের সবার কর্তব্য। কিন্তু মনে হয় না, আমরা মুসলিমেরা এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছি। এ অবস্থায় কীভাবে দ্বীনী ইলম চর্চার প্রতিটি পর্যায়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে উন্নত পরিবেশ ও উত্তম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে?
সম্প্রতি কিছু কিছু দুঃখজনক ব্যাপার মিডিয়ায় আনা হচ্ছে। অন্যায়ের ব্যাপারে কোনো রকম সাফাইয়ের পক্ষপাতী আমরা নই। যা ইসলামের বিধানে অন্যায় তা যার দ্বারাই প্রকাশিত হোক তা অন্যায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই মনে হয়, কোনো কোনো অন্যায়ের পিছনে আমাদের অসচেতনতা ও উদাসীনতা কিছু মাত্রায় হলেও দায়ী। এই দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
দ্বিতীয়ত, কোথাও কোনো অন্যায় ঘটলে তার বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থাটাও নিয়ম-শৃঙ্খলার ভেতরে হতে হবে। নতুবা তা সংশোধন-চেষ্টার পরিবর্তে শ্রেণি-বিদ্বেষ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা বলে মনে হতে পারে। সামগ্রিক বিচারে এটা কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না।
সংশোধন-চেষ্টা সমাজের সকল স্তরেই হতে হবে। ধর্মীয় ও সাধারণ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই সংশোধনের প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে।
শিক্ষার দুটো ধারাই আমাদের। এই দুই ধারার সুস্থতা ও উন্নতির উপরই গোটা মুসলিমসমাজের উন্নতি-অগ্রগতি নির্ভর করছে। আমাদের যেমন জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসর হতে হবে, তেমনি বিশ্বাস ও সৎকর্মেও অগ্রসর হতে হবে। কাজেই মুসলিমসমাজকে দুই ভাগে ভাগ করে মোল্লা-মিস্টারের মধ্যে এক অনতিক্রম্য বাধা দাঁড় করিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা আর যাই হোক জাতি গঠনের অনুকূল কোনো কাজ হবে না।
আল্লাহ তাআলা আমাদের বোঝার তাওফীক দান করুন- আমীন। 

 

advertisement